কার্ডিয়াক চক্র কি | অলিন্দ ও নিলয়ের সিস্টোল-ডায়াস্টোল বর্ণনা কর
কার্ডিয়াক চক্র কি (Cardiac Cycle)
হৃদপিন্ড দেহে রক্ত সঞ্চালনে পাম্প যন্ত্রের ন্যায় কাজ করে। এর সংকোচন-শ্লথনে রক্ত দেহে সঞ্চালিত হয়। হৃদপিন্ডের একবার সংকোচনকে সিস্টোল এবং একবার শ্লথনকে ডায়াস্টোল বলে। একবার সিস্টোল ও একবার ডায়াস্টোল সংঘটনকে একত্রে হৃদস্পন্দন বা heart beat বলে। তবে, হৃদপিন্ডের অলিন্দ ও নিলয়ের সংকোচন শ্লথন একইসাথে না ঘটে পর্যায়ক্রমে ঘটে। প্রতিবার হৃদস্পন্দনে হৃদপিন্ডে সংঘটিত ধারাবাহিক পরিবর্তনের চক্রাকার পুনরাবৃত্তিকে হৃদচক্র বা Cardiac cycle বলে। যেহেতু হৃদস্পন্দনের হার গড়ে মিনিটে ৭৫ বার সেহেতু হৃদচক্রের স্থিতিকাল ০.৮ সেকেন্ড। কার্ডিয়াক চক্র ৪টি ধাপে সম্পন্ন হয়। যথা –
১. অলিন্দের ডায়াস্টোল
অলিন্দ শ্লথন অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে শিরার মাধ্যমে কম চাপে রক্ত অলিন্দে ফেরত আসে। পালমোনারী শিরা দ্বারা O2 সমৃদ্ধ রক্ত বাম অলিন্দে এবং ভেনাক্যাভা দ্বারা CO2 সমৃদ্ধ রক্ত ডান অলিন্দে প্রবেশ করে। এই সময় হৃদপিন্ডের পেশী থেকেও CO2 সমৃদ্ধ রক্ত করোনারী সাইনাসের মাধ্যমে ডান অলিন্দে আসে। প্রথম দিকে বাইকাসপিড ও ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ থাকে। কিন্তু অলিন্দদ্বয় রক্তে পূর্ণ হলে চাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে কপাটিকাদ্বয় খুলে যায়। এই দশার সময়কাল ০.৭ সেকেন্ড।
২. অলিন্দের সিস্টোল
অলিন্দের ডায়াস্টোল শেষ হলে একই সাথে অলিন্দদ্বয়ের সংকোচন ঘটে। একে অলিন্দের সিস্টোল বলে। এর ফলে রক্ত নিলয়ে প্রেরিত হয়। এই দশার সময়কাল ০.১ সেকেন্ড।
৩. নিলয়ের সিস্টোল
অলিন্দের সিস্টোলের পরপরই নিলয়ের সংকোচন ঘটে। একে নিলয়ের সিস্টোল বলে। নিলয়ের সংকোচনে নিলয়ে চাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে বাইকাসপিড ও ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয় এবং একই সাথে পালমোনারী ও মহাধমনীর মুখের সেমিলুনার কপাটিকা খুলে গিয়ে নিলয়ের রক্ত ধমনীতে প্রবেশ করে। নিলয়ের সিস্টোলের কারণে বাইকাসপিড ও ট্রাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধের সময় প্রথম যে শব্দের সৃষ্টি হয় তাকে লাব বলে। এই দশার সময়কাল ০.৩ সেকেন্ড।
৪. নিলয়ের ডায়াস্টোল
নিলয়ের সিস্টোলের পরপরই নিলয়ের ডায়াস্টোল শুরু হয়। এই দশার সময়কাল ০.৫ সেকেন্ড। মহাধমনী ও পালমোনারী ধমনীতে যে উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয় তাতে কিছু রক্ত ধমনীগুলোর মাধ্যমে নিলয়ে ফেরত আসতে চায়। এতে ধমনী মুখের সেমিলুনার কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায় এবং নিলয়ে রক্ত ফেরত আসা বন্ধ হয়। সেমিলুনার কপাটিকা বন্ধের সময় যে দ্বিতীয় শব্দের সৃষ্টি হয় তাকে ডাব বলে। সেমিলুনার কপাটিকা বন্ধ অবস্থায় নিলয় রুদ্ধ গহ্বরে রূপ নেয়। এটা ০.০৪ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। নিলয়ের অভ্যন্তরীণ চাপ ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে অলিন্দের অভ্যন্তরীণ চাপ অপেক্ষা কম হয়ে পড়লে অলিন্দ-নিলয় ছিদ্র পথের কপাটিকা খুলে যায়। এতে পুনরায় অলিন্দ হতে রক্ত প্রথমত ক্ষিপ্রগতিতে এবং পরে মন্দীভূত গতিতে নিলয়ে প্রবেশ করে। এভাবে চক্রের পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে।