দাবা খেলার নিয়ম/ দাবা খেলার সূত্র/ দাবা খেলার কৌশল /দাবা খেলার নিয়ম সম্পর্কে A টু Z বিস্তারিত জানুন

দাবা খেলার নিয়ম

আজকের আর্টিকেলটি আমরা তৈরি করেছি দাবা খেলার নিয়ম  কানুন ও সূত্র নিয়ে। এখানে আমরা দাবা খেলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি আপনার সহায়ক হবে। 

দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র

এবার চলুন দাবা খেলার নিয়মগুলো জেনে নেই। সাধারণত দাবা হচ্ছে ভালো মানুষদের খেলা। আপনার মাথায় যদি দুষ্ট বুদ্ধি থাকে বা আপনার মন যদি অশান্ত থাকে তাহলে আপনি দাবাড়ু হতে পারবেন না। অর্থাৎ দাবায় ভালো করতে হলে সবার আগে দরকার একটি প্রশান্ত আত্মা। দাবা খেলার প্রথম সূত্রটা হচ্ছে আপনাকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে। দাবা এমন একটি খেলা যার জন্মের ইতিহাসের সাথে আমাদের এই বঙ্গ দেশের নাম জড়িয়ে আছে। দাবার আদি নাম হচ্ছে চতুরঙ্গ। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ঘোড়া। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদে চতুরঙ্গ নামক খেলার উল্লেখ পাওয়া যায়।

চর্যাপদের রচনাকাল বিবেচনায়, পৃথিবীর কোথাও এর আগে দাবা বা চতুরঙ্গ খেলার উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায় আমাদের এই বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চলেই দাবা খেলার জন্ম হয়েছে। ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের এই অঞ্চলে ইংরেজ শাসনের সূচনা ঘটে। তখনকার সময় অঞ্চলভেদে দাবার নিয়মকানুনে কিছুটা পার্থক্য ছিল। ইংরেজদের মাধ্যমে দাবার নিয়ম কানুনে কিছু পরিবর্তন ঘটে। দাবার পরিমার্জিত এই সংস্করণটি ইংরেজদের মাধ্যমে ইউরোপসহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। উপরোক্ত কারণে দাবার আন্তর্জাতিক নিয়মের সাথে আমাদের ভারতীয় দাবার নিয়মে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। দাবা খেলার সর্বোচ্চ সংস্থা ফিদের (FIDE) নির্ধারন করে দেওয়া নিয়ম কানুনগুলোকে আমি আন্তর্জাতিক নিয়ম হিসেবে এখানে উল্লেখ করব। আপনি একজন শিক্ষানবিশ হলে এবং দাবার প্রচলিত নিয়মগুলো আপনার জানা থাকলেও এই লেখাটি আপনার পড়া উচিত হবে। কারণ এখানে এমন অনেক আন্তর্জাতিক নিয়মের উল্লেখ করা হয়েছে যা প্রচলিত দাবায় নেই। দাবা খেলার নিয়ম সম্পর্কে সামান্য ধারনা পেলাম এবার বিস্তারিত।

দাবার বোর্ড

দাবা খেলার নিয়মে সর্ব  প্রথম বোর্ড সম্পর্কে জানতে হবে। দাবা খেলার বোর্ডে মোট ৬৪ টি ঘর থাকে। ৮ টি সারি এবং ৮ টি কলাম মিলে ৮*৮=৬৪ টি ঘর। প্রতিটি ঘর সাদা এবং কালো রং দিয়ে আলাদা করা থাকে। অর্থাৎ ৩২ টি সাদা ঘর এবং ৩২ টি কালো ঘর থাকে।

বোর্ড বসানোর নিয়ম

ভারতীয় দাবায় বোর্ড বসানোর কোন নিয়ম না থাকলেও দাবার আন্তর্জাতিক নিয়মে বোর্ড বসানোর একটি নিয়ম রয়েছে। সেটি হচ্ছে বোর্ড বসানোর সময় ডানদিকে সর্বদা সাদা রং এর ঘর থাকতে হবে।

দাবার গুটি

দাবা খেলায় দুই রঙের ঘুটি থাকে। ১৬ টি সাদা ঘুটি এবং ১৬ টি কালো ঘুটি; মোট ৩২ টি ঘুটি থাকে। সাদা এবং কালো রঙ মূলত দুই পক্ষের ঘুটিকে আলাদা করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। উভয় পক্ষের ১৬ টি ঘুটির মধ্যে একটি রাজা (King), একটি মন্ত্রী (Queen), দুটি হাতি (Bishop), দুটি ঘোড়া (Knight), দুটি নৌকা (Rook) এবং আটটি করে বড়ে (Pawn) থাকে। উল্লেখ্য যে, ইংরেজি অক্ষরে লেখা নামগুলো ফিদে কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া ঘুটি গুলোর নাম আন্তর্জাতিক দাবায় ব্যবহৃত হয়।

গুটি বসানোর নিয়ম । দাবা খেলার নিয়ম

  • বোর্ডের একপাশে সাদা গুটি এবং অন্য পাশে কালো ঘুটি সাজাতে হবে।
  • প্রথম সারিতে উভয় কোণায় একটি করে নৌকা বসাতে হবে।
  • এরপর উভয় নৌকার পাশে একটি করে ঘোড়া বসাতে হবে।
  • এরপর উভয় ঘোড়ার পাশে একটি করে হাতি বসাতে হবে।
  • মধ্যবর্তী দুটি ঘরের মধ্যে কালো মন্ত্রীকে কালো ঘরে বসাতে হবে এবং সাদা মন্ত্রীকে সাদা ঘরে বসাতে হবে।
  • অবশিষ্ট ঘরে রাজাকে বসাতে হবে।
  • দ্বিতীয় সারিতে প্রতি ঘরে একটি করে বড়ে বসাতে হবে।

দাবা খেলার নিয়ম বা গুটি চালার নিয়মঃ

রাজার চাল

১. রাজা (King) যে কোন দিকে (সোজা অথবা কোণাকুণি) এক ঘর যেতে পারে।

মন্ত্রী চালার নিয়ম

২. মন্ত্রী (Queen) যে কোন দিকে (সোজা অথবা কোণাকুণি) যত ঘর ইচ্ছা যেতে পারে।

হাতি চালার নিয়ম

৩. হাতি (Bishop) শুধুমাত্র কোণাকুণি যত ঘর ইচ্ছা যেতে পারে।

নৌকা চালার নিয়ম

৪. নৌকা (Rook) শুধুমাত্র সোজা যত ঘর ইচ্ছা যেতে পারে।

ঘোড়া চালার নিয়ম

৫. ঘোড়া (Knight) ইংরেজি L অক্ষরের মত যে কোন দিকে প্রথমে সোজা দুই ঘর এবং পরে যেকোন একদিকে এক ঘর যেতে পারে। ভারতীয় দাবায় যাকে আড়াই ঘর বলা হয়।

বড়ে চালার নিয়ম

৬. বড়ে (Pawn) প্রথম চালে এক ঘর অথবা দুই ঘর যেতে পারে এবং পরবর্তী চালগুলোতে একঘর করে যেতে পারে। তবে গুটি কাটার সময় কোণাকুণি একঘর চলে।

৭. কোন ঘুটি এমন কোন ঘরে যেতে পারবে না যেখানে আগে থেকে নিজের রঙের অন্য কোন ঘুটি অবস্থান করছে।

৮. ঘোড়া ব্যাতীত অন্য কোন ঘুটি যে ঘরগুলো অতিক্রম করবে সেই ঘরগুলো ফাঁকা থাকতে হবে। মধ্যবর্তী ঘরে কোন ঘুটি থাকলে তাকে টপকে যেতে পারবে না। তবে ঘোড়া এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। ঘোড়া নিজের কিংবা প্রতিপক্ষের যে কোন ঘুটিকে টপকে যেতে পারবে।

রাজা এবং নৌকার বিশেষ চাল

রাজা এবং নৌকার একটি বিশেষ চাল রয়েছে। যাকে ইংরেজিতে ক্যাসলিং বা বাংলায় দুর্গ গড়া বলা হয়। এই চালে রাজা নৌকার দিকে দুই ঘর অতিক্রম করবে এবং নৌকা রাজাকে ডিঙ্গিয়ে বা টপকে তার বিপরীত পাশের ঘরে বসবে। অর্থাৎ রাজার বর্তমান ঘর ও ক্যাসলিং পরবর্তী ঘরের মধ্যবর্তী ঘরে নৌকা বসবে।

