Health

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়, জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের নাম, জ্বর হলে করণীয়, জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম, জ্বর হলে করণীয় কি

1 min read

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

আপনি কি জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান ? মানবদেহে যে সকল রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো জ্বর। যা নবাগত শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ নারী পুরুষ সকলেরই হয়ে থাকে।জ্বর কোন খারাপ রোগ নয়, মানবদেহে যে কোনো সংক্রমণ বা প্রদাহের বিপরীতে প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো জ্বর।

হুটহাট জ্বর চলে আসা এই সময়ে অস্বাভাবিক নয়। বাতাসে ঋতু বদলের ঘ্রাণ। প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের শরীর দ্রুত মানিয়ে নিতে না পারলে একটু-আধটু অসুখ দেখা দিতেই পারে। এদিকে যোগ হয়েছে করোনার ভয়। জ্বর হলে তা সাধারণ জ্বর না-কি করোনার হানা, তা নিয়েও চিন্তিত হন অনেকে। তবে চিন্তিত না হয়ে প্রথমে মেনে চলতে পারেন ঘরোয়া কিছু উপায়। এরপরও জ্বর না সারলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

জর বলতে  আসলে আমরা কি বুঝি

আমাদের শরীরের স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রা থাকে 98 ডিগ্রি।শরীরের তাপমাত্রা 99 ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে গেলে তাকে জ্বর বলে অভিভূত করা হয়। জ্বর হলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে বা ঔষধ খেয়ে জ্বর কমাতে হবে, বিষয়টি এমন নয়।শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই, আর সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ খেয়ে ফেলি। অনেকে আরো এক ধাপ এগিয়ে ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ক্রয় করে খেয়ে ফেলি।যেটা খুবই খারাপ। কোন ধরনের অসুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ সেবন করা যাবেনা। জ্বরের একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে, কেননা আমাদের শরীরের একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পর্যন্ত, জ্বর নিয়ে প্রতিরোধ করতে পারে।শরীরের তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত না হলে বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর সম্ভব।

তাই আজ আমি জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ।

জ্বর হলে জ্বর কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায় আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ওষুধ না খেয়ে দিব্যি জ্বর দূর করতে পারবেন। আসুন আজকে আমরা জেনে নেই কিছু জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়।

শরীর স্পঞ্জ করা

জ্বর হল আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর তুলনায় বেড়ে যাওয়া। এখন তাহলে প্রশ্ন হল শরীরের তাপমাত্রা কিভাবে কমানো যায়? কুসুম গরম পানিতে গামছা বা রুমাল ভিজিয়ে গা বার বার স্পঞ্জ করা। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ করলে আরও দ্রুত ঠাণ্ডা হবে।কিন্তু জ্বর কমানোর জন্য ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার ঠিক হবে না কারণ জ্বর এর কারণে অনেকেরই শীত শীত অনুভূত হয়। তাই এই সময় একেবারে ঠাণ্ডা পানি স্পঞ্জ করলে রোগীর আরও বেশী কাপুনি আসতে পারে।

আদা

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় মদ্ধে অন্যতম হচ্ছে আদা। আদার অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং একসাথে এটি শরীরের তাপমাত্রা কমায়।

আদা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ আদা কুচি করে ফুটন্ত পানির মধ্যে দিয়ে ২-৩ মিনিট ফুটাতে হবে। এরপর এই আদা পানি মগে করে চায়ের মত করে খেলে দ্রুতই আরাম বোধ হয়। গরম কোন খাবার খেলে শরীর গরম হয় এবং শরীর ঘামে। শরীর ঘামানোর ফলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায় দ্রুতই।

 তুলসি পাতা

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপাদান এর মধ্যে আরেকটি উপাদান হচ্ছে তুলসী পাতা । কমবেশি আমাদের প্রায় বাসাতেই তুলসি গাছ দেখতে পাওয়া যায়। যদিও আমরা অনেকেই জানি সর্দি, কাশির ক্ষেত্রে তুলসি পাতা খুব উপকারি। কিন্তু তুলসি পাতা শুধুমাত্র সর্দি, কাশির জন্য উপকারি তা নয়। তুলসি পাতা শরীরের জ্বর কমাতেও বেশ কার্যকরী। জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে তুলসি পাতা অন্যতম।পানি এবং তুলসি পাতা একত্রে গরম করে সেই পানি প্রতিদিন সকালে পান করলে জ্বর খুব দ্রুত কমে যায়। তুলসি পাতাতে থাকে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান যা শরীরের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

মধু

জ্বর কমাতে মধুর বিকল্প যেনো কিছুই হয় না। আমাদের প্রায় সকলের বাড়িতে মধু থাকেই। আর এই মধুর সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস এবং সাথে কুসুম গরম পানি মিশিয়ে যদি পান করা হয় তবে জ্বর কমে যায়।

গ্রিন টি

আমাদের অনেকের বাসাতে গ্রিন টি যেনো এখন হাতের নাগালে। গ্রিন টি শুধু যে শরীরের মেদ কমায় তা কিন্তু নয়। বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরে জ্বর হলে এক কাপ গ্রিন টি যদি পান করা যায় তবে শরীরের জ্বর কমতে শুরু করে।

দারুচিনি

দারুচিনিতে আছে অ্যান্টিফাংগাল, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। আর এই দারুচিনিই হতে পারে জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় মধ্যে অন্যতম। দারুচিনির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের বিভিন্ন ভাইরাস জনিত সংক্রমণ কমতে থাকে। ফলে শরীরে জ্বর হলেও তা কমিয়ে যেতে সাহায্য করে এই দারুচিনি।

