Health

আগুনে পোড়ালে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত

1 min read

জেনে নিন আগুনে পোড়ার রকমভেদ

শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশে বা চারিদিক থেকে বিভিন্ন ধরনের বা বিভিন্ন বয়সের মানুষের আগুনের দগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে এবং স্বাদ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাওয়া পোড়া রোগীদের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শেষ পর্যন্ত এসব রোগী বেশি দেখা যায়।

আগুনে পোড়া এই বিষয়ে অন্যান্য সময়ে প্রচুর পরিমাণে দেখা দেয় এই আগুনে পোড়া খুবই ভয়ানক  আগুনে পোড়ার ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। একটু অবহেলার কারণে আমাদের মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে আমাদের জীবনে সঙ্গে তবু দুর্ঘটনা যদি ঘটে যায় তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বরঞ্চ খুব দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ যেতে হবে।

বিপদ আসলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এটাই স্বাভাবিক আমাদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের বিপদ আপদ আসে আমাকে মেনে নিতে হবে তবে আগুনে পোড়া যেকোনো সমস্যা খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

চলুন জেনে নেই আগুনে পোড়ার  রকমভেদ  সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

আগুনে পোড়ার রকমভেদঃ

ফার্স্ট ডিগ্রী বার্নঃ

এই বার্নে ত্বকের উপরিভাগের প্রথম স্তর বা এপিডার্মিস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা থাকতে পারে। একে সুপারফিসিয়াল বার্নও বলা হয়। এটি অল্প আঁচ বা হিটের কারণে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ক্ষত স্থানে হালকা লালচে ভাব হয়, শুকনা থাকে এবং কোনো ব্লিস্টার বা ফোসকা পড়ে না।

স্ক্যাল্ড বার্নঃ

বার্নের ধরনের মধ্যে আরও একটি হচ্ছে স্ক্যাল্ড বার্ন। শরীরে গরম তরল জাতীয় পদার্থ যেমন- গরম চা, ডাল, ভাতের মাড় ইত্যাদি পড়ে যে বার্ন হয় সেগুলোকে স্ক্যাল্ড বার্ন বা তরলে পোড়া বলা হয়। মহিলা এবং শিশুরা সাধারণত এ ধরনের বার্নের ঝুঁকিতে বেশী থাকে। এটি সাধারণত ফার্স্ট ডিগ্রী হয়।

সেকেন্ড ডিগ্রী বার্নঃ

এই বার্নে ত্বকের উপরিভাগ বা এপিডার্মিস সম্পূর্ণভাবে এবং পরবর্তী স্তর ডার্মিস আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে চামড়া পুড়ে বা ঝলসে গিয়ে লালচে বা ধূসর বর্ণ ধারণ করে। এক্ষেত্রে ফোসকা পড়ে।

থার্ড ডিগ্রী বার্নঃ

একে ডিপ বার্নও বলা হয়। এক্ষেত্রে চামড়া কালো হয়ে পুড়ে যায় এবং মারাত্মক আকার ধারণ করে। ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস) সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চামড়ার নিচে থাকা মাংসপেশি, রক্তনালী ও স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়, চামড়া পুড়ে শক্ত হয়ে যায়, স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না।

কেমিক্যাল বার্নঃ

কেমিক্যাল বার্ন বা দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ দিয়েও পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। বিভিন্ন রকম কেমিক্যাল যেমন এসিড, অ্যামোনিয়া জাতীয় পদার্থ, ব্লিচ ইত্যাদি ত্বক, চোখ, মুখ বা কোনো অঙ্গের সংস্পর্শে এলে মারাত্মক বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে। এমনকি এসব অঙ্গের পার্মানেন্ট ড্যামেজও হতে পারে।

 ইলেকট্রিক বার্নঃ

ইলেকট্রিক বার্ন বা কারেন্ট শক লাগার কারণে পুড়ে যাওয়া। হাই ভোল্টেজ এর কারেন্ট শক খেলে অনেক সময় থার্ড ডিগ্রি বার্ন হয়ে যেতে পারে।

ফ্লেইম বার্নঃ 

ফ্লেইম বার্ন বা আগুনে পোড়া বার্ন সাধারণত শীতকালে বেশি হয়। গ্রামাঞ্চলের লোকেরা আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতাবসত কাপড়ে বা শরীরে আগুন লাগিয়ে ফেলে। যার ফলে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। এটি ফার্স্ট ডিগ্রী, সেকেন্ড ডিগ্রী, থার্ড ডিগ্রী যে কোনো ধরনের হতে পারে

প্রাথমিক চিকিৎসা আগুনে পুড়ে গেলে শুরুতেই প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দিতে হবে। যেমন-

 

  •  প্রথমেই অগ্নিদগ্ধ রোগীর শরীর থেকে সাবধানে পোড়া কাপড় খুলে বা সরিয়ে ফেলতে হবে। নইলে শরীরের পোড়া ক্ষত থেকে কাপড়ের সাথে চামড়া উঠে চলে আসতে পারে। পোড়া ক্ষততে কাপড় থেকে ময়লা বা ছাই লেগে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  •  আগুনে পোড়া রোগীর প্রথম ও প্রধান প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে পানি এবং শুধুই পানি। এ সময় রোগীর শরীরে যত বেশী সম্ভব পানি ঢালতে হবে। এতে অগ্নিদগ্ধ ত্বক ঠান্ডা হবে, জ্বালা পোড়া ভাব কিছুটা হলেও কমে যাবে।
  •  বরফ বা বরফ শীতল পানি ব্যবহার করা যাবে না। এতে ক্ষতের গভীরতা আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই বহমান স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ক্ষতস্থান অন্তত ৩০ মিনিট ধরে ধুতে হবে।
  • পোড়া যায়গায় শুধু পানি ঢেলেই পোড়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে। শুধু পানি ঢেলেই পোড়ার মাত্রা ২০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১৫ বা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।
  • পানি ঢেলে ক্ষত স্থান কিছুটা স্বাভাবিক হলে তারপর লো-ডোজ হাইড্রকর্টিসন ক্রিম বা বার্ন ক্রিম এর প্রলেপ দেয়া যেতে পারে।
  •  যদি তাৎক্ষণিক এসব না পাওয়া যায় তাহলে ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা অ্যালোভেরা লোশন দেওয়া যেতে পারে। শুধুমাত্র ভ্যাসলিন থাকলে তাও দেওয়া যেতে পারে। ভ্যাসলিন ত্বককে দ্রুত ঠান্ডা করে।
  •  পেট্রোল বা তেল জাতীয় পদার্থে আগুন ধরলে বালু বা মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি দিলেও আগুন নিভে যাবে।
  • ভয়াবহ আগুনে পোড়া রোগীর প্রথম ছয় ঘন্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়া গেলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব।
  • শরীরে পুড়ে যাওয়ার মাত্রা ৩০ শতাংশের বেশী হলে জরুরী চিকিৎসা দিতে হয়। ৪০ শতাংশের বেশী পুড়ে গেলে সে রোগীকে সংকটাপন্ন ধরা হয়। তবে রোগীর সেরে ওঠা বয়সের উপরেও অনেকটা নির্ভর করে। বয়স্কদের পোড়া কম হলেও মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে।
Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x