যকৃত কি, এর গঠন এবং কাজ কি কি

যকৃত কি এবং এর গঠন

মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পৌষ্টিকনালীর সাথে সংযুক্ত দেহের সর্বাপেক্ষা বড় গ্রন্থির নাম হচ্ছে যকৃত (Liver)। খাদ্য পরিপাকে অংশগ্রহণ ছাড়াও এ গ্রন্থি অন্যান্য নানাবিধ কার্যসাধন করে। আরকেন্টেরণের যে অঞ্চল থেকে যকৃত উৎপন্ন হয় সেটি ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে পরিণত হয়। প্রচুর সংখ্যক শাখান্বিত কোষস্তম্ভ নিয়ে যকৃত গঠিত। এই কোষস্তম্ভগুলিকে ট্রাবেকুলি বলে।

যকৃত এর গঠনের ছবি
যকৃত এর গঠনের ছবি

ট্রাবেকুলিসমূহ একে অপর থেকে সাইনুসয়েড নামক রক্তপূর্ণ গহ্বর দ্বারা পৃথক থাকে। ছোট ছোট পিত্ত জালিকা কোষসমূহের মধ্যে জালক আকারে ছড়ানো থাকে। কিছু বৃহৎ নালিকা আবার পিত্তজালিকার সাথে যুক্ত থাকে এবং এগুলো চূড়ান্তভাবে মিলিত হয়ে যকৃতনালী গঠন করে যকৃতের মধ্যে একটি পিত্তথলি (Gall bladder) থাকে। যকৃত কর্তৃক ক্ষরিত পিত এই থলিতে জমা থাকে। পিত্তথলির একটি সংকীর্ণ গ্রীবা আছে। যার সাহায্যে এটি সিস্টিকনালীর সাথে যুক্ত থাকে। সিস্টিকনালী পুনরায় স্বকৃত নালীর সাথে মিলিত হয়ে একটি সাধারণ পিত্তনালী গঠন করে। পিত্তনালিটি ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয় । যকৃত মূলত ডান ও বাম খণ্ডে বিভক্ত থাকে। মাংসাশী প্রাণীর চেয়ে তৃণভোজী প্রাণীর যকৃত বড়। পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ দ্বারা যকৃত যথাস্থানে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে।

যকৃতের কাজ

হেপাটিক পোর্টাল শিরার মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্যসার প্রথমে যকৃতে আসে। এখানে খাদ্যসারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। কিছু উপাদান যকৃতের জমা থাকে। আবার প্রয়োজনে এগুলো রক্তে বিমুক্ত হয়। যকৃতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল পিত্তরস উৎপন্ন করা। যকৃতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিম্নরূপঃ

  • ১) গ্লাইকোজেন সঞ্চয় : অতিরিক্ত গ্লুকোজ গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত হয়ে যকৃতে সঞ্চিত থাকে। প্রয়োজনে এই গ্লাইকোজেন ভেঙ্গে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করে। যকৃত ফ্রুক্টোজ ও গ্যালাক্টোজকে গ্লুকোজে পরিণত করে।
  • ২) লিপিড সঞ্চয় : অতিরিক্ত লিপিডকে প্রোটিওলিপিডরূপে সঞ্চয় করে এবং দেহের প্রয়োজনে রক্তে আবার লিপিড সরবরাহ করে।
  • ৩) অ্যামাইনো এসিডের ভাঙন ও রূপান্তর : প্রয়োজনে অতিরিক্ত অ্যামাইনো এসিড থেকে ডি অ্যামাইনেশন পদ্ধতিতে প্রথমত NH2 (অ্যামাইনো) অপসারণ করে যা পরে ইউরিয়াতে রূপান্তরিত হয়।
  • ৪) পিত্তরস উৎপাদন : যকৃত কোষ পিত্তরস উৎপন্ন করে। পিত্তথলিতে এই পিত্তরস জমা থাকে। পিত্তরসে বিভিন্ন ধরনের অজৈব লবণ, পিত্তলবণ, পিত্তরঞ্জক (বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন) কোলেস্টেরল, লেসিথিন ইত্যাদি থাকে। পিত্তরসের প্রধান কাজ হল চর্বি জাতীয় খাদ্যের পরিপাক সুসম্পন্ন করা, পিত্তলবণ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসার পরিশোষণে সহায়তা করে, পাকস্থলী থেকে আগত খাদ্যের অম্লতা নিরপেক্ষণ করা এবং বিভিন্ন এনজাইমের ক্রিয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।
  • ৫) অন্যান্য পদার্থের সঞ্চয় : যকৃতের মধ্যে কিছু ভিটামিন, লৌহ ও অন্যান্য পদার্থ সঞ্চিত থাকে।
  • ৬) প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষণ : যকৃত কোষ প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষণ করে এবং রক্তে সরবরাহ করে।