অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

প্রত্যয়ন পত্র হচ্ছে কোন স্থানের বা কোন অফিসের আপনার প্রতি অনাপত্তিপত্র।  অর্থাৎ আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিয়ে থাকেন তবে সেই প্রতিষ্ঠান করতে আপনার প্রতি যে অনাপত্তি প্রদর্শন করবে তার অফিসিয়াল সার্টিফিকেট হচ্ছে অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র।  যেহেতু আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্রের এর প্রয়োজন পড়ে তাই আজকে আমরা অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র সম্পর্কে আলোচনা করব। 

অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র কত প্রকার

অফিশিয়াল প্রত্যয়নপত্র যখন লেখা হয় তখন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।  সাধারণত কাজ এর ভিন্নতা অনুসারে প্রত্যয়ন পত্র গুলো ভিন্ন হয়ে থাকে।  সাধারণত যে সকল অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে নিম্নে কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

  • নাগরিক সনদপত্র
  • চারিত্রিক সনদপত্র
  •  বিদ্যালয়ের প্রত্যয়ন পত্র অথবা হাই স্কুলের প্রত্যয়ন পত্র
  •  কলেজ প্রত্যয়ন পত্র শিক্ষা  বা প্রতিষ্ঠান প্রত্যয়ন পত্র
  •  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যয়ন পত্র
  •  চাকরির প্রত্যয়ন পত্র
  •  কোম্পানির প্রত্যয়ন পত্র

তবে বিশেষ ভাবে বলতে গেলে অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র এর মধ্যে একটি হচ্ছে নাগরিক সনদপত্র এবং অন্যটি হচ্ছে চারিত্রিক সনদপত্র।

চারিত্রিক সনদপত্র এক্ষেত্রে তিনি যে কোন ধরনের সমাজ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সাথে জড়িত নন সেই বিষয়টি গুরুত্বের সহিত দেখা হয়।  আর নাগরিক সনদপত্র ক্ষেত্রে তিনি যে উক্ত ইউনিয়ন এর স্থায়ী বাসিন্দা সেই ব্যাপারটি গুরুত্বের সহিত দেখা হয়। আর এই অফিশিয়াল প্রত্যয়নপত্রে সাধারণত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি  গণের  সিল এবং তাদের স্বাক্ষর থাকে।

অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজনীয়তা

যখন একটি প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করা হয় এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে নতুন করে কাজ শুরু করা হয় তখন নতুন প্রতিষ্ঠান পূর্বে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত প্রত্যয়ন পত্র দেখতে চাই।  তাই প্রত্যয়ন পত্র পূর্বের প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতার একটা দলিলপত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।   যেমন আপনি যদি একটি নতুন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চান তাহলে পুরাতন প্রতিষ্ঠানে আপনার কাজের অভিজ্ঞতার একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন হতে পারে।  এটি হচ্ছে উক্ত অফিসে আপনার কাজের অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র।

সাধারণত একটি স্কুল থেকে যখন অন্য স্কুলে ট্রান্সফার করা হয় তখন স্কুলে পড়াশোনা করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানার জন্য স্কুলের প্রত্যয়ন পত্র এর প্রয়োজন পড়ে।  অথবা যারা এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয় তাদের জন্য এই ধরনের স্কুলের প্রত্যয়ন পত্র এর প্রয়োজন পড়ে।  অথবা  কলেজ চেঞ্জ করতে চায় তাহলে পূর্বের কলেজের প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন হয়।  কেউ যদি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় তবে তাদেরকে যে কলেজ থেকে পাশ করেছে সেই কলেজের প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন হয়।  এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যয়ন পত্র বিভিন্ন কাজে আসে যেমন স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলা, স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে অথবা চাকরির ভাইভা দিতে গেলেও এই অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন হয়।

অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র সাধারণত কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যক্তি বা সংগঠনের প্রচলিত প্যাডে প্রিন্টেড করা থাকে অথবা না থাকলে হাতে লিখে দিতে হবে।  অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র লেখার কয়েকটি নিয়ম রয়েছে সেই নিয়ম গুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।  তাই যারা অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র লিখব নিচের নিয়মগুলো একবার দেখে নেই।

  • পত্রের শিরোনামে প্রত্যয়ন পত্র লেখা থাকা আবশ্যক
  • যে ব্যক্তির নামে প্রত্যয়ন পত্র তৈরি করা হবে অথবা যে ব্যক্তির নামে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা হবে সেই ব্যক্তির নাম এবং পূর্ণ ঠিকানা প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে।
  • অফিশিয়াল পদত্যাগপত্রটি সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত।  এদের একভাবে সাধারণত ভাবার্থ প্রকাশিত হয় এবং এই ভাবার্থ পড়ে যে কেউ পত্রটি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারবে।
  • প্রত্যয়ন পত্র তথ্য প্রদানকারীর নাম এবং স্বাক্ষর থাকতে হবে
  • প্রত্যয়ন প্রদানকারী কোন প্রতিষ্ঠান এএরসিল এবং সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বাক্ষর থাকতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

বাংলা এবং ইংরেজিতে সাধারণত প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম কিছুটা একই।  তাই এখানে আলাদা করে বলার তেমন কিছুই নাই শুধু বাংলায় লেখার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে হয় এবং ইংরেজিতে অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র লিখতে গেলে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার।

প্রচলিত কিছু অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্রের নমুনা

নিচে প্রচলিত কিছু প্রত্যয়ন পত্র নমুনা দেওয়া হলো যে গুলো দেখে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যয়ন পত্র তৈরি করে নিতে।  শুধু খালি জায়গাগুলোতে আপনার তথ্যগুলো দ্বারা পূরণ করতে হবে।

চারিত্রিক সনদপত্র লেখার নিয়ম

চারিত্রিক সনদপত্র হচ্ছে একটি অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র।  চারিত্রিক প্রত্যয়ন পত্র সাধারনত চাকরি এর ক্ষেত্রে ভাইবা এর সময় দেখা হয়।  এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে চারিত্রিক সনদপত্র এর প্রয়োজন পড়ে।

 

প্রত্যায়ন পত্র

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, _________________,  পিতা/ স্বামী:  ___________, মাতা: ___________, গ্রাম:___________ওয়ার্ড নং:__________ ডাকঘর:__________ উপজেলা:_____________ জেলা:___________। উল্লেখিত ব্যক্তির নাম______________ হলেও তাহার জমির খতিয়ানের ভুলক্রমে___________________ হয়ে যায়।  মূলত________________ এবং____________ একই ব্যক্তি।  তার স্বভাব চরিত্র ভালো এবং তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ কর্মে জড়িত নয়। আমি তার জীবনের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।

চেয়ারম্যান

___________ ইউনিয়ন পরিষদ

________উপজেলা,__________ জেলা

স্কুলের প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

প্রত্যয়ন পত্র

তারিখ

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে পিতা:__________মাতা:__________ গ্রাম:__________ পোস্ট:__________ থানা:__________ জেলা:__________ আমার বিদ্যালয়ের একজন আদর্শ ছাত্র / ছাত্রী হিসেবে বিদ্যা অর্জন করেছেন।  তার এসএসসির রোল নাম্বার:__________ পাশের সন :__________।  আমি তার সার্বিক সফলতা মঙ্গল কামনা করছি।

প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর

বিদ্যালয়ের সিলমোহর

বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র

প্রত্যয়ন পত্র

তারিখ:

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে মোঃ :__________ পিতা:__________ মাতা:__________  গ্রাম:__________  পোস্ট অফিস:__________  থানা:__________  জেলা:__________  ডিপার্টমেন্ট:__________ ।  আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃষ্টির সাথে তার স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।

আমি তার ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতা কামনা করছি এবং এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি সে যেন নিজের পরিবার এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করতে পারে।

ডিপার্টমেন্ট প্রধানের স্বাক্ষর

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলমোহর

চাকরির অফিসিয়াল প্রথম পত্র লেখার নিয়ম

তারিখ

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে মোঃ :__________ পিতা:__________ মাতা:__________  গ্রাম:__________  পোস্ট অফিস:__________  থানা:__________  জেলা:__________  একজন নিষ্ঠাবান এবং সৎ কর্মী হিসেবে আমার কোম্পানিতে বেশ কৃতিত্বের সহিত__________ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আমি একান্ত আশাবাদী, তিনি ভবিষ্যৎ যে কোম্পানিতে চাকরি করবেন সেই কোম্পানির তার প্রতি কৃত সকল দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সাথে এবং সততার সাথে সম্পাদন করবেন।

স্বাক্ষর

সিলমোহর

চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন পত্র

চেয়ারম্যান কার্যালয়

—————- ইউনিয়ন পরিষদ

স্মারক নং________ তারিখ

প্রত্যয়ন পত্র

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে মোঃ :__________ পিতা:__________ মাতা:__________  গ্রাম:__________  পোস্ট অফিস:__________  থানা:__________  জেলা:__________  । আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি এবং তার সম্পর্কে জানি।  তিনি জন্মসূত্রে এই ইউনিয়নের একজন স্থায়ী বাসিন্দা এবং তার স্বভাব চরিত্র যথেষ্ট ভালো।  আমার জানামতে কোন সমাজ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কোনো ধরনের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নয়।

আমি তার জীবনের সার্বিক উন্নতি ও মঙ্গল কামনা করি।

চেয়ারম্যান_________

__________ইউনিয়ন পরিষদ

অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র সম্পর্কে সচেতনতা

আজকে আর্টিকেলটির বিষয় ছিল অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র সম্পর্কে।  অফিসিয়াল প্রত্যয়ন পত্র সম্পর্কে আমি মোটামুটি ভাল একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।  যেহেতু প্রত্যয়ন পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ  ডকুমেন্ট তাই এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হওয়া উচিত।  আপনি যদি কম্পিউটারে কম্পোজ করে প্রত্যয়ন পত্র জমা দিয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে বানানের দিকে এবং গঠন এর দিকে যথেষ্ট খেয়াল রাখুন।  আর আপনি যদি হাতে লেখে অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র তৈরি করে থাকেন তবে আপনার হাতে লেখার দিকে নজর দিন।  অবশ্যই উন্নত মানের উপর কাগজ ব্যবহার করবেন অফিশিয়াল প্রত্যয়ন পত্র তৈরি করার জন্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *