মাইটোকন্ড্রিয়া কি, এর গঠন এবং কাজ চিত্রসহ ব্যাখ্যা কর

মাইটোকন্ড্রিয়া কি

দ্বিস্তর বিশিষ্ট আবরণী পর্দা দ্বারা সীমিত কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত যে অঙ্গাণুতে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি এসিড চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম ইত্যাদি সংঘটিত হয় ও শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলে। Altman ১৯৮ মাইটোকন্ড্রিয়া আবিষ্কার করেন ও বায়োব্লাস্ট (bioblast) নামকরণ করেন। পরবর্তীতে Benda ১৮১৭ এদের মাইটোকন্ড্রিয়া নামকরণ করেন।

মাইটোকন্ড্রিয়ার ভৌত গঠন (Physical structure of mitochondria)

(i) আকার, আকৃতি (Size and shape) : মাইটোকন্ড্রিয়া দণ্ডাকার, গোলাকার বা সূত্রকার হতে পারে। এরা দৈর্ঘ্যে ৩ – ১০ μm এ প্রস্থে ০.২ – ১০ μm হতে পারে।

(ii) আবরণী (Membrane) : মাইটোকন্ড্রিয়া প্রোটিন ও লিপিড নির্মিত দুটি ইউনিট পর্দা দিয়ে গঠিত হয়। এদের মধ্যে বাইরের দিকের পর্দাটিকে বহিঃপর্দা ও ভেতরের দিকের পর্দাটিকে অন্তঃপর্দা বলে। পর্দাগুলির পুরুত্ব ৬০Å এবং ভেতরে দিকে দ্বিমেরু বিশিষ্ট লিপিড স্তর ও বাইরের দিকে প্রোটিন স্তর বিদ্যমান। মাইটোকন্ড্রিয়ার পর্দাদ্বয়ের দূরত্ব সাধারণত ৬০ – ৮০Å পর্যন্ত হতে পারে।

(ii) মাতৃকা (Matrix) : মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তর্ভাগ বিভিন্ন এনজাইম ও কো-এনজাইমে পূর্ণ থাকে। একে মাতৃকা বা ম্যাট্রিক্স বলে। মাতৃকায় প্রোটিন, লিপিড, এনজাইম, গোলাকার DNA, 70S রাইবোজোম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত কিছু পদার্থ পাওয়া যায়।

(iii) ক্রিস্টি (Cristae) : মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরের আবরণীটি কেন্দ্রীয় ম্যাটিক্সে অনিয়মিতভাবে ভাঁজ খেয়ে আঙুলের মত যেসব প্রবর্ধক সৃষ্টি করে তাদেরকে ক্রিস্টি বলে। ক্রিস্টিগুলি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাচীরের মত, কোন কোন ক্ষেত্রে আঙুলের মত বা ক্ষেত্র বিশেষে এগুলি টিউবের মত গঠন সৃষ্টি করে। ক্রিস্টিগুলি মাইটোকন্ড্রিয়ার অক্ষের সাথে লম্বাভাবে অবস্থান করে।

(iv) অক্সিজোম (Oxysome) : মাইটোকন্ড্রিয়ার বহিঃআবরণীর বহিঃগাত্রে ও অন্তঃআবরণীর অন্তর্গাত্রে অতি সূক্ষ্ম (৮০Å – ১০০Å) যে সব দানা লেগে থাকে তাদেরকে অক্সিজোম বলে। প্রত্যেকটি অক্সিজোমের একটি ভিত্তি, একটি বৃত্ত ও একটি মস্তক বিদ্যমান। এগুলি লম্বায় প্রায় ১৬০Å।

চিত্রঃ মাইটোকন্ড্রিয়ার সূক্ষ্ম গঠন

মাইটোকন্ড্রিয়ার রাসায়নিক গঠন (Chemical structure of Mitochondria)

মাইটোকন্ড্রিয়া মূলত প্রোটিন ও লিপিড এর সমন্বয় গঠিত হয়। মাইটোকন্ড্রিয়ার বহিঃপ্রকোষ্ঠ অঞ্চলে প্রোটিন, গ্লিসারাইড, লেসিথিন ও কোলেস্টেরল বিদ্যমান। মাইটোকন্ড্রিয়ার কেন্দ্রীয় অংশটিতে অ্যালবুমিন, গুটাথিওন, কো-এনজাইম ও ভিটামিন A, C, লেসিথিন ও কোলেস্টেরল থাকে। সম্প্রতি মাইটোকন্ড্রিয়ায় RNA-এর উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি সাইটোক্রম অক্সিডেজ ও সাকসিনিক ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের অস্তিত্ব মাইটোকন্ড্রিয়ায় পরিলক্ষিত হয়। Bensley (১৯৩৪)-এর মতে মাইটোকন্ড্রিয়ার রাসায়নিক বিশ্লেষণ নিম্নরূপ – (i) প্রোটিন ও অঙ্গাত বস্তু ৬৫% (ii) গ্লিসারাইড ২৯%, (iii) লেসিথিন ও সেফালিন ৪% এবং (iv) কোলেস্টেরল ২%।

মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ (Functions of mitochondria)

  • ১। মাইটোকন্ড্রিয়ায় ক্রেবস চক্র সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে জীব দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন হয়। তাই মাইটোকন্ড্রিয়াকে শক্তিঘর (Power house) বলা হয়।
  • ২। প্রোটিন সংশ্লেষণের প্রয়োজনীয় এনজাইম মাইটোকন্ড্রিয়ায় থাকে।
  • ৩। মাইটোকন্ড্রিয়া জনন কোষ উৎপাদনে ও লিপিড বিপাকে সহায়তা করে।
  • ৪। বিভিন্ন ধরনের ক্যাট আয়ন Catt, St, Fe’ ও Mn এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসফেট মাইটোকন্ড্রিয়ায় সঞ্চিত থাকে।

Similar Posts