অগ্ন্যাশয় কি
অগ্ন্যাশয় একইসাথে অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। যকৃত ও ডিওডেনামের মধ্যবর্তীস্থানে এটা অবস্থান করে। অগ্ন্যাশয় উত্থিত অগ্ন্যাশয়নালী পিত্তনালীর সাথে যুক্ত হয়ে ডিওডেনামে থাকে। শিথিল যোজক কলার ঝিল্লী দ্বারা সমগ্র অগ্ন্যাশয় গ্রন্থিটি আবৃত থাকে। এই ঝিল্লী গ্রন্থির বিভিন্ন অংশে প্রবিষ্ট হয়ে গ্রন্থিটিকে কতকগুলো লোবিউলে বিভক্ত করে। প্রতিটি লোবিউল অসংখ্য গ্রন্থিথলি এবং কতিপয় বিক্ষিপ্ত দ্বীপগ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত।
গ্রন্থিথলিসমূহ লম্বাটে এবং কুণ্ডলায়িত। এদের প্রাচীর একক স্তরে বিন্যস্ত গ্রন্থিকোষ দ্বারা গঠিত। প্রতিটি গ্রন্থিকোষ গোড়ার দিকে নিউক্লিয়াস এবং শীর্ষদিকে জাইমোজেন দানা ধারণ করে। অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থিথলির এক একটি গুচ্ছকে অ্যাসিনাস বলে। অ্যাসিনাস হতে এনজাইম নিঃসৃত হয়, তাই এরা বহিঃক্ষরা অংশ হিসেবে কাজ করে। অ্যাসিনি হতে উত্থিত ইন্টারক্যালেটেড নালিকাসমূহ পরস্পর মিলিত হয়ে অগ্ন্যাশয় নালী গঠন করে। লোবিউলের গ্রন্থিথলিসমূহ অর্থাৎ অ্যাসিনির মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কতিপয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষগুচ্ছ দেখা যায়, এদেরকে ল্যাঙ্গারহ্যান্সের দ্বীপগ্রন্থি বলে। এরা হরমোন ক্ষরণ করে, তাই এরা অগ্নাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ হিসেবে কাজ করে। ল্যাঙ্গারহ্যান্সের দ্বীপগ্রন্থি মূলত দু’ধরণের গ্রন্থিকোষ দ্বারা গঠিত থাকে, আলফা ও বিটা কোষ। এদের মধ্যে শতকরা ১৫-২৫ ভাগ আলফা কোষ এবং ৬০-৭০ ভাগ বিটা কোষ। অবশিষ্টাংশ গামা ও ডেল্টা কোষ আলফা কোষ গুকাগন, বিটা কোষ ইনসুলিন, ডেল্টাকোষ গ্যাসট্রিন ক্ষরণ করে।
অগ্ন্যাশয় এর কাজ কি
১) অগ্নাশয় নিঃসৃত এনজাইমগুলো বিভিন্ন খাদ্য পরিপাক করে। ল্যাঙ্গারহ্যাপের দ্বীপগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন, গ্লুকাগন ও গ্যাস্ট্রিন হরমোন শর্করা বিপাকে সাহায্য করে।
অগ্নাশয় নিঃসৃত বিভিন্ন উৎসেচক ও এদের কাজ (Some pancreas secreted enzymes & their functions.)
অগ্ন্যাশয় বিভিন্ন ধরনের উৎসেচক (enzymes) ক্ষরণ করে থাকে। এসব উৎসেচকসমূহের মধ্যে রয়েছে ট্রিপসিন, অ্যামাইলেজ, লাইপেজ, মল্টেজ, ডাইপেপটাইডেজ প্রভৃতি। এসকল উৎসেচকসমূহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পরিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের মধ্যে প্রিটসিন ও ডাইপেপটাইডেজ আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপাকে, অ্যামাইলেজ ও মল্টেজ শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাকে, লাইপেজ চর্বি বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য পরিপাকে অংশগ্রহণ করে।