আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম
আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে জরিমানা করার বিধান রেখে আইন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা জানিনা আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম সম্পর্কে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করব আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম সমূহ সম্পর্কে। যারা আয়কর প্রদান করতে চান কিন্তু আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম সম্পর্কে জানেন না তারা আজকের আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হতে পারেন। তাই আমি আপনাদেরকে বলছি যদি আপনারা আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তবে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আয়কর রিটার্ন দাখিল
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাদের প্রতিটি করদাতার বার্ষিক আয় দেয় এবং সম্পদের তথ্যাবলী নির্দিষ্ট কর্মের মাধ্যমে হিসাব রাখে এবং তা উপস্থাপন করার পদ্ধতি হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। শুধু করযোগ্য আয় এর উপর নয় বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য টিআইএন তৈরি করেছেন এমন ধরনের ব্যক্তি বা সত্তাকে আবশ্যিকভাবেআয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য আপনি সরাসরি কর অঞ্চলে গিয়ে অথবা অনলাইনের মাধ্যমেও আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়
আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম সম্পর্কে কথা বলছি। কিন্তু আপনাকে জানতে হবে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সম্পর্কে। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় হচ্ছে প্রতিবছরের 1 জুলাই থেকে 30 নভেম্বরের মধ্যে। এই সময়টাকে বলা হয় সাধারণত কর প্রদানের টাইম। তবে আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ সময় হচ্ছে 30 শে নভেম্বর।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের ফরম
সবার আয় যেমন সমান না তেমন সবাই সমান কর প্রদান করে থাকে না। 11 শ্রেণীর করদাতার জন্য একেক রকম আয়কর রিটার্ন ফরম রয়েছে। এইসব আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করার মাধ্যমে এবং যাবতীয় কাগজপত্র এবং ব্যাংক ড্রাফট সহ সকল সার্কেল অফিস এই ব্যক্তি নিজেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। তবে আপনি যদি চান কোনো আইনজীবী অথবা আয়কর প্র্যাকটিশনার এর সাথে যোগাযোগ করে তার সাহায্য নিয়ে নির্ভুলভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
সময়মতো আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে না পারলে জরিমানা
আপনি যদি সময়মতো আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে না পারেন তবে অতিরিক্ত সময়ের জন্য নির্ধারিত হারে জরিমানা প্রদান করতে হবে। আপনাদের সকলের জানা আছে যে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ হচ্ছে 30 নভেম্বর। এই 30 নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল প্রদান করতে হবে। তবে আপনি যদি চান জরিমানা মওকুফের জন্য করদাতা আইনের কিছু সুবিধা রয়েছে তার সাহায্য নিতে পারেন।
কেউ যদি আয়কর রিটার্ন দাখিল সময়মতো করতে না পারেন তবে তিনি জুন মাসের সময় বৃদ্ধির জন্য ডিসিটির কাছে সময় চেয়ে আবেদন করতে পারেন। তিনি যদি দুই মাস সময় মঞ্জুর করেন তবে আপনি দুই মাস আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাড়তি সময় পাবেন। সেই সময়ের মধ্যেও যদি আপনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে না পারেন তবে আপনি আবারো দুই মাসের জন্য সময় সময় চেয়ে আবেদন করতে পারবেন তবে সেজন্য আপনাকে আইজেসিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। তবে যদি আপনি 30 নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে না পারেন এবং আপনার ইনকাম এর কোন কাগজপত্র জমা দিতে না পারেন তবে আপনাকে জরিমানা করতে হবে। সে জরিমানার পরিমাণ মাসিক ভিত্তিতে 2 পার্সেন্ট এর মতো হয়ে থাকে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম সম্পর্কে কয়েকটি টিপস
- আগের বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের ফটোকপি সঙ্গে রাখুন
- আয়কর রিটার্ন সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আপনার কাছে রাখুন এবং একটি তালিকা তৈরি করেছে
- প্রতিটি কাগজের জন্য দুটি করে কপি তৈরি করে সঙ্গে রাখুন
- আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় স্বাক্ষর এর আগে অন্তত দুইবার চেক করুন
- যারা নিজেরা আয়কর রিটার্ন দাখিলের ফরম পূরণ করতে পারেন না তারা দায়িত্বশীল এবং সু শিক্ষিত ব্যক্তির দ্বারা আয়কর রিটার্ন দাখিলের ফরমটি পূরণ করবেন।
- আয়কর রিটার্ণ দাখিলের সাদাক অতীতে কখনোই স্বাক্ষর করবেন না
- আয়কর রিটার্ন দাখিলের ফরমে স্বাক্ষর করার আগে অন্তত দুইবার চেক করুন।
- আয়কর রিটার্ন দাখিলের কাগজে স্বাক্ষর করার আগে আপনার সম্পদগুলোর যথাযথ পরীক্ষা করে নিন এবং নতুন বছর কোন নতুন সম্পাদক হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে সজাগ থাকুন।
- যেহেতু আয়কর রিটার্ন দাখিলের কাগজপত্রে আপনার সম্পদ এবং আইবের সমস্ত হিসাব ফুটে উঠবে তাই সাবধান থাকুন
- আয়কর রিটার্ন দাখিলের পর আপনার রিটার্ন জমা দেওয়ার স্লিপ সংগ্রহ করুন
আয়কর রিটার্ন দাখিলের হার
আজকে আমাদের জানার কথা ছিল আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম সম্পর্কে জানা। কিন্তু আপনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন কিন্তু জানেননা কি হারে আপনারাই করে রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। আপনি যদি ঢাকা উত্তর অথবা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অথবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত হলে নূন্যতম করের হার হচ্ছে 5000 টাকা। অথবা আপনি যদি অন্য কোন সিটি করপোরেশন এলাকায় হয়ে থাকেন তবে আপনার ন্যূনতম 4000 টাকা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ছাড়া যদি অন্য কোন এলাকায় বসবাস করেন তবে আয়করের হার 3 হাজার টাকা।
আয়করের হার হচ্ছে প্রথম তিন লাখ টাকা ইনকাম করলে মোটা এর উপর কোন ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না। কিন্তু পরবর্তী 100000 টাকা আয় এর উপর আপনার 5 শতাংশ হারে এবং তার পরবর্তী তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় এর উপর 10% হারে এবং তার পরবর্তী চার লাখ টাকা পর্যন্ত 15 শতাংশ হারে আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এর পরবর্তী 5 লাখ টাকা পর্যন্ত আয় এর উপর 20% এবং অবশিষ্ট এর উপর পঁচিশ শতাংশ হারে আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সম্পদের সবচেয়ে বিবরণ
আপনার ব্যক্তিগত আয়তন ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, অথবা সঞ্চয় পত্র শেয়ার ডিবেঞ্চার এবং অন্যান্য স্থাবর সম্পদের বিবরণ আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। আপনি যদি সুস্পষ্টভাবে আপনার সম্পদের বিবরণ তুলে না ধরেন সেটি আপনার জন্য বৈধ থাকবে না এবং আপনি বিভিন্ন ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন।
প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে সর্তকতা
যারা প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে যাবে তাদের ফরম পূরণের ক্ষেত্রে খুব ভালোমতো সচেতন থাকতে হবে। আপনার সম্পদ এর বিবরণ ক্ষেত্রে সজাগ থাকুন এবং কোন সম্পদের হিসাব লুকাবেন না। কেউ যদি মনে করে থাকে প্রথমবার যখন আমি আয়কর রিটার্ন দাখিল করব সেটি দেখাবো না কিন্তু ধীরে ধীরে সেটি বাড়াবো এই ধারণাটি ভুল। যদি এই ব্যাপার কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তবে আপনি আইনগত ঝামেলায় পড়তে পারেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আয় ও ব্যয়ের সঙ্গতিপূর্ণ রিটার্ন দাখিল করুন
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আপনি আপনার আয়ের যেমন দেখাবেন তেমনিভাবে না এরশাদের একটা সামনজস্য থাকা জরুরী। আপনার জীবনযাত্রার ব্যয় এবং আপনার আয় যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তবে আপনি আইনগত জামেলায় পরতে পারেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় কৃষি আয়
আপনি যখন আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন সেখানে আপনি আপনার কৃষি খাত থেকে যে আসে সেটি এড়িয়ে যাবেন না। যদি আপনার কৃষি খামার থেকে যেমন শস্য খামার অথবা পশু পালন খামার থেকে আপনারা আসে তবে সেটি আপনি এড়িয়ে যাবেন না উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকার উপর আপনার আয়কর প্রদান করুন। যদি কৃষি আপনার একমাত্র আয়ের উৎস হয়ে থাকে তাহলে কিছু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
আজকের আর্টিকেল এর বিষয় হচ্ছে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম। যেহেতু আয়কর রিটার্ন দাখিল করা একটি আইনি প্রক্রিয়া তাই এই ব্যাপারটি যখন আপনারা করবেন তখন পূর্ণভাবে সচেতন থাকুন। সামান্য ভুলে ব্যাপক মাশুল দিতে হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরামর্শ হচ্ছে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছ থেকে এ ব্যাপারে ধারণা নেওয়া।