আদার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিকৃয়া

আদার উপকারিতা

আদাকে আমরা সাধারণত তরকারির মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।  কিন্তু আদায় অনেক ভেষজ গুনাগুন রয়েছে।  যার কারণে আদা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হয়ে থাকে।  আদতে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল, anti-inflammatory, এন্টিসেপটিক, এন্টিবায়োটিক,  এন্টিভাইরাস বৈশিষ্ট্য।  এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে।  সেজন্য  আদাকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  সকল বয়সের মানুষ আদা খেতে পারে। 

আদার উপকারিতা

আদা যেহেতু সহজলভ্য একটি ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন মসলা জাতীয় উদ্ভিজ্জ।  তাই আজকে আমরা খুব সহজে ব্যবহার করতে পারি।  তাই আজকে আদার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।  যারা আদার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তারা আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

আদায় যে সকল খনিজ পদার্থ রয়েছে

আদার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব কিন্তু তার আগে জেনে নেই আদায় কি ধরনের খনিজ পদার্থ রয়েছে।  কারণ আমরা অনেকেই এই সকল খনিজ পদার্থের উপকারিতা সম্পর্কে জানি।  যেমন আদায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন b6, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং, anti-inflammatory এজেন্ট ইত্যাদি।  এই সকল খনিজ পদার্থ আমাদের দৈহিক গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  তাই আধার গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক।

কাশি কমাতে আদার উপকারিতা

যারা শীতের শুরুতে অথবা বছরের যে কোন সময় ঠান্ডা জনিত কাশি এবং সর্দি ভুগছেন তারা আদা খেতে পারেন।  প্রতিদিন দুবেলা এক চামচ করে আদার রস লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মত করে খেতে পারেন।  অনেকে আদা চা পান করেন সেটাও আপনার কাশি কমাতে সহায়তা করবে।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে আদার উপকারিতা

আদার বহুমাত্রিক উপকারিতা রয়েছে।  তারমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে আদার উপকারিতা অনেক।  কাশি কমানোর ক্ষেত্রে আধার ব্যবহার যেরকম ঠিক সেরকম ভাবে উচ্চ রক্ত চাপ কমাতেও আদার ব্যবহার করতে পারেন।  একইভাবে আদার রস লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে গরম পানির সাথে খেতে পারেন প্রতিদিন  দুবেলা করে।   মধু এর সাথে মিশিয়ে খেলে আরও বেশি উপকারী তা পাবেন।  তবে যাদের ডায়াবেটিস রোগ রয়েছে তারা সাধারণত  মধুর সাথে মিশিয়ে খাবেন না।  তারা শুধু শুধু আদার রস লেবুর সাথে মিশিয়ে গরম পানি খেয়ে নিবেন।

মাইগ্রেন, সাইনাস ও গলা ব্যথায় আদার রসের উপকারিতা

মাইগ্রেন সাইনাস ও গলা ব্যথায় তাৎক্ষণিক উপকার পাওয়ার জন্য হালকা একটু লবণ মিশিয়ে আদা চিবিয়ে খাবেন।  এতে লক্ষ্য করবেন আদার উপকারিতা কেমন।  তুমি যদি দীর্ঘমেয়াদিভাবে মাইগ্রেনের ব্যথায় আদার উপকারিতা নিতে চান তবে আপনাকে প্রতিদিন দুই বেলা এক চামচ আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ  গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মত করে খেতে হবে।  যদি প্রতিদিন এরকম নিয়মে আপনি আদার রস খেতে পারেন তবে আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।

জ্বর ও বমি বমি ভাব

বমি বমি ভাব হয় এবং গায়ে হালকা জ্বর অনুভব হয় তবে আদার উপকারিতা গ্রহণ করুন।  সেজন্য হালকা গরম পানির সাথে আদার রস মিশিয়ে ছয় সাতবার খান।  দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার বমি বমি ভাব এবং জ্বর থাকলে সেটা কমে গেছে।

 হাঁপানি ও ফুসফুসের সংক্রমণে আদার উপকারিতা

যদি গলায় এবং ফুসফুসে সংক্রমণের জন্য শ্বাসকষ্ট হয় অথবা হাঁপানি থাকে তবে আদা খেতে পারেন।  আদা আপনার ফুসফুসের সংক্রমণ রোগের বিরুদ্ধে কাজ করবে এবং হাঁপানি প্রতিরোধে সহায়ক হবে।  হাঁপানি ও ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে আদার উপকারিতা নিতে হলে আপনাকে আদার রস বের করে নিতে হবে।  তারপর আদার রসের সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে হবে।  যদি একইভাবে 15 দিন একটানা এটি খেতে পারেন তবে আপনার হাঁপানি ও ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে সহায়ক হবে।

আমাশয় পেট ফাঁপা ও পেট ব্যথা

সাধারণত যাদের পেট ফাঁপা এবং পেটে ব্যথা রয়েছে তারা আদার রস খেতে পারেন।  এক্ষেত্রে আপনি আধা  চিবিয়ে খেতে পারেন।  দেখবেন আপনার পেট ফাঁপা ভাব কমে গেছে এবং পেটে ভালো অনুভব হচ্ছে।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে আদার উপকারিতা

আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তবে আদা খাওয়ার অভ্যাস করুন।  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে।  নিয়মিত যদি আপনি আধা খেতে পারেন তবে আপনার মলত্যাগের গতি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে আদার উপকারিতা

আদায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকার কারণে সেটা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে সাথে সাথে আপনার কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।  উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আধার যথেষ্ট উপকারিতা  রয়েছে।

অস্টিওআথ্রাইটিস এর ব্যথায় আদা

যারা অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগে ভুগছেন তাদের  শরীরের হাড়ের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা করে।  এ ধরনের ব্যথা কমানোর জন্য আদা ব্যবহার করতে পারেন।  সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগটি হয়ে থাকে।  একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত আদা খান তাদের  এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট কম।

ওজন কমাতে আদার ব্যবহার

যারা ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত আদা খেতে পারেন।  ওজন কমাতে আদার যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে।  কারণ আদায় রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে।  একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত মানুষ বেশি বেশি আদা খান তাদের পেট সবসময় ভরা মনে হয়।  ফলে তারা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করেন না এবং সেজন্য তাদের স্থূলকায় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।

মাসিকের সমস্যা আদার উপকারিতা

যারা মাসিকের সমস্যা রয়েছে তারা বুঝতে পারেন এটা কি জালা।  এর মধ্যে অনেকে রয়েছে তলপেটে ব্যথা।  যাদের তলপেট  ব্যথা করে তারা সাধারনত দৈনন্দিন জীবন যাপনে যথেষ্ট কষ্ট অনুভব করেন।  তাদেরকে মুক্তি দিতে পারে আদা।  মাসিকের সমস্যার সমাধানে আধার যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে।  যদি আদা চা পান করেন নিয়মিত তাহলে একটু আরাম বোধ করতে পারবেন।  অথবা আদার রস গরম জলের সাথে মিশিয়ে খেলে মাসিকের সমস্যায় উপকার পাবেন।

পাকস্থলীতে ও লিভারের সমস্যা আদার উপকারিতা

যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে অথবা পাকস্থলীতে পরিপাক জনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তারা আদা খেতে পারেন।  এক্ষেত্রে আদার যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে।  আদা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।  ফলে যদি আপনি নিয়মিত আদা খান তাহলে আপনার হজমের সমস্যার সমাধান হবে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে আপনি এই ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

রোগ প্রতিরোধে এবং ক্ষত দূর করতে আদার উপকারিতা

সাধারণত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটায়।  যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ ছাদের দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে জীবাণু রয়েছে সেই জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করতে আদার রস যথেষ্ট উপকারী।  আদার রস আপনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেয়েছে হয়েছে তা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।  আদায় যে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে সেটি সাধারণত কোথাও কেটে গেলে সেখানে ক্ষত সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।  এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আদার বহুমাত্রিক উপকারিতা রয়েছে।

কাঁচা আদার উপকারিতা

আদা সাধারণত তরকারির সাথে রান্না করে অথবা চায়ের সাথে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়ে থাকে।  তবে কাঁচা আদা খাওয়া যায়।  আপনি যদি লবণের সাথে মিশিয়ে অল্প পরিমাণ কাঁচা আদা খান সেখানেও দেখবেন আপনার উপকারিতা রয়েছে।  কাঁচা আদা সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন গলা ব্যথা বমি বমি ভাব ইত্যাদি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

আদার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে বদহজম এবং পেট ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে যদি অতিমাত্রায় আদা খাওয়া হয়।  সাধারণত কোনকিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়।  আপনি আদার উপকারিতা আছে জেনে যদি বেশি মাত্রায় আদা গ্রহণ করেন তবে সেটা অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে না।  সেজন্য 15 গ্রাম আদার রস দিনে খাওয়া উচিত।  এর বেশি আদার রস খাওয়ার প্রয়োজন হয়না।

আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল আদার উপকারিতা।  আদার উপকারিতা আলোচনা শেষ করতে গেলে আর্টিকেলটি বিশাল আকার ধারণ করবে।  অথবা আমি আদার উপকারিতা বলে শেষ করতে পারবো না।  আদা  যেমন একটি খাদ্যের সাত বৃদ্ধির একটি মসলা তেমন শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।  তাই আমি আপনাদেরকে পরামর্শ দিব নিয়মিত পরিমাণমতো আদা খান এবং সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *