এলার্জি । এলার্জি দূর করার উপায়
এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানার আগে এলার্জি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এলার্জি খুবই মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার। যারা এলার্জিতে আক্রান্ত তারাই জানেন এর যন্ত্রণা আসলে কতটুকু। যাদের জীবনে অন্তত একবার এলার্জি হয়েছে তারা বিভিন্নভাবে এলার্জি থেকে মুক্তির চেষ্টা করেছেন। যেহেতু আমরা জানি যে বিভিন্ন খাবারের কারণে এলার্জি হয়ে থাকে তাই সামনে মুখরোচক খাবার রেখে সেই খাবারগুলো আমরা খেতে পারি না। যার কারণে অনেক সময় আমরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে থাকি তবু সম্ভব হয় না আমাদের পছন্দের খাবারগুলো গ্রহণ করা। তাই চলুন আজকে এলার্জি দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করব। এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে আপনি সেই নিয়ম গুলো পালন করতে পারেন তবে হয়তো এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এলার্জি আসলে কি
এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানার আগে চলুন এলার্জি কি সেটা জেনে নেই। বহু মানুষ এলার্জি দ্বারা আক্রান্ত হয়। এলার্জির কারণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি শুরু হয় এবং তা যদি সঠিক গুরুত্ব না দেয়া হয় তবে ধীরে ধীরে পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। সাধারণত বিভিন্ন খাবারের কারণে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এছাড়াও একই প্লাস্টিক দ্রব্য, পারফিউম, চশমা ইত্যাদি যদি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয় তবে সেখান থেকেও এলার্জির উৎপত্তি হতে পারে। এলার্জির অন্যতম কারণ হচ্ছে অনুপযুক্ত খাবার খাওয়া। কোন খাবার যদি আমাদের শরীর গ্রহণ করতে না চায় তবে সেই খাবার আমাদের শরীরে এর বিরুদ্ধে একটা প্রতিক্রিয়া জানান দেয়। অথবা ধরুন আপনি কোন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করছেন অথবা আপনার বিছানা অনেক ময়লা যুক্ত যা আপনার শরীর নিতে পারতেছে না তখন আপনার শরীর এটার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
এলার্জি হওয়ার কারণ
এলার্জি দূর করার উপায় তো জানব, তার আগে কেন এলার্জি হয় সেটা জেনে নেই। এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভ করা যাবে যদি এলার্জি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায়। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন কারণে এলার্জি হতে পারে। কারণ হতে পারে খাবারের কারণে আবার কারো হতে পারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে। সৌন্দর্য তার জন্য অনেক সময় রং ব্যবহার করা হয়। এটার কারণে এলার্জি হতে পারে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনে এলার্জি হয়। পোকামাকড় কামড়ালে অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়াও এলার্জি হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে এটা সময়োপযোগী এবং ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা। আপনার অ্যালার্জি দূর করার পূর্বে কি কারনে আপনার অ্যালার্জি হয়েছে সেই বিষয়টা জানতে হবে। আপনার অ্যালার্জি হওয়ার কারণ উদ্ঘাটন করে যদি তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেয়া যায় তবে এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এলার্জির লক্ষণ
আসলে কিছু লক্ষণ দেখে বুঝা যায় এলার্জি হয়েছে কিনা। এলার্জি নিশ্চিত করার পরই শুধু এলার্জির চিকিৎসা দেওয়া যায়। তাই আমরা লক্ষণগুলো সম্পর্কে একটু আলোচনা করব। যদি ত্বকের চুলকানি হয় এবং ত্বকের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায় যেমন লাল রঙ ধারণ করা তবে বুঝতে পারবেন আপনার অ্যালার্জি হয়েছে। অনেক সময় এলার্জির কারণে ভ্রূণের মত ফুসকুড়ি হয় এবং অনেক জ্বালা পোড়া করে। এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন অংশ হালকা ফাটল ধরতে পারে। এরকম বিভিন্ন লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় এলার্জি হয়েছে কিনা। এগুলো লক্ষণ যদি খেয়াল করেন তবে আপনার এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা দরকার।
