শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায়

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায়

আজ ভোরের সূর্য উঠবে। মানুষ জাগবে। পাখিও ডাকবে। তবে দিনটি পালিত হবে শোক ও বেদনা নিয়ে। অবশ্য এই  লোকের সঙ্গে এবার থাকবে রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশের মাটি থেকে মৌলবাদী শক্তিকে নির্মূল এর প্রত্যয়।

আজ 14 ই ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। একাত্তরের এই দিনে স্বাধীনতার মাত্র 2 দিন আগে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং রাজাকার আলবদর ও আলশামস নির্মমভাবে হত্যা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। বিজয় উৎসব এর আগে এই দিনটিতে আজ শ্রদ্ধা, বেদনা ও ভালোবাসার সঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে সারা দেশের মানুষ। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায় নিচে আলোচনা করা হলো।

1971 সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে যখন হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা উপলব্ধি করতে পারলে তাদের পরাজয় অনিবার্য তখনই বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে, শিক্ষক সংবাদ, চিকিৎসা, সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশ যাতে একটি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তালিকা করে হত্যা করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায় ইতিহাসবিদরা  বলেছেন, সংখ্যার দিক থেকে বিবেচনা না করে যদি জনসংখ্যা আর মৃত্যুর হার হিসেবে হিসাব করা হয় তাহলে অন্যান্য ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে আরো বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবী মারা গেছেন কিন্তু তাদেরকে আসলে সেভাবে স্মরণ করা হয় না।

মি. চৌধুরী বলেন,

আমরা এদের কে স্মরণ করতে ভুলে গেছি। ওইযে কেন্দ্র আর প্রান্তিকের যে সমস্যার কারণে। ঢাকাকেন্দ্রিক স্মৃতিচারণ টা একটু বেশি হয়। তার মতে মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের সব মানুষের অবদান রয়েছে। তাদের সবাইকে স্মরণ করা আমাদের উচিত। তাহলেই বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে বোঝা সম্ভব হবে।

তিনি বলেছেন নির্যাতিত নারীদের কোন দিবস নেই, গ্রামের মানুষের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে, স্মরণ করতে হলে সবাইকে স্মরণ করতে হবে।  বৈষম্যমূলক স্মরণ সমাজে বিভেদ বাড়ায়। শুধু শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায় বলতে গেলে ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবীরা নয় গ্রামের অনেক বুদ্ধিজীবী রয়েছে।

শুধু সরল নয় বরং সৃষ্টির ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় শহর থেকে লাখো মানুষ গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সে সময় তাদেরকে যারা আশ্রয় দিয়েছে তাদের অবদান রয়েছে যুদ্ধে। তাদের কেউ তেমন তোর জোর করে স্মরণ করা হয় না বলে মত দেন তিনি। আমরা নির্ধারণ করে নিয়েছি কে স্মরণযোগ্য, আর কে স্বীকৃতি যোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধিজীবী মারা গেছেন। কারণ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সব ধরনের আন্দোলনে কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

*পদ্মার চরে গণকবরে বাবার মরদেহ পাওয়া যায়।

* 25 বছরের কতটা অর্জন করেছে প্রজন্ম 71।

* বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি ভাষা শহীদ।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আর্মির প্রধান লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র মানুষ যেমন পিলখানা, রাজারবাগের মত জায়গা গুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধরনের আক্রমণ হয়েছিল। একটি হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল ও অন্য জায়গায়। আরেকটি আক্রমণ হয়েছিল জগন্নাথ হলে। এই হল এর শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের উপর আক্রমণ হয়। জাতিগতভাবে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর হামলা হয়েছিল।

হত্যাকাণ্ডের একটা প্ল্যান ছিল পাকিস্তানী বাহিনীর। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায় তারা কোনো একটি জায়গায় গিয়ে যখন কাউকে শত্রু মনে করত বা ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইত সেখানে তারা হত্যাকাণ্ড চালাত।

14 ই ডিসেম্বর  কেন বুদ্ধিজীবী দিবস?

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের শেষ একটি আঘাত এসে ছিল 1971 সালের 14 ডিসেম্বর। সেই দিন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সহ আরো অনেকেইৃৃৃৃৃৃৃ। এরপর এদের অনেকের লাশ পাওয়া যায় বধ্যভূমিতে আর অনেকের কখনো খুঁজেই পাওয়া যায়নি।

তবে শুধু 14 ই ডিসেম্বর নয় বরং 25 শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট এর মাধ্যমে বাঙ্গালীদের উপর গণহত্যার পর থেকে শুরু করে পরবর্তী নয় মাস ধরে চলা মুক্তিযুদ্ধ পুরোটা সময় জুড়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায় 14 ই ডিসেম্বর 25 শে মার্চ।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন এর আগে বিবিসি বাংলাকে বলেন সুনির্দিষ্ট করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনার আলবদরদের হাতে তুলে দেয়া হয় জুন মাসের দিকে যখন এই বাহিনী দিয়ে গঠিত হয়। এরপর থেকে আলবদর বাহিনী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং অন্যরাও ছিল ।16 ই ডিসেম্বর এসে সবাই বুঝতে পারে যে আসলে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা হয়েছে।

14 ই ডিসেম্বর তাকে করা হয়েছে এই কারনে যে বিজয় দিবস 16 ডিসেম্বর। 14 ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের যাদের 52 বা47 থেকে একটা বড় অবদান আছে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত আন্দোলনে তাদের সম্মান জানানোর জন্য। বলেছেন মুনতাসীর মামুন।

কিন্তু এরপরও 14 ডিসেম্বর কে কেন বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা করা হলো এমন প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক শামসুল আরেফিন বলেন বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে একটি বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। আর সেটি হচ্ছে আনন্দের দিনের আগে একটি বিষাদময় দিন ছিল। তিনি বললেন 26 শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস 16 ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এই  দুটি দিনের আগের দিন রাতেই হত্যাকাণ্ড চলছে।

বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন হয় তাহলে এটা যারা পরিচালনা করবে সে বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তান। বেঁচে বেঁচে যখন বেশ কিছু মানুষকে হত্যা করা হল আজ পর্যন্ত জাতি এই জায়গা থেকে উত্তোলন করতে পারেনি। মাসুমা নাসরিন যিনি একজন চিকিৎসক এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে তিনি বলেন বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে জাতীয় জীবনে প্রভাব রেখেছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায় প্রত্যেকটা মানুষের উচিত।

তবে এতে করে বাংলাদেশে থেমে থাকেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন শূন্যস্থান পূরণের জন্য নতুন প্রতিভা জন্মেছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বেগম রোকিয়া মারা যাওয়ার পর তাকে কলকাতায় সমাহিত করতে দেয়া হয়নি। তাই বলে তার প্রভাব তো আর থেমে থাকেনি নারীদের জীবনে। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টিও তেমন।

বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি  স্মরণ করার উদ্যোগ

বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ এবং তাদের তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে খুব বেশি কাজ হয়নি বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আবার অনেকেই মনে করেন যে বিষয়ে কাজ হলেও আসলে সে গুলো একসাথে সংকলিত হয়নি সেভাবে। এ বিষয়ে বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়েছে এটা সেই 71 সালে ডিসেম্বর রাত থেকে শুরু করে 16 ই ডিসেম্বর জানতে পেরেছিলেন তারা। তবে সেটা বিচ্ছিন্ন ছিল। তিনি বললেন, পুরো চিত্র সামনে আসে আরো অনেক পরে। 31 শে ডিসেম্বর ঢাকায় ফেরার পর ধীরে ধীরে জানতে পারেন তারা। এসব তথ্য সংরক্ষণে এখনই নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। স্বাধীনতার 50 বছর হয়ে গেছে তাই আরো দেরি হলে হয়তো সংরক্ষণের জন্য উদযাপন পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে।

পরিশেষে বলা যায় যে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায় সম্পর্কে আমরা কিছুটা হলেও আপনাদের ধারণা দিতে পেরেছি। আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ  করার উপায় জানা। কারণ আমরা লাখো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ বসবাস করতে পারছি। আমরা পেয়েছি একটা স্বাধীন পতাকা। আমরা আমাদের এই বাংলাদেশের স্বাধীন ভাবে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছি লাখো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য। তাই আমি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার উপায় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *