ঈদুল আযহার বিধান

ঈদুল আযহার বিধান

ঈদুল আযহার বিধান

প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা আজকে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব ঈদুল আযহার বিধান সম্পর্কে সামনে ঈদুল আযহা কোরবানির ঈদ এই কুরবানীর ঈদ উপলক্ষে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব ঈদুল আযহার বিধান বিস্তারিত

চলুন জেনে নিই ঈদুল আযহার বিধান

মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করছি যে তিনি আমাদেরকে দীর্ঘজীবী করেছেন যার ফলে আমরা আজকে এই দিনগুলোতে উপনীত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর নিকট অর্জন করার জন্য ইবাদত অনেক আমল করার সুযোগ পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ
ঈদ এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য এবং দ্বীনের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। তোমার দায়িত্ব এটা গুরুত্ব ও সম্মানসহ
 গ্রহণ করা।
 আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [الحج : ٣٢]
 
তাই হচ্ছে আল্লাহর বিধান যে আল্লাহর নির্দেশনা সমূহকে সম্মান করতে জানে নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকে
সংক্ষিপ্ত কিছু আদব ও আহকাম ঈদের ব্যাপারেঃ

তাকবীরঃ

ঈদুল আযহার বিধান হচ্ছে আরাফার দিনের ফজর থেকে শুরু করে তাশরিকের দিনের শেষ পর্যন্ত, জিলহজ মাসের ১৩ তারিখ তাকবীর বলা
আল্লাহ তাআলা বলেন 
 
﴿ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ ٢٠٣ ﴾ [البقرة: ٢٠٣]
 
“আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে।”[2] তাকবীর বলার পদ্ধতি:
 
“الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد “
আল্লাহর যিকির বুলন্দ ও সর্বত্র ব্যাপক করার নিয়তে পুরুষদের জন্য মসজিদ, বাজার, বাড়িতে ও সালাতের পশ্চাতে উচ্চ স্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত।

কোরবানি করাঃ

ঈদুল আযহার বিধান গুলোর মধ্যে আরও একটি হচ্ছে  ঈদের দিন ঈদের সালাতের পর কোরবানি করা হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,
من ذبح قبل أن يصلي فليعد مكانها أخرى، ومن لم يذبح فليذبح » [رواه البخاري ومسلم].
 
যে ব্যক্তি ঈদের আগে জাহিদ করল তার উচিত তার জায়গা আরেকটি কোরবানি করা আর যে এখনো কোরবানির করেনি তার উচিত এখন কোরবানি দেওয়া
চারদিন কোরবানি করার সময় থাকে অর্থাৎ নহরের দিন ও তার পরবর্তী তাশরিকের তিন দিন
রাসূল সাঃ বলেছেন যে,
 
«كل أيام التشريق ذبح» انظر السلسلة الصحيحة “
 
তাশরীকের দিন কুরবানির দিন।[4]

পুরুষদের জন্য গোসল ও সুগন্ধি মাখাঃ

ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি এই আনন্দে আমরা ঈদের দিনে গোসল করে পাক-পবিত্র তা হয়ে নতুন জামা কাপড় পরিধান করে থাকি কাপড় পরিধান করার কিছু নিয়ম রয়েছে পুরুষদের টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান না করা কাপড়ের ক্ষেত্রে অবুঝ মনে না করা দাড়ি বা মনডানো কেনা এটাই হারাম।
 নারীদের জন্য ঈদগায়ে যাওয়া বৈধ তবে আতর ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করা মুসলিম নারীদের জন্য কখনো শোভা পায় না যে সে আল্লাহর ইবাদতের জন্য তারাই গোনা হতে লিপ্ত হয়ে ধর্মীয় কোন ইবাদতে অংশগ্রহণ করে যেমন সুন্দর্য প্রদর্শন সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি ।
করে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া ঈদের দিনে আমরা গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হয়ে অর্জন করার চেষ্টা করব এটা হচ্ছে মুস্তাহাব ঈদের দিনে সকল মুসলিম সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয় যে কারণে জুম্মার দিন গোসল করা মুস্তাহাব সে কারণেই ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব হাদিসে রয়েছে
صح عن ابن عمر- رضى الله عنهما- أنه كان يغتسل يوم الفطر قبل أن يغدوا إلى المصلى. رواه الإمام مالك في أول كتاب العيدين وقال سعيد بن المسيب سنة الفطر ثلاث: المشي إلى المصلى، والأكل قبل الخروج، والاغتسال. [ إرواء الغليل للألباني]
ইবনে উমর রা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।[5] সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রহ. বলেন: ঈদুল ফিতরের সুন্নত তিনটি: ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, ঈদগাহের দিকে রওয়ানার পূর্বে কিছু খাওয়া, গোসল করা। এমনি ভাবে সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব।[6]

কুরবানির গোস্ত ভক্ষণ করাঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ঈদের দিন ঈদুল আযহার দিনে তিনি কোন খাবার খেতেন না , যতক্ষণ না তিনি ঈদগাহে থেকে ফেরত আসেন, সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কোরবানির গোশত থেকে ভক্ষণ করেছেন
ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা সুন্নত এবং ঈদুল আযহা ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কোরবানির মাংস খাওয়া সুন্নত হাদিসে রয়েছে,
— عن بريدة- رضى الله عنه- قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يأكل، ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع، فيأكل من أضحيته . [رواه أحمد، وصححه الألباني في صحيح ابن ماجه]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে সালাত আদায় করতেন না আর ঈদুল আযহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খাবার খেতেন সালাত থেকে ফেরত এসে কোরবানির মাংস খেতেন

পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াঃ

পায়ে হেঁটে ঈদগাহে  মাঠে গিয়ে সালাত আদায় করা সুন্নত রাসুল সাঃ বলেছেন যে বৃষ্টি ও অন্য কোন কারণে মসজিদে পড়া বৈধ । ঈদের দিনে ঈদগাহ মাঠে খুব তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিত এবং উত্তম কারণ ঈদগাহে মাঠে গিয়ে ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী স্থানে বসা ভালো একটি কাজ তাই তাড়াতাড়ি ঈদগাহে মাঠে পৌঁছানো। ভালো মুসলমানের কাজ ঈদগা মাঠে তাড়াতাড়ি গিয়ে সালাত আদায়ের অপেক্ষা করা খুব ভালো সো  সওয়াব কাজ ঈদগা মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়া মুস্তাহাব তাই মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করবেন ।
হাদিসে এসেছে,
 
عن علي- رضى الله عنه- قال: من السنة أن تخرج إلى العيد ماشيا. رواه الترمذي وحسنه وقال: والعمل على هذا عند أكثر أهل العلم: يستحبون أن يخرج الرجل إلى العيد ماشيا، وأن لا يركب إلا بعذر. [حسنه الألباني في صحيح سنن الترمذي]
 
আলী রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন সুন্নত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া ইমাম তিরমিজি হাদিসে বর্ণনা করে বলেছেন হাদিসটি হাসান তিনি আরো বলেছেন অধিকাংশ আলেম অনুযায়ী আমল করেন।
 তিনি আরো বলেছেন যে অধিকাংশ আলেম এর অনুযায়ী আমল করেন ও তাদের মত ঈদগাহ ে পায়ে হেঁটে যাবে এটা মোস্তাহাব গ্রহণযোগ্য কোন কারণ ছাড়া যানবাহনে আরোহন করবে না

জামাতের সাথে সালাত আদায় করা এবং খুতবায়  অংশগ্রহণ করাঃ

উলামায়ে কেরামদের প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, ঈদের সালাত ওয়াজিব। এটাই ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, যেমন
 আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢] “
 
অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর”।[9]
ঈদের সালাতের ওয়াজিব রোহিত হবে না উপযুক্ত কোন কারণ ছাড়া মুসলিমদের সাথে মহিলারাও ঈদের হাজির হবে এমনকি ঋতুমতী মহিলা ও যুবতী মেয়েরাও তবে ঋতুমতী মহিলারা ঈদগাহে থেকে দূরে অবস্থান করতে হবে

রাস্তা পরিবর্তন করাঃ

ঈদুল আযহার বিধান হচ্ছে এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া ও অপর রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে বাসায় ফিরে আসা মুস্তাহাব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে একটি সুন্নত কাজ হচ্ছে যে যে পথ দিয়ে ঈদগাহে যাবে সে পদে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসা
হাদিসে রয়েছে,
عن جابر- رضى الله عنه- قال: كان النبي إذا كان يوم العيد خالف الطريق. ]رواه البخاري [
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসতেন

ঈদের শুভেচ্ছা জানানোঃ

ঈদের দিনে মুসলমানের একে অপরের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যেমন বলা হয়
تقبل الله منا ومنكم. أو تقبل الله منا ومنكم صالح الأعمال
 
অর্থঃ
আল্লাহ আমাদের থেকেও তোমাদের থেকে নেক আমলসমূহ কবুল করুন। বা এ ধরনের অন্য কিছু বলা।
একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো অভিবাদন করা মানুষের সুন্দর চরিত্রের একটি দিক এতে খারাপ কিছু নেই বরঞ্চ এর মাধ্যমে একে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা ও দোয়া করা যায় পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্ব আন্তরিকতা সৃষ্টি পায়। মুসলমানদের বন্ধুত্ব টিকে রাখার জন্য এবং ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য এটা খুবই প্রয়োজন।
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
 
আল্লাহ তা’আলা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।
ঈদ মোবারক বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা প্রত্যেকটি মুসলমানের কাজ
প্রতিবছরে আপনারা ভালো থাকুন
كُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ
 
এ ধরনের সকল মার্জিত বাক্যর ধারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
 
তবে প্রথমে উল্লেখিত বাক্য ধারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম কারণ সাহাবায়ে একরামের এ বাক্য ব্যবহার করতে এতে পরস্পরের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া রয়েছে আর যদি কেউ সব বাক্যগুলো ধারা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে চায়  তাতে কোন সমস্যা  নেই।

ঈদের দিনে দেখা হলে বলবে

تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ ، كُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ، عِيْدُكَ مُبَارَكٌ
 
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার ও আপনার সৎকর্ম সমূহ কবুল করুক সারা বছরে আপনারা সুখে থাকুন ইনশাআল্লাহ এই দোয়া কামনা করি আপনাকে বরকতম ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদুল আযহা উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি মহান আল্লাহ তায়ালা নিয়মকারণ করে রেখেছেন সেগুলো পালন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানে বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *