জিনসেং এর উপকারিতা / জিনসিন এর উপকারিতা

জিনসেং এর উপকারিতা

ঘুরেফিরে শেষ পর্যন্ত আমরা প্রকৃতির দিকে ফিরে যাচ্ছি।   জিনসেং তেমনি একটা প্রাকৃতিক ঔষধ।  এটা সাধারণত হোমিওপ্যাথি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  হাজার বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক চিকিৎসায় এই জিনসেং ব্যবহার করা হয়েছে ।  সাধারণত চৈনিক চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি গাছ ব্যবহার করা হতো।  তাই আজকে আমরা আলোচনা করব এই  জিনসেং এর উপকারিতা।

জিনসেং এর প্রকারভেদ

জিনসেং এর উপকারিতা জানার ক্ষেত্রে আগে আমরা জানবো জিনসেং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে। জিনসেং দুই প্রকারের হয়ে থাকে।  একটা হল সাদা জিনসেং এবং অপরটি হল লাল জিনসেং অথবা কোরিয়ান জিনসেং।

জিনসেং এর উপকারিতা

প্রাকৃতিকভাবে মানুষের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় জিনসেং এর উপকারিতা রয়েছে যথেষ্ট।   নিচে এমন কিছু    জিনসেংএর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

জিনসেং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

জিনসেং এর উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।  সাধারণ ঠান্ডা জ্বর দূর করতে জিনসেং চা ব্যবহার করা হয়।  তাছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার শক্তিশালী করতে জিনসেংএর চা খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। জিনসেং এর চা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের উপকার করে থাকে। কেননা জিনসেং হলো প্রাকৃতিক একটি উপাদান।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে জিনসেং

জিনসেংএর চা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।  তাছাড়া এই বিষয়টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত।  এতে করে বোঝা যায় আমাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা আছে।  তারা অবশ্যই জিনসেং এর চা সেবন করতে পারেন।

হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনের জিনসেং

আমাদের মা বোনদের মধ্যে প্রায় সকলেরই হরমোন জাতীয় সমস্যা রয়েছে।  তাই নারীদের জন্য জিনসেং এর চা এর উপকারিতা অপরিসীম।  কেননা জিনসেং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার এন্ডোমেট্রিওসেস এবং এই ধরনের সমস্যাগুলো দূরে রাখে। তাই প্রত্যেকটা নারীর উচিত জিনসেং এর চা রেগুলার সেবন করা।

জিনসেং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে

জিনসেং এর উপকারিতের মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা।  আমেরিকান ও কোরিয়ান দুই পদের জিনসেং শরীরের ইনসুলিন রেজিস্ট্রেশন কমায়।  এর ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে।  আমাদের মধ্যে যাদের কিনা টাইপ টু ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য জিনসেং চা এর উপকারিতা অপরিসীম।  যাদের কিনা যৌন সমস্যা আছে তারা অবশ্যই এই চা পান করবেন।

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি

যারা মানসিক অবসাদ বা মানসিক অশান্তিতে ভুগছেন তারা জিনসেন এর চিকিৎসা নিতে পারেন।  যেহেতু বিপাকে উত্তেজিত করে তাই এটা স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে।  জিনসেং উপকারিতা নিয়ে যদি আলোচনা করতে যায় তবে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির ব্যাপারটি সবার প্রথমেই চলে আসে।  জিনসেং এর মধ্যে এক ধরনের  অ্যাডাস্ট্রোজেন নামে উপাদান থাকে।  এই উপাদানটি হরমোনাল স্থল বদলানোর ক্ষমতা রাখে।  তাই জিনসেং খাবার ফলে স্নায়ু চাপ কম হয় এবং যেকোনো মুহূর্তে   মানসিক অবস্থা ভালো থাকে।

ওজন কম করতে জিনসেং এর ব্যবহার

যারা বেশি খাবার ফলে দ্রুত মোটা হয়ে যাচ্ছেন তারা জিনস্যাং খেতে পারেন।  জিন্সেন এর মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যেগুলো আপনার খাবার ইচ্ছা কে ট্রিগার করে কমিয়ে রাখে।  যার ফলে আপনার খাবারের প্রতি ইচ্ছা অনেকটা কমে যাবে এবং এটি ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

চুলের জন্য জিনসেং  এর উপকারিতা

একেকজনের চুলের একেক ধরনের প্রবলেম থাকে।  কারো চুল পড়ে যায় অথবা কারো চুল তার সৌন্দর্য হারায়।  এই ধরনের চুলের যত্নে আপনারা জিনসেং এর উপকারিতা গ্রহণ করতে পারেন। যেহেতু জিনসেং এর মধ্যে অনেক প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট থাকে এগুলো চুলের দেখাশোনার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে জিনসেং এর উপকারিতা

জিনসেং আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ভাবে উপকার করে থাকে। ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে জিনসেং এর উপকারিতা মধ্যে অন্যতম একটি উপকার হল বয়সের ছাপ কমায়।

