ফুটবল খেলার নিয়ম, ইতিহাস বিস্তারিত আলোচনা
ফুটবল খেলা অনেকদিনের প্রাচীন হলেও এই খেলাটি বর্তমান সময়ের বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সারা বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলা হয়ে থাকে। আমরা ছোটবেলায় প্রত্যেকেই প্রায় একবার না একবার ফুটবল খেলেছি কিন্তু ফুটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি। আমাদের মনে হতে পারে আমরা ফুটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে জানি কিন্তু তা বিশ্লেষণ করে দেখা হয় তবে দেখা যাবে আমরা ফুটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে খুব কমই জানি। তাই আজকে আমরা ফুটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
ফুটবল খেলার ইতিহাস
1900 শতকে ফুটবল বলতে বিভিন্ন ধরনের খেলা কে বুঝাতে। সেখানে সাধারণত খেলোয়াড়েরা একটি বলকে প্রতিপক্ষের গুলি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। ফুটবলের প্রথম প্রকাশিত নিয়মগুলো রাগবি স্কুলের (1845) মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। 1904 সালে ফ্রান্সের প্যারিসে ফুটবলের আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিফা প্রতিষ্ঠিত হয়। 1930 সালে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করা হয়। বর্তমানে প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর একটি বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। 2022 সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হচ্ছে কাতার।
ফুটবল খেলার নিয়ম
ফুটবল খেলার মাঠ
ফুটবল খেলা একটি আয়তাকার মাঠের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। মাঠের দুইপাশে দুইটা গোল পোস্ট থাকে। খেলা দুই দলের মধ্যে সম্পন্ন করা হয় । খেলা একটি বল ব্যবহার করা হয় এবং প্রত্যেক দলের লক্ষ্য থাকে বিপরীত প্রান্তের যে গোলপোস্ট রয়েছে সেটির বিতরদিয়ে বল কে প্রবেশ করানো। এবং অন্য দল যদি প্রবেশ করাতে চায় নিজেদের গোলপোস্টের তবে সেটা আটকে দেওয়া। যেই দল বেশি গোল করতে পারবে অর্থাৎ স্কোর বোর্ড যাদের সংখ্যা থাকবে বেশি তারাই জয়ী দল হিসেবে বিবেচিত হবে।
- ফুটবল খেলার মাঠের দৈর্ঘ্য 120 গজএবং প্রস্থ 80 গজ
- ফুটবল খেলার মাঠের দৈর্ঘ্য 115 গজ এবং প্রস্থ 75 গজ
- ফুটবল খেলার মাঠের দৈর্ঘ্য 110 গজ এবং প্রস্থ 70 ঘর
তিন ধরনের পরিমাপ সাধারণত আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে সাধারণত শিশুদের জন্য ফুটবল খেলার মাঠ হয়ে থাকে একটু ছোট তাই তাদের জন্য তিন নাম্বার যেমাঠের পরিমাপ টি আছে সেটি ব্যবহার করা হয়।
পেনাল্টি এরিয়া
ফুটবল খেলার দুই পাশে যে গোলপোস্ট রয়েছে প্রত্যেকটি গোল পোস্ট এর ডানপাশে বা পাশে এবং সামনে 18 গজ দৈর্ঘ্য নিয়ে দাঁড় টানা হয়। এটি হচ্ছে পেনাল্টি এরিয়া। এর ভিতর সাধারণত গোলকিপার হাত দিয়ে বল ধরতে পারে। এবং এর ভিতর যদি আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড় প্রতিরক্ষাকারী খেলোয়ারদের অন্যায় ভাবে আঘাত করে তবে পেনাল্টি হবে। প্রতি রক্ষাকারী দলের গোলকিপার ছাড়া যদি কেউ এখানে হাত দিয়ে বল স্পর্শ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে পেনাল্টি হবে।
ফুটবল খেলার গোল পোস্ট
ফুটবল খেলায় সাধারণত দুইপাশে দুইটা গোল পোস্ট থাকে যাদের উচ্চতা হচ্ছে আট ফুট এবং দুই গোল পোস্ট এর মাঝে দূরত্ব হচ্ছে আট গজ। জালকে দুই দিকে বর্ধিত করে এমন ভাবে টানানো হয় যেন গোলকিপারের চলাফেরায় কোন বাধা দিতে না পারে।
ফুটবল খেলার বল
ফুটবল খেলার বল সাধারণত চামড়া চামড়া জাতীয় বস্তু দ্বারা তৈরি করা হয় যা বায়ু পূর্ণ থাকে। ফুটবল ধরন প্রতি ওজন নির্ধারিত থাকে। সাধারণত আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মেনে চলা হয় ফুটবল খেলার বল তৈরি করাতে।
খেলোয়ার এর সংখ্যা
প্রতিটি দল খেলার জন্য 11 জন খেলোয়ার ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ দুই দলের মোট 22 জন প্লেয়ার মাঠের মধ্যে খেলতে থাকবে। কিন্তু প্রত্যেক দল তাদের সাথে 7 জন অতিরিক্ত খেলোয়ার রাখতে পারবে কারন যদি কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাঠের বাইরে চলে যায় তবে বাকি প্লেয়ারদের মাঠে নামাতে পারবে।
রেফারি
ফুটবল খেলায় সাধারণত চারজন রেফারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একজন মাঠে থাকেন। এবং দুইজন পতাকা হাতে দুই পাশে থাকেন। এবং একজন টিভি আম্পায়ার হিসেবে খেলা কে পরিচালনা করেন।
ফুটবল খেলার সময়
প্রতিটি ফুটবল ম্যাচ সাধারণত 90 মিনিটে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে 45 মিনিট পর বিরতি দেওয়া হয় 15 মিনিট। বিরতির পর প্লেয়াররা বিপরীত গোলপোস্ট ব্যবহার করেন।
গোল
ফুটবল খেলা যেহেতু গোলের খেলা তাই প্রত্যেকেরই আকাঙ্ক্ষা থাকে যেন বিপরীত প্রান্তের গোলের ভিতরে দিয়ে বল প্রবেশ করাতে পারে। যাদের বিপরীত প্রান্তের গোলপোস্টের ভিতরে প্রবেশ করাতে পারবে তাদের একটি গোল বিবেচনা করা হয়। এভাবে অধিক গোল স্কোর করতে পারে যারা তাদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ফাউল বা অসদাচরণ
যদি কেউ ফুটবল খেলায় অসদাচরণ করে তবে তাকে হলুদ কার্ড দিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। কিন্তু যদি হলুদ কার্ড দেওয়ার পরও আবার সে অপরাধ করে তবে তাকে আল একটি হলুদ কার্ড দেওয়া হয় এবং দুইটি হলুদ কার্ডের পরিনাম হচ্ছে একটি লাল কার্ড। লাল কার্ড মানে হচ্ছে ওই প্লেয়ারকে একেবারেই খেলা থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া। তখন দল দশজনের হয়ে যাবে। আবার যদি কেউ খেলার মধ্যে গুরুতর অপরাধ করে তবে রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখাতে পারেন। যদি একাধিক প্লেয়ার লাল কার্ড দেখে তবে তারা মাঠের বাইরে চলে যাবে।
ফ্রি কিক
যদি কোন বিপুল অন্য দলের প্লেয়ারকে আঘাত করে অথবা তার প্রতি অসদাচরণ করে তবে তারা একটি ফ্রি কিক পায়।
থ্রেয়িং
যদি বল মাঠের বাহিরে চলে যায় তবে থ্রেয়িং করা হয় । সাধারণত যাদের পায়ে লেগে বলটি মাঠের বাহিরে চলে যায় তাদের বিরুদ্ধে অন্য দলের প্লেয়াররা থ্রেয়িং
করার সুযোগ পায়। থ্রেয়িং এর মানে হচ্ছে দাগের বাইরে থেকে দুই হাত দিয়ে বল কি মাঠের ভিতরে প্রবেশ করানো।
কর্নার পতাকা
সাধারণত মাঠের চারপাশে চারটি খুঁটিতে চারটি পতাকা টানানো থাকে যাকে কর্নার পতাকা বলা হয়। এই কর্নারের কুটির সাথে এক গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে 1 গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্তচাপ আঁকা হয়। যখন কোন দল কর্নার কিক পায় তখন এই এক গজের মধ্যে বল বসিয়ে সেখান থেকে অন্যদের গোলপোস্ট বরাবর কিক করার সুযোগ পায়।
সেন্টার সার্কেল
ফুটবল খেলার মাঠ থেকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করার জন্য মাঝখান বরাবর একটি দাগ টানা হয়। এই দাগের মাঝ বরাবর 10 গজ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকা হয় যাকে সেন্টার সার্কেল বলে। সাধারণত যখন খেলা শুরু করা হয় তখন এই সেন্টার সার্কেল এর ভিতর থেকে খেলা শুরু করা হয়।
ব্যতিক্রমী ফুটবল খেলার নিয়ম
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ফুটবল হাত দিয়ে স্পর্শ করে তবে সাধারণত হ্যান্ডবল ধরা হয় এবং অপর দলের প্লেয়াররা তাদের বিরুদ্ধে ফ্রি কিক পায়। অনেক সময় দেখা যায় ডি-বক্সের ভিতরে গোলরক্ষক ছাড়া অনেক খেলোয়ার হাত যদিও ব্যবহার করার নিয়ম নেই তারপরও হাতে বল লেগে গিয়েছে। তখন রেফারি খেলা চালিয়ে যেতে। কারণ এটা হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত।
অ্যাডভান্টেজ রোল
অনেক সময় দেখা যায় ফাউল হওয়ার পরও রেফারি দুই হাত সামনে দিকে বাড়িয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। এটাকে সাধারণত অ্যাডভান্টেজ এস রূঢ় বলা হয়। অনেক সময় আক্রমণ করতে গেলে বিপরীত দলের খেলোয়ার বাধা দিতে এসে অবৈধভাবে আঘাত করে। তখন যদি আক্রমণকারী প্লেয়ারের কাছে বল থাকে এবং তার বল নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা থাকে তখন রেফারি খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য 2হাত দিকে বাড়িয়ে দেন। কিন্তু যদি এমন ভাবে ফাউল ফয়েজ এটি লাল কার্ড দেখানোর মত তবে রেফারি খেলা থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লালকার্ড দেখাবেন।
ফুটবল খেলার জন্ম লগ্ন থেকেই মৌলিক পরিবর্তন ব্যতীত সাধারণত ছোট ছোট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফুটবল খেলার নিয়ম চলে এসেছে। আজকে যেহেতু আমার আর্টিকেলের বিষয় ছিল ফুটবল খেলার নিয়ম, তাই ফুটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা না নিলেই নয় সেই নামগুলো মোটামুটি আলোচনা করা হয়েছে।