আলহামদুলিল্লাহ আমরা নিয়মিতভাবে কুরআন হাদিসের আলোকে ইসলামিক বিষয়গুলো নিয়মিত লেখার চেষ্টা করে আসছি আজকে আমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কি বলেছেন।
(৬২: আল-জুমুয়াহ,:আয়াত: ৯,)
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الْبَیْعَ١ؕ ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে ঐ সব লোক, যারা ঈমান এনেছো, জুম’আর দিন যখন নামাযের জন্য তোমাদের ডাকা হয় তখন আল্লাহর যিকরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য বেশী ভাল যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে।
জুমু’আর দিনের ফজিলত ও জুমু’আর নামাযের বহু ফযীলতের কথা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল কারীম সা. ইরশাদ করেন:
من اغتسل يوم الجمعة وليس من أحسن ثيابه ومش من طيب إن كان عنده ثم أتى الجمعة فلم يتخط أعناق النّاس ثم صلى ما كتب الله له ثم أنصت إذا خرج
إمامه حتى يفرغ من صلوته كانت كفارة لما بينها وبين جمعة التي قبلها.
“যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে, সাধ্য মোতাবেক ভাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করবে, সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করবে। এরপর জুমু’আর নামাযের জন্য মসজিদে হাজির হয়ে যারা আগে থেকে বসে আছে তাদের ডিঙিয়ে আগে না গিয়ে বরং যেখানে জায়গা পায় সেখানে গিয়ে আল্লাহ তাআলা যতটুকু তাওফীক দেন সে মোতাবেক সুন্নত ও নফল পড়বে। আর ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য বের হবে তখন আদবের সাথে চুপ থেকে ইমামের দিকে মুতাওয়াজ্জিহ হয়ে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনবে এবং নামায শেষ করবে- তার এ জুমু’আর নামায গত জুমু’আর নামায পর্যন্ত কৃত সমস্ত গুনাহ’র জন্য কাফফারা স্বরূপ হবে।অর্থাৎ, পুরো এক সপ্তাহের গুনাহ আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন।
- জুমার দিনের ফযীলত। জানার আগে আমরা জেনে নেব জুম্মা শব্দের অর্থ কি
- জুমু’আ শব্দটি আরবি। এর অর্থ সমাবেশ। ইয়াওমুল জুমু’আ এর অর্থ, সমাবেশের দিন।
- জুমার দিনের ফজিলত জানার আগে আমরা জেনে নেব
জুমু’আর দিনের নামকরণ
শুক্রবার দিনের নাম কেন ‘জুমু’আ রাখা হলো এ সম্বন্ধে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কারও মতে এ দিনে আদম আ.-কে তৈরির কাদামাটি জমা করা হয়েছিল, এ কারণে এ দিনের নাম জুমু’আ রাখা হয়েছে। কারও মতে আদম ও হাওয়া আ.-কে সৃষ্টির পর এ দিনেই তাদের মধ্যে প্রথম মিলন হয়েছিল তাই এ দিনের নাম রাখা হয়েছে ‘জুমু’আ। কারও মতে আদম ও হাওয়া আ. বেহেশত থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার দীর্ঘকাল পর এ দিনে তাদের মধ্যে পুনরায় মিলন হয়েছিল। বিধায় এ দিনের নাম জুমু’আ রাখা হয়েছে। কারও মতে এদিনেই কিয়ামত কায়েম হবে এবং হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষের জমায়েত হবে এজন্যই এ দিনের নাম জুমু’আ রাখা হয়েছে। ৬৮
প্রতি সপ্তাহে এ দিনটিকে আল্লাহ তাআলা মানব জাতির সমাবেশের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতেরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইহুদীরা ইয়াওমুসসাবত তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারণ করে। খ্রিস্টানরা তাদের সমাবেশের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে। ইয়াওমুল আহাদ তথা রবিবারকে। আর আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে তাওফীক দিয়েছেন যে, তারা জুমু’আর দিন অর্থাৎ, শুক্রবারকে তারা সমাবেশ ও একত্রিত হওয়ার দিন বলে গ্রহণ করেছে।
জুমার দিনের ফজিলত এখন আমরা জানবো আল্লাহতালা কেন শুক্রবারকে শ্রেষ্ঠ দিন করলেন
সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন
জুমু’আর দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। আর কোন দিন, কোন রাত, কোন মাস, কোন জায়গা, কোন ব্যক্তি, কোন বস্তুকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া, মর্যাদা দান করা আল্লাহ। তাআলার মর্জি, ও ইচ্ছাধীন বিষয়। তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মর্যাদা দানকারী । ইরশাদ হচ্ছে: وربك يخلق ما يشاء ويختار
“আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি মনোনীত করেন।” (সূরা কাসাস: ৬৮)
তাঁর এ শেষ্ঠত্ব দান ও মর্যাদানের ব্যাপারে কারও দ্বিমত পোষণ করার অধিকার নেই ।
যেমনিভাবে তিনি সমস্ত ফেরেশতাদের মাঝে হযরত জিবরাঈল আ.-কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সমস্ত নবীদের মধ্যে মুহাম্মাদ সা.-কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সমস্ত মাসের মধ্যে রমাযান মাসকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সমস্ত রাতের মধ্যে লাইলাতুল কদরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে সমস্ত দিনের মধ্যে জুমু’আর দিনকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ শ্রেষ্ঠ দিনেই আল্লাহ তাআলা তার শ্রেষ্ঠ মাখলুক মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে জান্নাতে দাখিল করেছেন। আর এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিয়েছেন। আর এ দিনে কিয়ামত কায়েম হবে।
জুমার দিনের ফজিলত দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত
জুমু’আর দিনে দু’আ কবুলের সময়
জুমু’আর দিনে এমন একটা মুহূর্ত আছে, যে মুহূর্তে বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে যে দু’আ করে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। এটা একমাত্র জুমু’আর দিনেরই এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। তবে সে মুহূর্তটাকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ হিকমাতে গোপন রেখেছেন, যেমন গোপন রেখেছেন লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট খাতকে। তবে লাইলাতুল কদর গোপন থাকার পরও যেমনিভাবে এর প্রতি যথেষ্ট ইশারা-ইঙ্গিত রয়েছে, তেমনি জুমু’আর দিনের ঐ বিশেষ মুহূর্তকে লাভ করার জন্যে ও উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন সম্ভাব্য সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’য় দু’টি সময়কে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
১. ইমাম খুতবা দেয়ার জন্যে যখন মিম্বারে ওঠেন তখন থেকে জুমু’আর
নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়।
২. জুমু’আর দিন আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়। এই সময় দু’টি বিশেষভাবে আল্লাহ তাআলার রহমত বান্দার দিকে রুজু’ হওয়ার সময়। এই দু’টির যে কোন একটি সময়ের মাঝে সে মুহূর্ত আছে, যাতে বান্দা নাফারমানির দু’আ ছাড়া যে কোন জায়েয দু’আ করলে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করার ওয়াদা করেছেন ।
জুমার দিনের ফজিলত জানার পাশাপাশি আমরা জেনে নেব ইসলামের ইতিহাসে প্রথম জুমু’আ ও জামে মসজিদ কোনটি।
জুমু’আর দিনে আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো জুমু’আর নামায। রাসূল কারীম সা. হিজরত করে মদীনায় যাওয়ার পথে কুবায় চৌদ্দদিন অবস্থান করেন। তিনি এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন যার নাম মসজিদে কুবা। এ মসজিদের বৈশিষ্ট্য হলো কেউ যদি ঘর থেকে ওযু করে মসজিদে কুবায় গিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করে তা হলে সে একটা “উম্রাহর সওয়াব লাভ করবে।
এখান থেকে যখন তিনি মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন, তখন আধা কিলোমিটার উত্তরে বনূ সালেম মহল্লায় পৌঁছলে যোহরের ওয়াক্ত হয়, তখন তিনি সেখানে জুমু’আর নামায আদায় করেন। পরবর্তীতে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং তার নাম রাখা হয় ‘মসজিদুল জুমু’আ।’
ইসলামের ইতিহাসে এটিই প্রথম জুমু’আ। এতে তিনি এক নাতিদীর্ঘ খুৎবা দেন। এটা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক নযীরবিহীন স্মরণীয় খুৎবা। মক্কার কাফের-মুশরিকদের সীমাহীন নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করে মদীনায় এসে সর্বপ্রথম তিনি যে খুৎবা দিলেন, এর কোথাও মক্কাবাসীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তিনি করেন নি। তাদের কোন কুৎসাও রটনা করেন নি এবং এতে কোন প্রতিশোধ স্পৃহাও তার ছিল না। যা ছিল তা হলো, আল্লাহ তাআলার প্রশংসা, রিসালতের দাওয়াত, তাকওয়া ও আখিরাতের প্রস্তুতির কথা। সুবহানাল্লাহ! কী সবর, কী ধৈর্য্য, কী সহিষ্ণুতা, কী উদারতা ! যারা দীর্ঘ তেরটি। বছর পর্যন্ত একটা মুহূর্তও শান্তিতে কাটাতে দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে একটি শব্দ ও তিনি উচ্চারণ করলেন না। তাই তো আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন:
وانك لعلى خلق عظيم
“নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্র মাধুরীর অধিকারী।” (সূরা কলাম: ৪ )
এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম জুমু’আ ও সর্বপ্রথম জুমু’আর খুত্বা। অবশ্য ‘মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে সহীহ সনদে আল্লামা ইবনে সীরীন থেকে বর্ণিত আছে যে, দ্বিতীয় বাইয়াতে আকাবার পর যখন মদীনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়লো, তখন রাসূলুল্লাহ সা. মদীনায় আগমনের পূর্বে একবার আনছারগণ একত্রিত হয়ে পরামর্শ করলো যে, ইয়াহুদীরা সপ্তাহে একদিন সমাবেত হয়ে একত্রে ইবাদত-বন্দেগী করে। খ্রিস্টানরাও সপ্তাহে একদিনকে তাদের বিশেষ ইবাদতের ও সমাবেশের দিন নির্ধারণ করেছে। আমাদেরও উচিৎ আমরা সপ্তাহে একদিন সমাবেত হয়ে আল্লাহ’র যিকির, তার হামদ, তাঁর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো ও নামায আদায় করবো। সবাই এতে একমত হলো এবং দিন নির্ধারণ হলো ‘ইয়াওমুল আরবা’আ’ অর্থাৎ, জুমু’আর দিন। এরপর আনছারগণ মিলে হযরত আসআদ বিন যুরারাহ রাযি.-এর কাছে গেলেন। তিনি জুমু’আর দিন সবাইকে নিয়ে একত্রে জুমু’আর নামায আদায় করলেন।
জুমু’আর দিনের ফযীলত
জুমু’আর দিন ও জুমু’আর নামাযের বহু ফযীলতের কথা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল কারীম সা. ইরশাদ করেন:
من اغتسل يوم الجمعة وليس من أحسن ثيابه ومش من طيب إن كان عنده ثم أتى الجمعة فلم يتخط أعناق النّاس ثم صلى ما كتب الله له ثم أنصت إذا خرج
إمامه حتى يفرغ من صلوته كانت كفارة لما بينها وبين جمعة التي قبلها.
“যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে, সাধ্য মোতাবেক ভাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করবে, সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করবে। এরপর জুমু’আর নামাযের জন্য মসজিদে হাজির হয়ে যারা আগে থেকে বসে আছে তাদের ডিঙিয়ে আগে না গিয়ে বরং যেখানে জায়গা পায় সেখানে গিয়ে আল্লাহ তাআলা যতটুকু তাওফীক দেন সে মোতাবেক সুন্নত ও নফল পড়বে। আর ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য বের হবে তখন আদবের সাথে চুপ থেকে ইমামের দিকে মুতাওয়াজ্জিহ হয়ে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনবে এবং নামায শেষ করবে- তার এ জুমু’আর নামায গত জুমু’আর নামায পর্যন্ত কৃত সমস্ত গুনাহ’র জন্য কাফফারা স্বরূপ হবে।অর্থাৎ, পুরো এক সপ্তাহের গুনাহ আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন।
এমন সুসংবাদ এমন ফযীলতের কথা শুনেও সপ্তাহে একটা দিন দু’রাকাত নামাযের যে গুরুত্বের কথা ছিল আমরা তা দিই না। আমাদের স্বভাব হলো, দুনিয়ার কোন লাভের কথা, লোভের কথা, প্রাপ্তির কথা শুনলে সে দিকে আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ি। আর আখিরাতে পাওয়ার কথা শুনেও না শুনার ভান করি ।
জুমু’আর নামাযে আগমনকারীদের স্তর নির্বাচন করা হয় এটাও জুমার দিনের ফজিলত।
জুমু’আর নামাযে আগমনকারীদের স্তর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন:
إذا كان يوم الجمعة وقفت المليكة على باب المسجد تكتبون الأول فالاول ومثل المهجر كمثل الذي يهدئ بدنة ثم يهدي بقرة ثم كبشا ثم دجاجة ثم بيضة فإذا خرج الإمام طووا صحفهم ويستمعون الذكر
(البخاري، الجمعة/الاستماع إلى الخطبة, ١٢٧/١ رقم: ۹۲۹)
“যখন জুমু’আর দিন হয় তখন ফেরেশতাগণ মসজিদের দরজায় হাজির হয়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং যারা প্রথমে আসে তাদের নাম ক্রমানুসারে রেজিষ্টারে লিখতে থাকে। সর্বপ্রথম জুমু’আর নামাযের জন্য যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে তার উদাহরণ হলো ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আল্লাহ’র রাস্তায় একটি উট কুরবানী করে। দ্বিতীয় পর্যায় যে আগমন করে তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটা গরু কুরবানী করে। তৃতীয় পর্যায় যে ব্যক্তি আগমন করে তার দৃষ্টাস্ত হলো, আল্লাহ’র রাস্তায় বকরী কুরবানকারীর ন্যায়। চতুর্থ পর্যায় যে ব্যক্তি আগমন করে তার উদাহরণ হলো মুরগী সদকাকারীর ন্যায়। আর এর পর যে আসে তার উদাহরণ হলো আল্লাহ’র রাস্তায় ডিম সদকাকারীর ন্যায়। এরপর যখন ইমাম খুৎবা দেয়ার জন্য বের হয় তখন ফেরেশতাগণ তাদের রেজিষ্টার বন্ধ করে খুৎবা শুনতে মশগুল হয়ে যায়।
এ হাদীছে জুমু’আর দিন যারা মসজিদে নামায পড়তে আসে তাদের স্তর বর্ণনা করা হয়েছে। আগে আসলে কী লাভ, কী ফায়দা তা বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ আমরা দুনিয়াদার মানুষ পরকালীন লাভের কথা শুনেও শুনি না। আর সেটা জানিও না। কারণ আমরা নগদে বিশ্বাসী। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন “সাধারণ মানুষের মধ্যে ইহকালকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এর কারণ এই যে, ইহকালের নি’আমত ও সুখ স্বাচ্ছন্দ উপস্থিত এবং পরকালের নি’আমত ও সুখ স্বাচ্ছন্দ দৃষ্টি থেকেঅনুপস্থিত। তাই অপরিনামদর্শী লোকেরা উপস্থিতকে অনুপস্থিতের উপর প্রাধান্য দিয়ে বসে, যা তাদের জন্য চিরস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।” ঊষাও ও আমরাই মূলত সেই অপরিনামদর্শী। তা না হলে জুমু’আর দিনে এত ফযীলতের কথা শুনেও কেন বাসায় বসে থাকি, কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকি। বেশির ভাগ মুসল্লী আমরা আসি যখন খুৎবা শুরু হবে তার সামান্য আগে। অর্থাৎ, আমরা হলাম পঞ্চম স্তরের মুসল্লী, যাদের মার্কা হলো ‘আণ্ডা মার্কা। আর এরপর যারা আসে তাদের কোন স্তর নেই, তাদের কোন মার্কাও নেই। অনেকে তো খুবাও পায় না। অথচ খুত্বা জুমু’আর নামাযের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
জুমার দিনের ফজিলতের মধ্যে একটি হল খুতবা।খুতবার গুরুত্ব
জুমু’আর নামাযের খুৎবা নামাযেরই অংশ। এ খুৎবা আরবীতে পাঠ করা সুন্নত। খুৎবার সময় চুপ থাকা এবং মনোযোগ সহকারে শুনা ওয়াজিব। হাদীছে আছে রাসূল কারীম সা. ইরশাদ করেছেন:
إذا خرج الإمام فلا صلوة ولا كلام – (نصب الرايه في تخريج أحاديث الهداية,الصلوة صلوة
“ইমাম যখন খুৎবা দেওয়ার জন্য বের হয় তখন কেউ কোন নামায পড়তে পারবে না এবং কোন কথা বলতে পারবে না।”
এমন কি কেউ কথা বললেও তাকে চুপ থাকতে বলতে পারবে না। শুধু তাই নয় খুত্বা চলাকালে মসজিদের দান বাক্সও চালাতে পারবে না। এ সবকিছুই মাকরুহে তাহরীমী।
নামাযের ক্বিরাত পড়ার সময় যেমন মুক্তাদিদের চুপ থেকে শুনতে হয় এবং আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় যেমন ক্বিরাত পড়া যায় না। ঠিক তেমনি খুত্বা চলাকালে মুসল্লীদের চুপ থেকে তা শুনতে হয়। অনুরুপভাবে আরবি ছাড়া অন্য কোন ভাষা, বাংলা-ইংরেজী-ফার্সি কোন ভাষাতেই জুমুআর খুৎবা দিলে তা শুদ্ধ হবে না। বাংলায় খুৎবা দেয়া সম্পূর্ন বিদ’আত। চার ইমামের কারও মতেই আরবি ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া জায়েয নয়। শাফি’ঈ মাযহাবে তো শুধু এতটুকু বলা হয়েছে যে, আরবিতে খুত্বা পাঠ করার মত যদি মুসল্লীদের মাঝে কেউ না থাকে, তা হলে তাদের উপর জুমু’আই ওয়াজিব হবে না; বরং তারা যোহর পড়বে। আর আমাদের মাযহাবে ইমাম আবূ হানিফা রহ.-এর অভিমত হলো, আরবি ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুৎবা পাঠ করা না-জায়েয। কেউ এমন করলে তা হবে মাকরুহে তাহরীমী যা হারামের কাছাকাছি।
আরবিতে খুত্বা পড়া বা দেয়া ইজমা’য়ী মাস’আলা। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. সর্বদা আরবিতে খুৎবা পাঠ করেছেন। খুলাফায়ে রাশেদা, সাহাবা, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী থেকে আজ পর্যন্ত গোটা দুনিয়াতে সর্বত্র এ আমল চলে আসছে।
রাসূলুল্লাহ সা.-এর ইন্তিকালের পরে সাহাবায়ে কেরাম রাখি, দীনী দাওয়াত নিয়ে তৎকালীন পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সর্বত্রই পৌঁছে গিয়েছিলেন। দাওয়াতের কাজে সুবিধার জন্য তারা যে যে দেশে গিয়েছেন তাদের ভাষা শিখে সেই ভাষায় দীনী দাওয়াত, ওয়ায়-নসীহত করেছেন। এতদসত্ত্বেও যখন জুমু’আর নামায আদায় করেছেন, তেখন খুৎবা আরবিতেই দিয়েছেন। কোন একজন সাহাবী ভিন্ন ভাষায় খুত্বা দিয়েছেন দুনিয়ার ইতিহাসে এর কোন নজীর নেই। সুতরাং যারা বাংলা ভাষায় জুমু’আর খুৎবা দেন তারা কোন অবস্থাতেই তা ঠিক করেন না। এটা জায়েয নেই এবং এমন ইমামের পেছনে নামায পড়ে আপনার সপ্তাহের এ শ্রেষ্ঠ ইবাদতটা বরবাদ করবেন না।
জুমু’আর নামাযের এ খুতবা প্রথমে রাসূলুল্লাহ সা. দুই ঈদের ন্যায় নামাযের পরে দিতেন। আল্লামা ইবনে কাছির তাঁর তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাছিরে উল্লেখ করেছেন যে, “একবার জুমু’আর দিনে নামায শেষে রাসূল কারীম সা. খুৎবা দিচ্ছেলেন, এমন সময় একটি বানিজ্যিক কাফেলা মদীনার বাজারে উপস্থিত হয় এবং ঢোল পিটিয়ে বিজ্ঞাপন করে। ফলে অনেক মুসল্লী খুত্বা ছেড়ে বাজারে চলে যায় এবং রাসূলুল্লাহ সা. স্বল্প সংখ্যক সাহাবীসহ মসজিদে থেকে যান। তাদের সংখ্যা বারজন বর্ণিত আছে। কোন কোন বর্ণনা মতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, যদি তোমরা সবাই চলে যেতে, তবে মদীনার উপত্যকা আযাবের অগ্নিতে পূর্ণ হয়ে যেতো। ৭২
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সূরা জুমু’আর আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়: يأيها الذين امنوا إذا نودي للصلوة من يوم الجمعة فاسعوا إلى ذكر الله وذروا
البيع ذلك خير لكم ان كنتم تعلمون
“যখন নামাযের আযান দেয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহ’র স্মরণে ত্বরা কর এবং তোমরা বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ।” (সূরা জুমু’আ: ৯)
“এরপর রাসূলুল্লাহ সা. নিয়ম পরিবর্তন করে জুমু’আর পূর্বে খুৎবা দেয়া শুরু করেন এবং এখন এমনটাই সুন্নত।
জুমার দিনের ফজিলত এর মধ্যে রয়েছে জুমু’আর দিনের বিশেষ আমল
জুমু’আর দিন অত্যন্ত মুবারাক দিন। এই দিনের বিশেষ আমল হলো দুরাকাত জুমু’আর নামায ও তৎপূর্ব খুৎবা। এছাড়া এদিনের আরও কিছু আমল রয়েছে।
সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। (হাদীছে আছে, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিনে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে তাকে তার পায়ের তলা থেকে আসমান পর্যন্ত নূর দান করা হবে এবং এ জুমু’আ থেকে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত তার সকল গুনাহ মাফ করা হবে।)
- চুল, নখ কাটা, শরীরের আন্যান্য স্থানের আবাঞ্ছিত কেশরাশি সাফ করা।
- জুমু’আর নামাযের আগে গোসল করা।
- জুমু’আর দিন আছর নামাযের পর একটি বিশেষ দরূদ শরীফ পাঠ করা। উক্ত দরূদ এই
- اللهم صل على محمد و النّبي الأمي وعلى اله وسلم تسليما
- যে ব্যক্তি উক্ত দরূদ আশিবার পাঠ করবে, তার আশি বছরের গুণাহ মাফ করা হবে এবং আশি বছরের নেক আমালের সওয়াব তার আমল নামায় লিখে দেয়া হবে।
জুমার দিনের ফজিলত শেষ কথা
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জুমার দিনের ফজিলত বুঝে সেই দিনটিতে ভালোভাবে সঠিকভাবে আমল করার মত তৌফিক দান করুন আমীন।