নবজাতকের যত্ন বা জন্মের পর শিশুর যত্ন নেয়ার নিয়ম

নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে আজকের আলোচনা। একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। আমরা   আমাদের সোনামণি  যত্ন যদি ঠিকঠাক ভাবে না নিতে পারি তবে তা সোনামনির ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলে। নবজাতকের যত্ন নিতে বিশেষভাবে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নবজাতক জন্ম থেকে তার বড়  হাওয়া পর্যন্ত তার বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। তাই আমাদের জানতে হবে নবজাতককে কিভাবে যত্ন করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে। 

জন্মের পর পরই নবজাতকের যত্ন

নবজাতক হাসপাতলে বা ক্লিনিকে জন্মালে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার সাথে সাথেই শিশুর গা মুছিয়ে দিতে হ।বে। এর জন্য আপনারা নরম সুতির কাপড় ব্যবহার করবেন।  কাপড় টি যেনো হয় অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবন্মুক্ত। শুকনো কাপড় দ্বারা মাথা সহ সমস্ত শরীর এমন ভাবে পরিষ্কার করবেন যেন শরীর ভালোভাবে শুকিয়ে যায়। তারপর এক টুকরা নরম কাপড় দ্বারা শিশুর শরীরকে  ঢেকে দেবেন শিশুর জন্মের সময় সুরক্ষা প্রার্থী হিসেবে তার শরীরে একটি পাতলা পর্দা থাকে। অনেকেই এটিকে উঠানোর জন্য খুব ঘসা মাজা করে। এই কাজটি করা যাবে না। এটা কিছুদিন পর এমনি থেকে উঠে যাবে।

পরিষ্কার পরিছন্নতার বেপারে নবজাতকের যত্ন

নবজাতকের জন্মের পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে আপনাকে বিশেষ নজর দিতে হবে। নবজাতকের শরীরের যে জায়গা গুলোতে ময়লা জমতে পারে সেই জায়গাগুলো খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন দুপায়ের ফাঁকে চোখ নাক কান জিব্বা ইত্যাদিতে ময়লা জমতে পারে। এই জায়গা গুলো খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে অতিরিক্ত ঘষামাজা করা যাবে না।

এতে শিশুর ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য প্রথমে আপনাকে খুব ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এজন্য আপনি হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে পারেন। শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে তাকে খুব ভালোভাবে হাতে নিতে বলবেন। হাত ধোয়া ছাড়া কাউকে স্পর্শ করতে দিবেন না। শিশুর কাপড় পাল্টানোর পর অথবা ডায়াপার পরিবর্তন করার পর এবং প্রস্রাব পায়খানা পরিষ্কার করার পর আপনার নিজের হাঁটু খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

নবজাতকের নখ পরিষ্কার করা

বাচ্চাদের নখ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।  নবজাতকের লোক দ্বারা সে নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। তার নিজের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঁচড় লাগতে পারে। এই আচারগুলো যদি না শুকায় তাহলে সেখানে আবার ঘা হতে পারে যা পরবর্তীতে আপনাদেরকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলবে। তাই নবজাতকের খুব দ্রুত পরিষ্কার করুন। নখ পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখবেন শিশুটি যেন আঙ্গুলে ব্যথা না পায়। প্রথমে শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে নিন। এবং ধীরে ধীরে তার লোকগুলো সূত্র করে কাটুন। যদি সজাগ থাকা অবস্থায় নবজাতকের আঙ্গুলের নখ কাটতে চান তবে অবশ্যই আলাদা কারো সহায়তা নিন। শিশুর নখ কাটার সময় নবজাতকের নেইলকাটার ব্যবহার করুন। আপনি যা-ই ব্যবহার করুন না কেন প্রত্যেকটা জিনিসই প্রথমে জীবানুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করে নিতে হবে। না হলে সেখান থেকে রোগজীবাণু হতে পারে।

ডায়াপার পরানোর সঠিক নিয়ম । নবজাতকের যত্ন

ডায়াপার পরানোর আগে নবজাতকের সেই জায়গাটিতে বেবি অয়েল মাসাজ করে নিন। এতে ঘষা লেগে তার সেই জায়গাটি ক্ষত থেকে মুক্ত থাকবে। অনেকে আবার পাউডার ব্যবহার করেন নবজাতকের ডায়াপার ব্যবহার করার আগে। কিন্তু এতে ত্বক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ব্যবহার করবেন না।  একটা নবজাতককে খুব বেশি সময়  ধরে একটা  ডায়াপার করিয়ে রাখবেন না। এবং অবশ্যই তার পরনে থাকা ডায়াপারের দিকে লক্ষ্য রাখুন। যদি ডায়াপার বেশিক্ষণ থাকে তবে সেখানে রেস উঠতে পারে।

নবজাতকের জিব্বার যত্ন । নবজাতকের যত্ন

নবজাতক দুধ পান করার কারণে তার জিব্বায় সাদা এক ধরনের আচরণ করতে পারে। এতে তার অস্বস্তি বোধ হতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করে আপনার নবজাতকের জিব্বার সাদা আস্তরণ কে ধীরেধীরে পরিষ্কার করুন।

কুসুম গরম পানিতে গোসল । নবজাতকের যত্ন

শীতকালে নবজাতককে সরাসরি পানিতে গোসল করানো উচিত নয়। সরাসরি পানিতে গোসল করালে নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশু আক্রান্ত হতে পারে। যে সকল  শিশু নবজাতক সময় হওয়ার আগে ভূমিষ্ঠ হয়  তাদের গোসলের ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নবান হওয়া উচিত।  সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতকদের সাধারণত গোসল করিয়ে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। এক মাস অথবা 15 দিন পর পর গোসল করানো যেতে পারে।

তবু সেই পানি যেন হয় নবজাতকের শরীরে সহ্য করার মত। প্রথমে পানিটি ভালোভাবে ফুটে নিবেন এবং তারপরে ঠান্ডা করে নিবেন এতে পানিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু মারা যাবে এবং নবজাতকের গোসল উপযোগী হবে। পানি প্রয়োজনীয় পরিমাণ ঠান্ডা হলে এতে জীবাণুনাশক তরল ব্যবহার করা যেতে পারে। যারা মনে করেন পানিকে সূর্যের রোদে গরম করে নেবেন তাতে জীবাণুমুক্ত হবে এমনটি করলেও লাভ হবেনা। শিশুকে একটি বদ্ধ ঘরে গোসল করাবেন যাতে করে বাতাসের দ্বারা সে ঠান্ডা আক্রান্ত না হয়।

নবজাতকের পোশাক । নবজাতকের যত্ন

নবজাতকের যত্ন নিতে গেলে আপনাকে পোশাকের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কোন নবজাতককে সরাসরি   উলের পোশাক পরা উচিত নয়।কারণ ওলের মধ্যে থাকা এলার্জি নবজাতকের সর্দি ঠান্ডা লাগার কারণ হতে পারে অথবা অ্যালার্জি হতে পারে। নবজাতকের ক্ষেত্রে সুতির পোশাক কে বাছাই করতে হবে। সুতির পোশাকের উপর আপনি আরেকটি কাপড় পড়াতে পারেন। নবজাতককে সাধারণত তিন স্তরের পোশাক পরা উচিত।  সুতির পোশাক পরানোর পর নবজাতককে আপনি কাথা অথবা কম্বল দ্বারা  ঢেকে রাখতে পারেন। তবে তা অবশ্যই নবজাতকের ব্যবহার উপযোগী কত হবে। নবজাতকের যত্ন নিতে গেলে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়।

তাই এক্ষেত্রে আপনারা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সহায়তা নিতে পারেন। আমাদের দেশেই নবজাতকের অসংখ্য পোশাক উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। এগুলো থেকে আপনার সুতি উল এবং অন্য উষ্ণ কাপড় বেছে নিতে হবে। শিশুটি যখন ধীরে ধীরে বড় হবে তখন তাকে ফুলহাতা শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, সোয়েটার পড়াতে পারেন। শীতের জন্য নবজাতকের সুরক্ষা নিতে হাত মোজা পা মোজা ওকে পড়াতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন নবজাতকের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনশ্রুতি ছাড়া অন্য কিছু না হয়। অন্য কাপড় ব্যবহার করলে সাধারণত ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে এ ধরনের সমস্যায় পড়লে অবশ্যই আপনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

শিশুকে খাওয়ানোর সময় | নবজাতকের যত্ন

শিশুকে সঠিক সময়ে সঠিক সঠিক পরিমাণে খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।নবজাতক শিশুকে প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টায়  পরপর খাওয়ানো উচিত ।  নবজাতকের যত্নের মধ্যে নবজাতক শিশুকে খাওয়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।  নবজাতক শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাসের শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উত্তম এবং নবজাতক শিশুকে 24 ঘন্টার মধ্যে আপনাকে 8 থেকে 12 বার দুধ খাওয়াতে হবে ।নবজাতক শিশুর জীবনে প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর একটি অন্যতম কারণ হলো মায়ের বুকের দুধের মধ্যে অত্যাধিক বেশি পুষ্টি এবং এন্টি বডি রয়েছে ।যা  শিশুর বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ।

আপনি যখন আপনার শিশুকে আপনার বুকের দুধ খাওয়াবেন তখন দশ মিনিট ধরে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন এবং শিশুর ঠোঁটের কাছে আপনার স্তন ধরে রাখবেন  যতক্ষণ না পর্যন্ত শিশুটি দুধ পান করছে ততক্ষণ পর্যন্ত ধরে রাখবেন যখন দেখবেন সে দুধ পান করছে তখন ছেড়ে দিলেও কোনো সমস্যা নেই ।

এছাড়াও নবজাতকের কোনো শারীরিক ত্রুটি বা চিকিৎসাজনিত কোন ছুটি হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। শিশু বিশেষজ্ঞরা আপনাকে নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবে। আজকে নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এটা সবার জন্য উন্মুক্ত আলোচনা। তাই আপনার শিশু ঠিক বিষয়টি প্রয়োজন তা শিশু বিশেষজ্ঞ দের সাথে আলোচনা জেনে নিবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *