ডেইরি ফার্ম এর খামার করে মাসে যায় করুন ২লক্ষ্য টাকা!

পড়াশোনা শেষ করে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা গতানুগতিক চাকরি বা ব্যবসার আশায় বসে থাকে। এ সকল চাকরি বা ব্যবসার আশায় না থেকে আমরা যদি নিজেরাই আত্দকর্মসংস্থানের জন্য কিছু গঠনমূলক কাজ করি তাহলে আমাদের ভাগ্যের সঙ্গে সঙ্গে সমাজকেও আমরা কিছু উপহার দিতে পারব। এজন্য দরকার আত্দবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা। সমাজে এমন অনেক ব্যতিক্রমী পেশা রয়েছে যেখানে একটু পরিশ্রম ও চিন্তাভাবনা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সফলতা দরজায় এসে কড়া নাড়বে। আমাদের ক্যারিয়ার পাতায় প্রতিদিনই আমরা চেষ্টা করি কিছু গঠনমূলক প্রজেক্টের ধারণা দিতে। আজকে এরকম একটি প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করা হলো। এটি হলো ডেইরি ফার্ম।

বাংলাদেশে এখন সফল ডেইরি ফার্মের সংখ্যা অনেক। দিন দিন এর চাহিদা ও বাজার বাড়ছে। একদিকে যেমন এ থেকে আদর্শ খাবার হিসেবে দুধ, আমিষের চাহিদা মেটাতে মাংস এবং জ্বালানি হিসেবে গোবর ও জৈব সার পাওয়া যাবে, তেমনি অন্যদিকে এ খাত থেকে বেশ ভালো আয় করাও সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে অল্পবিস্তর জ্ঞান থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিলে।

প্রাথমিক প্রয়োজন : যেকোনো কিছু গড়তে সবার আগে প্রয়োজন প্রাথমিক প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে যে কোনো কাজের সফলতার ও ব্যর্থতা। ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলতে প্রয়োজন আর্থিক সঙ্গতি, অভিজ্ঞতা ও গরুর নিরাপদ আশ্রয়। প্রথমেই বিশাল ফার্ম তৈরিতে হাত না দিয়ে ছোট পরিসরে কাজে হাত দেওয়া ভালো। ৫ থেকে ৬টি গরু নিয়ে যাত্রা করে আস্তে আস্তে ফার্মকে সম্প্রসারণ করাই উত্তম। ২টি গরুর জন্য একজন দক্ষ লোক নিয়োগ করা গেলে ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে লোকটির গরুর যত্ন নেয়ার পূর্বঅভিজ্ঞতা আছে কিনা।

বাছাই প্রক্রিয়া : নিজ এলাকায় বিশেষ করে মফস্বলে গরুর ফার্ম গড়ে তোলাই শ্রেয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন গরুর উন্নত জাত বাছাই। উন্নত জাতের গরু বাছাই না করলে সারা বছর ফার্মে রোগবালাই লেগে থাকবে । ভালো জাতের গরুর পাশাপাশি ফার্মে পর্যাপ্ত ঘাস, খৈল বিচালির ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফার্ম গড়ে তোলার পরপরই দুধ বিক্রির জন্য প্রচারণা চালাতে হবে।

স্থান নির্বাচন : যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো এবং দুধ বিক্রির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এসব এলাকার আশপাশেই ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলা প্রয়োজন। চারপাশে উঁচু দেওয়াল, পরিবেশসম্মত আবাসন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং গরুর বিশ্রাম ও হাঁটাচলার জন্য জায়গা থাকতে হবে। গরুর ওষুধের দোকান, কাঁচা ঘাসের খামার আশপাশে থাকলে ভালো।

খাবার সরবরাহ : ডেইরি ফার্মের জন্য সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে গরুর খাবারের প্রতি। পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন খাবার না পেলে সঠিক পরিমাণ দুধ পাওয়া যায় না। ধানের কুঁড়া, গমের ভুসি, ছোলা, খেসারির খোসা, লবণ, খৈল, নারিকেলের ছোবড়া, ঘাস-বিচালির পর্যাপ্ত সংগ্রহ রাখতে হবে। অনেক সময় বাসি ও পচা খাবার গরুকে সরবরাহ করা হয়। যা কখনোই ঠিক নয়। এতে করে গরুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সবসময়ই খেয়াল রাখতে হবে গরুর খাদ্য যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পুষ্টিমান সম্পন্ন হয়। এ জন্য পচা বা দীর্ঘদিন রাখা এসব পণ্য গরুকে খাওয়ানো উচিত নয়। গাভীর গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন আলাদাভাবে পরিচর্যা করতে হবে। এ সময় স্থানীয় পশু চিকিৎসকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।

আয়-ব্যয় : ডেইরি ফার্ম একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। সঙ্গে সঙ্গেই লাভের আশা করা ভুল। বরং ধীরে সুস্থে এগুলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে। গড়ে এক একটি গরু কিনতে ৩০-৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। এছাড়া যত বেশি গরুর সংখ্যা বাড়বে খরচের খাতও তত কমবে। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান ও কনফেকশনারীর লোকজন সরাসরি ফার্মে এসে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। গড়ে এক একটি গরু থেকে মাসে ৪-৫ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করা সম্ভব। খরচ বাদে এই লাভ একটি পরিবারের জন্য কম নয়।

পরিচর্যা : উন্নত জাতের গাভী ডেইরি ফার্মের জন্য সহায়ক। এ ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ান গাভীর জাত বেছে নেওয়া যেতে পারে। এজন্য পশু খামারি এবং পশু কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়। প্রতিটি গরুর জন্য আলাদা মশারি, ফ্যান, ময়লা পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আলোর জন্য লাইটিং এবং পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও নজর দেওয়া জরুরি।

 

পশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা : দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় পশু চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবেও খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য ছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যুব উন্নয়ন, কৃষিব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকেও প্রশিক্ষিত তরুণরা বিনা জামানতে বেশ মোটা অংকের ঋণ সহায়তা পেতে পারেন। বেকার শিক্ষিত তরুণদের জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার পেশা।

 

তাই নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হই এবং এরকম ডেইরি ফার্ম করে অর্থনৈতি

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *