সমাজকল্যাণ পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
সমাজকল্যাণ অধ্যয়ন বা পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
নিম্নে সমাজকল্যাণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হল।
১. সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ : বেশিরভাগ মানুষই সমাজ সম্পর্কে সচেতন নয়। Aristotle এর মতে, “মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব। অথচ সামাজিক জীব হিসেবে আমরা অধিকাংশই সমাজ সম্পর্কে অবগত নই। সামাজিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ, সামাজিক পরিবর্তন, সামাজিক প্রথা ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত জ্ঞান সমাজকল্যাণে সমাজ সম্পর্কিত জ্ঞান লাভের জন্য সমাজকল্যাণ পাঠ করা আবশ্যক।”
২. সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা লাভ : বিশ্বের অধিকাংশ জনগণই সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অসচেতন এবং তারা অধিকাংশ অদৃষ্টবাদ ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী। সমাজকল্যাণের জ্ঞান মানুষকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে এবং কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্ত করে।
৩. সমাজকল্যাণ কার্যক্রমকে বাস্তব উপযোগী করা : বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য সমাজকল্যাণ অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। কেনন৷ সমাজকল্যাণের জ্ঞান ও কৌশল প্রয়োগ করে প্রচলিত কল্যাণমূলক কার্যক্রমকে বাস্তব উপযোগী করে তোলা সম্ভব। তাই বাংলাদেশের জনগণকে সমাজকল্যাণ অধ্যয়ন করা একান্ত প্রয়োজন।
৪. সামাজিক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধ : বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে দরিদ্রতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বেকারত্ব, যৌতুক প্রথা, নারী নির্যাতন, স্বাস্থ্যহীনতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সমাজকল্যাণে এসব সমস্যার কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয় এবং এর সমাধানের ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়ে থাকে।
৫. সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন : একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জনকল্যাণমুখী সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা একান্ত প্রয়োজন। সমাজকল্যাণে এ সম্পর্কিত জ্ঞান অন্তর্নিহিত থাকে। তাই বাংলাদেশে উন্নতমানের সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সমাজকল্যাণ অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।
৬. সামাজিক ভূমিকা পালন : বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণই তাদের সামাজিক ভূমিকা সম্পর্কে অজ্ঞ এবং অসচেতন। সমাজকল্যাণে মানুষের সামাজিক ভূমিকা ও কর্তব্য কর্ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়ে থাকে। সামাজিক ভূমিকা পালন ও সামাজিক উন্নয়নে সমাজকল্যাণের জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৭. সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞানের উৎস : আধুনিক সমাজকল্যাণ অনেকাংশে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এজন্য সমাজকল্যাণকে সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞানের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সুতরাং সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞান লাভ করার জন্য সমাজকল্যাণ পাঠ করা উচিত।
৮. পরিবার কল্যাণ : পরিবার কল্যাণ সমাজকল্যাণ এর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সামাজিক সমস্যার কারণ, প্রতিকার ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য সমাজকল্যাণ যে কোন পরিবারকেই পথ নির্দেশনা প্রদান করে। তাই বাংলাদেশের পরিবার কল্যাণের উদ্দেশ্যে সমাজকল্যাণ পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন।
৯. গঠনমূলক সামাজিক আন্ত:ক্রিয়া সৃষ্টি : সমাজকল্যাণ একটি মানবকল্যাণ শাস্ত্র হিসেবে গঠনমূলক আন্তঃক্রিয়া সৃষ্টি এবং জীবনকে অর্থবহ করে গড়ে তোলার শিক্ষা প্রদান করে। মূলত দল সমাজকর্ম, ব্যক্তি সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্মের অধ্যয়নের মাধ্যমেই সামাজিক আন্তঃক্রিয়া উন্নয়নের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান করা সম্ভব।
১০. মানবসম্পদ উন্নয়ন : সমাজকল্যাণ অধ্যয়নের মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। কেননা এতে মানুষের কর্তব্য কর্ম ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়ে থাকে। মানব সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে কিভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায় তা সমাজকল্যাণ পাঠের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়।
১১. স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের জ্ঞানের উৎস : বাংলাদেশে গ্রামে ও শহরে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহ সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অথচ সমাজব্যবস্থা, সামাজিক প্রক্রিয়া, সামাজিক আন্তঃক্রিয়া ও আধুনিক উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে তাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই। তাই এসব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের উন্নয়নের জন্য সমাজকল্যাণ অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।
১২. সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কার সম্পর্কে সচেতনতা : বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী, যার ফলে এ দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। তাই এ দেশের উন্নয়নের জন্য সমাজকল্যাণ পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন।
উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, আধুনিক সমাজকল্যাণের জ্ঞান শুধু সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী, শিক্ষকবৃন্দ ও পেশাদার সমাজকর্মীদের জন্য নয়, এ জ্ঞান সমাজের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্যই প্রয়োজনীয়। কেননা এ জ্ঞান লাভের মাধ্যমেই যে কোন দেশের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব। তাই বাংলাদেশে সমাজকল্যাণ অধ্যয়ন করা প্রত্যেকটি নাগরিকেরই একান্ত প্রয়োজন।