এলার্জি দূর করার উপায়
যেহেতু কিছু খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন যাপনের পদ্ধতির উপর আসলে এলার্জির সংক্রমণ নির্ভর করে তাই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে এলার্জি দূর করা যায়। আজকে যেহেতু এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই কয়েকটি এলার্জি দূর করার উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো। যারা এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান তারা আর্টিকেলটি ভালভাবে পড়ুন এবং সেই নিয়ম গুলো ফলো করলে আপনারা এলার্জি দূর করতে পারবেন। তবে চলুন দেরী না করে এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।
নিম পাতার দ্বারা এলার্জি দূর করার উপায়
কিছু নিমপাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিন। এই নিমপাতার গুড়ো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি পাত্রে সংরক্ষণ করুন। লক্ষ্য করুন পাত্রটি যেন বায়ুরোধী হয় তাহলে আপনি বেশিদিন নিমপাতার গ্রুপগুলোকে সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই নিম পাতার গুঁড়া থেকে 1 চা চামচের 3 ভাগের 1 ভাগ নিম পাতার গুড়া এক চা চামচ ইসবগুলের ভুষির সাথে এক গ্লাস পানিতে আধাঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এই ভিজিয়ে রাখার পর নিম পাতার গুড়া সম্পূর্ণ পানি আপনি সকালে খালি পেটে খান। একইভাবে আপনি নিম পাতার গুড়া দুপুরবেলায় ভরা পেটে এবং শোয়ার আগে প্রতিদিন খেয়ে নিন। এভাবে যদি আপনি এক টানা 21 দিন নিম পাতার গুড়া খেতে পারেন তবে আপনার অ্যালার্জি দূর হয়ে যেতে পারে। যেহেতু নিম পাতার গুড়া অনেকটা তিতা কিন্তু এরা যে যন্ত্রনা এর থেকেও মারাত্মক। তাই এলার্জি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম উপায় নিম পাতার গুড়া খেয়ে নিন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার এলার্জি দূর হয়ে গেছে।
কর্পূর এবং নারিকেল তেল
কর্পূর এবং নারিকেল তেল একসাথে ব্যবহার করে এলার্জি দূর করা যায়। প্রথমে কর্পূর এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে নিন এবং যে জায়গাটাতে এলার্জি চুলকানি হচ্ছে সেই জায়গাটাতে মিশিয়ে দিন। তাহলে দেখবেন দ্রুত আপনার অ্যালার্জি দূর হয়ে গেছে এবং আপনি কিছুটা আরাম বোধ করছেন। যেহেতু কর্পূর এবং নারিকেল তেল দ্বারা এলার্জি দূর করার উপায় খুব সহজ তাই যাদের বেশি বেশি এলার্জি হয় তারা ঘরে কর্পূর রাখুন। আর নারিকেল তেল তো সবারই কম বেশি থাকে।
অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ এলার্জি দূর করার উপায়
যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা এলোভেরা একটি চারা রোপণ করতে পারেন। যখন দেখবেন আপনার শরীরের কোথাও এলার্জি হয়েছে তখন অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করুন। প্রথমে এলোভেরা থেকে জেল বের করে নিন এবং আপনার যে জায়গাটাতে এলার্জি হয়েছে সেই জায়গাতে প্রয়োগ করুন। দেখবেন এলোভেরাতে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল থাকায় ত্বকের জ্বালাপোড়া কমে যাবে এবং এলার্জি দূর হবে
মৌরি, পুদিনা পাতার সাথে আদা
তরতাজা আধার সাথে মৌরি এবং পুদিনা পাতা একসঙ্গে করে তা গরম জলে ফুটিয়ে নিন। তারপর তা খাবার উপযোগী হলে পান করুন। এটি প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার করতে পারেন। এগুলো আপনার শরীরের এলার্জি দূর করতে সহায়তা করবে।
তুলসী ব্যবহার করে এলার্জি দূর করার উপায়
