গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব

আমাদের আজকের আর্টিকেল এ বিষয়টি হলো গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকে আর্টিকেল গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদাস্রাব। 

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব আসলে কি

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব এটা বোঝার আগে আমাদের বুঝতে হবে গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব আসলে কি।  গর্ভাবস্থায় যোনি থেকে সাদা অথবা দুধের মত পাতলা হালকা গন্ধযুক্ত লিকোরিয়া নামক স্রাব বের হতে দেখা যায়।  স্বাভাবিকভাবে এর পরিমান পুনরাবৃত্ত হার এবং ধারাবাহিকতা ভিন্ন হতে পারে। যৌনি স্রাবের বৃদ্ধি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এই প্রক্রিয়াটি গর্ভাবস্থাতেই চলতে থাকে।  এবং গর্ভকালীন অবস্থার শেষের দিকে বা শেষের সপ্তাহ গুলোতে স্রাব এর মধ্যে মোটা শ্লেষ্মা অংশ দেখা যায়,যা কিনা সন্তান প্রসব সংক্রান্ত ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।  অনেক সময় দেখা যায় যৌনি থেকে অস্বাভাবিক ভাবে স্রাব বের হতে থাকে যার রং ভিন্ন হতে পারে।  এবং এই স্রাব গুলোর উপসর্গের সাথে দুর্গন্ধ বের হয়। এই কথাগুলো দ্বারা আমরা বুঝতে পারছি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব।  গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ আরো অনেকগুলো রয়েছে।  এই লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সাদা স্রাব।  অনেক সময় অন্যান্য  লক্ষণগুলো প্রতিফলিত হয় না কিন্তু এই লক্ষণটা গর্ভাবস্থায় হয়েই থাকে সব গর্ভবতী মহিলাদের।

আর আপনার যদি এরূপ অবস্থা অনেক বেশি হয়।  তবে আপনার চিকিৎসকের কাছে এর চিকিৎসা করানো দরকার।

সাদা স্রাব এর লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদাস্রাব এই বিষয়টা আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি।  কিন্তু এখন আমরা জানবো সাদাস্রাবের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি। নিচে স্বাভাবিক স্রাবের উপসর্গগুলি দেওয়া হল।

  • স্বাভাবিক স্রাব হলো পাতলা অথবা গারো শ্লেষ্মা।
  • স্বাভাবিক স্রাবের রং হলো সাদা অথবা দুধের মত।
  • স্বাভাবিক স্রাবে হালকা একটু দুর্গন্ধ দেখা দেয়।
  • স্বাভাবিক স্রাবে গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে রক্তের ছোপ দেখা দেয়।

এখন অস্বাভাবিক কিংবা সংক্রমিত স্রাবের উপসর্গগুলি নিচে আলোচনা করা হলো

  • অস্বাভাবিক স্রাবের রং বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  এবং এই রঙ গুলো হল হলুদ, সবুজ, কিংবা ধূসর রঙের হয়ে থাকে।
  • অস্বাভাবিক স্রাবের গন্ধ খুবই বিশ্রী এবং করা হয়ে থাকে।
  • অস্বাভাবিক স্রাবে যৌনিতে লালচে ভাব অথবা চুলকানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অস্বাভাবিক স্রাবের যৌনির সামনের ভাগ কিংবা যৌনিদার ফুলে যায়।

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব এর প্রধান কারণগুলো

একটু আগে আমরা সাদা স্রাব সম্পর্কে ধারনা পেয়েছি।  এখন আমরা গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব এর প্রধান কারণগুলি সম্পর্কে জানব।  আমাদের আজকের গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদাস্রাব আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পেরেছি গর্ভবতী হওয়ার অন্যতম একটি লক্ষণ হলো সাদা স্রাব।  এবং আমাদের সকল মা-বোনদের এই বিষয়ে অবগত হওয়া জরুরী।  এবং তাদের স্বামীদের এই বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান রাখা উচিত।  নিচে গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব এর প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো। স্বাভাবিক যৌন স্রাব এর প্রধান কারণ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো

  • হরমোনের মাত্রা এবং জরায়ু গ্রীবায় পরিবর্তন।  এই প্রক্রিয়াটিতে গর্ভাবস্থায় প্রসবের সময় শিশুকে বাহিরে বের করার পথ করে দেয় ।
  • এই স্বাভাবিক স্রাবের  ফলে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
  • এই স্বাভাবিক স্রাবের ফলে শিশুর মাথা জরায়ু গ্রীবার চাপ দিয়ে থাকে।  এবং এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয় গর্ভবস্থায় শেষের দিকে।

 

গর্ভাবস্থায় অস্বাভাবিক স্রাবের কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • এই অস্বাভাবিক স্রাবের সাধারণত সংক্রমণ হয়ে থাকে।  এবং এই সংক্রমণ ইস্ট এর।
  • অস্বাভাবিক স্রাবের ফলে যৌনি সংক্রমিত রোগ হয়ে থাকে । এবং এই রোগটির একটি নাম হল এসটিডি।
  • অস্বাভাবিক স্রাবের ফলে গর্ভবতী অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।  যেমন প্লাসেন্টা প্রিভিয়া কিংবা প্লাসেন্ট্রাল অফরাপসন।
  • অস্বাভাবিক স্রাবের ফলে পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অস্বাভাবিক স্রাবের ফলে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

গর্ভাবস্থায় ইনফেকশন

আমরা জানি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব।  কিন্তু গর্ভাবস্থায় যোনিপথ ফাংগাল ইনফেকশন হলে অস্বাভাবিক ধরনের সাদা স্রাব হতে পারে।  আর এই ইনফেকশনের নাম হল ইস্ট ইনফেকশন। এই ইনফেকশন গুলোর কিছু লক্ষণ রয়েছে।  আপনি যদি গর্ভাবস্থায় এই লক্ষণগুলো আপনার নিজের মধ্যে দেখতে পারেন তাহলে আপনি বুঝবেন আপনার যৌন পথে ইনফেকশন হয়েছে।  নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হল।

  • অতিরিক্ত পরিমাণে সাদা স্রাব যাওয়া। এই স্রাব দেখতে দই অথবা পনিরের মতো এবং চাকা চাকা হয়ে থাকে।
  • সাধারণত কোন ধরনের গন্ধ থাকে না।
  • যোনিপথের আশেপাশে প্রচুর চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে।
  • প্রসাব ও সহবাসের সময় ব্যথা কিংবা অস্থিরতা অনুভব হয়ে থাকে

আপনার গর্ভাবস্থায় যদি ফাংগাল ইনফেকশন হয় তাহলে ভয়ের কোন কারণ নেই।  কিন্তু আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন এবং এটি দ্রুত সেরে ফেলার চেষ্টা করবেন।  ডাক্তার মাসিকের রাস্তা দিয়ে ঢুকানোর ঔষধ বা ক্রিম দিতে পারেন।  সাধারণত চিকিৎসা শুরু করার 1 থেকে 2 সপ্তাহের মধ্যে এ ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন সেরে যায়।  আবার সব ধরনের এন্টিফাঙ্গাল ঔষধ গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়।  তাই আপনি নিজে থেকে কোন ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাবেন।  এবং ডাক্তারকে প্রথমেই বলবেন আপনি একজন গর্ভবতী।

ইনফেকশন প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে।  সহজ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায়।  নিচে সহজ উপায় গুলো বর্ণনা করা হলো।

  • খুব টাইট অন্তর্বাস ও পায়জামা না পোড়া।
  • যোনিপথ যৌনাঙ্গ শুকনা এবং পরিষ্কার রাখা
  • যোনিপথে সুগন্ধি সাবান ব্যবহার এড়িয়ে চলা।
  • সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরা।

 

যখন আপনি প্রসাব করবেন তারপর সুতি একটি কাপড় দিয়ে আপনার যৌনাঙ্গ টা ভালোভাবে মুছে ফেলুন।  এতে আপনার যৌনাঙ্গ ভিজা কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে থাকবে না।

