নার্সিং পড়ার যোগ্যতা, কোথায় পড়বেন, খরচ কেমন
নার্সিং পড়ার যোগ্যতা
নার্সিং পড়ার যোগ্যতা এবং এই বিষয়ে আরো খুঁটিনাটি সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। যাদের নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ রয়েছে আশা করি আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারবেন। নার্সিং পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করতে পারলে দেশে-বিদেশে আত্মমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার দারুন সুযোগ তৈরি হয়। যারা শুরু থেকেই মানব সেবার কাজে নিজেকে নিয়ে যুদ্ধ করতে চান তারা চাইলে নার্সিং পেশায় আসতে পারেন। নার্সিং পেশায় এমন একটা পেশা যেটাতে মানুষের সঙ্গে নিবিড় ভাবে মিশে যে তাদের সেবা করা যায়। নার্স বন মানুষের সবচেয়ে বীভৎস সময়ে সেবা প্রদান করে তাদেরকে সুস্থ করে তোলে না তাই এটি হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি।
নার্সিং একটা মহৎ পেশার নাম। সঠিক জ্ঞান অথবা ধারণা না থাকার কারণে আমরা অনেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করানোর সঠিক গাইডলাইন দিতে পারিনা। পাআমাদের দেশে অনেক মেধাবী মেয়ে পেয়েছে তারা যোগ্যতা থাকার পরেও মাসিক সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে পারে না সঠিক তথ্যের অভাবে। একজন নার্স যদিও ডাক্তার নয় কিন্তু ডাক্তারের সহযোগী হিসেবে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকেন। নার্স হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করার ক্ষেত্রে যেটুকু যেভাবে মানুষের সেবা করা যায় ঠিক তেমনি ভাবে এখান থেকে প্রচুর আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে ।
তাই আজকের পোস্টে আমরা নার্সিং পড়ার যোগ্যতা, নার্সদের বেতন কেমন, কোথায় নার্সিং পড়বেন, নার্সদের কাজের ধরন, নার্সদের কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ে খুটিনাটি সব কিছু আলোচনা করব।
নার্সিং পড়ার যোগ্যতা
নার্সিং পড়ার যোগ্যতা সম্পর্কে প্রথমেই জেনে নেব। নার্সিং পড়ার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা হচ্ছে যে, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ 2.50 এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ 2.50 নিয়ে পাস করতে পারো নার্সিং মেডিকেল কলেজ অথবা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া যায়।
বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি বেশকিছু নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং নার্সিং কলেজ রয়েছে যেগুলো ভর্তি হয়ে নার্সিং পড়া কমপ্লিট করা যায়। সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশে সরকারি সেবা পরিদপ্তর। তাই নার্সিং হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল এর অধীনে যেকোনো সরকারি অথবা বেসরকারি নার্সিং কলেজে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অথবা বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
কোথায় পড়বেন নার্সিং? | নার্সিং করার জন্য কোথায় ভর্তি হবেন
আমাদের বাংলাদেশে সরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে চারটি এছাড়া বেসরকারি নার্সিং কলেজ রয়েছে 21 টি। নার্সিং কলেজ ছাড়াও প্রায় 43 টি সরকারি এবং 70 টি বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট হয়েছে যেগুলো থেকে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারি এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স করা যায় ।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করা যায় । এছাড়া অর্থোপেডিকস, সাইকিয়াট্রিক, পেডিয়াট্রিক, সিসিইউ, আইসিইউ ও কার্ডিয়াক নার্সিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর এক বছর মেয়াদী কোর্স চালু রয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা হচ্ছে ইন্টার্নশিপ। নার্সিং ডিপ্লোমা কোর্স কমপ্লিট করলেই হবে না পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সকল প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ রয়েছে চেষ্টা করতে হবে সে সকল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য।
তবে শুধুমাত্র ইন্টার্নশিপ কমপ্লিট করার পর এই বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল আয়োজিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একজন ডিপ্লোমাধারী অথবা বিএসসি সম্পূর্ণ কারি প্রার্থী নার্সিং পদে নিয়োজিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রার্থীকে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল আয়োজিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
নার্সদের কাজের ধরন। নার্সগন কি ধরনের কাজ করেন
যদি একজন নার্স কি চিকিৎসক বলা যায়না তবে নার্সদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। একজন নার্স চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। যেমন রোগীর রক্তচাপ পরীক্ষা করা, শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা, ওজন পরীক্ষা করা, বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে ইনজেকশন দেওয়া, টিকা দেওয়া, রোগীদের কে সঠিকভাবে ঔষধ খাওয়ানো ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে।
এছাড়াও নার্সদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে তাহলে অপারেশনের সময় ডাক্তার কে সহযোগিতা করা। অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করা এবং অপারেশনের সময় ডাক্তারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি হাতের কাছে রাখা, রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে আনা এবং অপারেশন থিয়েটার থেকে নিয়ে যাওয়া অপারেশন পরবর্তী সময়ে রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি উন্নতি সম্পর্কে ডাক্তার কে অবহিত করা ধরনের আরো অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো আপনাদের কি করতে হয়।
কর্মক্ষেত্রে নার্সদের সম্ভাবনা
আমাদের বাংলাদেশের নার্সদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র শহরকেন্দ্রিক ক্লিনিক এর পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে ক্লিনিক অথবা স্বাস্থ্যসেবা ইনস্টিটিউটের বিস্তার ঘটছে। এইসব শহর কেন্দ্রিক এলাকার পাশাপাশি উপজেলা শহরকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতেও চাহিদা বাড়ছে।
এছাড়া বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভালো যোগ্যতাসম্পন্ন নার্স এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যদিও বেসরকারি ইনস্টিটিউটগুলোতে নার্সের কাজ এর সীমাবদ্ধতা শুধুমাত্র সেই বেসরকারি হসপিটালে গিয়ে নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে সরকারের নার্সদের কাজের পরিধি আরো বেশি, যেমন সরকারের নাসরা সরকারি হাসপাতালে পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর চিকিৎসা বিভাগে দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নার্সদের কে সে সকল স্থানে যেয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
সাধারণ নার্স , সিনিয়র নার্স, নার্স সুপারভাইজার, নার্স ইনচার্জ ইত্যাদি পদে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি কাজের দক্ষতা বাড়াতে কৃষিক্ষেত্রে নার্সিং অধিদপ্তর এর প্রজেক্ট অফিসার অথবা সহকারী পরিচালক পদের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একজন নার্স এর মাসিক আয় পরিমাণ
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে একজন নার্সের শুরুতেই 14000 টাকার মতো বেতন ধরা হয়। প্রতিষ্ঠানভেদে এই বেতনের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নার্সদের বেতন 2015 সালের স্কেল অনুযায়ী 8000 টাকা থেকে শুরু করে 16 হাজার 540 টাকা পর্যন্ত হতে পারে।নার্সিংহোমে ক্যারিয়ার গঠন করার জন্য শুরুতে আপনাকে হয়তো বা অ্যাসিস্ট্যান্ট নয় অথবা ওটিসি হিসেবে যোগ দিতে হতে পারে।
নার্সিং পড়ার যোগ্যতা সম্পর্কে শেষ কথা
যদি আপনার মনবল থাকি ইচ্ছা থাকে তবে আপনি কিন্তু নার্সিং পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন। যেহেতু নার্সিং পেশায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য মোটামুটি যে যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে সেটা আমাদের দেশের মেয়েদের প্রায় প্রত্যেকেরই রয়েছে। তাই আমি বলতে পারি শুধুমাত্র সদিচ্ছার মাধ্যমেই নার্সিং পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করা সম্ভব।
আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় যোগ্য নার্সের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আশা করছি আপনারা এই পোষ্টের মাধ্যমে নার্সিং পড়ার সম্পর্কে নার্সিং করার যোগ্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য পেয়েছেন।
নিজেকে একটা স্মার্ট এবং মানব সেবা ধর্মী পেশায় নিয়োজিত করতে চাইলে নার্সিং পেশা অন্যতম পছন্দ হতে পারে। আশা করছি যারা নার্সিং পেশায় নিয়োজিত হতে চাচ্ছেন তারা এখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য পেয়েছেন।