তুলসী পাতা anti-inflammatory রয়েছে যা ত্বকের চুলকানি রাস করে। একমুঠো তুলসীপাতা ভালো করে ধুয়ে নিন এবং খুব ভালো করে পেস্ট করে নিন। আক্রান্ত স্থান পেস্ট লাগিয়ে 30 মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বকে এলার্জি হলে দেখবেন একটি ভালো কাজ করছে। তাই দিনে কয়েকবার ব্যবহার করতে পারেন।
যে সকল খাবারে এলার্জি হয়ে থাকে
সাধারনতো কিছু খাবারে এলার্জি হয় সেই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকুন। একেকজনের একেক ধরনের খাবার থেকে অ্যালার্জি হয়ে থাকে তবে সাধারণ একটি তালিকা দেয়া হলো যেন আপনারা সতর্ক থাকতে পারেন সেই সকল খাবার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে।
- গরুর মাংস
- চিংড়ি
- বেগুন
- ইলিশ মাছ
- বাদাম
এই খাবারগুলোর দ্বারা সাধারণত এলার্জি হয়ে থাকে। যাদের প্রাথমিকভাবে এলার্জি ধরা পড়েছে তারা এই সকল খাবার থেকে দূরে থাকুন। এছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে ডিম এবং দুধের মধ্যেও এলার্জি দেখা গেছে।
মুখের এলার্জি দূর করার উপায়
মুখ আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণীয় অঙ্গ। মুখে যদি এলার্জি হয় তবে খুবই যন্ত্রণায় পোহাতে হয়। তাই মুখে এলার্জি মুক্ত রাখা উচিত। কয়েকটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে মুখে এলার্জি মুক্ত রাখা যায়। মুখে এলার্জি মুক্ত রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। নিম পাতার রস মুখে মাখলে ও এলার্জি দূর হতে পারে। এছাড়া আপনার মুখের যে স্থানটিতে এলার্জি হয় সেখানে বরফ লাগালে চুলকানি থেকে মুক্তি মিলবে। অতিরিক্ত মেকআপ করার ফলে যেহেতু অ্যালার্জি হতে পারে তাই অতিরিক্ত মেকআপ থেকে দূরে থাকা উচিত। এছাড়াও আপনি নিয়মিত গোসল করবেন এবং যদি চান তবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন দেখবেন আপনার এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
মাথার এলার্জি দূর করার উপায়
মাথায় এলার্জি হলে প্রচুর পরিমাণে চুলকানি হয়। যদি মাথায় এলার্জি হয় তবে অবশ্যই মাথা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যদি নিয়মিত তেল ব্যবহার করেন তবে দেখবেন মাথার এলার্জি দূর হয়ে যাবে। মাথায় এলার্জি হলে এলার্জি দূর করার উপায় হচ্ছে এলোভেরা জেল ব্যবহার করা। এছাড়া মাথায় যদি অলিভ অয়েল তেল দিন এলার্জির বিরুদ্ধে সফলতা পাবেন। এছাড়া আপনি যে বালিশ চিরুনি ব্যবহার করছেন সেগুলো অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হবে। আপনি যদি কোন হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন তবে অবশ্যই জেনে নিন সেগুলো আপনার ত্বকের জন্য এলার্জির কারণ হবে কিনা।
চোখের এলার্জি দূর করার উপায়
চোখ আমাদের দেহের অন্যতম একটি সংবেদনশীল অঙ্গ। তাই চোখের ব্যাপার আমাদের যথেষ্ট যত্নবান হওয়া উচিত। চোখে যদি এলার্জি হয় তবে প্রচুর যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। চোখ ফুলে যায় এবং চোখ লাল হয়ে যায়। চোখের এলার্জি দূর করার উপায় হচ্ছে পানি ব্যবহার। চোখের এলার্জি দূর করুন যেকোন সংক্রমনের উপায় হচ্ছে পানি। চোখে এলার্জি হয় তবে এলার্জি দূর করা যায়। এছাড়া এলার্জি দূর করার আরেকটি উপায় রয়েছে। তিন চামচ লবণ মিশিয়ে এরপর ভালো করে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন এবং চোখের চারপাশ ছেড়ে দিয়ে ভালো করে মুছে নিলে ভালো ফল পাবেন। যখন বাইরে যাবে তখন সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
নাকের এলার্জি দূর করার উপায়
নাকের এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। কারণ নাকে এলার্জি হয় তবে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ধুলাবালি থেকে অ্যালার্জি নাকের হয়ে থাকে। তাই আপনি যে ঘরে বসবাস করছেন সেই ঘরকে ধুলাবালিমুক্ত রাখতে হবে। তাই নাকের এলার্জি দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নাকে মাস্ক ব্যবহার করা।