তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা । তিসি কি, কেন খাবেন?
প্রকৃতির ভান্ডারে কত রকমের ঔষধ গাছ উপাদান লুকিয়ে রয়েছে সেটা বলে শেষ করা যাবে না ।প্রকৃতির এই ঔষধের সমূহের মধ্যে একটি উৎকৃষ্ট নাম হল তিসি বীজ। এই তিসি বীজ কে অনেকে আবার আলসি বীজ ও বলে থাকেন। সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ তিসি বীজ কে রোগ মুক্তির এক মহা ঔষধ বিবেচনা করে আসছে। আমরা জানি যার উপকারিতা আছে তার কিছু উপকারিতাও রয়েছে। তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানব তিসি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
তিসি বীজ এর প্রকারভেদ
আসলে তেমন ভাবে আলাদা প্রকার হয়ে থাকে না। তবে এদের মধ্যে রঙের পার্থক্য দেখা দেয় মাঝে মাঝে। যেমন লালচে খয়রি রঙের পাশাপাশি সোনালী রঙের কিসে পাওয়া যায়। আবার খোঁয়ারি হলুদ রঙের তিসি বীজ ও পাওয়া যায়।
তিসি খাওয়ার নিয়ম
তিসি খাওয়ার জন্য তিসি বীজ প্রথমে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে। তারপরেই ভাজা তিসি বীজ পাটায় পিষে গুড়ো করে নিতে হবে। আপনি এই গ্রুপ প্রতিদিন সকালের নাস্তার সাথে খেতে পারেন। আবার রাতেও পেতে পারেন। প্রতিদিনের জন্য ছোট একটি চামচ এর পরিমাণ কৃষি আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।
তিসি খাওয়ার উপকারিতা
তিসি খাওয়ার উপকারিতা বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হবে। কারণ এই উপাদানটির এত উপকারিতা রয়েছে যা সাধারণত সচরাচর দেখা যায় না। তবে যেহেতু আজকে তিসির উপকারিতা নিয়ে কথা বলবো তাই যেই উপকারিতা গুলো বেশি লক্ষনীয় সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তোমাদের মধ্যে যদি কারো পছন্দ করে থাকো তবে আজকের লিস্ট এর উপকারিতা গুলো দেখে তুমি নিশ্চয়ই আনন্দিত হবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
লিগনিন নামক এক প্রকার উপাদান থাকে তিসি বীজের মধ্যে। এগুলো কোলন, প্রসটেট, স্তনের ক্যানসার রোধ করে অ্যাঞ্জিওজেনিক নামের একটি উপাদান শরীরে টিউমার হতে বাধা প্রদান করে।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়
তিসি বীজের মধ্যে রয়েছে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় দুই ধরনের ফাইবার। ওই দ্রবণে অদ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের টক্সিন বের করতে সহায়তা করে। এটি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
ওজন হ্রাসে সহায়তা করে
আমাদের শরীরের ওজন যদি বৃদ্ধি পায় তবে আমরা বুঝতে পারি এটা আমাদের কেমন দুর্বিষহ জ্বালা। এই ওজন হ্রাসের জন্য আমরা তিসি বীজ খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি। গবেষণা থেকে জানা যায় 2।5 গ্রাম তিসি বীজ পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা দূর হয় এবং পেট ভরা থাকে ।যা আমাদের দেহের ওজন নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।
সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
তিসি বীজ এর মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল। তিসি বীজ এর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটো কেমিক্যাল বার্ধক্যের প্রভাব কমায়। মুখের মধ্যে তারুন্যের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়
তিসি বীজ আমাদের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে। যারা সাধারণত হঠাৎ করে কোন কিছু ভুলে যায় তারা তিসি বীজ গ্রহণ করতে পারে। তিসি খাওয়ার ফলে চটজলদি মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীর মধ্যে আলফা লাইনোলেনিক এসেট নামক এক ধরনের বিশেষ ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। এগুলোর প্রভাবে ব্রেনের বিশেষ বিশেষ অংশ অনেকটা একটিভ হয়ে পড়ে ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এমন কি ব্রেনের বুদ্ধি ও বৃদ্ধি পায়।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
তিসি এর মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, এসপার্টিক এসিড এবং গ্লুটামিক এসিড। এগুলো শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে দেখা যায়। ফলে ছোট-বড় কোন ধরনের রোগী সাধারণত শরীরকে সহজে কাবু করতে পারে না। তাই তিসির উপকারিতা মধ্যে অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানো।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ মানুষের একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। কেউ যদি এই রোগ থেকে সুস্থ হতে চায় তবে তিসি বীজ গ্রহণ করতে পারে। কারণ তিসি বীজের রয়েছে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এবং অ্যামাইনো এসিড। ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এবং এমাইনো এসিড উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন যদি আপনি 30 গ্রাম তিসি বীজ গ্রহণ করেন তবে উচ্চরক্তচাপ কমছে বেশিদিন সময় লাগবে না। প্রতিদিন দু’চামচ তিসি বীজের গুড়া খেতে পারেন। তিসি বীজের তেল ও খাওয়া যায়। তিসি বীজের চা পান করলেও উচ্চ রক্তচাপ দূর হয়।
হাই কোলেস্টেরল কমায়
তিসি বীজের উপকারিতা মধ্যে আরেকটি হলো কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা। তিসি বীজ শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই খারাপ কোলেস্টেরল আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। যারা প্রতিদিন তিন চামচ করে তিসি বীজ গ্রহণ করে তাদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা 20% পর্যন্ত হতে পারে ফলে হূদরোগ সংখ্যা অনেক কমে যায়।
মহিলাদের হরমোন
তিসি বীজের মধ্যে লিঙ্গের নামের এক প্রকারের পদার্থ রয়েছে। এটি ইস্ট্রোজেন এবং এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। মহিলাদের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এর চাহিদা পূরণ
তিসি বীজের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড। এতে আছে আলফা লিনোলিক এসিড। আপনার দেহে আলফা লিনোলিক এসিড প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয় না। তাই এই আলফাল লিনোলিক এসিড কে আমাদের বাহির থেকে গ্রহণ করতে হয়। তিসি বীজ এ এই আলফা লিনোলিক এসিড থাকায় এটি আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত।
পুরুষদের জন্য উপকারী তিসি বীজ
তিসি বীজ পুরুষদের বিভিন্ন যৌন সমস্যা দূর করে। এটি পুরুষের ক্লান্তি দূর করে এবং দুর্বলতা রোধে সহায়ক। পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করে তিসি বীজ। পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়িয়ে তার উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
বর্তমান সময়ে বিপুল পরিমাণে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি আপনি ডায়াবেটিক রোগীর নাও হয়ে থাকেন অথবা অথবা কয়েক ধাপ অথবা কয়েক ধাপ পেরোলেই আপনাকে ডায়াবেটিক রোগী হিসেবে বিবেচনা করা হবে তবে সে ক্ষেত্রে আপনি ঘরে তিসি বীজ রাখতে পারেন। আপনি প্রতিদিন আপনার ডায়েটে যদি তিসি বীজ রাখেন তবে দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার ব্লাড সুগারের উন্নতি ঘটেছে। কারণ তিসি বীজের রয়েছে গুড ফ্যাট ওমেগা থ্রি যা প্রচুর প্রদান করে। এটা আপনাকে সারাদিন শক্তি যোগাবে। 1 চামচ তিসি বীজের মধ্যে রয়েছে 3 গ্রাম ফাইবার রক্তে শর্করা বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে এবং কমে ও না ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে।
লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
শরীরকে সুস্থ রাখতে গেলেরি লিভারের কার্যক্ষমতা অবশ্যই ভালো থাকতে হবে। কারণেই লিভার আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো কে বের করে দিয়ে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। যদি আমাদের শরীরের লিভার কার্য ক্ষমতা হারায় তবে তার শরীরের টক্সিন বের করতে পারবেনা এবং তার শরীরে থেকে যাবে।এই টক্সিন গুলোর কারণে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ গুলো অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। তিসি বীজের এন্টিঅক্সিডেন্ট লিভার পরিষ্কার ও সচল রাখতে সাহায্য করে এমনকি লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই লিভারের উন্নতি সাধনের জন্য খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত তিসি বীজ।
তিসি বীজের অপকারিতা
তিসি বীজের তেমন কোনো উপকারিতা নেই। তবে আপনি যদি অতিরিক্ত তিসি বীজ খান এবং অল্প পানি পান করেন তবে অন্ত্রে এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে। তিসি বীজ খাওয়ার ফলে আপনার ডায়রিয়া হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে তিসি বীজ এলার্জির কারণ হতে পারে তাই তাদেরকে সাবধানে তিসি বীজ গ্রহণ করা উচিত। আবার যে সকল মহিলারা গর্ভবতী তাদের তিসি খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া উচিত। অতিরিক্ত তিসি খাওয়া গ্যাস্টিকের কারণ হতে পারে।