গর্ভাবস্থায় স্রাব কখন ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদাস্রাব কিন্তু কিছু সময় সাদা স্রাব ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভবতী অবস্থায় নিগৃহীত হওয়া স্রাব যদি সবুজ বর্ণের হয় গন্ধযুক্ত হয় বা মায়ের যদি ব্যথা অনুভূতি হয় বা কোন কারনে তা অস্বাভাবিক মনে হয় তবে তা ইনফেকশন বা অন্য কোন সমস্যার লক্ষণ হয়ে থাকে।  যদি আপনি আপনার মধ্যে নিচের লক্ষণগুলো দেখতে পান তাহলে বাসায় বসে না থেকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।

যদি আপনার 37 সপ্তাহ হওয়ার আগেই স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় বা স্রাবের ধরন পরিবর্তন হয়ে যায় তবে তা ডাক্তারকে জানানো।  যদি স্বচ্ছ পানির মতো তরল নির্গত হয় বাসাব দেখতে ঘন এবং থকথকে হয়ে যায় তবে তা প্রীতম লিভারের লক্ষণ হয়ে থাকে।  যদি আপনার যৌনি মুখ ফুলে যায় বা গন্ধবিহীন সাদা স্রাব নিঃসৃত হয় যার ফলে প্রস্রাবের সময় ও শারীরিক মিলনের সময় ব্যথা হয় চুলকানি হয় কিংবা জ্বালাপোড়া হয় তবে তার ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। যদি সাদা স্রাব গন্ধযুক্ত, পাতলা,সাদা বা ধূসর বর্ণের স্রাব হয় যা কিনা শারীরিক মিলনের পরে বেশি বোঝা যায় তবে তা ব্যাকটেরিয়াল ভেজা ইনোসিস বা যৌনাঙ্গের ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। আর নির্গত হওয়ার স্রাব যদি হলুদ কিংবা সবুজ বর্ণের হয় এবং গন্ধযুক্ত হয় তবে এটি যৌন বাহিত রোগ এর লক্ষণ।

আর যদি আপনার স্রাবের ধরণ ও পরিমাণ স্বাভাবিকের চাইতে পরিবর্তিত হয়ে যায় বা তীব্র গন্ধযুক্ত হয় তবে আপনি দূরত্ব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। এই লক্ষণগুলো নির্ণয় করা আপনার পক্ষে কঠিন হতে পারে। কেননা লক্ষণগুলো যেমন চুলকানি জালাপোড়া ইত্যাদি দেখা না দিলেও আপনি ইনফেকশনের শিকার হতে পারেন। যদি আপনার মনে হয় ইনফেকশনের শিকার হয়েছেন তবে নিজে নিজে তার চিকিৎসা করতে যাবেন না এক্ষেত্রে লজ্জা বা অস্থিরতা বোধ করার কোনো কারণ নেই। কারণ আমরা জানি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদাস্রাব। কেননা এই ধরনের সমস্যা গর্ভবস্থায় প্রায়ই মহিলাদের হয়ে থাকে। এর প্রতিকারের জন্য দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। আর এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার গুলো হল গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তাই আপনি অবশ্যই একটি গাইনি ডাক্তার দেখাবেন।

গর্ভকালীন সময় ছাড়া সাদা স্রাব

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব এইটা যেমন সত্য।  কিন্তু গর্ভাবস্থায় ছাড়াও অনেক সময় সাদা স্রাব হয়ে থাকে।  হে সাদাস্রাব গুলো খুবই স্বাভাবিক ধরনের হয়ে থাকে।  তাই আপনি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব আর্টিকেল পড়ে বুঝতে পারবেন কোনটি গর্ভকালীন সময় সাদা স্রাব।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব।  আশা করি আপনারা সকলেই বিস্তারিতভাবে বুঝতে পেরেছেন গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব সম্পর্কে।  আপনাকে আমাদের সম্পূর্ণ গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *