বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা
ভূমিকা:
মানুষ ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। এই পছন্দ কে কাজে লাগিয়ে ভ্রমণ বান্ধব এক ধরনের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে ।তার নাম পর্যটন শিল্প। এই শিল্পের কাজ হল কোন অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোর তথ্য ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে তুলে ধরা, ভ্রমণের সুবন্দোবস্ত গলা, এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা।
বাংলাদেশের একাধিক বনাঞ্চল, পাহাড় নদী ঝর্ণা, শস্য ভরা মাঠ ও সবুজ প্রকৃতি, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, নান্দনিক স্থাপত্য, ও ভাস্কর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও নিদর্শন প্রভৃতি দেশে বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। এগুলো বিপুলসংখ্যক বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আসার সুযোগ রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রথমে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র সমূহের দিকে তাকান।
সুন্দরবন:
বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে 6 হাজার বর্গকিলোমিটারের অধিক জায়গা জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বড় গুনা জেলায় এর অবস্থান। সুন্দরী বৃক্ষ, গোলপাতা সহ নানা জাতের উদ্ভিদ এবং চিত্রল হরিণ,বাঘ, বানর, হনুমান সহ নানা জাতের পশুপাখি আবার সেই সুন্দরবন। অভ্যন্তরীণ থাকা অসংখ্য খালে রয়েছে কুমির। রোমান্স প্রিয় পর্যটকগণ করে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতে পারেন। ভয় ও ভালোলাগার অপূর্ব মিশেলের কারণে সুন্দরবন ভ্রমণ যে কোন পর্যটক এর স্মৃতিতে স্থায়ী হয়ে থাকে।
সিলেটের রাতারগুল:
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটে রাতারগুল জলা বন বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির বন। এর আয়তন 3325 একর। 10 ফুট গভীর পানির উপর বনের গাছপালা জেগে থাকে। বর্ষাকালে হয় 20 থেকে 30 ফুট পর্যন্ত। পর্যটকদের নৌকায় করে বনের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এখানে উপভোগ করার মত আছে কদম, হিজল, অর্জুন, ছাতিম প্রবৃত্তি গাছের সৌন্দর্য। বেড়াতে বেড়াতে দেখা হয়ে যায় বানর, বেজি, গুইসাপ, কিংবা সাদা বক, মাছরাঙ্গা, পানকৌড়ি পানকৌরি প্রভৃতি প্রাণী ও পাখি সঙ্গে।
সমুদ্র সৈকত:
কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম( 120 কিলোমিটার দীর্ঘ) প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকত এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা ভিড় করেন কক্সবাজার। সমুদ্র ছাড়াও কক্সবাজার জেলায় রয়েছে একাধিক ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ধর্মীয় উপাসনালয় ও বুদ্ধমূর্তি। স্থাপত্য শিল্পের এগুলো অমূল্য। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা এছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, কক্সবাজারের ইনানী, পটুয়াখালী কুয়াকাটা, সুন্দরবনের একটা, সমুদ্র সৈকতে ভ্রমন পিপাসু বেড়াতে যান।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত সেন্টমার্টিনদ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। নারিকেল গাছ যে সমস্ত দ্বীপজুড়ে। দ্বীপ থেকে সমুদ্রের নীল জলরাশি সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং নানা রকমের প্রবল দেখতে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করেন।বাংলাদেশের পর্বত অঞ্চল সহ বেশকিছু পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছানোসহ যানবাহনের ব্যবস্থা নেই। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
পার্বত্য অঞ্চল:
বাংলাদেশের জেলাসমূহ অর্থাৎ রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, রাঙামাটি বান্দরবান খাগড়াছড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এদিকে উচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেক্স হওয়ার আনন্দ, অন্যদিকে জলের ঝর্ণাধারা পর্যটক অতিভুজ করে। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে নৌকা ভেসে বেড়ানো যায়। সিদ এর উপরে একটি সুদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত আলুটিলা পাহাড়, রিসাং ঝর্ণা, মায়াবিনী লেক প্রভৃতি স্থানে ভ্রমণের হাতছানি পর্যটকরা অগ্রাহ্য করতে পারে না।
সিলেটের জাফলং পিয়াইন নদীতে মনমুগ্ধকর পাথরে জলের ধারা, মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড ঝর্ণা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড় এর চা বাগান, শ্রীমঙ্গলের ইকোপার্ক, প্রস্থান প্রায় সারা বছরই পর্যটক পদচারণায় মুখরিত থাকে। এ অঞ্চলসমূহে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের বর্ণিল জীবন পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ মহেশখালী। বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির পাড়া বৌদ্ধ মন্দির অবস্থিত।
