প্রাণিবিজ্ঞান

লালা গ্রন্থি কি, লালার উপাদান এবং এর কাজ কি কি

1 min read

লালা গ্রন্থি কি

মুখ গহ্বরে উন্মুক্ত পরিপাক গ্রন্থিকে লালাগ্রন্থি বলে। মানবদেহে মুখগহ্বরের অন্তঃগাত্রে ৩ জোড়া লালাগ্রন্থি থাকে। যথা-

প্যারোটিড গ্রন্থি (Parotid glands)

এটি সবচেয়ে বড় লালাগ্রন্থি। প্রত্যেক কানের নিচে একটি করে প্যারোটিড গ্রন্থি অবস্থিত এবং এদের নিঃসৃত রস একটি নালির মাধ্যমে দ্বিতীয় ঊর্ধ্ব মোলার দাঁতের বিপরীত দিকে মুখের ভেস্টিবিউল (ঠোঁট, গলা এবং দাঁত এর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে ভেস্টিবিউল বলে) অঞ্চলে উন্মুক্ত হয়।

সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি (Sub mandibular glands)

ম্যান্ডিবলের পশ্চাতে এবং ভিতরের দিকে ম্যান্ডিবুলার ফোসার উভয় পাশে অবস্থিত। এদের রস নালি দ্বারা মুখ বিবরে আসে।

সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি (Sub lingual glands)

জিহ্বার নিচে, মুখবিবরের তলে মিউকাস পর্দার নিচে এ গ্রন্থি অবস্থিত। এদের রস অনেকগুলো ছোট ছোট নালির মাধ্যমে সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থির নালির সাথে বাম পাশে মুখবিবরের উন্মুক্ত।

লালার উপাদান

লালা গ্রন্থি নিঃসৃত রসকে লালা বলে। এটি বর্ণহীন, চটচটে তরল পদার্থ, মানুষের লালা গ্রন্থিগুলো প্রতিদিন প্রায় ১.৫ লিটার লালা ক্ষরণ করে। লালা মৃদু অম্লীয়, এর pH মান ৬.০২-৭.০৫। স্থির অবস্থায় অথবা উত্তপ্ত অবস্থায় লালা থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বিমুক্ত হলে লালা ক্ষারীয় হয়ে পড়ে। লালা উপাদানের মধ্যে আছে ৯৯% পানি এবং ১% কতিপয় জৈব ও অজৈব পদার্থ দ্রবীভূত থাকে। কোষীয় উপাদানের মধ্যে থাকে ঈস্ট, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, লিউকোসাইট, আবরণীকোষ ইত্যাদি । অজৈব লবণের মধ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম ক্লোরাইড, অম্লীয় ও ক্ষারীয় সোডিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, পটাসিয়াম থায়োসায়ানেট থাকে।

জৈব পদার্থের মধ্যে টায়ালিন, লাইপেজ, কার্বোনিক অ্যানহাইড্রেজ, ফসফেটেজ, লাইসোজাইম ইত্যাদি এনজাইম, মিউসিন, ইউরিয়া, অ্যামাইনো এসিড, কোলেস্টেরল, এগুটিনোজেন ইত্যাদি।

এছাড়াও লালায় অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসীয় উপাদান থাকে।

লালা গ্রন্থি বা লালার কাজ কি কি

  • ১. লালার পানি ও মিউসিন খাদ্যকে সিক্ত, নরম ও পিচ্ছিল করে। ফলে খাদ্য চর্বণে এবং গলাধঃকরণে সুবিধা হয়।
  • ২. স্যালাইভারী অ্যামাইলেজ এনজাইম স্টার্চকে ভেঙে ম্যালটোজ নামক দ্রবণীয় শর্করায় পরিণত করে।
  • ৩. লাইসোজাইম এনজাইম ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের মাধ্যমে দাঁতকে রক্ষা করে।
  • ৪. মুখ, জিহ্বা এবং ঠোঁট লালা দ্বারা সিক্ত থাকার কারণে কথা বলা সহজ হয়। ভয়, উত্তেজনা ইত্যাদি সময়ে কিংবা অসুস্থতার সময় লালা ক্ষরণ কমে যায় ফলে কথা বলা অসুবিধা হয়।
  • ৫. জিহ্বার স্বাদ কোরকগুলো শুকনো খাদ্য দ্বারা প্রভাবিত হয় না। লালা দ্বারা সিক্ত হয়ে খাদ্যকণা মুক্ত হলে তা থেকে স্বাদ কোরকগুলো অনুভূতি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যের স্বাদ বুঝা সম্ভব হয়।
  • ৬. লালার বাইকার্বনেট বাফার (Buffer) হিসেবে কাজ করে। ফলে মুখে সৃষ্ট এসিডগুলোর শক্তি কমিয়ে রাখার মাধ্যমে দাঁতের এনামেল ক্ষয় রোধ করে।
Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x