একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা
একুশে ফেব্রুয়ারি 2023 সারাবিশ্বে বাংলা ভাষায় কথা বলা সকল মানুষের জন্য একটি গৌরবময় দিন ।এই দিনটি বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে । উক্ত এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সুপরিচিত । একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হওয়ার পিছনে এ গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হয়েছে । আমাদের ব্লগের গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলো দেখতে এখানে ক্লিক করো।
একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ভূমিকা
সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে মানুষ নিজের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে । কখনো সে অঙ্গভঙ্গি করেছে , কখনো বা ছবি এঁকেছে , কখনো মুখ থেকে নানান রকম আওয়াজ করছে । বিশ্বজুড়ে নানা অঞ্চলভেদে মানুষের ভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে উঠেছে শত ভাষা এবং সেই ভাষার অবলম্বনকারী নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠী । তেমনি কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সন্তানেরা তাদের জন্ম লগ্ন থেকে ঐতিহ্যগতভাবে ভাষার মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করতে শেখে, সেটি হল তাদের মাতৃভাষা । কোন গোষ্ঠী কিংবা ব্যক্তির মাতৃভাষা তার কাছে শুধুমাত্র একটি সামান্য ভাব প্রকাশের মাধ্যম নয় । মনের অন্তঃস্থ লুকিয়ে থাকা ভাবকে ছুঁয়ে প্রকাশ করে যে ভাষা তার সাথে যে আবেগ জড়িয়ে থাকবে , তা বলাই বাহুল্য । মানুষের আবেগকে প্রত্যেকের মাতৃভাষার সাথে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস ত থা মহান সংস্কৃতিকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট গোড়া থেকে বোঝার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৫২ সালের আগে । তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। সেই সময় ভারত বর্ষ থেকে সদ্য বিভক্ত হয়ে যাওয়া পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান রূপে পরিচিত ছিল আজকের গৌরবময় বাংলাদেশ । পাকিস্তানের প্রধান বৃহত্তর জনগোষ্ঠী উর্দু ভাষা হলেও পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা বাংলা ছিল । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এই অঞ্চলের মানুষদের উপর জোর করে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে চায় । মাতৃভাষার সাথে বাঙালির বহু ইতিহাস রয়েছে । ১৯৫২চরম আকার নেই । একুশে ফেব্রুয়ারিকে বাংলা কে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত তরুণ ছাত্র ছাত্রীদের উপর পুলিশে নির্মম গুলিতে তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যায় । এদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বা্র , সালাম , শফিউল , বরকত সহ নাম না জানা অনেকেই । এই মহান দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিবছর বাঙালি জাতি এবং জাতিসংঘ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
ইতিহাস যতদূর জানা যায় তা হল , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন কানাডায় বসবাস করে দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম । তাদের সার্বিক উদ্যোগে প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘’ মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভারস ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড নামে একটি সংগঠন । এরপর আরও নানা সুধীজনের সহযোগিতায় বিভিন্ন ভাবে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় । সেই অধিবেশনেই মোট ১৮৮ টি দেশের সমর্থন সহযোগী প্রস্তাবটি পাশ হলে তার পরের বছর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের 21 তারিখে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদযাপন
