আলকুশি হল একটি ঔষধি গাছ । আলকুশি একটি বর্ষজীবী লতানো গাছ । এই গাছটির রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন । এই আলকুশি বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে নানাবিধ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায় । আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো আলকুশি বীজের উপকারিতা ।
আলকুশি গাছ যেখানে পাওয়া যায়
এই গাছটি সাধারণত শহরের বাহিরে ঝোপেঝাড়ে প্রায় একই জায়গায় অনেক বছর ধরে জন্মায় । এই আলকুশি গাছটি আসলে গোল্লা জাতীয় গাছের মত । এই আলকুশি গাছটি সিম পরিবারের উদ্ভিদ । এই আলকুশি গাছের ফল গুলা অনেকটা সিম এর মত দেখতে । এই ফলগুলোতে 4 থেকে 6 টি বীজ থাকে। আলকুসির আরো ভিন্ন ধরনের নাম রয়েছে যেমন আত্ম গুপ্তা ,স্বয়ং গুপ্তা , রুমাল ইত্যাদি । এই আলকুশি গাছটির বীজগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে যা সহজেই আলাদা করা যায় । আলকুশি গাছের পাতা লম্বায় 6 থেকে 10 ইঞ্চি । এই গাছটির পুষ্পদন্ড নিচের দিকে মুখ করে থাকে । আলকুশি গাছের ফলের খোসা ও পাতায় আছে সেরোটোনিন যার কারণে চুলকানির উদ্রেক হয় ।
আলকুশি গাছের চাষ
আলকুশি গাছের ফুল গুলো দেখতে সিম ফুলের মত লালচে বেগুনি । আলকুশি ফুলগুলো সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ফোটে । আলকুশি ফলটি গৃষ্ম কালীন বৃষ্টি আর্দ্র গরম আবহাওয়ায় এই ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী । আলকুশি ফল বা ফুল যদি বেশি গরম হয় তাহলে পাতাগুলো এই গরমের প্রভাব টা সহ্য করতে পারে না । কিন্তু শীত শেষে ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে 180 থেকে 250 সেন্টিমিটার তাপমাত্রায় ফুল ফোটা ও ফল ধরার জন্য বেশ উপযোগী এই ফলটি ধরার জন্য বা বড় হওয়ার জন্য 250 থেকে 230 সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে বেশি ভালো হয় কিন্তু আবার সব ধরনের মাটিতে আলকুশি ফলানো যায় না আবার দেখা যায় জঙ্গলে খুব সহজেই এই গাছগুলো হয়ে থাকে ।
আলকুশি গাছ টি যে জায়গায় পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত লালমাটি ও এটেল মাটিতে এই ফলটি ভালোভাবে ফলানো যায় । আলকুশি চাষ করার জন্য মাটির পিএইচ মাত্রা 5/7 বেশি উপযোগী । এই গাছটির আবার সহনশীল ক্ষমতা নেই । কিন্তু এই গাছটি যদি সারাদিন রোদ পায় এবং অপেক্ষাকৃত একটু উঁচু জমিতে এই ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী । কিন্তু আলকুশি চাষের জন্য মাটি অবশ্যই জৈব পদার্থ দ্বারা সমৃদ্ধ এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা হতে হবে তাহলেই এই ফলটি ভালোভাবে চাষ করা যাবে ।
মধ্য আমেরিকায় আলকুশির বিচিগুলো আগুনে ভিজে চূর্ণ করা হয় এবং এই বিচিগুলো কফির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয় । কিছু সম্প্রদায়ের মানুষ আছে যারা এই আলকুসির বিচিগুলো খাদ্যশস্য হিসেবে আবাদ করে এবং সবজি হিসেবে রান্না করে খায় এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রদায় হল গুয়েতেমালায় কেচি । নিচে আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
আলকুশি বীজের উপকারিতা
- আমাদের প্রায় সময়ই সর্দি কাশি হয়ে থাকে এই সর্দি-কাশি থেকে উপকার পাওয়ার জন্য আমরা আলকুশি গাছের শিকড়ের রস যদি খাই তাহলে সর্দি কাশি উপশম হবে । সর্দি কাশি উপশমে আলকুশি বীজের উপকারিতা অন্যতম ।
- আলকুশি বীজের উপকারিতা মধ্যে অন্যতম হলো কোন পোকামাকড় কামড় দিলে আলকুশি বীজ গুঁড়ো করে সেই আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে ব্যথা কিংবা যন্ত্রণা অনেকটা কমে যায় ।
- আলকুশি গাছের বীজ চিনি ও দুধ সহ সিদ্ধ করে খেলে বাতের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । আলকুশি বীজ আমাদের শরীরের শারীরিক দুর্বলতা দূর করে ।
- অনেক সময় আমাদের মূত্রথলিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে যেমন মূত্রথলিতে জ্বালাপোড়া করে । আলকুশি বীজ আমাদের মূত্রযন্ত্রের রোগ নিরাময়ে বেশ উপকারী ।
- আমাদের বিভিন্ন ধরনের কারণে আমাশয় হয়ে থাকে । এই আমাশয় রোগ থেকে নিরাময় পাওয়ার অন্যতম একটি উপায় হলো আলকুশি শিকড়ের রস এক-চামচ করে এক মাস খেলে আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ।
- অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত গরমের কারণে আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোড়া হয়ে থাকে। যারা পড়া সমস্যার কষ্ট পান তাদের জন্য আলকুশি ব্যবহার খুবই উপকারী । আলকুশি এর পাতার রস যে স্থানে ফোড়া হয়েছে সেই স্থানে দিলে অচিরেই ফোড়াটা ফেটে যায় ।
- এর কান্ডের রস চোখের রোগের জন্য খুবই উপকারী ।
- আলকুশি শিকড়ের রস জীবজন্তুর গায়ের গায়ে লাগালে দ্রুত সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ।
- আমাদের কাশি হলে অনেক সময় বুকে কফ জমে যায় । বুকের জমা কফ সারাতে আলকুশি মূল বেশ কার্যকরী ।
- আলকুশি বীজ গুঁড়ো করে মধুসহ খেলে অনেক সময় কলেরা এবং কলেরা জাতীয় মারাত্মক পেট খারাপ জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়মিত আলকুসির বীজগুলো খেতে হবে ।
- আলকুশি বীজ সেবনে যৌন দুর্বলতা দ্রুত বীর্যপাত শক্তিহীনতা কাম উত্তেজনার অভাব ইত্যাদি ক্ষেত্রে যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে অসাধারণ উপকারী । কিন্তু আপনাদের অবশ্যই ভালো আলকুশি বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং সেই আলকুসির বীজটা যেন আসল হয় তাহলে আপনারা এই বীজটা সেবন করলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে পারবেন । আলকুশি বীজের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হলো যৌন শক্তি বৃদ্ধি করণ ।
- রক্ত দূষিত হলে আলকুসির কান্ড সিদ্ধ করে এক ছটাক পানির পরিমাণ প্রত্যহ দুইবার সেবন করলে রক্তদোস নিবারিত হয়ে থাকে ।
- বায়ু জমে পেট গরম হলে আলকুশি বীজের একানা পরিমাণ গুড়া ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে পেট ঠান্ডা হয়ে যায় ।
- গোদ রোগ আলকুশিমূলের রস এক চা চামচ খালি পেটে খেলে এই রোগের উপশম হয় আর সামান্য পানি সহ মূলটি আক্রান্ত স্থানে লাগালে রোগের উপশম হয়
- রক্তপিত্ত রোগের নিরাময় আলকুশি পাতা অন্যতম । সর্বপ্রথম আলকুশি পাতা উত্তমরূপে দ্রুত করতে হবে এবং এই পাতাগুলো শাকের মতো করে রান্না করে সেবন করতে হবে । যার ফলে আপনার রক্তপিত্ত রোগের নিরাময় হতে পারে ।
- অনেক সময় বিভিন্ন কারণে নারীদের যোনিতে আঘাত লাগে । নারীদের যৌনিতে আঘাত লাগলে আলকুসির মূল পানিসহ সিদ্ধ করে সেই সিদ্ধ করা পানিতে পরিষ্কার একটি নেকরা ভিজিয়ে রেখে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ছেক দিলে অনেকাংশে ব্যাথাটা কমে যেতে পারে । এই প্রক্রিয়াটা আপনি সাতদিন করতে পারেন ।
- অনেক সময় আমরা দীর্ঘ সময় বসে থাকলে আমাদের হাতে পায়ে এক ধরনের ঝিন ঝিন অনুভূতি হয় মনে হয় যেন অবশ হয়ে যায় , যেখানে ঝিমঝিম লাগে সেই জিনিসটা না সরাতে পারলে আমাদের খুব কষ্ট হয় এই রকম সমস্যা দেখা দিলে আলকুশি বীজ 6 থেকে 8 টি থেঁতো করে ছাগলের দুধের সাথে ফুঁটিয়ে অল্প মধু মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো উপকার আসে এই পদ্ধতিতে আপনি সকাল-সন্ধ্যা দিনে দুইবার করবে এবং মাসখানেক খাওয়ালে অনেক উন্নতি হয় আলকুশি বীজের উপকারিতার মধ্যে এটা অন্যতম ।
- অশ্বগন্ধার মূল এবং আলকুশি মূল দুটি সমপরিমাণ মিশিয়ে পানিতে সিদ্ধ করে সাথে সামান্য পরিমাণ একটু মধু মিশিয়ে খেলে প্রাপ্তবয়সেও যাদের যৌবন প্রাপ্তির হয়না তারা নিশ্চিত ফল পাবে। আলকুশি মূল এবং অশ্বগন্ধার মূলের পরিমাণটা থাকবে 300 মিলিগ্রাম ।
আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম
যেকোনো জিনিস খাওয়ালে কি সঠিক নিয়ম রয়েছে । আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না আপনি যদি আলকুশি বীজ খেতে চান তাহলে আপনাকে আলকুশি বীজ গুলো প্রথমে গুরু করে নিতে হবে তারপরে সেবন করতে হবে ।
আলকুশি বীজ পাউডার খাওয়ার নিয়ম হলো প্রতিদিন রাতে এক চা-চামচ আলকুশি বীজ গুঁড়ো হাফ গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে আপনি যদি এর স্বাদ বাড়াতে চান তাহলে এর সাথে মধু বা মিস্ত্রি মিশিয়ে খেতে পারেন । আপনি চাইলে এটা দুধের সাথে খেতে পারেন কিংবা পানির সাথে ও খেতে পারেন ।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের আমরা আলোচনা করেছি আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনারা আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন । প্রত্যেকটা জিনিসের একটি ভালো দিক রয়েছে এবং একটি খারাপ দিক রয়েছে । আপনারা যদি আলকুশি বীজের ব্যবহারটা অতিরিক্ত মাত্রায় বেশি করে থাকেন তাহলে আপনাদের শরীরের ক্ষতি হতে পারে । এতে আপনাদের উপকারের বদলে অপকার হতে পারে তাই অবশ্যই কোনোকিছু সেবন করার আগেই বা ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে বিস্তারিতভাবে সেই সম্পর্কে জেনে নিবে ।