Blog

সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবেন আপনার জিনিস! জেনে নিন কিভাবে?

1 min read

সরকারের বিভিন্ন বিভাগ বা সরকারি সংস্থাগুলির প্রয়োজনমাফিক পণ্যদ্রব্য বা পরিষেবা ক্রয় করার জন্য সচিবগোষ্ঠীর সুপারিশ মেনে নিয়ে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে একটি স্বতন্ত্র সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের সংস্থাগুলির উন্নয়ন ও বৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যেই সরকার এই ই-মার্কেটপ্লেস চালু করে। আর তাই, আপনি যদি এই প্রতিযোগিতার যুগে নতুন ব্যবসা শুরু  করতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার প্রতিযোগীকে টেক্কা দিতে সম্ভাব্য প্রত্যেকটা উপায় জেনে রাখতেই হবে। আর সরকারের ই-মার্কেটপ্লেস নিশ্চিতভাবেই হতে পারে আপনার তেমনই এক সেরা উপায়।

 

সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস (Government E-Marketplace) আসলে কী?

সংক্ষেপে, Government E-Marketplace (GEM) হল একটা অনলাইন বাজার যেখানে সরকারের তালিকায় নথিভূক্ত ক্রেতারা সরাসরি অনলাইন বিক্রেতাদের থেকে পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারে।

ধরা যাক, আপনি ল্যাপটপ বিক্রি করেন, আর আপনি কোনও সরকারি সংস্থাকে ল্যাপটপ বিক্রি করতে চান। আপনাকে শুধু আপনার পণ্যটিকে সরকারের ই-মার্কেটপ্লেস পোর্টালে গিয়ে নথিভূক্ত করতে হবে। আপনার আবেদন অনুমোদিত হয়ে গেলেই সরকার আপনার থেকে সরাসরি অনলাইনে ল্যাপটপ কিনতে পারে।

এই ই-মার্কেটপ্লেস চালু করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্র ও রাজ্যের অফিসারদের বাজারের সবথেকে ভাল পণ্য বা পরিষেবাটিকে ক্রয় করতে সাহায্য করা। যদিও, এক্ষেত্রে উর্ধসীমা আছে, সরকারের অফিসাররা সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকার জিনিসই কেবল অনলাইনে কিনতে পারেন।

কিন্তু, বিক্রেতা বা এমএসএমই-দের জন্য সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস (জিইএম) ব্যবহারের কি আদৌ লাভ আছে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

বিক্রেতা ও এমএসএমই-দের গভর্মেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস ব্যবহারের সুবিধাগুলি

এটা খোলামেলা এবং পছন্দমতো পরিবর্তশীল

বিক্রেতাদের প্রথমেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, সেটি হল, পণ্য বা পরিষেবার যথাযথ মূল্য-নির্ধারণ। আর যেহেতু এটা একটা খোলা বাজার, এতে আপনার ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’(dynamic pricing) -এর সুযোগ আছে। অর্থাৎ, বাজারের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী দাম ঠিক করতে পারবেন আপনি।

এছাড়াও এই ই-মার্কেটপ্লেসে আপনার ‘ডায়নামিক প্রোডাক্ট লিস্টিং’-এরও সুযোগ আছে। এর অর্থ হল, আপনাকে আপনার মডেল আপগ্রেডেশন বা পরিবর্তনের জন্য সময় ব্যয় করতে হবে না। শুধু বাজারের সবথেকে নতুন পণ্য বা পরিষেবাটিকে তার বৈশিষ্ট্য আর প্রতিযোগিতামূলক দাম অনুযায়ী বিপণন করুন।

কার্যকরী এবং স্বচ্ছ

যেহেতু ক্রয়-বিক্রয়ের পুরো প্রক্রিয়াটিই অনলাইন, তাই এতে খাতায় কলমে হিসেবনিকেষের কোনও বালাই নেই। বিক্রেতারা সরসাররি তাদের পণ্য বা পরিষেবা ক্রেতাকে বিক্রি করতে পারের আর ক্রেতারাও কোনও বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই অনায়াসে তা কিনতে পারে। তাই, সরকারের এই ই-মার্কেটপ্লেস সাধারণ বাজারের থেকে অনেক বেশি কার্যকরীই শুধু নয়, সময় সাশ্রয়কারী এবং স্বচ্ছও।

আর যেহেতু প্রক্রিয়াটির পুরোটাই কোনও মানুষের অংশ্রগ্রহণ ছাড়াই সম্ভব, তাই পুরো প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং মসৃণ।

নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য

বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস বা জেম (GeM) একটা নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম। কারণ, প্রতিটি আর্কাইভেই সব ধাপগুলি ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষ ডিজিটাল স্বাক্ষর করলে তবেই সম্পূর্ণ হয়। এছাড়াও, এই ই-মার্কেটপ্লেস একটা নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ দেয়ই তাই শুধু নয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেমেন্ট পাওয়ারও নিশ্চয়তা দেয়।

নানারকমের পণ্যদ্রব্য বিক্রয়ের সুযোগ

Government E-Marketplace বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রির সুযোগ দেয়। বিক্রেতা হিসেবে আপনি যত সংখ্যক খুশি পণ্য বিক্রির জন্য রাখতে পারেন। অবশ্য একটার বেশি মূল পণ্য উৎপাদনকারীর পণ্য আপনি বিক্রি করতে পারবেন না।

কোন ধরণের ব্যবসায়ীরা সরকারের ই-মার্কেটপ্লেসে নিজেদের বিক্রেতা হিসেবে নথীভূক্ত করতে পারবেন?

যে কোনও ভারতীয় বিক্রেতা যিনি খাঁটি পণ্য উৎপাদন করেন অথবা সঠিক মানের পরিষেবা দেন তিনিই সরকারের ই-মার্কেটপ্লেস পোর্টালে পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করতে পারবেন।

সরকারের ই-মার্কেট পোর্টালে বিক্রেতা হিসবে নথিভূক্ত হতে হলে, আপনাকে নিচের বিষয়-সম্পর্কিত তথ্য দাখিল করতে হবে।

ব্যবসার প্রকৃতি অর্থাৎ, প্রোপ্রাইটরশিপ, পার্টনারশিপ ফার্ম, কোম্পানি, ট্রাস্ট অথবা সোসাইটি, এবং কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকার,

আপনার ব্যবসায়িক সংস্থার নাম,

আধার নম্বর অথবা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত প্যান নম্বর (যিনি ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নের অনুমোদিত স্বাক্ষরকারী),

নথিপত্র, যেমন, কর্পোরেট আইডেনটিটি নম্বর (সিআইএন), প্যান, ডিআইপিপি, ইউএএম ও আইটিআর-এর তথ্যাবলী, ব্যবসার গঠন অনুযায়ী এগুলি বিক্রেতা হিসেবে নথিভূক্তিকরণের জন্য লাগতে পারে,

আপনার ব্যবসায়িক সংস্থার ঠিকানা,

ব্যবসার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য,

চালু ই-মেল আইডি,

বি লিংকটি অনুসরণ করে আপনি সরকারের ই-মার্কেটপ্লেস পোর্টালে নিজের ব্যবসায়িক সংস্থাটিকে নথিভূক্ত করে পণ্য বিক্রয় শুরু করতে পারেন।

সেলার হিসেবে নিজের সংস্থাকে নথিভূক্ত করুন । এছাড়াও এখানে রইল সরকারি ই-মার্কেটপ্লেসে নথিভূক্তিকরণের বিস্তারিত গাইড।

ক্রেতা হিসেবে আপনার ব্যবসার ই-মার্কেট ক্রেতা হি প্লেস পোর্টালে নথিভূক্তিকরণ প্রক্রিয়া 

নীচের পুরো ব্যপারটা খুবই সহজ। উপরের লিঙ্কটি ব্যবহার করে নথিভূক্ত হবার পর আপনাকে একটি ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে যার সাহায্যে আপনি আপনার সেলার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্য বা পরিষেবাটিকে মারকেটপ্লেসে প্রদর্শণ করতে পারবেন।

আপনার ইচ্ছেমতো আপনি আপনার পণ্য বা পরিষেবার দাম ঠিক করতে পারবেন। তবে, এটা খেয়াল রাখবেন, আপনি যে দামই ঠিক করুন, তা যেন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচ যোগ করেই করবেন, যেমন, লজিস্টিক্স, প্যাকিং, কর বা শূল্ক।

সরকারের ই-মার্কেটপ্লেসে পাওয়া অর্ডারের ট্র্যাকিং ও ব্যবস্থাপনা

নথিভূক্তিকরণ হয়ে গেলে সেলার অ্যাকাউন্টের ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে আপনি অর্ডার পেতে থাকবেন। যখনই কেউ কোনও পণ্য বা পরিষেবা কিনতে চেয়ে অর্ডার করবে, আপনি ই-মার্কেটপ্লেস পোর্টালের ম্যানুয়ালে নোটিফিকেশন পাবেন। অর্ডার পাওয়ার পর বিক্রেতা হিসেবে আপনার দায়িত্ব হল পণ্যটিকে ভালোভাবে প্যাক করে নিরাপদে সেটিকে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া। এর জন্য, ই-মার্কেটপ্লেসে লগ-ইন করে নোটিফিকেশন চেক করতে থাকুন।

সরকারের ই-মার্কেটপ্লেসে পেমেন্টের ট্র্যাকিং ও ব্যবস্থাপনা

যেহেতু পেমেন্ট হল এই পুরো প্রক্রিয়াটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই সরকার আপনাকে সঠিক সময়ে পেমেন্ট পাঠিয়ে দেবে। পণ্য বা পরিষেবার জন্য পাওনা টাকা সরকার অনলাইন ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে সরাসরি বিক্রেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবে। অর্ডার পাওয়া এবং তা পৌঁছনোর দশ দিনের মধ্যে পেমেন্ট হয়ে যাবে।

সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নগুলি প্রায়শই করা হয়ে থাকে

আমি একজন নতুন বিক্রেতা এবং আমি গভর্মেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস বিক্রি করার সম্পর্কে বিশদে জানতে চাই?

সরকারের ই-মার্কেটপ্লেস পোর্টালে (জিইএম) কীভাবে বিক্রয় হয় সে সম্পর্কে জানতে এই ভিডিওগুলি দেখুন।

আমি আমার তালিকায় কতসংখ্যক জিনিস যোগ করতে পারি?

কোনও উর্ধসীমা নেই, আপনি চাইলে যতখুশি জিনিস যোগ করতে পারেন।

কীভাবে একটি স্টার্ট-আপ সরকারি ই-মার্কেটপ্লেসে নথিভূক্ত হতে পারে?

নথিভূক্তিকরণের সময় আপনি আপনার বিভিন্ন অপশনের মধ্যে থেকে স্টার্ট-আপ অপশনটি নিতে পারেন। আর তা করলে আপনাকে ডিআইপিপি (DIPP) নম্বর দিতে হবে এবং ডিআইপিপি নম্বরের সাথে সংযুক্ত মোবাইল নম্বরটিও দিতে হবে।

কোনও ছোট ব্যবসায়িক সংস্থার পক্ষে গভর্মেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস পোর্টালে নথিভূক্তিকরণ কতটা লাভদায়ক?

অবশ্যই লাভদায়ক। কারণ, সরকারি ই-মার্কেটপ্লেসে আপনি আপনার পণ্য বা পরিষেবাটিকে প্রদর্শণ করা সুযোগ পাবেন, এবং সহজেই তা বিক্রিও করতে পারবেন। এভাবে বাজারে আপনি আপনার নিজস্ব ব্র্যাণ্ডকেও প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

আমি কি সরকারের ই-মার্কেটপ্লেসে স্টার্ট-আপ ইণ্ডিয়া মিশনের সুবিধাগুলি পাবো?

হ্যাঁ, অবশ্যই।

সরকারের ই-মার্কেটপ্লেসে স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলি মূলত কোন ধরণের সুবিধা পেতে পারে?

আপনি একটা ব্যবসা শুরু করে উদ্যোগপতি হিসেবে হাতেখড়ি দেওয়ার সময় সরকারের ই-মার্কেটপ্লেসে নিজেকে নথিভূক্ত করে এই দুর্দান্ত সুযোগগুলি নিতে পারেনঃ

পূর্ব-অভিজ্ঞতা ও টার্নওভারের অঙ্কের ক্ষেত্রে শিথিলতা

অগ্রিম টাকা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড়

খুব সহজেই নিজের পণ্যকে সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে প্রদর্শণ করতে পারার সুযোগ

সবশেষে

যদি আপনি ইতোমধ্যেই একটি স্টার্ট-আপের মালিক হন অথবা স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে একটি স্টার্ট-আপ শুরু করতে চান, তাহলে সেটিকে সরকারি ই-মার্কেটপ্লেসে এখনই নথিভূক্ত করে নেওয়া খুবই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এটা আপনার ব্যবসাকে শুরুতেই অনেকটা এগিয়ে দেবে। শুধু আপনাকে আপনার ব্যবসাটিকে নথিভূক্ত করতে হবে, ডিআইপিপি নম্বর দিতে হবে আর তাহলেই আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের দরজায়।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x