নিজের মাতৃভাষা পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে পরম আদরের এবং হয়তো সবচেয়ে কাছের একটি বিষয় । সেই ভাষার প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে একটি দিনকে মানুষ পরম উৎসাহের সাথে পালন করে থাকে । এই দিনটি পৃথিবীজুড়ে মানুষ মেতে ওঠে নিজের ভাষা সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংস্কৃতি , ঐতিহ্য , ইতিহাসে গৌরবময় চর্চায় । সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ভাসার এমন ব্যাপক উদযাপন আর কোনদিন দেখা যায় না । বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিকে শহীদ দিবস হিসেবে স্মরণ করে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয় । দেশের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী বড় বড় জ্ঞানীগুণী সাধারণমানুষ দিনটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা অর্পণ করেন ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য
মাতৃভাষা ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়তে পারে । সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে কোন জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি । ভাষা সাহায্য করে মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থ লুকিয়ে থাকা আবেগ প্রকাশ করত । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের মাধ্যমে মানুষ শেখে নিজের ভাষা সাথে সাথে এ পৃথিবীর সকল ভাষাকে সম্মান করতে । এই দিনটি দারা । স্বাভাবিকভাবে সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হয় সমগ্র মানব সমাজ । তাছাড়া একে অপরের ভাষাকে সম্মান করতে শেখার মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতা পারস্পরিক সম্মান দীক্ষিত হয়ে ওঠে । আমাদের মনে রাখা দরকার পারস্পরিক সম্মান শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান ছাড়া মানব সভ্যতা টিকে থাকা অসম্ভব । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন পালন মানব সভ্যতা ততা সুস্থ সংস্কৃতির টিকে থাকার লড়াই এর মুকুট একটি পালক যোগ করে দেয় ।
মাতৃভাষা ও সাহিত্য
মাতৃভাষা এবং সাহিত্যচর্চা পরস্পর ঔতো জড়িত । এই বক্তব্যটির প্রকৃত অর্থ বুঝতে গেলে সর্বপ্রথম আমাদের সাহিত্যের অনুধাবন করতে হবে । সাহিত্য আমাদের মনের ভেতর কার সেই সব কল্পনা যাকে আমরা ভাষার মাধ্যমে জীবন্ত রূপ দিতে চাই । বিশ্বে যা কিছু প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক তা কিছুই সুন্দর । মান স্বাভাবিক ভাবে নিজের মনের আনন্দ মহলে সাহিত্যিক কল্পনা রূপ দান করে আপন মাতৃভাষা চিন্তার মাধ্যমে । তাই কোন মানুষ যদি নিজের মাতৃভাষায় দুর্বল হয় , আর পক্ষে সাহিত্যিক রূপ দান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় , এমন সাহিত্যিক গড়ে উঠলে তা নিজের স্বাভাবিক হারিয়ে সুন্দরকে পাশ কাটিয়ে হয়ে পড়ে দুর্বল ।
মাতৃভাষা বিকৃতি ও অবজ্ঞা
বর্তমান যুগে বিশ্বব্যাপী অপসংস্কৃতির ব্যাপক স্যার পাইনি মাতৃভাষা । একথা সত্য যে ভাষা হল মানুষের ভাব প্রকাশের একটি প্রাণবন্ত ও প্রগতিশীল মাধ্যম । পৃথিবীর প্রত্যেকটি ভাষার মধ্যে অন্য অনেক ভাষা প্রভাব সর্বদা লক্ষ্য করা যায় । কিন্তু তা বলে নিজের মাতৃভাষাকে বিকৃত করে কোন ভাষা থেকে ধার করা সংযোজন কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না । ভাষার বিকৃতি এবং অবজ্ঞা সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনে , যা পরবর্তীতে একটি জনগোষ্ঠীর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
একুশে ফেব্রুয়ারি উপসংহার
মাতৃভাষা হল মায়ের ভাষা । মা যেমন সন্তানকে স্নেহের বন্ধন আগলে রাখে , মাতৃভাষা একটি নির্দিষ্ট ভাষা গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে ইতিহাসের সিনিগ্ধ বন্ধনে জড়িয়ে রাখে । সেজন্য মাতৃভাষা আমাদের সকলের কাছে পরম আবেগের । নিজেদের এই আবেগ কে রক্ষা করার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে । নিজের ইতিহাসকে ভাষার ঐতিহ্যকে আপন করে নিয়ে বর্জন করতে হবে বিকৃতি অপসংস্কৃতি কে । নতুন প্রজন্মকে বিশ্ব করার সাথে তাদের আপন ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে প্রতিনিয়ত । আমাদের মনে রাখতে হবে নিজেদের মাতৃভাষায় চাচা আছে ‘’ প্রাণের আরাম মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি । লক্ষ্য গুলি সফল হলেই আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন সার্থক হয়ে উঠবে ।। তাই আমি এই পোস্টের মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম আশা করি সবাই একুশে ফেব্রুয়ারি উপকৃত হতে পারবেন ।