৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা: ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর (PDF)
৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায় : প্রাতঃকাল থেকে রাত্রিকাল পর্যন্ত প্রতিদিনের অবশ্য করণীয় কাজকে নিত্যকর্ম বলে। নিত্যকর্ম ছয় প্রকার- প্রাতঃকৃত্য, পূরবানতকৃত্য, মধ্যাহুকৃত্য, অপরান্নকৃত্য, সায়াহুকৃত্য ও নৈশকৃত্য। এ সমস্ত কর্মের মাধ্যমে আমাদের শরীর ও মন শাস্ত, পবিত্র, নির্মল, কর্ণঠ ও উত্তম ভাবনায় পরিপূর্ণ থাকে।
আমাদের এই দেহ-মনকে সুস্থ রাখতে সাধনার প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন নিয়মিত যোগাসন অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং দেহকে শক্তিশালী ও রোগমুক্ত রাখতে এবং চাঞ্চল্য দূর করতে সুখাসন, শলভাসন, পশ্চিমোস্তানাসন অনুশীলনের উপকারিতা অনস্থীকার্য। এই অধ্যায়ে নিত্যকর্সসমূহ ও যোগাসন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায়
১. সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সুজনের শারীরিক গঠন খর্বাকৃতি স্থূল। কিন্তু এ বয়সে মোটা হওয়ায় সুজনের বিভিন্ন কর্মে অসঙ্গতি দেখা দেয়। সুজনের মা-বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে যোগাসন অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন। সুজন ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলে অনেক উপকার পেয়েছে।
ক. কখন ঘুম থেকে উঠতে হবে?
খ. সায়াহ্নকৃত্যের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
গ. সুজন কোন যোগাসনটি নিয়মিত অনুশীলন করে সুফল পেয়েছে? উক্ত আসনটির অনুশীলন পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘সুজনের অনুশীলনকৃত আসনটির উপকারিতা বহুমুখী’Ñ বিশ্লেষণ কর।
২. জবা সূর্যোদয়ের কিছু আগে ঘুম থেকে উঠে সূর্যকে প্রণাম করার পর পিতা-মাতাকে প্রণাম করে হাত-মুখ ধুয়ে স্নান সেরে জামাকাপড় পরিধান করে। প্রাতঃকৃত্যের পর কর্মস্থলে যায়। সেখানে মধ্যাহ্নভোজন সেরে বিশ্রাম করে। কর্মস্থল থেকে ফিরে বিকালে ভ্রমণে বের হয়। সন্ধ্যাকালে বাসায় ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে ঈশ্বরের স্তব করে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে রাতের আহার শেষ করে রাতে ঘুমাতে যায়। [ পাঠ- ১, ২, ৩ ও ৪ ]
ক. নিত্যকর্ম কত প্রকার?
খ. শলভাসনের উপকারিতা বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকের জবার দৈনিক কর্মসমূহকে কী বলে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর জবার উক্ত কর্মসমূহ দেহ ও মনকে সুস্থ রেখে সাধনযোগ্য করে তোলে? মতামত দাও।
৩. কৌশিক আজ কয়েকদিন যাবৎ কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছে। ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। তার স্ত্রী তাকে একজন ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে একটি আসন করার পরামর্শ দেন। কৌশিক আসনটি ঠিকমতো করলে তার কোমরও মেরুদণ্ডের ব্যথাসহ আরও অনেক রোগ ভালো হয়। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ। [ পাঠ-৫ ও ৬ ]
ক. ত্রিপুরান্তকারী কে?
খ. মধ্যাহ্নকৃত্য বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে ডাক্তার কৌশিককে কোন আসনটি করার পরামর্শ দিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শরীর ও মনের ওপর উক্ত আসনের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ মুরারি কে?
উত্তর : কৃষ্ণের আরেক নাম মুরারি।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ সাধনার পূর্বশর্ত কী?
উত্তর : দেহ ও মনকে সুস্থ রাখা।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ প্রাতঃকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত সময় কালকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়?
উত্তর : ছয় ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ ধর্মগ্রন্থে কী রয়েছে?
উত্তর : মন্ত্র বা শ্লোক।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ পূর্বাহ্ণকৃত্যে কী করতে হয়?
উত্তর : পূর্বাহ্ণকৃত্যে প্রার্থনা, উপাসনা ও পূজা করতে হয়।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ মধ্যাহ্ণকৃত্য কী?
উত্তর : পূর্বাহ্ণের পর এবং অপরাহ্ণের পূর্ব পর্যন্ত যে কাজ করা হয়, তাই মধ্যাহ্ণকৃত্য।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ অতিথির সেবা করলে কী করা হয়?
উত্তর : ঈশ্বরের সেবা করা হয়।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ নিত্যকর্ম বলতে কী বুঝ?
