Modal Ad Example
অর্থনীতি

বাজার অর্থনীতি কি | বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

1 min read

বাজার অর্থনীতি কি | বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

ক্রেতা ও উৎপাদকের ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা তথা লাভ লোকসানের চিন্তা থেকে যে প্রতিযোগিতামূলক ও মুক্ত অর্থব্যবস্থা চালু হয় এরই নাম বাজার অর্থনীতি। বাজার অর্থনীতিতে সরকার কোনরূপ হস্তক্ষেপ যা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে না। ক্রেতা ও উৎপাদকই বাজার অর্থনীতির মূল ভিত্তি।

বাজার অর্থনীতি কি

পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও অবাধ বিনিময় সম্পর্কের উপর যে অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত তাকে বাজার অর্থনীতি বলে। বাজার অর্থনীতি এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া বিবেচনাধীন পণ্য অথবা উপকরণের চাহিদা ও যোগান দ্বারা এদের মূল্য নির্ধারিত হয় এবং এর ভিত্তিতে পণ্য উপকরণের ক্রয়বিক্রয় সম্পন্ন হয়। দাম ব্যবস্থা দ্বারা বিনিময় সম্পর্ক প্রভাবিত হয়। বিনিময় সম্পর্ক বলতে কোনরূপ বিধিনিষেধ ব্যতিরেকে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে আদানপ্রদানকে বুঝায়। কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এমন মূল্য বা দাম ব্যবস্থা বাজার অর্থনীতির ভিত্তি। বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতি মূলত ব্যক্তিত্ববাদের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। সেখানে বলা হয় ব্যক্তির অর্থনৈতিক কাজকর্মে সরকার কোনরকম হস্তক্ষেপ করবে না। সেখানে অবাধ বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোগ ও উৎপাদন কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় ঘটবে। বাস্তবে বিশুদ্ধ অর্থে বাজার বা মুক্ত অর্থনীতি নেই। কারণ, বর্তমানে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন, বণ্টন এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার কোন না কোনভাবে হস্তক্ষেপ করে। এজন্য বাজার অর্থনীতির ধারণা আপেক্ষিক অর্থে ব্যবহার করা উচিত। বাজার অর্থনীতির প্রাথমিক ধারণা আমরা Adam Smith এর ‘Wealth of Nations‘ গ্রন্থে Invisible hand বক্তব্যের মাধ্যমে পাই। পরবর্তীকালে অধ্যাপক মার্শাল তাঁর ‘Principles of Economics’ গ্রন্থে পূর্ণ প্রতিযোগিতা ধারণার সাহায্যে পরোক্ষভাবে হলেও বাজার অর্থনীতির ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন।

বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতির সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা কঠিন। এজন্য কতিপয় বৈশিষ্ট্যের আলোকে এরূপ অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা লাভের চেষ্টা করা হয়। সাধারণভাবে বাজার অর্থনীতির যেসব বৈশিষ্ট্য আমাদের চোখে ধরা পড়ে সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।

১. ব্যক্তিগত সম্পত্তি

বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক অপ্রতুল সম্পদ ব্যক্তিবর্গের মালিকানায় থাকে। সব ব্যক্তি বাজারের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির স্বাধীনতা থাকার কারণে ব্যক্তিবর্গ বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছামতো সম্পদ অর্জন, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবহার ও বণ্টন করতে পারে। তবে এ মালিকানা অবাধ নয়। কতিপয় নিয়মনীতির অধীনে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজার অর্থনীতিতে স্বীকৃত। এক্ষেত্রে দেশীয় আইনে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

২. ভোক্তার সার্বভৌমত্ব এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা

বলা হয়, “ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তা সম্রাট”- এ উক্তির মাধ্যমে ভোক্তার সার্বভৌমত্বের প্রতিফলন ঘটে। ভোক্তা তার নিজস্ব পছন্দ অনুসারে ভোগ করে। এক্ষেত্রে সে ন্যূনতম ব্যয়ে সর্বাধিক তৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। ভোক্তার পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী কি দ্রব্য, কখন এবং কি পরিমাণ উৎপাদন হবে তা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদন শুরুর আগে উৎপাদক চিন্তা করে ভোক্তা কোন দ্রব্যটি বেশি পছন্দ করে। ভোক্তার পছন্দই যেহেতু সর্বাগ্রে বিবেচ্য তাই ভোক্তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সার্বভৌম বলা যায়। পছন্দের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বলতে বুঝায় ব্যক্তি/ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পদ, মূলধন এবং অর্থ নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। যেমনঃ শ্রমিকরা তাদের পছন্দ অনুসারে নিয়োগ খুঁজতে পারে। এভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছামতো সম্পদ বিনিয়োগ করতে পারে। সুতরাং, বাজার অর্থনীতিতে ভোক্তার সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত।

৩. স্বীয় স্বার্থের ভূমিকা

বাজার অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ। কোন ব্যক্তির কর্মকাণ্ড তার নিজস্ব স্বার্থকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। প্রতিটি অর্থনৈতিক এককই সে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাহোক না কেন নিজের স্বার্থার্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এর ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, উৎপাদক প্রতিষ্ঠান মুনাফা সর্বোচ্চকরণ এবং খরচ সর্বনিম্নকরণের চেষ্টা করে। আবার কোন ভোক্তা পণ্য ও সেবার ভোগ থেকে উপযোগ সর্বোচ্চকরণের চেষ্টা করে। এভাবে অর্থনীতির প্রতিটি এজেন্ট স্ব-স্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কর্মে লিপ্ত হয়।

৪. প্রতিযোগিতা

ব্যক্তিস্বার্থ এবং পছন্দের স্বাধীনতা অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাবের কারণে প্রতিযোগিতার উদ্ভব হয়। বাজার অর্থনীতিতে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকার কারণে কোন দ্রব্যের মোট চাহিদা বা যোগান কোন একজন ক্রেতা বা বিক্রেতার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আবার দ্রব্য বা সম্পদ বাজারে অবাধ প্রবেশ ও নির্গমনের ব্যাপারে কোন প্রাতিষ্ঠানিক বিধিনিষেধ নেই। অর্থাৎ, পণ্যদ্রব্য উৎপাদনে অস্বাভাবিক মুনাফা থাকলে যে কেউ পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে পারে। এর ফলে বাজার অর্থনীতি নমনীয় থাকে। ফলে বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদন ও বণ্টনে দক্ষতা বিদ্যমান থাকে।

৫. বাজারের অদৃশ্য হাত

বাজার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় বাজারের অদৃশ্য হাত দ্বারা। অদৃশ্য হাত ধারণাটি ব্যবহার করেন এ্যাডাম স্মিথ। এক্ষেত্রে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে ন্যস্ত নয়। নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি একটি অদৃশ্য হাতে ন্যস্ত। মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অর্থনৈতিক কাজকর্ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধা হয়। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থের সাথে সামাজিক স্বার্থও রক্ষিত হয়। সে স্বয়ংক্রিয় উপায়ের মাঝে অদৃশ্য হাতের ছোঁয়া উপলব্ধি করা যায়। ব্যক্তিস্বার্থের পরিণাম হল পারস্পরিক প্রতিযোগিতা। সে প্রতিযোগিতার পরিণাম হল সাধ্যায়ত্ব দাম। সে দামের দ্বারাই সবরকমের ভোগ্য দ্রব্যের উৎপাদন, যোগান এবং চাহিদা পরিচালিত হয়। সুতরাং, মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে ব্যক্তিস্বার্থের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্ম পরিচালনার পশ্চাতে যা কার্যকর তা হল অদৃশ্য হাত।

৬. মূল্য প্রক্রিয়া

বাজার পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রব্য ও সম্পদের ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব। ক্রেতার সিদ্ধান্ত চাহিদা এবং বিক্রেতার সিদ্ধান্ত যোগান দ্বারা প্রতিফলিত হয়। পণ্য এবং উপকরণের চাহিদা ও যোগানের ঘাতপ্রতিঘাতেই এদের বাজার দাম নির্ধারিত হয়। যে দ্রব্য/সম্পদের চাহিদা বেশি তার বাজার দাম বেশি হয় এবং যে দ্রব্য/সম্পদের চাহিদা কম তার বাজার দাম কম হয়। সুতরাং, মূল্য হচ্ছে দ্রব্য ও সম্পদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের মূল চালিকাশক্তি।

৭. সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস

বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতিতে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বাস্তবে বর্তমান সময়ে এরূপ বাজারব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বাজার অর্থনীতি বলতে এমন অর্থনীতিকে বুঝায়, যেখানে ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রমে ন্যূনতম হলেও সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে।

উপসংহার

উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, বাজার অর্থনীতি হচ্ছে একটি আদর্শ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ অর্জিত হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অসাধু আচরণের প্রেক্ষিতে বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতি পরিলক্ষিত হয় না। এক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তারপরও বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশেষায়ন সম্ভব হয় মুনাফার তাড়নায় এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে উন্নত কৌশলের উদ্ভাবন ঘটে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x