দাবা খেলায় ক্যাসলিং করার সূত্র

এই বিশেষ চালের কিছু শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলো পূরণ হলেই কেবল এই চাল দেওয়া যাবে। শর্তগুলো হচ্ছেঃএটি রাজা এবং নৌকা উভয়ের প্রথম চাল হতে হবে।নৌকা এবং রাজার মধ্যবর্তী ঘরগুলো ফাকা থাকতে হবে। অর্থাৎ এই ঘরগুলোতে নিজের বা প্রতিপক্ষের কোন ঘুটি থাকা যাবে না।রাজা প্রতিপক্ষের কোন ঘুটি দ্বারা আক্রান্ত অবস্থায় অর্থাৎ চেক থাকা অবস্থায় ক্যাসলিং করা যাবে না।যে দুটি ঘর রাজা অতিক্রম করবে সেই ঘরগুলো প্রতিপক্ষের কোন ঘুটি দ্বারা আক্রান্ত থাকা যাবে না।

ঘুটি কাটার নিয়ম

আমরা আগেই বলেছি,দাবা খেলায় যেকোন ঘুটি এমন কোন ঘরে যেতে পারবে না যেখানে নিজের রঙের ঘুটি থাকবে। তবে যেই ঘরে যাবে সেই ঘরে প্রতিপক্ষের ঘুটি থাকলে তাকে সরিয়ে নিজে বসতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের ঘুটিটি বোর্ডের বাহিরে চলে যাবে এবং ঘুটিটি কাটা (Capture) হয়েছে বলা হবে।

তবে এক্ষেত্রে বড়ে দিয়ে প্রতিপক্ষের ঘুটি কাটার নিয়মটি একটু ভিন্ন। বড়ে তার সুজাসুজি সামনে থাকা ঘুটিকে কাটতে পারে না। বড়ের সামনের ঘরে অন্য কোন ঘুটি থাকলে বড়ে আর সামনে এগোতে পারে না। ঘুটি কাটার সময় বড়ে কোণাকুণি একঘর চলাচল করে থাকে। অর্থাৎ বড়ের এক ঘর সামনে যদি কোণাকুণি কোন ঘুটি থাকে তাহলে তাকে কাটতে পারে।

বড়ের বিশেষ চাল

বড়ের দুটি বিশেষ চাল রয়েছে। সেগুলো হলঃ

১. এন প্যাসান্ট (EN PASSANT) বা পাশ কাটানো বড়ে কাটাঃ

বড়ে দিয়ে বড়ে কাটার একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে। সেটি হচ্ছে এন প্যাসান্ট (EN PASSANT) বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া। এটি মূলত একটি ফরাশি শব্দ যা আন্তর্জাতিক দাবায় ব্যবহৃত হয়। যে কোন বড়ে পঞ্চম সারিতে থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় সারিতে কোণাকুণি অবস্থানে থাকা কোন ঘুটি যদি তাকে পাশ কাটিয়ে দুই ঘর অতিক্রম করে তাহলে প্রথম ঘুটিটি পরবর্তী চালে দ্বিতীয় ঘুটিটিকে একঘর পেছনে নিয়ে গিয়ে কাটতে পারে। এই নিয়মটিই এন প্যাসান্ট নামে পরিচিত। তবে প্রতিপক্ষের বড়েটি পরবর্তী চালেই কাটতে হবে। এক চাল পার হলে এভাবে আর কাটা যাবে না। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় দাবায় এই নিয়মের প্রচলন ছিল না।

২. বড়ের পদোন্নতি

বড়ে একমাত্র ঘুটি যা পেছনের দিকে যেতে পারে না। বড়ে সামনের দিকে যেতে যেতে যদি শেষ সারিতে গিয়ে উপস্থিত হয় তখন বড়েকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বড়ে শেষ সারিতে যাওয়ার পর সাথে সাথেই রাজা ছাড়া অন্য যে কোন ঘুটি দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে। অর্থাৎ আটটি বড়ে শেষ সারিতে গিয়ে পৌছলে আটটি মন্ত্রীই উঠানো যাবে।এক্ষেত্রে ভারতীয় দাবায় অঞ্চলভেদে কিছু নিয়মের প্রচলন ছিল বা এখনো কিছু প্রচলন আছে। যেমনঃ বড়ে শেষ ঘরে গেলে মন্ত্রী হবে কিংবা মন্ত্রী বোর্ডে থাকলে অন্য ঘুটি উঠাতে হবে, শেষ ঘরে গিয়ে এক চাল বসতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে দাবার আন্তর্জাতিক নিয়মে এই ধরণের কিছু নেই। আপনি বড়ের বদলে আপনার ইচ্ছামতো রাজা ছাড়া যে কোন ঘুটি নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, বড়ে শেষ ঘরে পৌছার পর, তার পরিবর্তে অন্য ঘুটি বসানোর পর আপনার চালটি সমাপ্ত হবে।

খেলা শুরু করার নিয়ম । দাবা খেলার নিয়ম

দাবা খেলার নিয়ম সম্পর্কে অনেককিছু জানলাম এবার খেলা শুরু করার নিয়ম জানব।  দাবা খেলার শুরুতে কোন খেলোয়াড় সাদা গুটি নিবে বা কোন খেলোয়াড় কালো গুটি নিবে তা টস করে নির্ধারণ করে নিতে হবে। টুর্ণামেন্টের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই কোন বৈধ উপায়ে সাদা কালো নির্ধারণ করে রাখে। তবে যাই হোক, সাদা পক্ষ সবসময় আগে চাল দিবে এবং কালো পক্ষ পরে চাল দিবে। প্রথম চালে যে কোন বৈধ চাল দেওয়া যাবে। যেমন বড়ে এক ঘর বা দুই ঘর চালা যাবে। অথবা ঘোড়া চালা যাবে। তবে প্রতিবার একটি চালই দেওয়া যাবে। উল্ল্যেখ্য যে, ভারতীয় দাবায় প্রথম চালে দুটি বড়ে এক ঘর করে চালার প্রচলন ছিল। আন্তর্জাতিক দাবায় এ ধরণের কোন নিয়ম নেই। অর্থাৎ প্রতি চালে কেবল একটি গুটিই চালা যাবে।

দাবার গুটির পয়েন্ট বা মান

দাবা খেলার নিয়মে গুটির পয়েন্ট বা মান সম্পর্কে সুস্পস্ট ধারনা থাকা দরকার। দাবা খেলায় মোট ছয় ধরণের ঘুটি রয়েছে। এদের চালের প্রকৃতি ভেদে বোর্ডে এদের প্রভাব বা ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন। নতুন দাবাড়ুদের ক্ষেত্রে এই পয়েন্ট গুলো জানা থাকলে ঘুটি কাটা কাটি কখন করা যাবে তা বুঝতে সুবিধা হয়। নিচে পয়েন্টগুলো দেখানো হলোঃ

  • বড়ে (Pawn) ১ পয়েন্ট
  • হাতি (Bishop) ৩.২৫ পয়েন্ট
  • ঘোড়া (Knight) ৩.২৫ পয়েন্ট
  • নৌকা (Rook) ৫ পয়েন্ট
  • মন্ত্রী (Queen) ৯ পয়েন্ট
  • রাজা (King) অসীম

এটি মূলত গুটির পয়েন্ট বা মান বুঝার জন্যে প্রাথমিক ধারণা। যেমনঃ একটি ঘোড়াকে আরেকটি ঘোড়া বা হাতির সাথে কাটাকাটি করলে সমান সমান হবে। তবে বোর্ডের অবস্থা ভেদে গুটির মান বিশেষ অবস্থায় বেড়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে। যেমন খোলা বোর্ডে দুটি হাতি প্রতিপক্ষের মন্ত্রীর সাথে পাল্লা দিতে পারে, যদিও তাদের পয়েন্টের ব্যাবধান অনেক বেশি। বদ্ধ বোর্ডে হাতির চেয়ে ঘোড়া ভালো কাজ করে। আবার খোলা বোর্ডে ঘোড়ার চেয়ে হাতি বেশি শক্তিশালী। বিশেষ অবস্থায় একটি বড়ে খেলার জয় পরাজয় নির্ধারণ করতে পারে।

দাবা খেলার ফলাফল নির্ধারণের নিয়ম কানুন

দাবা খেলায় দুই ধরণের ফলাফল আসতে পারে। প্রথমত জয় পরাজয় এবং দ্বিতীয়ত ড্রো।

দাবার ঘড়ি এবং সময় এর নিয়ম

দাবা খেলায় একটি বিশেষ ধরণের ঘড়ি ব্যবহার করা হয়। একে টুইন ঘড়ি বা জোড়া ঘড়ি বলা হয়। দুইটি ঘড়ি পাশাপাশি এমনভাবে থাকে যেন একটি বন্ধ করলে আরেকটি চালু হয়ে যায়। খেলার শুরুতে কালো পক্ষ সাদার ঘড়িটি চালু করবে। সাদার চাল শেষ হলে নিজের ঘড়ি বন্ধ করবে এবং সাথে সাথে কালোর ঘড়ি চালু হয়ে যাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে।

প্রতিটি খেলায় উভয় পক্ষের সময় নির্ধারিত থাকে। সাধারণত ক্লাসিক্যাল রেটিং দাবায় উভয় পক্ষকে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট করে মোট ৩ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়। প্রতি চাল দেওয়ার সাথে সাথে নিজের ঘড়িতে ৩০ সেকেন্ড করে যোগ হয়। ব্লিটজ বা র‍্যাপিড দাবায় সময় আরো অনেক কম থাকে। কোন পক্ষের সময় শেষ হয়ে গেলে সে পরাজিত বলে গণ্য হবে।

স্পর্শ চাল (Touch & Move) এর নিয়ম

দাবার টুর্ণামেন্টগুলোতে স্পর্শ চাল বা Touch & Move নিয়মটি খুবই কঠোরভাবে মানা হয়। নিয়মটি হচ্ছে আপনি যে গুটি আগে স্পর্শ করবেন সেটি চালতে হবে এবং প্রতিপক্ষের কোন গুটি স্পর্শ করলে সেটি নিজের কোন গুটি দিয়ে কাটা গেলে অবশ্যই কাটতে হবে। কোন গুটি সরে গেলে ঠিক করার প্রয়োজন হলে প্রতিপক্ষের সম্মতি নিয়ে ঠিক করতে হবে অথবা আরবিটর (বিচারক) এর সাহায্য নিতে হবে। আমরা অনেকেই বৈঠকি দাবায় অনেক সময় চাল ফেরৎ নেই অথবা এক গুটি স্পর্শ করে অন্য গুটির চাল দেই। এগুলো ঠিক নয়। নিজেরা প্রেকটিস করার সময় এই নিয়মটি মেনে চললে টুর্ণামেন্টের সময় ভূল করে গুটি স্পর্শ করার সম্ভাবনা থাকে না।

দাবার টুর্ণামেন্টের পদ্ধতি । দাবা খেলার নিয়ম

দাবার টুর্ণামেন্ট গুলো সাধারণত দুই পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। প্রথমত রাউন্ড রবিন পদ্ধতি এবং দ্বিতীয়ত সুইস লীগ পদ্ধতি।

রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে প্রত্যেক খেলোয়াড় প্রত্যেকের সাথে খেলার সুযোগ পায়। সাধারণত খেলোয়ার সংখ্যা কম থাকলে এটি ব্যাবহার করা হয়। সেরা খেলোয়ার নির্বাচন করার এটিই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।

খেলোয়াড় সংখ্যা বেশি হলে কম সময়ে টুর্ণামেন্ট শেষ করার জন্যে সুইস লীগ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে সমান পয়েন্ট প্রাপ্ত খেলোয়াড়েরা পরস্পরের সাথে খেলে এবং এভাবে চলতে থাকে। এ পদ্ধতিতে ১০০ জন খেলোয়াড়ের একটি টুর্ণামেন্ট ৭-৯ রাউন্ডে শেষ করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে আরো কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। তবে বর্তমানে ফেডারেশন গুলোতে ফিশ্চার করার জন্যে কম্পিউটার সফটওয়ার ব্যবহার করা হয়।

উভয় পদ্ধতিতেই প্রত্যেক খেলোয়াড় জয়ী হলে ১.০০ পয়েন্ট, ড্রো হলে ০.৫০ পয়েন্ট এবং পরাজিত হলে কোন পয়েন্ট পাবে না। টুর্ণামেন্ট শেষে যার পয়েন্ট বেশি হবে সেই চ্যাম্পিয়ন হবে।

দাবা খেলার নিয়ম শেষ কথা

দাবা খেলায় ভালো করার প্রথম নিয়ম হচ্ছে আপনাকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে এবং মানষিকভাবে শান্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত থেকে খেলতে হবে। আর এখন বলব শেষ নিয়মটির কথা। দাবায় ভালো করতে হলে শেষ নিয়মটি হছে প্রচুর পড়াশুনা করা এবং প্রাকটিস করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *