Health

ডাবের পানির উপকারিতা , ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

1 min read

ডাবের পানির উপকারিতা

ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে আজকে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করব। ডাবের পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। ছোট-বড় প্রায় সবাই এটি পছন্দ করে। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন এই পানীয়টির রয়েছে নানা উপকারিতা।ডাবের পানি খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা । একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শুধু গরমকাল নয়, সারা বছর যদি নিয়ম করে ডাবের পানি খাওয়া যায়, তাহলে একাধিক রোগ শরীরের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। শুধু তাই নয়, ডাবের পানি উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, মেঙ্গানিজ এবং জিঙ্ক নানাভাবে শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব উপাদানই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন পরে।

ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে

ডাবের পানি হলো প্রকৃতিক টোনার, যা ত্বককে সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি সার্বিকবাবে স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্রণর প্রকোপ কমাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি সাহায্য করে থাকে।

ওজন কমবে

ডাবের পানির উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডাবের পানি উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি এনজাইম হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মেটাবলিজমের উন্নতিতেও সাহায্য করে থাকে। ফলে খাবার খাওয়া মাত্র তা এত ভালো ভাবে হজম হয়ে যায় যে শরীরের অন্দরে হজম না হওয়া খাবার মেদ হিসেবে জমার সুযোগই পায় না। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। ডাবের পানি শরীরে লবনের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে ওয়াটার রিটেনশন বেড়ে গিয়ে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে

ডাবের পানির উপকারিতার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ডাবের পানি উপস্থিত ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মেডিকেল জানার্লে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে পটাশিয়াম শরীরে লবনের ভারসাম্য ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক রাখে। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগটির ইতিহাস রয়েছে, তাদের নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়া উচিত। একই নিয়ম যদি রক্তচাপে ভোগা রোগীরাও মেনে চলেন, তাহলেও দারুণ উপকার মেলে।

ব্লাড সুগারকে বেঁধে রাখবে

২০১২ সালে হওয়া জার্নাল ফুড অ্যান্ড ফাংশন স্টাডিসে দেখা গিয়েছিল ডাবের পানিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ডায়াটারি ফাইবার ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে

রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন এবং পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারি উপদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের অন্দরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা কোনওভাবেই ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। সেই সঙ্গে ডাবের পানিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেও ডাবের পানির উপকারিতা রয়েছে।

শরীরে পানির ঘাটতি দূর হবে

শরীরে পানির ঘাটতি দূর করতে ডাবের পানির উপকারিতা রয়েছে। ডাবের পানি শরীরের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র পানির ঘাটতি মিটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত ইলেকট্রোলাইট কম্পোজিশান ডায়ারিয়া, বমি এবং অতিরিক্ত ঘামের পর শরীরে ভিতরে খনিজের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো গরমকালে ডাবকে রোজের সঙ্গী করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

হার্টের টনিক

শরীরে বাজে কোলেস্টেরল বা এল ডি এল-এর পরিমাণ কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ডাবের পানির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতেও ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।

মাথা যন্ত্রণা দূরে থাকবে

ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনর অ্যাটাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে দ্রুত এক গ্লাস ডাবের পানি খেয়ে নেবেন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শরীরের বয়স কমবে

খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও শরীরের বয়স কি ধরে রাখতে চান? তাহলে আজ থেকেই ডাবের পানি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। আসলে ডাবের পানি রয়েছে সাইটোকিনিস নামে নামে একটি অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যা শরীরের উপর বয়সের ছাপ পরতে দেয় না। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কিডনি ফাংশনের উন্নতি ঘটবে

প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত টক্সিন উপাদানদের ইউরিনের সঙ্গে বের করে দিয়ে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়।

স্ট্রেস কমবে

ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে  কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের অন্দের প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন স্ট্রেস কমায়, তেমনি পেশীর সচলতা বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ডাবের পানির অপকারিতা

ডাব নিয়মিত খেলে কিডনি রোগ হয় না৷ আবার কিডনি রোগ হলে ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণ নিষেধ৷ কারণ কিডনি অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের হয় না৷ ফলে ডাবের পানির পটাশিয়াম ও দেহের পটাশিয়াম একত্রে কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে দেয়৷ এই অবস্থায় রোগীর মুত্যু অনিবার্য৷ তাই যাদের দেহে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না তাদের ডাবের পানি পান করা ঠিক না৷ ডাবের পানি রোগীকে পান করানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷যারা ওজন কমাতে চান তাদের ডাবের পানি বেশি না খাওয়াই ভাল। কারণ, ডাবের পানি শরীরে ক্যালরির মাত্রা বাড়ায়। অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পানীয় বা ফলের রসের তুলনায় ডাবের পানিতে চিনির পরিমান কম থাকে। তবুও ডাবের পানি খেলে নিমেষে বেড়ে যায় ক্যালরি।শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে থাকা সোডিয়াম রক্তাচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবেই বেশি তাদের ডাবের পানি প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। তবে সপ্তাহে দু’একদিন খেতেই পারেন।

চিকিৎসায় ব্যবহার

ডাবের পানিতে খনিজ লবণ থাাকে যা মানুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্যপ্রাণ। ডায়ারিয়া হলে মানবদেহে ইলেকট্রোলাইট কমে যায়, মানুুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন ডাবের পানি খাওয়ালে ইলেকট্রোলাইট ব্যালানসড হয় এবং শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা প্রত্যাবর্তন করে। ডাবের পানিতে কিনেটিন থাকে যা স্নায়ুসংক্রান্ত রোগে উপকারী। ডাবের পানি কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এটা কিডনির পাথর সৃষ্টি রোধ করে এবং ডায়রিয়া, আলসার, গ্যাসটাটাইটিস বা অ্যাসিডিটি, মূত্রনালীর সংক্রমণ ও ইউরোলিথিয়েসিস প্রতিরোধ করে।

ডাবের পানিতে এন্টিসেপটিক গুণ থাকাতে কাটা-ছেড়া জায়গায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখের ক্ষত যেমন—ব্রণ, মেছতা ও ফক্সের ক্ষত ডাবের পানি দিয়ে ধৌত করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লেভিন ও কার্বোহাইড্রেট আছে। ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

এখন ডাবের পানি বিক্রয় করা অনেকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভারতের দিল্লীতে  বাংলাদেশ গ্রীষ্মকালে ডাবওয়ালারা কচি ডাব বিক্রি করছে।

ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা

ডাবকে কচি অবস্থাতেই নারকেল গাছ থেকে পেড়ে নেয়া হয়। মুখের কাছটা ধারালো ছুরি বা দা দিয়ে কেটে ফেলে সেখানে গর্ত করে ডাবের পানি ও শাঁস বের করে নেয়া হয়, অথবা স্ট্র দিয়ে সেখান থেকে সরাসরি খাওয়া হয়। কচি ডাবের ভেতরে পানি ও বায়ু অতিরিক্ত চাপে থাকতে পারে, সেজন্য ডাবের মুখ কাটলে অনেক সময় একটু পানি ছিটকে বেরোয়।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x