পুরাকীর্তি:
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। পুরান ঢাকার লালবাগে লালবাগ এ অবস্থিত মুঘল স্থাপত্য লালবাগ কেল্লা, বুড়িগঙ্গা নির্মিত আহসান মঞ্জিল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, এ গড়ে ওঠা অনুপম স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট পানাম নগর। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা কুমিল্লায় আবিষ্কৃত প্রাচীন ময়নামতি, বগুড়ার প্রাচীন পুরাকীর্তি মহাস্থানগড়, নর্সিংদি বেলাব উপজেলার অন্তর্গত আড়াই হাজার বছর পূর্বের নিদর্শন সম্বলিত উয়ারী বটেশ্বর গ্রাম, নওগাঁ জেলায় আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুর, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্য নিদর্শন।
ঐতিহাসিক স্থাপনা:
স্থাপত্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। 1952 সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল স্থাপিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাংলাদেশের শহীদদের প্রতি নিবেদিত ঢাকা সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ, 1971 সালের 14 ই ডিসেম্বর এর নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে নির্মিত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং উত্থাপিত স্বাধীনতা জাদুঘর ইতিহাস প্রেমী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের অবস্থা:
পর্যটন বিশ্বব্যাপী একটি সম্ভাবনাময় খাত। বিভিন্ন পরিসংখ্যান জানা যায়, বিশ্বজুড়ে সম্মিলিত পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যয় 50 হাজার কোটি টাকা।বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা এমন অনেক দেশে রয়েছে, যার প্রধান আয়ের এর উৎস পর্যটন। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প দিনে দিনে বিকাশ লাভ করেছে। একদিকে বিদেশি পর্যটকদের আগমন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাড়িয়ে তুলছে, অন্যদিকে দেশীয় পর্যটকদের ভ্রমণ সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি বছর 50 থেকে 60 লক্ষ দেশীয় পর্যটক বাংলাদেশ এর বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে। এদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক পর্যটক বিভিন্ন স্থানে চলাচল করায় পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতির গতি লাভ করে। পরিবহন< আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, পোশাক, অলংকার প্রভৃতি ব্যবসায় পর্যটন শিল্পের বিকাশের সঙ্গে জড়িত। পর্যটনের বিকাশে অসংখ্য মানুষের জীবিকার সংস্থা হয়। বর্তমানে প্রায় 12 লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, পর্যটন শিল্প 10% পর্যন্ত জিপি জিডিপি অর্জন করা সম্ভব।
পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব:
একটি দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের মধ্যে দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়। পর্যটন এলাকায় অধিবাসীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। পর্যটকদের আগ্রহ রয়েছে এমন স্থান স্থাপনা বিষয়টি স্থানীয় অধিবাসীদের শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। তারা নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ অনুভব করে। এছাড়া বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন একটি মানবিক তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থাপত্য কলা, স্থানীয় অধিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন এবং সাংস্কৃতি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। তবে পর্যটন কে একটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ও স্থায়ী রূপ দিতে দরকার রাষ্ট্রীয় নীতি মালা ও এর প্রয়োগ। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা পর্যটন কেন্দ্রের অধিবাসীদের ও পর্যটকদের সহযোগিতায় সম্পৃক্ত করা উচিত।
পর্যটকদের যথাযথ নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দেওয়া গেলে ভ্রমণের প্রতি তাদের উৎসাহ আরো বাড়বে। এর ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের মানবিক সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য পরিচয় বিশ্বময় ছড়িয়ে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হবে। পৃথিবীব্যাপী পর্যটনশিল্প এখন দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। বাংলাদেশের কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দিলে পর্যটন এলাকা গুলোতে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে।
পরিশেষে বলা যায় আপনারা যদি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে যাতে পর্যটকদের সুবিধার্ অনুযায়ী তারা চলাচল করতে পারে।আশা করি আপনাদের আর্টিকেলটি অনেক ভালো লাগবে।