উত্তর : হিন্দুধর্মানুসারে প্রাতঃকাল থেকে রাত্রিকাল পর্যন্ত প্রতিদিনের অবশ্য করণীয় কাজকে নিত্যকর্ম বলে। এ নিত্যকর্ম ছয় প্রকার। যথা : প্রাতঃকৃত্য, পূর্বাহ্ণকৃত্য, মধ্যাহ্নকৃত্য, অপরাহ্ণকৃত্য, সায়াহ্নকৃত্য ও রাত্রিকৃত্য। এসব কর্মের আচরণের মাধ্যমে আমাদের শরীর ও মন শান্ত, পবিত্র, নির্মল, কর্মঠ ও উত্তম ভাবনায় পরিপূর্ণ থাকে।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ পূর্বাহ্ণকৃত্যের কাজ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : প্রাতঃকৃত্যের পরে এবং মধ্যাহ্ন বা দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত যে সকল কাজ করা হয়, তাই পূর্বাহ্ণকৃত্যে। এই সময়ে প্রার্থনা, উপাসনা ও পূজা করতে হয়। এই কাজ প্রতিদিন পরিবারের সবারই পালন করা উচিত।
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ প্রাতঃকৃত্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : প্রাতঃকৃত্য হলো দিনের শুরুতে করা কৃত্য। এ কৃত্য সম্পাদনের মাধ্যমে আমাদের দিনের শুরু হয়। যথাযথভাবে এ কৃত্য সম্পাদন করতে পারলে ঈশ্বর আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হন। আমাদের কৃপা করেন। তাঁর কৃপায় আমাদের সারাদিনের সকল কাজ নিরাপদ ও সুন্দর হয়। তাই এ কৃত্যের গুরুত্ব অনেক।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ পূর্বাহ্ণকৃত্যের করণীয়গুলো কী?
উত্তর : প্রার্থনা, উপাসনা ও পূজা পূর্বাহ্ণকৃত্য। প্রাতঃকৃত্যের পরে এবং মধ্যাহ্ন বা দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে যে সকল কাজ করা হয়, তাই পূর্বাহ্ণকৃত্য। প্রার্থনা, উপাসনা, পূজা পরিবারের সবাই মিলে করা উচিত। এরপর দিনের অন্যান্য কাজকর্ম যেমন আহার করা, কর্মস্থলে যাওয়া, গৃহস্থালির কাজকর্ম করা, অধ্যয়ন বা বিদ্যালয়ে যাওয়া ইত্যাদি করতে হয়।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ শরীর-মনের ওপর পশ্চিমোত্তানাসন নিয়মিত অনুশীলনের প্রভাব চিহ্নিত কর।
উত্তর : পশ্চিমোত্তানাসন নিয়মিত অনুশীলন করলে শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ আসনে হাঁটুর পিছন দিকের পেশি এবং পেটের রোগ সারে। হজমশক্তি ও ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। কোমরের ব্যথা, বাত ইত্যাদি রোগ নিরাময় সম্ভব হয়। সংযম শক্তি বৃদ্ধি পায়। ধৈর্য বাড়ে। এ আসনে মনের অস্থিরতা, চঞ্চলতা ও উদ্যমহীনতা নিবারণ করে। সর্বোপরি শরীরে সুস্থতার কারণে মনের প্রশান্তি ফিরে আসে। শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে। আমরা নিয়মিত এ আসন করব এবং সুস্থ থাকব।
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ নিত্যকর্মসমূহ উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নিচে নিত্যকর্মসমূহের উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দেয়া হলো :
১. প্রাতঃকৃত্য : সূর্যোদয়ের আগে উঠে পূর্ব বা উত্তরমুখী হয়ে ঈশ্বরের স্মরণে মন্ত্র পাঠ করা। ঘরের বাইরে এসে সূর্যকে স্মরণ করে প্রণাম করা, পৃথিবীকে প্রণাম করা, পিতামাতাকে প্রণাম করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া।
২. পূর্বাহ্ণকৃত্য : প্রাতঃকৃত্যের পরে এবং মধ্যাহ্ন বা দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত এ কাজ করা হয়। এই সময়ে প্রার্থনা, উপাসনা ও পূজা করতে হয়। এছাড়া আহার করা, অধ্যায়ন করা বা বিদ্যালয়ে যাওয়া বা ঘরের কাজ এ সময়ে করতে হয়।
৩. মধ্যাহ্নকৃত্য : দুপুরে খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম, অতিথি আপ্যায়ন এসব এ সময়ের কাজ।
৪. অপরাহ্ণকৃত্য : সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত অপরাহ্ণকাল। বিকেলে ভ্রমণ, খেলাধুলা করা এ সময়ের কাজ।
৫. সায়াহ্নকৃত্য : সন্ধ্যায় দেব-দেবীর স্তুতি করা, উপাসনা করা এ সময়ের কাজ।
৬. নৈশ্যকৃত্য : সন্ধ্যার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সময়ের কাজ হলো নৈশ্যকৃত্য। এ সময়ে অধ্যয়ন এবং রাতের আহার গ্রহণ করা হয়।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ কীভাবে শলভাসন অনুশীলন করবে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শলভাসন অনুশীলন করতে হলে প্রথমে মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। দু’হাত সোজা করে দু’পাশে রাখতে হবে। হাত ও পায়ের আঙুলগুলো ও পা দুটোও লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করতে হবে। পা দুটো মিলিত অবস্থাতেই সোজা করে উপরের দিকে দেড় থেকে দু’হাত ওঠাতে হবে। এভাবেই ২০-৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে। এ আসনটি এভাবেই ৪-৫ বার করে প্রতিবার শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ শরীর-মনের ওপর শলভাসনের নিয়মিত অনুশীলনের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শলভাসন শরীর ও মনের উপর উপকারী প্রভাব ফেলে। কোমর ও অন্য যে কোনো ব্যথায় এ আসন ফলপ্রসূ। এ আসন মেরুদণ্ড শক্তিশালী করে। তলপেট ও পিঠের মেদ কমাতে সহায়তা করে। হৃৎপিণ্ডকে সচল রাখে। ঊরু ও কোমরের পেশির গঠন সুন্দর করে। বাত, ক্ষুধামন্দা, অজীর্ণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিক, পেটফাঁপা, হজমে গোলমাল, কোলকুঁজো ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ ফল দেয়।