বয়সের ছাপ কমায়

অনেক সময় দেখা যায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ছাপ পড়ে যায়।  আর এই ছাপ গুলোর কারণে আমাদের দেখতে অনেকটা বৃদ্ধ মনে হয়।  কিন্তু জিনসেং শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায় এবং ত্বককে রক্ত সংবহন উন্নত করে। আর এই দুটি বিষয়ে বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।  এই বিষয়গুলো কোলাজেন এর সংশ্লেষণ বাড়ায় এবং এর ফলে ত্বক মসৃণ ও টানটান হয়ে থাকে।  এর ফলে ত্বকে সুখ্য রেখা বলিরেখা সহ বয়সের অন্যান্য চিহ্ন দেখা দিতে পারে না।  জিনসেং উপাদানটি এন্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর এটি পরিবেশের ক্ষতিকর  উপাদানের হাত থেকেও ত্বককে রক্ষা করে।

ত্বকের রং উজ্জ্বল করে

জিনসেং ত্বকের নিষ্প্রাণ ভাব কাটিয়ে তুলে জিল্লা ফিরিয়ে দেয়। জিনসেং এর উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা।  জিনসেং ত্বকের মেলালিন উপাদান ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে এটি হাইপারপিগমেন্টেশন ও কমায়।  অনেক সময় দেখা যায় পরিবেশের বিভিন্ন দূষণের কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ছিদ্র তৈরি হয় এবং দাগ তৈরি হয়।  জিনসেং উপাদানটিতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে পরিবেশের এই দূষণের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে ।

ত্বকের তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে

আপনার ত্বকের তেল উৎপাদন ক্ষমতা যদি আপনি নিয়ন্ত্রণে না রাখেন তাহলে আপনার ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেশি।  কেননা ত্বকে যে তেল উৎপাদন হয় সেই তেল জমাট বেঁধে ব্রণের সৃষ্টি হয়।  মনে করা হয়ে থাকে এই কঙ্গো জাতীয় ভেষষ্টির জল ধরে রাখার ক্ষমতা অনেক বেশি। জিনসেং উপাদানটিতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা ত্বকের তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিকভাবে।  জিনসেং উপাদানটির ফলে আপনার ত্বকের তেল উৎপাদন ক্ষমতা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করি।

জিনসেং এর কিছু ক্ষতিকর দিক

প্রত্যেকটা জিনিসেরই যেমন ভাল দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু ক্ষতিকারক দিক। জিনসেং উপাদানটিআমাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে।  কিন্তু এই উপাদানটিরও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।  কেননা কোন জিনিসই বেশি খাওয়া উচিত নয়। জিনসেং এর সবচেয়ে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিকা হল ঘুমের সমস্যা।  কেননা জিনসেং স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং মানসিক ক্ষমতা বাড়ায়।  এবং এই উত্তেজিত স্নায়ুর কারণে ঘুম আসতে দেরি হয়।  অনেক সময় দেখা যায় অনেক বেশি কফি খাওয়ার ফলে আমাদের ঘুম আসে না।  এ ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হয়ে থাকে।  এছাড়াও আরো কিছু সমস্যা রয়েছে।  আর এই সমস্যাগুলো হল ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, হার্টবিট বেশি হওয়া, এবং ব্লাড প্রেসারের তারতম্য হওয়া, ব্লাড প্রেসারের তারতম বিষয়টা হলো সাময়িকের জন্য।  আপনাকে অবশ্যই যেকোনো ধরনের খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যেন এই খাবারটা আপনাকে কোনভাবে ক্ষতি না করে।  আর আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে কোন খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে এর ক্ষতিকর দিকটা ভোগ করতে হবে।  তাই কোন কিছু প্রয়োজনের বেশি খাবেন না।

জিনসেং যাদের খাওয়া নিষেধ

জিনসেং বাচ্চা গর্ভবতী ও স্তনদানকারী মায়েদের খাওয়া নিষেধ।  কেননা জিনসেং স্নায়ু তন্ত্রেরউপর কাজ করে তাই স্নায়ুর ওপর কাজ করে এমন অন্য কোন ওষুধ এর সঙ্গে জিনসেং খাওয়া উচিত নয়। জিনসেং রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে।  তাই হার্টের রোগীরা যারা ইতিমধ্যে রক্ত তরল করার  জন্য অন্যান্য ওষুধ খাচ্ছেন তারা এই ওষুধের সাথে জিনসেং খাবেন না।  আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি জিনসেং ব্লাড সুগার কমাতে সহায়তা করে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এটা খাওয়া উচিত যাতে ওষুধের সাথে জিনসেং  গ্রহণে সুগার যেন বেশি কমে না যায়। তাই বলা যায় যে যেকোনো ধরনের ভেষজ উপাদান খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।  কেননা আপনার কোন ধরনের সমস্যা রয়েছে আগে থেকে সেটা আপনি না জেনে যদি জিনসেং উপাদানটি সেবন করেন তাহলে এটা ভালোর বদলে খারাপ হয়ে যেতে পারে।

আমাদের আজকের আটকেলের বিষয়টি ছিল জিনসেং এর উপকারিতা সম্পর্কে।  আশা করি আপনারা সকলে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন জিনসেং এর উপকারিতা সম্পর্কে।  আপনি কি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *