পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কত রাকাত বা সালাতের রাকাত সংখ্যা ও নিয়ম
(আগে জেনে নেয়া যাক)
ফরজ শব্দটির অর্থ যা অবশ্যই পালনীয়। (যা আল্লাহ তা’আলা আদেশ করেছেন এবং অবশ্য অবশ্যই পালনীয়।)
ওয়াজিব শব্দটির অর্থ পালনীয়। (ফরজ ও ওয়াজিব একই অর্থবোধক হলেও ওয়াজিব ফরজের তুলনায় দুর্বল দলীল দ্বারা প্রমাণিত।)
আরো পড়ুনঃ চাশতের নামাযের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত
সুন্নত শব্দটির অর্থ রীতি। (সুন্নত হল, এমন আমল যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে করেছেন এবং তার প্রতি উৎসাহিত করেছেন কিন্তু তা ফরজ বা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল পাওয়া যায় না।)
নফল শব্দটির অর্থ অতিরিক্ত। (যা পালন করার জন্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি কোনো নির্দেশনা দিয়ে যান নি তবে এটিও ইবাদত।)
সালাতুল ফজর । ফজরের নামাজ কয় রাকাত
ফজরের সাধারণত চার রাকাত নামাজ আদায় করা হয় ।প্রথমে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে হয় এবং পড়ে দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়।
ফজর :– 4 রাকাত ।
প্রথম 2 রাকাত সুন্নাত
পরের 2 রাকাত ফরজ ।।
এর সময় হলো সুবহে সাদেকের পর থেকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস : ১৪৫৬, ৯৬৬)
সালাতুল জোহর । মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত
যুহরের নামাজ প্রথমে চার রাকাআত সুন্নাত। তারপর চার রাকাআত ফরজ এবং তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। এ দশ রাকাআত পড়া উত্তম। কেউ কেউ সর্বশেষ দুই রাকআত নফল নামাজও পড়ে। এ হিসেবে জোহরের নামাজ ১২ রাকাআত আদায় করা হয়।
যোহর :– 12 রাকাত ।
প্রথম 4 রাকাত সুন্নাত
পরের 4 রাকাত ফরজ
এরপর 2 রাকাত সুন্নাত
শেষে 2 রাকাত নফল
সালাতুল যোহর শুরু হয় সূর্য মধ্য আসমান থেকে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর। বস্তুর প্রকৃত ছায়া ব্যতীত বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের ওয়াক্ত বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর জোহরের সময় শেষ হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭১৭, ৫০৬, মুসলিম, হাদিস : ৯৬৯)
তবে অন্য মাজহাব মতে, বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে জোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়। তাই এর আগেই জোহরের নামাজ পড়া উত্তম।
সালাতুল আসর । আসরের নামায কয় রাকাত
আসরের নামাজ চার রাকাআত পড়া ফরজ। কেউ কেউ ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত নামাজ পড়ে থাকে।
আছর :– 8 রাকাত ।
প্রথম 4 রাকাত সুন্নাত
পরের 4 রাকাত ফরজ ।
জোহরের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এর সময়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭১৭, ৫৪৫
সালাতুল মাগরিব । মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত
মাগরিবে প্রথমে তিন রাকাত ফরজ এবং পড়ে দুই রাকাত সুন্নত করা হয় । কেউ কেউ সুন্নাতের পর দুই রাকাআত নফল পড়ে থাকে।
মাগরীব :– 7 রাকাত ।
প্রথম 3 রাকাত ফরজ
পরের 2 রাকাত সুন্নাত
এবং 2 রাকাত নফল
এর সময় হলো সূর্যাস্তের পর আকাশ থেকে লালিমা বিদায় নেওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস : ৯৬৯, দারা কুতনি, হাদিস : ১০৬৬)
সালাতুল এশা । এশার নামাজ কয় রাকাত
ইশার নামাজে চার রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। অতপর তিন রাকাআত বিতর।বিতরের সালাত ওয়াজিব। অনেকে ফরজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে থাকে। অনেকে আবার বিতর নামাজের পরে 2 রাকাত নফল নামাজ আদায় করে থাকে।
এশা :– 15 রাকাত ।
প্রথম 4 রাকাত সুন্নাত
পরের 4 রাকাত ফরজ
এরপর 2 রাকাত সুন্নাত
3 রাকাত বিতের
এবং 2 রাকাত নফল
এর সময় হলো আকাশের লালিমা বিদায় নেওয়ার পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস : ৯৬৯, সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৮, ৫৩৮, ৯৬৯)
এশার নামাজের শেষ সময়
এশার নামাজের সময় ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মতামত রয়েছে। তবে সর্বসাকুল্যে যেই মতামতের সারমর্ম আসে তা হচ্ছে, এশার নামাজ মধ্যরাত পর্যন্ত পড়া যায়। তবে মধ্যরাতের পরে এশার নামাজ পড়া মাকরুহ। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি বিশেষ কোনো কারণে মধ্যরাতের আগে এশার নামাজ আদায় করতে পারেনি তবে তিনি মধ্য রাতের পরে নামাজ আদায় করে নেবেন। যিনি এই ভাবে আদায় করবেন তার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফরজ আদায় হয়ে যাবে তবে সেটি মাকরুহ এর সাথে।
কাবলাল জুমা 4 রাকাত সুন্নাত ।
ফরজ 2 রাকাত ।
বায়াদাল জুম্মা 4 রাকাত সুন্নাত ।
নফল বা সুন্নাত 2 রাকাত
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন: যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাক’আত (ফরজ বাদে অতিরিক্ত) নামাজ পড়বে তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরী করা হবে। এই ১২ রাক’আত হলো: যোহর নামাজের আগে ৪, পরে ২ রাক’আত, মাগরিবের নামাজের পরে ২ রাক’আত, ইশা এর নামাজের পরে ২ রাক’আত এবং ফজরের নামাজের আগে ২ রাকাত। – (তিরমিযী ৩৮০, সহীহ আল জামি’ ৬৩৬২, হাদিসটি সহীহ)
ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া: নামাজের যে সব রাকাতে ইমাম মনে মনে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন, যেমন, যোহর ও ‘আসরের নামাজে এবং মাগরিবের নামাজের তৃতীয় রাকাতে, ওইসব রাকাতে মুক্তাদি তথা ইমামের পিছনে যিনি নামাজ পড়েন তাকে অবশ্যই মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে, নাহলে তার নামাজ হবে না [৫]। কিন্তু, যে সব রাকাতে ইমাম স্বশব্দে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন সেই সব রাক’আতে নিজে সূরা ফাতিহা না পড়ে মনোযোগ দিয়ে ইমামের কেরাত শুনলে ও চলবে।
অনেকেই সারা জীবন নামাজ পড়েনি বলে এখন নামাজ পড়া শুরু করতে ভয় পাচ্ছে । তারা ভাবছে যে সব নামাজ পড়া আদায় করে নি তাদের কাযা করতে হবে। হাদিস থেকে এরকম কোন বিধান পাওয়া যাবে না। কেউ যদি তার প্রথম জীবনের বেনামাজি হয়ে থাকে তবে তাকে এখনই নামাজ পড়া শুরু করতে হবে আর আল্লাহ তাআলার কাছে আন্তরিকতার সাথে তওবা করতে হবে। তবে কেউ যদি নিয়মিত নামাজি হওয়ার পর কখনো কোন ওয়াক্ত নামাজ মিস করে ফেলেন তবে তাকে সেই ওয়াক্ত গুলো কাযা আদায় করে নিতে হবে।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
শবে কদরের নামাজের ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট রাকাতের সংখ্যা নেই। মূলত এশার নামাজ আদায় করার পর বিভিন্ন ধরনের ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে রাত্রিযাপন করাই মূল উদ্দেশ্য। সে ক্ষেত্রে আমরা চাইলে সারারাত নামাজ পড়ে কাটাতে পারি অথবা জিকির আজগার কিংবা কোরআন তেলাওয়াত বিভিন্ন ধরনের আমল করতে পারি। শবে কদরের রাতে আল্লাহপাকের আছে এবং খুশি করানোর জন্য আমরা এবাদত এর অন্তর্ভুক্ত যেকোনো ধরনের কাজ বা এবাদত করলে আল্লাহ পাকের ইনশাআল্লাহ খুশি হবেন। তবে নামাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই এবং কোন নির্দিষ্ট রাকাতের কথা বলা নেই। তাই শবে কদরের রাত্রে আমরা নিজেদের মতো করে যত খুশি বেশি বেশি নামাজ আদায় করতে পারব।
তাশাহহুদের সময় তর্জনী তোলা
নামাজের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ রাকাতে বসে বসে তাশাহ্হুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় কেউ কেউ ডান হাতের তর্জনী তুলি, কেউ তুলি না, আবার কেউ শুধু ‘আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় তর্জনী তুলি – এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশিরভাগ মুসলিম দ্বিধার মধ্যে থাকে। সঠিক পদ্ধতি হলো যে, এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ(সা) এর সুন্নত দুই রকম
i) সমস্ত তাশাহুদের সময় ডান হাতের মুঠি প্রায় বন্ধ করে তর্জনী কিবলার দিকে করে স্থির রাখা
ii) সমস্ত তাশাহহুদের সময় ডান হাতের মুঠি প্রায় বন্ধ করে তর্জনী কিবলার দিকে করে স্থির না রেখে অল্প একটু উপরে নিচে করে নাড়তে থাকা।
উল্লেখ্য যে, তর্জনী নাড়ানোর এই পদ্ধতিটিও মুস্তাহাব। অর্থাৎ, কেউ একেবারেই তর্জনী না উঠালে গুনাহগার হবে না, কিন্তু কেউ এটা করলে সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।
মুনাজাত কে নামাজের অংশ মনে করা বিদআত। ফরজ নামাজের পর আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হয়। কিন্তু মুনাজাত কে নামাজের অংশ মনে করা যাবে না।আর নামাজের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত নিয়ে আলেমদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি আছে ।
নামাজ শেষে গুরুত্বপূর্ণ আমল । ফরজ নামাজের পর জিকির সমূহ pdf । ফরজ নামাজের পর তাসবিহ
i) ৩৩ বার সুবহান আল্লাহ্ (আল্লাহ্ মহাপবিত্র) পড়ুন
ii) ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র) পড়ুন
iii) ৩৩ বার আল্লাহু আকবার (আল্লাহ্ সবচাইতে বড়) পড়ুন,
iv) ১ বার পড়ুন – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই ইন ক্বাদির (আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মা’বুদ নাই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নাই। সকল বাদশাহী এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনিই সবকিছুর উপর ক্ষমতাশালী ।)
আমাদের অনেকেরই জানা নাই যে সিজদারত অবস্থায় নিজের ভাষায় দু’আ করা যায়। রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন যে, বান্দা আল্লাহ্র সবচেয়ে কাছে থাকে সিজদারত অবস্থায়, তাই তিনি সিজদায় থাকাকালে বেশী করে দু’আ করতে বলেছেন (সহীহ্ মুসলিম)।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করার তৌফিক দান করুন । আমিন