চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম, লেনদেনের দলিল লেখার নিয়ম । Stamp Writing Method Bangla

আমরা আমাদের কাজের প্রমাণস্বরূপ অর্থাৎ আমরা যে সকল লেনদেন করে থাকি সেই সকল লেনদেন এর প্রমাণস্বরূপ চুক্তিপত্র লিখে থাকি।  এছাড়াও ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজে এবং ব্যবসায়িক বিভিন্ন কাজের চুক্তিপত্র লেখার প্রয়োজন হয়।  কিন্তু চুক্তিপত্র লেখার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকেই এর নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা রাখে না।  সে ক্ষেত্রে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন যে আসলে কিভাবে চুক্তিপত্র লিখতে হয় বা চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম টা আসলে কি।  তাই যারা চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম জানেন না তাদের জন্য আজকে এই আর্টিকেল এর আয়োজন করেছে।  এই আর্টিকেল পড়লে আপনারা সহজেই চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।

চুক্তিপত্র কি?

চুপচুক্তিপত্র লেখার নিয়ম জানার আগে আমাদের জানা উচিত আসলে চুক্তিপত্র কি। চুক্তিপত্র হচ্ছে কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে  নানাবিধ শর্তযুক্ত কোন কাজের লিপিবদ্ধ রূপ।  অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক এবং সাবালক দুই বা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে যদি শর্ত আরোপ করে কোন বস্তু বা অর্থের বিনিময় করা হয় সেই বিনিময় প্রক্রিয়াটি যদি লিপিবদ্ধ করা হয় সেই লিপিবদ্ধ করার যে প্রক্রিয়া তাকে আমরা চুক্তি  বলে থাকি।  আর এই চুক্তি যেসকল পেপারে লিপিবদ্ধ থাকে সেই পেপার কে বলা হয় চুক্তিপত্র।  আজকে আমরা চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানব।

চুক্তিপত্রের আবশ্যক বিষয়সমূহ

একটি চুক্তিপত্রে ব্যবসায়িক ব্যক্তিগত লেনদেন ছাড়াও ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে শর্ত আরোপ করা হয়ে থাকে।  তাই চুক্তিপত্রের কয়েকটি আবশ্যক বিষয় রয়েছে।  নিচে চুক্তিপত্রে আবশ্যক বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।

  • চুক্তিপত্রে যেসকল ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ থাকবে তাদেরকে অবশ্যই আইনের দৃষ্টিতে সাবালক হতে হবে এবং সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে।
  •  চুক্তিপত্রের উল্লেখ থাকতে হবে প্রস্তাব করেছে।  অর্থাৎ প্রস্তাব করেন নাম উল্লেখ থাকতে হবে।
  •  চুক্তিপত্রে উল্লেখিত প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে তার নাম থাকতে হবে এবং তার প্রতিদান এর ব্যাপারটি উল্লেখ থাকতে হবে।
  •  প্রতিদান ছাড়া কোনো চুক্তি আসলে কার্যকর হয় না।

যে সকল কাজের চুক্তিপত্র করা উচিত

  • যে কোন আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র করে নেওয়া উচিত
  • কোন সম্পদের ক্রয়-বিক্রয় বালিশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অথবা ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র তৈরি করে নেওয়া উচিত।
  •  কোনো ব্যবসায়িক কাজে বা অংশীদারি কাজের চুক্তিপত্র করে নেওয়া উচিত।
  •  বিদেশ থেকে যে কোন দ্রব্য আনয়ন রপ্তানির ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র তৈরি করা খুবই জরুরী।

চুক্তিপত্র কেন প্রয়োজন

আমাদের সমাজে নানাবিধ চরিত্রের মানুষ রয়েছে।   যাদেরকে সাধারণ চোখে আমরা যেমন ভাবি তারা তেমন নাও হতে পারে।  তাই আমরা যখন কোন লেনদেন করতে চাই অথবা কোন বিষয় সম্পর্কে ভাগ বাটোয়ারা করতে চাই তখন আমাদের একটি চুক্তি পত্রের প্রয়োজন হয়।  যেহেতু চুক্তিপত্রে কিছু শর্ত থাকে এবং সেই শর্ত উভয়পক্ষই মেনে চলতে দায়বদ্ধ থাকে তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো  সম্ভব হয়।  এবং যেহেতু চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর থাকে এবং চুক্তিপত্রে সাক্ষীদের নাম লিপিবদ্ধ থাকে তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পক্ষই চুক্তিপত্রে আনীত শর্তগুলো নির্দ্বিধায় মেনে নিতে বাধ্য থাকেন।  চুক্তিপত্র যেহেতু নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত হয় তাই কেউ যদি চুক্তিপত্র শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে অন্যপক্ষ তার উপর   আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।  এছাড়া চুক্তি পত্রের মাধ্যমে আমাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।  এছাড়া আমাদের ইসলাম ধর্মে চুক্তিপত্রের প্রতি খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  মহান  আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সাক্ষীর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন।  তাই চুক্তিপত্র যখন দেখা হয় তখন চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম জেনে চুক্তিপত্র লেখা উচিত।  তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেল আলোচনা করব চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে।

চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম রয়েছে যে নিয়ম গুলো যদি না হয় তাহলে সেই চুক্তিপত্রটি মানহীন হয়ে পড়ে এবং তা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর হয় না।  নিচে চুক্তিপত্র লেখার কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলো।

চুক্তিপত্রে তারিখ

চুক্তিপত্রে অবশ্যই যেইদিন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে সেই দিনের তারিখ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে না হলে বিভিন্ন কারণে ভবিষ্যতে এই চুক্তি পত্র নিয়ে সমস্যা হলে সেখান থেকে সমাধানের পথে আসা যথেষ্ট কষ্টকর হয়ে যাবে।  তাই চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম এর অন্যতম হচ্ছে তারিখ লেখা।

চুক্তি পত্রের নাম

কি কারনে বা কী উদ্দেশ্য নিয়ে চুক্তি পত্র তৈরি করা হচ্ছে সেই নামটি স্পষ্ট করে চুক্তি পত্রের প্রথমেই লিখে দিতে হবে।  যাতে সহজে কেউ একবার দেখেই বুঝতে পারে আসলে কি বিষয়ে চুক্তি হয়েছে।

পক্ষ

যেই ব্যক্তিদের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হবে তাদেরকে  সাধারণত পক্ষ বলা হয়।  চুক্তিপত্রে একের অধিক পক্ষ থাকতে হয়।  দুই বা ততোধিক পক্ষের ব্যক্তিগণ থাকলে তাদের প্রত্যেকের নাম, পিতার নাম এবং ঠিকানা পরিপূর্ণ ভাবে লিখতে হয়।  সুবিধার জন্য যদি তাদের মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকে তাহলে ভালো হয়।  এছাড়াও তাদের উভয় পক্ষের এনআইডি নাম্বার যদি সঠিকভাবে দেয়া হয় তাহলে আরও স্পষ্ট ভাবে সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা লাভ করা যায়।

চুক্তির শর্তাবলী

কি কি বিষয় নিয়ে চুক্তি হচ্ছে এবং সেই বিষয়গুলোর উপর কি ধরনের শর্ত থাকবে সেগুলো নিয়ে চুক্তিপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।  যদি স্পষ্ট ভাবে চুক্তির শর্ত সমূহ উল্লিখিত না থাকে তাহলে ভবিষ্যতে এই সকল শর্ত নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হতে পারে।  তাই যেন ভবিষ্যতে ঝামেলা না হয় সেজন্য চুক্তির শর্তাবলী খুব সুন্দরভাবে এবং পরিপূর্ণভাবে চুক্তিপত্রের উল্লেখ করতে হবে।

