মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা
মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আজকে আলোচনা করব। দৈনন্দিন কাজের চাপে আমরা নিজের যত্ন যেমন নিতে পারিনা তেমনি বিভিন্ন সমস্যা আমাদের মধ্যে নতুন করে বাসা বাঁধতে থাকে।তাদের মধ্যে মাথা ব্যথা হলো অন্যতম। বিভিন্ন কাজের চাপ যখন আমরা সামলে উঠতে পারিনা তখন মাথা ব্যথা শুরু হয়। যদিও কিছু ঔষধ সেবনের মাধ্যমে মাথা ব্যথা খুবই দ্রুত ভালো হয়। তারপর ও মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকলে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মাথা ব্যথা ভাল করতে পারবেন। মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল নয় যা আপনাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন এবং নিজেকে সুস্থ রাখুন।
মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা এর অন্যতম হচ্ছে ম্যাসাজ
অনেক সময় আমরা যদি খুব বেশি ক্লান্ত থাকি তাহলে মাথার সামনের অর্থাৎ কপালের দুই পাশে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা যদি দুই হাতেরদুই আঙ্গুল দ্বারা কপালের দুই পাশে যে দুটি রোগ অবস্থিত সেখানে আলতোভাবে মাসাজ করতে পারি। মাসাজ করার কিছুক্ষণ পর দেখবেন আপনার মাথাব্যথা অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করার পরও যদি দেখেন আপনার মাথাব্যথা যথেষ্ট কমেনি তবে অতিরিক্ত মাসাজ করতে যাবেন না। এতে সমস্যা প্রকট হতে পারে। এবং আপনার বুঝে নিতে হবে অন্য কোন সমস্যা আছে। তখন আমরা মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা অন্য কিছু নিয়ে শুরু করবে।
রাতে ভালো করে ঘুমান
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটা ব্যাপার। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা রাতে ঠিকঠাক মত ঘুমায় না। এদের মাথা ব্যাথার করতে পারে। অনেকে শুয়ে থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি এবং রাতে দেরি করে ঘুমাই। কিন্তু এটি ঠিক নয়। আপনি যদি কিছু দিন ঠিকঠাকমতো ঘুমাতে পারেন তবে দেখবেন আপনার সমস্যা অনেকটাই নিজে নিজেই সমাধান হয়ে গেছে ।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যুক্ত খাবার খান
ডিম, কলা, মাছ মাংস, সাইট্রাস ফল, ডাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। জলে দ্রবণীয় এই ভিটামিন বি এর অনেক গুণ রয়েছে। যা আপনার মাথা ব্যথা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া সাপ্লেমেন্ট হিসেবে আপনি ভিটামিন ট্যাবলেট খেতে পারেন। আপনার নিকটস্থ ফার্মেসীতে গিয়ে আপনি জিজ্ঞেস করবেন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স দিতে । খুব বেশি দাম নয় ট্যাবলেট এর। কিন্তু এটি সহজেই আপনার মাথা ব্যথা কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শের সহায়তা নেওয়া উচিত।
বেশি করে পানি পান করুন
মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা এর সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান হচ্ছে পানি। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন। এটি আপনাকে মাথা ব্যথা সারাতে সহায়তা করবে। শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে এমনিতেই মাথা ব্যথা করে। পানি পান করার ফলে যখন শরীর আদ্র হতে থাকে তখন মাথা ব্যথা অনেকটাই রাস পায়।
আদার সাহায্যে মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা
হালকা মাথা ব্যথা করলে এক টুকরা আদা মুখে দিয়ে রাখুন। যদিও একটু বাজে গন্ধের হয় তবুও আদা আপনার মাথা ব্যথা সারাতে খুব ভালো কাজ করবে।
চা পান
আপনার যদি কোন জটিল কাজ করতে গিয়ে মাথা ধরে তবে কাজে একটু বিরতি দিয়ে এক কাপ চা পান করে নিন। চা পান করার পরে দেখবেন আপনার মাথা ব্যথা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং কাজে পুনরায় মন বসছে। তবে অতিরিক্ত চা পান কখনোই ভালো নয়। এটি অভ্যাসে পরিণত করা উচিত নয়।
গরম সেক
মাথাব্যথা কপালের এবং ঘাড়ে গরম সেঁক দিলে অনেক উপকার অনুভব করেন। তবে ঠান্ডা শেখ দিয়েও অনেকে উপকার অনুভব করেন। গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখতে অনেক সময় মাথা ব্যথা কমে। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে এটি অনেকে বিশ্বাস করতে চান না। প্রক্রিয়া টি হল যদি আপনি গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখেন তবে সেখানে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং মাথার রক্তনালিতে প্রেসার কম পড়ে। ফলে আপনি আরাম অনুভব করে।
অল্প আলোতে থাকুন
অনেক সময় অতিরিক্ত আলোর জন্য আমাদের মাথা ব্যথা করে। কম্পিউটার স্ক্রিন মোবাইল স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন। বাহিরে যাওয়ার সময় প্রয়োজন হলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
সুষম আহার করুন
শরীরকে সুস্থ রাখতে সবারই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ লবণ আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই চেষ্টা করুন সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে। বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকলে সেটাও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। অনেক সময় পেটে খাবারের ঘাটতির কারণে আমাদের মস্তিষ্কের রক্তে গ্লুকোজের অভাব দেখা দেয় এতে মাথাব্যথা হতে পারে।
কাঠবাদাম
কাঠবাদামের সেলিসিন থাকে। এটি ব্যথা উপশমে ভালো কাজ করে। তাই যখন মাথা ব্যথা অনুভব করবেন তখন কয়েকটি কাঠ বাদাম খান।
এসেনশিয়াল অয়েল মাসাজ
মেন্থল বা ল্যাভেন্ডার তেল মাথা ব্যথা কমাতে ভালো কাজ করে। মাথা ব্যথা অনুভব করলে এই তেল কপালে মাসাজ করুন দেখবেন কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার মাথাব্যথা অনেক রাত হয়েছে। মেন্থল টি ব্যাগ কপালের উপর রাখুন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার মাথা ব্যথাটা সেরেছে।
এক্সারসাইজ
নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে এবং সমস্ত শরীর বৃত্তীয় কার্যাবলী সুন্দর থাকবে। মাথা মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে হিসেবে এতে কোন খরচ করতে হবে না আপনাকে। বরং আপনি শারীরিকভাবেও অনেক সুস্থ থাকবেন।
ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খান
মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম এর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খান। পালং শাক, বাদাম, ডার্ক চকলেট ইত্যাদিতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েন ম্যাগনেসিয়াম ট্যাবলেট পেতে পারেন। তবে কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।
লবঙ্গ
মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো লবঙ্গ। লবঙ্গের ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি আপনার মাথাব্যথা কমাতে পারেন। তাওয়ার মাধ্যমে কয়েকটি লবঙ্গ প্রথমে গরম করে নিন। এই গরম লবঙ্গ গুলোকে আপনি একটি রুমালের মধ্যে নিন। তারপর রুমাল এর ভিতর থেকে আপনি রান নেওয়া শুরু করুন। দেখবেন কিছুক্ষণ পর আপনার মাথা ব্যথা কমে গেছে।
হাসিখুশি মন
আমরা অনেকেই এই ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে চাই না যে হাসিখুশি থাকার মাধ্যমে মাথাব্যথাকে দূর করা যায়। আসলেই আপনি যখন হাসিখুশি থাকবেন তখন আপনি টেনশন মুক্ত থাকবেন। ফলে আপনার ভিতরে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হবে। যা আপনাকে সুখের অনুভুতি দিবে এবং মাথা ব্যথা দূর করতে সহায়তা করবে। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত হট্টগোল এবং কোলাহল থেকে দূরে থাকুন। কোলাহল থেকে আপনার মাথা ব্যথা উপশমে ভালো কাজে দেবে।
প্রয়োজনীয় বিশ্রাম
অতিরিক্ত কাজের ফলে আমরা অনেক সময় নিজের ক্ষতি ডেকে আনে। মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায় যখন আমাদের কাজগুলোকে পরিপূর্ণরূপে করতে না পারি। তাই কাজের মাঝখানে একটু বিশ্রাম নিন দেখবেন আপনার মাথা ব্যাথা সেরে গেছে। দুপুরের খাবারের পর ছোট একটা ঘুম নিয়ে নিতে পারেন। এতে যেমন আপনার ক্লান্তি দূর হবে সাথে সাথে আপনার মাথাব্যথার প্রচন্ড দাও রাস পাবে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা খুব কঠিন একটা বিষয় নয়। শুধু আপনার একটু সচেতনতা দরকার। জীবন যাত্রার দিকে নজর রাখুন এবং আপনি যে খাবারগুলো খাচ্ছেন সেগুলোর পুষ্টিমান নিশ্চিত করুন। কাজের চাপ কমিয়ে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন দেখবেন আপনার মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা প্রয়োজন হবে না। কারণ আপনি নিজেই ফিট থাকবেন এবং সকল ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন।