অর্থনীতি

দাম বৈষম্যের শর্তগুলো আলোচনা কর

1 min read

একচেটিয়া কারবারির মুখ্য উদ্দেশ্য মুনাফা সর্বাধিক করা। এ উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য উৎপাদনকারী তার উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে ভিন্ন ভিন্ন ভোক্তার নিকট ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রয়ের জন্য চেষ্টা করে। যখন একচেটিয়া কারবারি এরূপ দামব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয় তখন তাকে একচেটিয়া বৈষম্যমূলক দামব্যবস্থা বলা হয়।

দাম বৈষম্যের শর্তগুলো

একজন একচেটিয়া বিক্রেতা নিম্নোক্ত অবস্থায় তার পণ্যের জন্য বিভিন্ন ক্রেতার নিকট থেকে বিভিন্ন মূল্য আদায় করতে পারে।

১. অপূর্ণ প্রতিযোগিতা : একক বিক্রেতা অথবা একচেটিয়া কারবারির পক্ষেই কেবল দাম বৈষম্য করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ভোক্তাদের নিকট থেকে ভিন্ন ভিন্ন দাম আদায় করা সম্ভব। কারণ এরূপ বাজারে ফার্ম তার উৎপাদিত দ্রব্যের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।

২. দ্রব্য/সেবার প্রকৃতি : দ্রব্যের প্রকৃতি এমন হতে পারে যা এক বাজার থেকে অন্য বাজারে সহজে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। আবার বিবেচনাধীন দ্রব্য সরাসরি সেবাও হতে পারে। যেমন, একজন ডাক্তার বা আইনজীবী ধনী দরিদ্রের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ফি আদায় করে। এরূপ সেবাসমূহ পুনরায় বিক্রয় করা সম্ভব নয়। ডাক্তারের পক্ষে তার সেবার জন্য এরূপ মূল্য বৈষম্য করা সম্ভব এ কারণে যে, তার সেবা হস্তান্তরযোগ্য নয়।

৩. বাজারের দূরত্ব : ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে দাম বৈষম্য অনেক সময় সম্ভব হতে পারে। দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব বেশি হলে পরিবহণ খরচ বাড়ে, আবার দ্রব্য স্থানান্তর অসুবিধাজনক হতে পারে। পরিবহণ ব্যয় এমন হতে পারে যাতে সম্ভা বাজার থেকে বেশি মূল্যের বাজারে পণ্যের পুনঃবিক্রয় লাভজনক নয়।

৪. শুল্ক বাধা : শুল্কের কারণে একাধিক বাজারে দাম বৈষম্য সম্ভব হতে পারে। সরকারি রাজস্বনীতি এবং বাণিজ্যনীতির কারণে দাম বৈষম্য অনেক সময় সম্ভব হতে পারে। মনে করি, একজন বিক্রেতা অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য বিক্রয় করে যা শুল্ক দ্বারা সংরক্ষণ যুক্ত এবং শুল্কবিহীন একটি বিদেশী বাজারে পণ্য বিক্রয় করে। তাহলে ঐ বিক্রেতা দেশী বাজারে বেশি দামে এবং বিদেশী বাজারে কম দামে দ্রব্য/পণ্য বিক্রয় করবে।

৫. পণ্যের ব্যাপারে ক্রেতাদের অতিরিক্ত মোহ : অনেক সময় বিক্রেতা বিভিন্ন নামে বা লেবেল লাগিয়ে একই পণ্যের বিভিন্ন এককের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। এর মাধ্যমে পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে সে ক্রেতাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে। তখন ক্রেতাদের পছন্দনীয়তার মাত্রা বিভিন্ন হতে পারে। এ সুযোগ নিয়ে বিক্রেতা বিভিন্ন ক্রেতার নিকট থেকে বিভিন্ন মূল্য আদায়ে সক্ষম হতে পারে।

৬, আইনগতভাবে : সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত দ্রব্যের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক দামব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। যেমন, বিদ্যুৎ গ্যাস পরিবারে (Household Sector) ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক ধরনের মূল্য এবং শিল্পে বা ব্যবসায় বাণিজ্যে অন্য/আলাদা ধরনের মূল্য আদায়ের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

৭. ভোক্তাদের অজ্ঞতা ও অলসতা : অনেক সময় ক্রেতারা/ভোক্তারা একই দ্রব্যের বিভিন্ন মূল্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে পারে। সবার কাছে পরিচিত এবং প্রিয় বাজার যেগুলো সেখানে বেশি দামে এবং অন্যান্য বাজারে কম দামে দ্রব্য বিক্রয় করতে পারে। যেমন, কোন দ্রব্য রাইফেল স্কয়ার বা ইষ্টার্ণ প্লাজায় যে মূল্যে বিক্রয় করা হয় সে একই দ্রব্য গাউছিয়া বা চকবাজারে কম দামে বিক্রয় হয়। এক্ষেত্রে ভোক্তাদের অলসতা বা বাজারের পছন্দনীয়তার কারণে বিক্রেতা দাম। বৈষম্যকরণের সুযোগ পায়। অর্থাৎ, তথাকথিত রুচিশীল ভোক্তাগণ পাশের বাজারে যে কম দামে যে দ্রব্য পাওয়া যায় তার খোঁজ নেয় না।

৮. চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার পার্থক্য : একই দ্রব্যের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা ভোক্তার আয়, রুচি ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন ভোক্তার নিকট ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। দুটি বাজারে চাহিদারেখার স্থিতিস্থাপকতার মধ্যে পার্থক্য না থাকলে দাম বৈষম্য সম্ভব নয়। কারণ দুটি বাজারে চাহিদারেখা যদি একই স্থিতিস্থাপক হয় তবে MR প্রতিটি বাজারে এক হওয়ায় শর্ত  সাপেক্ষে দাম প্রতিটি বাজারে একই হবে।

৯. যুক্ত বিক্রয় : অনেক সময় একটি দ্রব্যের ব্যবহার অন্য দ্রব্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে । যেমন, একটি বুলেটিং মেশিনের ব্যবহারের সাথে কার্ড ছাপানোর সম্পর্ক থাকতে পারে। এক্ষেত্রে মেশিনটি সময়ের প্রেক্ষিতে লিজ দেওয়া যায়। মেশিনের ব্যবহারকারীকে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ক্রয়ে বাধ্য করা যায়। এক্ষেত্রে কার্ডের মূল্য মেশিন ব্যবহারকারীর নিকট থেকে বেশি আদায় করা সম্ভব হতে পারে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x