চুক্তির মেয়াদ কাল

যে চুক্তি করা হচ্ছে সেই চুক্তি বা সেই শর্তাবলীর মেয়াদকাল কত দিন পর্যন্ত হবে সে বিষয়ে সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে চুক্তিপত্র লিখে দিতে হবে।  চুক্তিপত্রের যদি স্পষ্টভাবে চুক্তির মেয়াদ কাল না থাকে তাহলে চুক্তির মেয়াদ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হতে পারে।  তাই চুক্তির মেয়াদ কাল পষ্ট ভাবে লেখা হচ্ছে চুক্তিপত্র লেখার আরেকটি নিয়ম এর অংশ।

সাক্ষী ও সাক্ষী গণস্বাক্ষর

চুক্তিপত্রের নিচে উভয়পক্ষের ব্যক্তিগণের স্বাক্ষর দিতে হয়।  এছাড়া চুক্তিপত্রে যাদেরকে সাক্ষী হিসেবে মনোনয়ন করা হয়েছে তাদের  স্বাক্ষর নেওয়া হয়।   সাধারণতযখন একটি চুক্তি পত্র লেখা হয় তখন উভয়পক্ষের দুইজন করে সাক্ষী থাকলে ভালো হয়।

একটি আদর্শ চুক্তিপত্রের নমুনা

 

চুক্তিপত্র

চুক্তিপত্র অর্থ  থার্টিন অক্টোবর 2022 ইং তারিখে সম্পন্ন করা হলো

প্রথম পক্ষ

জনাব মোঃ মাহমুদুল হাসান, সহকারি শিক্ষক, অলটাইম স্কুল।  ঠিকানা-    একেএম মোশাররফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল সংলগ্ন ডাক্তার বাড়ি ,মুক্তাগাছা ,ময়মনসিংহ।  জাতীয়তা- বাংলাদেশ, পেশা- শিক্ষক, এনআইডি নাম্বার-**************************, মোবাইল নাম্বার-***********।

দ্বিতীয় পক্ষ

জনাব মোঃ পলাশ।  ঘোষবাগ, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা, এশা- মুহতামিম বা  প্রধান শিক্ষক, এনআইডি নম্বর-*******************, মোবাইল নম্বর-*******************।

প্রথম পক্ষ মোঃ মাহমুদুল হাসান এবং দ্বিতীয় কক্ষ মোহাম্মদ মাহবুবুল হক স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে এবং কারো দ্বারা  প্ররোচিত না  হয়ে  নিম্নলিখিত শর্ত সাপেক্ষে তাদের   ফুড প্রোডাক্ট কোম্পানির সমস্ত ব্যবসায়ী কার্যাবলী  এবং যাবতীয় দেনাপাওনা নিম্নলিখিত শর্ত সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছে।

শর্তসমূহ

প্রথম শর্ত: এখানে আপনাদের ব্যবসায়ী কার্যাবলী সম্পর্কে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ শর্তটি লিখবেন।

দ্বিতীয় শর্ত: একাধিক শর্ত থাকলে এখানে  দ্বিতীয়শর্তটি লিখবেন।

তৃতীয় শর্ত: এরপর তৃতীয় শর্তটি লিখবেন।

(এভাবে আপনাদের যতগুলো শর্ত থাকবে সবগুলো শর্ত লিখে নেবেন স্পষ্টভাবে। )

স্বাক্ষর

মাহমুদুল হাসান

সহকারী শিক্ষক

অলটাইম স্কুল

সাক্ষী

1।

2।

স্বাক্ষর

মোঃ পলাশ

সহকারী শিক্ষক

নগর বিদ্যানিকেতন

সাক্ষী

1।

2।

আজকে আর্টিকেল এর বিষয় ছিল চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম।  যেহেতু চুক্তিপত্র অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাগজ এবং তা ভবিষ্যতের বড় বড় ঝামেলা কি মিটে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তাই চুক্তিপত্র করার আগে অবশ্যই তা নিয়ে যথেষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।   তাই যে ধরনের চুক্তিপত্র করবেন সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা ভালো।  আমার চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম আর্টিকেলটি পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে ভাল লাগবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *