কাঁঠালের উপকারিতা
কাঁঠালের উপকারিতা
বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত ফলের নাম হচ্ছে কাঁঠাল। কাঁঠাল হল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠাল একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। কাঁঠাল আমরা পাকা কিংবা কাঁচা দুই ভাবেই খেতে পারি। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়, হালুয়া বা ভর্তা হিসেবে খাওয়া যায়, অনেক ভাবে খাওয়া যায়। কাঁঠালের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো কাঁচা কাঁঠাল রোগ ব্যাধি উপশমের যেমন কার্যকর অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
যেমনিভাবে কাঁঠাল খাওয়া যায় তেমনি কাঁঠালের বিচিও খাওয়া যায়। কাঁঠালের বিচি হল শর্করা জাতীয় খাবার। আপনি চাইলে কাঁঠালের বিচির তরকারি হিসেবে রান্না করে
খেতে পারেন আবার হালুয়া বানিয়ে খেতে পারেন, অনেক সময় দেখা যায় অনেকে ভর্তা রান্না করেও খায়। এই সকল বিষয়ে মাথায় রেখে আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হল কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল কাঁঠালের উপকারিতা।
কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে কাঁঠালের পুষ্টিগুণতা সম্পর্কে। নিচে কাঁঠালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কাঁঠালের পুষ্টিগুণ
কাঁঠালের ঔষধি গুন
কাঁঠাল রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন। কাঁঠাল গাছের শিকড় বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। কাঁঠালের শিকড় হাঁপানি নিরাময় করতে সাহায্য করে। যাদের কিনা হাঁপানি জাতীয় সমস্যা রয়েছে তারা কাঁঠালের শিকর সিদ্ধ করে তার পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কাঁঠালের শিকড় চর্ম রোগের সমস্যা সমাধানে খুবই উপকারী। সকল কিছুর পাশাপাশি জ্বর কিংবা ডায়রিয়া নিরাময় ও কাঁঠালের শিকড় খুব ভালো উপকারী উপকার করে।
ভিটামিন b6
কাঁঠালের রয়েছে ভিটামিন বি 6। এছাড়া ভিটামিন b6 হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাই কাঁঠাল খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর সম্ভব।
ম্যাঙ্গানিজ
কাঁঠালের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান এবং ম্যাঙ্গানিজ। আর ম্যাঙ্গানিজ রক্তে শর্করা এবং চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই কাঁঠাল খেলে দেখা যাবে আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ এবং শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট
কাঁঠালে রয়েছে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। আর ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট আলসার ক্যান্সার এবং উচ্চ রক্তচাপ দূর করে। ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই কাঁঠাল খেলে এ সকল রোগের নিরাময়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি
কাঁঠালের রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি জাতীয় উপাদান। ভিটামিন সি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চুল দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। আর এই ভিটামিন সি রয়েছে কাঁঠালে। কাঁঠালের রয়েছে ভিটামিন এ যা কিনা রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই কাঁঠাল খাওয়ার ফলে আপনি বিভিন্নভাবে উপকৃত হবেন।
এতক্ষণ আমরা জেনেছি কাঁঠালের পুষ্টি গুলো সম্পর্কে এখন জানবো কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে। নিচে কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কাঁঠালের উপকারিতা
রক্তস্বল্পতা
কাঁঠালের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো রক্তস্বল্পতা দূর করা। কেননা কাঁঠালের রয়েছে প্রচুর পরিমাণের খনিজ উপাদান আয়রন যাদের রক্তস্বল্পতা দূর করে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তখন আমরা অবশ্যই কাঁঠাল খাওয়ার চেষ্টা করব। শিশু খাদ্য হিসেবে ছয় মাস বয়সের পর থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মায়ের দুধের পাশাপাশি কাঁঠালের রস খাওয়ানো যেতে পারে। কিন্তু এই কাঁঠালের রস খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। যা কিনা একটি শিশুর বিভিন্ন খাদ্য চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি খুদা নিরাময় করে থাকে।
গর্ভবতী এবং স্তন দানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে কাঠাল একটি উৎকৃষ্ট উপকারী খাদ্য। গর্ভবতী মহিলারা কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্বের সন্তানের বৃদ্ধির স্বাভাবিক থাকে এবং সন্তানের ওজন ও বৃদ্ধি হয়। চিকিৎসকের গবেষণা অনুযায়ী প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভে ধারণকৃত শিশু সকল ধরনের পুষ্টি পেয়ে থাকে। তাছাড়া যারা কিনা দুগ্ধদানকারী মা তাদের প্রতিদিন পাকা কাঁঠাল খেলে তাদের স্তনের দুধের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ সকল কথা যারা বোঝা যায় রক্তস্বল্পতাদূর করার জন্য কাঁঠাল একটি উপকারী খাবার।
কোষ্ঠকাঠিন্য
কাঁঠাল হলো একটি আঁশযুক্ত খাবার। এই আঁশ যা ফাইবার নামে পরিচিত। ফাইবার জাতীয় কিংবা আঁশ জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের মাঝে অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগে থাকি। তাদের জন্য অবশ্যই কাঁঠাল একটি উপকারী খাবার। কেননা কাঁঠালের রয়েছে ফাইবার।
চোখ ভালো রাখে
কাঁঠালের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো চোখ ভালো রাখে। চোখ আমাদের খুবই মূল্যবান একটি সম্পদ। তাই সকালে ঐচির চোখের যত্ন নেওয়া। আর আপনার এই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করবে কাঁঠাল। কেননা কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন। আর আমাদের চোখ ভালো রাখার জন্য এই দুই উপাদানটি অপরিহার্য। তাই আপনি যদি আপনার চোখের যত্ন নিতে চান বা চোখকে ভালো রাখতে চান তাহলে অবশ্যই কাঁঠাল খেতে হবে।
ত্বক উজ্জ্বল করে
কাঁঠালের উপকারিতের মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিত হলো ত্বক উজ্জ্বল করা। ত্বক উজ্জ্বল রাখতে চাইলে কেবল বাহিরে থেকে যত্ন নেওয়াটা যথেষ্ট হয়ে ওঠে না। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে ত্বক দ্রুত উজ্জ্বল হয়। কেননা কাঁঠাল এ রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। তাই আপনি যদি আপনার ত্বককে আরো উজ্জ্বল করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কাঁঠাল খেতে হবে।
হাড়
কাঁঠালের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো হাড় গঠন এবং শক্তিশালী করা। কেননা কাঁঠালের রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। আর এই ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়ামের মত উপাদান হাড় গঠনে সহায়তা করে। যদি কোন ব্যক্তির হাড়ের সমস্যা হয় তখন অবশ্যই বেশি বেশি কাঁঠাল খেতে হবে।
ফ্যাট কম
কাঁঠালের মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ একটু কম থাকে। এছাড়া কাঁঠালের ক্ষতিকর ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় কাঁঠাল খেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বা সংখ্যা খুবই কম । আমাদের মধ্যে এমন অনেক ভাই এবং বোনেরা আছেন যারা কিনা তাদের ওজন নিয়ে সংখ্যায় থাকেন এবং কাঁঠাল খান না। কিন্তু কাঁঠালের মধ্যে ক্ষতিকর ফ্যাট কম। তাই আপনারা নিশ্চিন্তে কাঁঠাল খেতে পারেন। কাঁঠাল একটি শক্তিশালী খাবার।
নার্ভ এবং ডাইজেস্ট
কাঁঠাল খেলে টেনশন নার্ভাসনেস এবং বদ হজম কম হয়।
পটাশিয়াম এর উৎস
কাঁঠালের রয়েছে খনিজ উপাদানে ভরপুর। কাঁঠাল হচ্ছে পটাশিয়ামের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে রয়েছে ৩০৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। আর কাঁঠালের রয়েছে পটাশিয়াম। এতে করে বুঝা যায় কাঁঠাল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে এরকম অনেকে আছেন যারা কিনা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা অবশ্যই কাঁঠাল খাবেন।
কাঁঠালের অপকারিতা
প্রতিটি যে জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে অপকারিতা। কিছু কিছু খাবারে উপকারিতা থেকে অপকারিতা বেশি। কিন্তু কাঁঠালের উপকারিতা অনেক এই উপকারিতার মাঝে কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ এর আমিষ থাকায় কাঁঠাল একটি গুরুপাক খাবার। এর মানে হলো আমিষের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি হজম করতে সময় বেশি লাগে। তাই আপনি যদি অধিক পরিমাণে কাঁঠাল খেয়ে ফেলেন তবে আপনার বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যারা কিনা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারা কাঁঠাল খাওয়ার বিষয়ে খুব সচেতন থাকতে হবে। আর ডায়াবেটিস রোগীরা যদি কাঁঠাল খেতে চায় তাহলে অবশ্যই তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর কাঁঠাল খেতে হবে। পৃথিবীতে কোন খাবারে বেশি খাওয়া ঠিক না। এছাড়া আমাদের শরীরে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু খাবারই আমাদের খাওয়া উচিত বেশি পরিমাণ খেলে অবশ্যই তা বদহজমে রূপ নিবে।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনারা সকলে বিস্তারিতভাবে কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাকে আমাদের আজকের আর্টিকেল কাঁঠালের উপকারিতা সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।