ভিটামিন

শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন বাইরের রোগজীবাণু সহজেই শরীরকে আক্রমণ করতে পারে। ফ্লুও একই কারণে হয়ে থাকে। তাই ফ্লু থেকে দূরে থাকতে ভিটামিন খাওয়া জরুরি। কিছু খাবারে থাকে প্রচুর ভিটামিন এ বি সি ইত্যাদি। তাই খাবারের একটি ঠিকঠাক তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করুন যাতে শরীরে সব ধরনের ভিটামিন ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারে।

তরল খাবার

বুকে কফ জমে গেলে তা বের করা কঠিন। এমনকি ঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে হতে পারে ইনফেকশন। তাই সর্দিকাশির সময় কোনোভাবেই যেন বুকে কফ বসে না যায়। এর জন্য খেতে হবে প্রচুর তরল। বিশুদ্ধ পানি পানের পাশাপাশি ফ্রুট জুস বা স্যুপ জাতীয় খাবার খান নিয়মিত। তরল খাবার কফকে সহজে বুকে বসতে দেয় না।

বিশ্রাম

এইসময় জ্বর অনুভূত হলে বাড়ি থেকে কোথাও না বেরিয়ে বাড়িতেই বিশ্রাম নিন। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। এই সময় শরীর যথেষ্ট দুর্বল থাকে। তাই ঠিকঠাক বিশ্রাম নিতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুমের। বাড়িতে চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নেয়ার।

শুয়ে থাকবেন না

জ্বর হয়েছে বলে সারাদিন চাদর গায়ে চাপা দিয়ে শুয়ে রইলাম এই টি কখনোই করবেন না। কেননা যত শুয়ে থাকবেন তাপমাত্রা তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাই ঘরে অল্প পরিসরের মধ্যে হাঁটাচলা করার চেষ্টা করুন। তা না হলে বেশি শুয়ে থাকলে মাথা ভার হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে আরও দুর্বল বলে মনে হবে। তাই যদি সম্ভব হয় উঠে অল্পবিস্তর হাঁটাচলা করুন এবং আবার এসে খাটে বসে পড়ুন।

রোদে বেরোবেন না

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে অর্থাৎ জলের পরিমাণ যদি একটু বেশি থাকে সে ক্ষেত্রে রোদে না বেরোনো ভালো। কেননা শরীর এমনিতেই গরম। তার মধ্যে যদি বাইরের উত্তাপ শরীরে লাগে সেটি শরীরের ক্ষতি করে এবং ব্যাকটেরিয়া গুলিকে উদ্দীপিত করে তোলে। তাই যথাসম্ভব জ্বর হলে ঘরে থাকার চেষ্টা করুন।

ফ্রিজের খাবার খাবেন না

জ্বর থাকাকালিন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্দি কাশি, বুকে কফ, গলা ব্যথা, নাক বন্ধের সমস্যা লেগেই থাকে। তাই এই সময় ফ্রিজ থেকে বের করে সরাসরি কোন খাবার খাবেন না। চেষ্টা করবেন ফ্রিজে থেকে বের করে গরম করা খাবার না খেতে। কেননা ফ্রিজে যখন আমরা খাবারটি রাখি তখন তার মধ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়, যেটি জ্বর অবস্থায় খেলে শরীরের ক্ষতি করে। কেননা শরীর এই সময় দুর্বল থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই এক্ষেত্রে অন্য ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই জ্বর হলে পরে কিংবা জ্বর কমে যাওয়ার ৪-৫ দিনের মধ্যে ফ্রিজের খাবার না খাওয়াই ভালো।

ধূমপান বন্ধ

জ্বর হলে পরে এই সময় ধূমপান না করাই ভালো। এর পাশাপাশি মদ্যপানও না করাই উচিত। কেননা ধূমপান এবং মদ্যপান শরীরকে আরো উত্তেজিত করে তোলে। জ্বর থাকাকালীন অবস্থায় এগুলি তাই একেবারেই ঠিক নয়। তাই জ্বর হলে ধূমপান এবং মদ্যপানকে কঠোরভাবে বন্ধ করা উচিত।

হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে এখন ঘরে ঘরে ভাইরাল ফিভারের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে গা হালকা গরম ভাব, চোখে জ্বালা করে জ্বরটা আসছে। তাই এটির অবহেলা না করে শুরু থেকেই যদি উপরিউক্ত জ্বর কমানোর ঘরোয়া বিষয় গুলি মেনে চলতে পারেন তাহলে সহজেই জ্বরের প্রতিকার করা সম্ভব হবে। জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপাদান গুলির পাশাপাশি যদি আমরা এই ছোটখাটো বিষয় গুলি মাথায় রাখি সে ক্ষেত্রে আমাদের শরীর হয়তো খারাপ হবে না কিংবা শরীরের সংক্রমণ থেকেও আমরা দূরে থাকতে পারব। তাই আর অপেক্ষা কিসের যদি নিজেকে কোনরকম অসুস্থ বলে মনে হয় কিংবা জ্বর আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হয় সেক্ষেত্রে আজ থেকেই তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করুন এবংজ্বর কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করার চেষ্টা করুন।

দেখবেন তাহলে খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে না এবং অল্পতেই এর থেকে আপনি নিস্তার পাবেন। এবং নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই এই জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। তাই নিজের খেয়াল রাখার পাশাপাশি নিজের ঘরের আপন লোকজনদেরও খেয়াল রাখুন। নিজে সুস্থ থাকুন, সকলকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x