সদকায়ে ফিতর কার উপর ওয়াজিব
আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করব সাদকায়ে ফিতের কার উপর ওয়াজিব ।
সাদকায়ে ফিতের কার উপর ওয়াজিব
- কার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে,
- সদকায়ে ফিতির কখন আদায় করতে হবে,
- সদকায়ে ফিতর কি পরিমান আদায় করতে হবে,
- কাদেরকে সদকায়ে ফিতর দেওয়া যাবে,
ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
তবে প্রথমে বলে রাখি আমরা যে কাজই করি না কেন, আমাদের হাজারও চেষ্টা সত্যেও কিছু না কিছু ত্রুটি থেকেই যায়, এটাই স্বাভাবিক। তদ্রূপ আমরা যে রোযা রাখি এর মাঝেও আমাদের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়। আমরা রোযা রেখে অনেক অশালীন, বেহুদা কথাবার্তা বলি। অনেক না-জায়েয জায়গায় আমাদের নজর পড়ে। এসব থেকে আমাদেরকে পবিত্র করার জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন।
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ الدِّمَشْقِيُّ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّمَرْقَنْدِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا مَرْوَانُ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ حَدَّثَنَا أَبُو يَزِيدَ الْخَوْلاَنِيُّ، – وَكَانَ شَيْخَ صِدْقٍ وَكَانَ ابْنُ وَهْبٍ يَرْوِي عَنْهُ – حَدَّثَنَا سَيَّارُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، – قَالَ مَحْمُودٌ الصَّدَفِيُّ – عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ .
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে (রমাযানের) সওমকে পবিত্র করতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি (ঈদের) সলাতের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদাক্বাহ গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে। [১৬০৯]
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৬০৯
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
ঈদেরর খুশি শুধু ধনীদের জন্য নয়। শুধু বিত্তশালীদের জন্য নয়; বরং সমাজে যারা দুস্থ-অসহায়-ইয়াতীম-গরীব রয়েছে, তাদের জন্যও ঈদ। তাদেরও আনন্দের দিন। তাই দয়ার সাগর রহমাতের নবী সারওয়ারে দু’আলম মুহাম্মাদ সা. সমাজের অসহায় মানুষের ঈদের ব্যবস্থা আগে করেছেন। ঘোষণা করেছেন, তোমরা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে ঈদগাহে যাবে।
ফিতরা কার উপর ওয়াজিব।
সদকায়ে ফিতর/ফিতরা-এর মাসায়েল
যার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় যার নিকট যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ / সম্পদ থাকে তার উপর সদকায়ে ফিতর বা ফিতরা ওয়াজিব।
প্রসঙ্গত এখানে প্রশ্ন আসতে পারে কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব আমরা তো সেটাও জানি না তাহলে জেনে নিন কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হয়। তাহলেই বুঝতে পারবেন সদকায়ে ফিতর কত টাকা থাকলে ওয়াজিব হবে। পরিবারের খরচ মেটানোর পর যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপা থাকে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপার বাজার দর অনুযায়ী ৫০ হা জার থেকে ৪ লাখ টাকা থাকে ওই ব্যক্তির জন্য কুরবানি করা আবশ্যক।’
তবে যাকাতের নেছাবের ক্ষেত্রে ঘরের আসবাবপত্র বা ঘরের মূল্য ইত্যাদি হিসেবে ধরা হয় না কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অন্যান্য আসবাবপত্র সৌখিন দ্রব্যাদি, খালিঘর বা ভাড়া ঘর (যার ভাড়ার উপর জীবিকা নির্ভরশীল নয়) এসব কিছুর মূল্য হিসেবে ধরা হবে।
রোযা না রাখলে বা রাখতে না পারলে তার উপরও ফিতরা দেয়া ওয়াজিব। এ কথা নয় যে, রোযা না রাখলে ফিতরাও দিতে হয়না।
সাদকায়ে ফিতির কার পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে।
সদকায়ে ফিতর/ফিতরা নিজের পক্ষ থেকে এবং পিতা হলে নিজের না-বালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব। বালেগ সন্তান, স্ত্রী, স্বামী, চাকর-চাকরানী, মাতা-পিতা প্রমুখের পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব নয়। তবে বালেগ সন্তান পাগল হলে তার পক্ষ থেকে দেয়া পিতার উপর ওয়াজিব।
সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব না হলেও সঙ্গতি থাকলে দেয়া ভালো এবং অনেক সওয়াবের কাজ। (প্রাগুক্ত)
সদকায়ে ফিতরের সহজ হিসাব
ফিতরায় ৮০ তোলার সেরের হিসেবে ১ সের সাড়ে বার ছটাক (১কেজি ৬৬২ গ্রাম) গম বা আটা কিংবা তার মূল্য দিতে হবে। পূর্ণ দুই সের (১কেজি ৮৬৬ গ্রাম) বা তার মূল্য দেয়া উত্তম।
ফিতরায় যব দিলে ৮০ তোলার সেরের হিসেবে ৩ সের নয় হুটাক (প্রায় ৩ কেজি ৫২৩ গ্রাম) দিতে হবে। পূর্ণ ৪ সের (৩ কেজি ৭৩২ গ্রাম) দেয়া উত্তম ।
অন্যান্য যেসব খাদ্যবস্তু দ্বারা সদকায়ে ফিতর দেওয়া যায় এবং তার পরিমান।
গম, আটা ও যব ব্যতীত অন্যান্য খাদ্যশস্য যেমন ধান, চাউল, বুট, কলাই, মটর ইত্যাদি দ্বারা ফিতরা আদায় করতে চাইলে বাজার দরে উপরোক্ত পরিমাণ গম বা যবের যে মূল্য হয় সেই মূল্যের ধান চাউল ইত্যাদি দিতে হবে।
যে বস্তু দ্বারা সাদকায়ে ফিতর দেওয়া উত্তম।
ফিতরায় গম, যব ইত্যাদি শষ্য দেয়ার চেয়ে তার মূল্য-নগদ টাকা পয়সা দেয়া উত্তম ।
ফিতরা দেওয়ার সঠিক সময়।
ফিতরা ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাযের পূর্বেই দিয়ে দেয়া উত্তম। নামাযের পূর্বে দিতে না পারলে পরে দিলেও চলবে। ঈদের দিনের পূর্বে রমযানের মধ্যে দিয়ে দেয়াও দোরস্ত আছে।
ফিতরা যাদেরকে দেওয়া যাবে।
যাকে যাকাত দেয়া যায় তাকে ফিতরা দেয়া যায়।
একজনের ফিতরা একজনকে দেয়া বা একজনের ফিতরা কয়েকজনকে দেয়া উভয়ই দুরস্ত আছে। কয়েকজনের ফিতরাও একজনকে দেয়া দুরস্ত আছে কিন্তু তার দ্বারা যেন সে মালেকে নেছাব না হয়ে যায়।
যে পরিমাণ ফিতরা দেওয়া উত্তম।
অধিকতর উত্তম হল একজনকে এই পরিমাণ ফিতরা দেয়া, যার দ্বারা সে ছোট-খাট প্রয়োজন পূরণ করতে পারে বা পরিবার পরিজন নিয়ে দু’তিন বেলা খেতে পারে।
ফিতরা কার উপর ওয়াজিব শেষ কথা
ঈদের দিন সাদিকের সময় যার নিকট যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ সম্পদ থাকে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। আর যাকাত ওয়াজিব হয় যে পরিমাণ সম্পদ দ্বারা তা হচ্ছে
পরিবারের খরচ মেটানোর পর যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপা থাকে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপার বাজার দর অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা থাকে ওই ব্যক্তির জন্য কুরবানি করা আবশ্যক।’ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে বুঝেশুনে সমস্ত বিধানাবলী সঠিক সময় আদায় করার মতো তৌফিক দান করুন আমীন।