রোজা

রমজানের প্রস্তুতি | রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন

1 min read

রমজানের প্রস্তুতি | রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি | রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি | রমজানের প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন দেখে নিন-

রমজানের প্রস্তুতি নিবেন কিভাবে দেখুন- রমজান মাসের রোজা আসার আগে এর পূর্ব প্রস্তুতি নেয়াটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা এই পোস্টির মাধ্যমে জেনে নেব কিভাবে সঠিকভাবে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুতি নেয়া যায় সে বিষয় নিয়ে।

রমজান আসার আগে প্রস্তুতি মানে খাবারের বিশাল সমাহার সংগ্রহের প্রস্তুতি নয়; বরং আত্মিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করাই মূল বিষয়। দুঃখজন হলেও সত্য মানুষ আত্মিক প্রস্তুতি বাদ দিয়ে খাবারের আয়োজনের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ে।

মুমিন মুসলমানের  জন্য জরুরি হলো রমজানের যাবতীয় কল্যাণ পেতে হলে এখন থেকেই পরিপূর্ণ আত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। হজরত মুয়াল্লা ইবনে ফজল রাহমাতু্ল্লাহি আলাইহি নামে এক বিখ্যাত তাবেয়ী বলেন-

‘সালাফে সালেহিনগণ রমজানের ৬ মাস আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করেন। আর রমজান শেষে তারা বাকি ৬ মাস দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! রমজানে যা আমল করেছি; তা আপনি কবুল করে নিন।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো বান্দা যে কোনো ভালো কাজ বা আমল যদি যথাযথভাবে উত্তম উপায়ে করে; তবে সে আমল বা কাজ আল্লাহ তাআলা পছন্দীয় হিসেবে গ্রহণ করেন।’ (তাবারানি)

রমজানের প্রস্তুতি শাইখ আহমাদুল্লাহ

মাহে রমজানের ১৫ টি পূর্ব প্রস্তুতি

  1. তাওবাহ-ইসতেগফার করা
  2. রমজান পাবার আশা এবং নিয়ত করা
  3. রমজানের সব উপকারিতা স্মরণ করা
  4. খারাপ অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা
  5. মানসিক প্রতিজ্ঞা নেওয়া
  6. কাজা রোজা আদায় করা
  7. সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করা
  8. ফরজ রোজার নিয়ম-কানুন জেনে নেয়া
  9. বিগত রমজানের অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা
  10. রমজানের মাসয়ালা গুলো পুনরায় দেখে নেয়া
  11. শাবান মাসজুড়ে রমজানের মহড়া চালু রাখা
  12.  রমজানের ২৪ ঘণ্টার রুটিন করা
  13.  রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করা
  14. বেশি বেশি দান সদকা করা
  15.  বেশি বেশি দোয়া করা

 

রমজানের প্রথম প্রস্তুতি: আল্লাহর কাছে তাওবাহ-ইসতেগফার করা

তাওবাহ-ইসতেগফার বা অন্যায় কাজ থেকে ফিরে আসা বা মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া রমজানের প্রথম প্রস্তুতি। রমজান মাস আসার আগেই আমাদের আল্লাহর কাছে পিছনের সমস্ত গুনাহর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চাইলে, তিনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন- তাহলে পবিত্র মাহে রমযানে নতুন করে আমরা আমাদের জীবনটাকে নেক আমল দিয়ে সাজাতে পারবো ইনশাআল্লাহ!

রমজান মাসে আল্লাহতায়ালা শয়তানকে বন্দি করে রাখেন। তাই এই সময়ে আমাদের ঈমানকে আরো শক্ত মুজবুত করতে আগে থেকেই আল্লাহর কাছে তাওবাহ-ইসতেগফার করবো। এতে করে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে নেককার মুমিন হবার তাওফিক দিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ!

এর জন্য আমাদেরকে বেশি বেশি নিন্মের বাক্যটিকে পাঠ করতে হবে,

– اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ : আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন।

রমজানের দ্বিতীয় প্রস্তুতি: রমজান পাবার আশা এবং নিয়ত করা

আল্লাহতায়ালা বান্দার তাকওয়া দেখেন আমাদেরকে রমজান পাবার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে। হয়তো বুঝতে পারছেন যে আর কিছুদিন পরেই পবিত্র মাহে রামাদান শুরু হবে। কিন্তু কে জানে এই রমজানের রোজা রাখা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলো করা আপনার আমার নসিবে আছে কিনা।

রমজান মাস বরকতময় মাস গুনাহ মাফ করে আল্লাহতালার নৈকট্য লাভের মাস। তাই মহান আল্লাহর কাছে আমাদের এই মাস পাবার জন্য দোয়া করতে হবে। এবং এই মাসের ৩০/২৯ টি রোজা পালনসহ, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলো পালন করার নিয়ত করতে হবে।

মাস রমজান আসতেছে, মানসিকভাবে বারবার এ কথার স্মরণ ও নেক আমলের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে এ দোয়াটি বেশি বেশি করা-

– اَللَّهُمَّ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ : আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।’

‘সালাফে সালেহিনগণ রমজানের ৬ মাস আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করেন। আর রমজান শেষে তারা বাকি ৬ মাস দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! রমজানে যা আমল করেছি; তা আপনি কবুল করে নিন।’

রমজানের তৃতীয় প্রস্তুতি: রমজানের সব উপকারিতা স্মরণ করা

আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালাই পবিত্র কুরআনে বলেছে যে রামাদান একটি পবিত্র এবং বরকতময় মাস।

মহান আল্লাহতায়ালা কুরআনে এই মাসের অনেক বারাকাতের কথা বলেছেন এবং আমাদের প্রিয় নবী (স) এই মাসের অনেক ফজিলত মর্যাদা ও উপকারিতার কথা বর্ণনা করেছেন।

বরকতময় মাস রমজান সম্পর্কে কুরআন-সুন্নায় যেসব ফজিলত মর্যাদা ও উপকারিতার বর্ণনা রয়েছে, রমজান শুরু হওয়ার আগেই সেসব সম্পর্কে জেনে নেয়া। সেসব উপকার পেতে কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার প্রস্তুতি নেয়া।

রমজানের চতুর্থ প্রস্তুতি: খারাপ অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা

আমাদের অনেক ভাইবোনদের মাঝেই অনেক বদ অভ্যাস রয়েছে ।পবিত্র মাহে রামাদান আসার আগেই আমরা আমাদের এই সকল খারাব বদ অভ্যাস ত্যাগ করবো ইনশাআল্লাহ! আর নিয়ত করবো যেন আর কখনো এগুলো (হারাম কাজ) না করি। তাহলে আল্লাহ্তায়ালা হয়তো আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ!

রমজানের পঞ্চম প্রস্তুতি: মানসিক প্রতিজ্ঞা নেওয়া

পবিত্র মাহে রমজানের রোজা পালনসহ অন্যান্য সকল ইবাদত পালনের জন্য আগে থেকেই মানুষিক ভাবে প্রস্তুতি নেয়াটা খুবই জরুরী এবং প্রয়োজনীয়ও বটে।

রমজান মাসে পরিপূর্ণ সাওয়াব ও ক্ষমা পেতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। জীবনভর যত গোনাহ করেছি এ রমজানে সেসব গোনাহ বা অন্যায় থেকে পরিপূর্ণ ক্ষমা পেতে হবে। সবচেয়ে বেশি সাওয়াব পেতে হবে। রমজান শুরু হওয়ার আগে এ প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা জরুরি।

আফসোসের বিষয়- অনেক সময় পূর্ব প্রস্তুতি না থাকার কারণে রমজান পেয়েও মুমিন মুসলমান পরিপূর্ণ সাওয়াব ও ক্ষমা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।

প্রতিজ্ঞা এমনভাবে করা যে, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা নিজের কাজ যেমনই হোক, আমি আমার বিগত জীবনের সব গোনাহ থেকে নিজেকে মাফ করিয়ে নেব। আমার প্রতি আল্লাহকে রাজি-খুশি করিয়েই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।

রমজানের প্রস্তুতি ৬: কাজা রোজা আদায় করা

কাযা রোযা আদায় করার মাধ্যমে আমরা আমাদের রোজার প্রস্তুতি নিতে পারি- বিশেষ করে রমজান শুরু হওয়ার আগে বিগত জীবনে অসুস্থ হওয়ার কারণে বা সফরের কারণে রমজানের ফরজ রোজা কাজা হয়ে থাকলে তা যথাযথভাবে আদায় করে নেয়া।

মা-বোনদের ভাঙতি রোজা থাকতে পারে। তাই রমজানের আগে শাবান মাসের এ সময়ে কাজ রোজা আদায় করে নেয়া। এতে দুইটি ভালো আমল বাস্তবায়িত হবে-

প্রথমটি : বিগত জীবনের কাজা রোজা আদায় হবে। রমজানের রোজা পালনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

দ্বিতীয়টি : সুন্নাতের অনুসরণ হবে। রমজানের আগের মাস শাবানে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে। কাজা রোজা আদায় করার মাধ্যমে সুন্নাতের অনুসরণও হয়ে যাবে।

রমজানের সপ্তম প্রস্তুতি: সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করা

রমজান মাস অনেক বেশি রহমতের মাস। এই মাসে আল্লাহতায়ালা শয়তানকে বন্দি করে রাখেন। এবং কবরবাসীদের সমস্ত প্রকার আজাব বন্ধ করে রাখেন। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে অনেক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

তবে এ সাধারণ ক্ষমা সবার ভাগ্যে জুটে না। কেননা এ ক্ষমা পেতে হলে দুইটি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্ষমা প্রার্থনা করে এই দুইটি কাজ থেকে ফিরে আসতে হবে। তাহলো-

১ম শিরক থেকে মুক্ত থাকা: আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক না করা। কেউ ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়, ছোট বা বড় শিরক করে থাকলে রমজান আসার আগেই তা থেকে তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে ফিরে আসা।

২য় হিংসা থেকে মুক্ত থাকা: কারো প্রতি কোনো বিষয়ে হিংসা না করা। কারণ হিংসা মানুসের সব নেক আমলকে সেভাবে জালিয়ে দেয়; যেভাবে আগুন কাঠকে জালিয়ে দেয়। তাই হিংসা পরিহার করে মনকে ক্ষমা লাভে স্বচ্ছ রাখা।

রমজানের প্রস্তুতি ৮: রোজার নিয়ম-কানুন জানা

রমজান মাস আসার আগে রোজা পালনের মাসআলা-মাসায়েল তথা নিয়ম-কানুনগুলো ভালোভাবে জেনে নেয়া জরুরি। যেমন: রোজার নিয়ত, ইফতারের দোয়া, ইফতারের নিয়ত, সেহরির নিয়ত, সেহরির দোয়া, রোজা ভঙ্গের কারণ, রমজানের সময়সূচি ২০২২ ইত্যাদি।

এতে করে রমজানের রোজা নষ্ট হওয়া থেকে বা মাকরূহ হওয়া থেকে বা অন্যান্য বিষয়গুলো থেকে নিরাপদে থাকা যাবে।

রমজানের নবম প্রস্তুতি: বিগত রমজানের অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা

পবিত্র মাহে রামাদান পেয়েও আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন কারণে অকারণে এই সময়ের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আমলে গাফলতি হয়ে যায়। তাই রমজান মাস আসার আগেই বিগত রমজানে যে সকল নেক আমলগুলো করা হয়নি তা করতে না পারার কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। যেমন-

  • কেন নিয়মিত কুরআন অধ্যয়ন করা হয়নি?
  • কেন তারাবিহ পড়া হয়নি?
  • কেন দান-সহযোগিতা করা হয়নি?
  • কেন ইতেকাফ করা হয়নি?
  • কেন রোজাদারকে ইফতার করানো হয়নি?
  • কেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের স্ঙ্গে আদায় করা সম্ভব হয়নি?
  • কেন কুরআন-সুন্নার আলোচনায় বসা হয়নি?
  • কেন রমজানের পরিবারের লোকদের হক আদায় করা হয়নি?
  • কেন রমজানের পাড়া-প্রতিবেশি বা আত্মীয়দের হক আদায় করা হয়নি?

এইভাবে এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে নেয়া। এ বছর রমজান আসার আগে আগে চিহ্নিত কারণগুলো থেকে নিজেকে বিরত রেখে কিংবা প্রস্তুতি গ্রহণ করে কল্যাণকর সব নেক আমলগুলো করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

রমজানের দশম প্রস্তুতি: রমজানের মাসয়ালা গুলো পুনরায় দেখে নেয়া

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না, যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয়, যেসব কারণে রোজা কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব, মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তির রোজা ইত্যাদি আরো অনেক কিছু রমজানের এই সকল জরুরি মাসয়ালা-মাসায়েল রমজান আসার আগেই ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।

রমজানের প্রস্তুতি ১১: শাবান মাসজুড়ে রমজানের মহড়া চালু রাখা

রমজান মাসের বেশি বেশি ইবাদত করতে এবং রোজা রাখার জন্য শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। নফল নামাজ পড়া। তাওবাহ-ইসতেগফার করা। ত্যাগের মানসিকতা তৈরি করা। দান-সাদকাহ করা। এই সকল বিষয়ের প্রস্তুতি এখন থেকেই গ্রহণ করতে হবে।

রমজানের দ্বাদশ প্রস্তুতি: রমজানের ২৪ ঘণ্টার রুটিন করা

রুটিন মোতাবেক কাজ করা সব ক্ষেত্রেই অনেক ভালো ফলাফল বয়ে আনে। তাই আমাদের রমজান মাসের ২৪ ঘন্টার একটি সুন্দর রুটিন তৈরি করতে হবে। রমজান মাসজুড়ে যে যেই কাজেই থাকুক না কেন, পুরো সময়টি কোন কোন কাজে কীভাবে ব্যয় হবে তার একটি সম্ভাব্য রুটিন তৈরি করে নেয়াই ভালো।

আগাম রুটিন থাকলে রমজানে চরম ব্যস্ততার মাঝেও নেক আমলসহ অন্যান্য কাজগুলোও ইবাদতের মধ্যেই কেটে যাবে। এক কথায় সব কাজের তালিকা করে নেয়া। বিশেষ করে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আমাদের রুটিনে যেনো আমল করার সময় সব থেকে বেশি জায়গা পায়!

রমজানের প্রস্তুতি ১৩: রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করা

আমরা জেনেছি যে শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় চাঁদের অনুসন্ধান করা সুন্নাত। মুছে যাওয়ার পথে থাকা এ সুন্নাতটিকে আবারও জীবিত করার পূর্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

বর্তমান সময়ে চাঁদ দেখা (হেলাল) কমিটির দিকে তাকিয়ে থাকা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আবার অনেকে মোবাইল বা রেডিও টিভির সংবাদের অপেক্ষা করেন। এতে চাঁদ দেখা এবং দোয়া পড়ার সুন্নাতটি থেকে বঞ্চিত হয় মুসলমানরা। তা থেকে বেরিয়ে এসে চাঁদ অনুসন্ধান করার সুন্নাতটি জীবিত করার সর্বাত্মক পূর্ব প্রস্তুতি রাখা।

যারা রহমতের মাস রমজানের নতুন চাঁদ দেখবে তারা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পড়া সেই দোয়াটিও পড়বে। যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা রয়েছে।

হাদিসে এসেছে-

হজরত তালহা ইবনু ওবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন-

اَللهُ اَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَ الْاِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَ الْاِسْلَامِ وَ التَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَ تَرْضَى رَبُّنَا وَ رَبُّكَ الله

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস্সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তাওফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

– রমজানের চাঁদ দেখার খবর শুনেই হৃদয়ের গভীর থেকে আল্লাহর কাছে মুমিনের আকুতিভরা প্রার্থনা হবে এমন-

اللَّهُمَّ سَلِّمْنِي لرمضان، وسلم رمضان لي، وتسلمه مني مُتَقَبَّلاً

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিমনি লিরমাদান, ওয়া সাল্লিম রামাদানা লি, ওয়া তাসলিমাহু মিন্নি মুতাক্বাব্বিলা।’ (তাবারানি)

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে শান্তিময় রমজান দান করুন। রমজানকে আমার জন্য শান্তিময় করুন। জন্য রমজানকে শান্তিময় করে দিন। রমজানের শান্তিও আমার জন্য কবুল করুন।

রমজানের প্রস্তুতি ১৪: বেশি বেশি দান সদকা করা

রমজান মাসে মহান খোদাতায়ালা প্রতিটি নফল কাজের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন। সে হিসাবে রমজানে এক টাকা দান করে ৭০ টাকা দানের সওয়াব লাভ করা সম্ভব। এ জন্য প্রত্যেক রোজাদারের উচিত নিজের সাধ্য অনুযাযী অনাথ, আর্ত, সহায়-সম্বলহীন ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দানের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করো, নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর তোমরা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন’ (আল কুরআন)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা মানব সন্তানকে লক্ষ্য করে বলেন, তুমি দান করো, তাহলে তোমার জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) দান করা হবে।’

আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.)-এর চেয়ে বেশি দানশীল আমি আর কাউকে দেখিনি’ (মুসলিম)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম।’ আর মাহে রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি।

রসুল (সা.) তার উম্মতদের শিক্ষা দিয়েছেন, রমজান মাসে দান ও বদান্যতার হাত সম্প্রসারিত করতে। হাদিসে রমজান মাসকে হামদর্দি বা ‘সহানুভূতির মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

রোজা ফরজ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট অনুভব করা। যারা প্রাচুর্যের মাঝে জীবনযাপন করেন তারা সারাবছর ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা না বুঝলেও রমজানে কিছুটা বোঝেন। এই বোঝা তখনই সার্থক হবে যখন তারা গরিব-অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।

রমজানের প্রস্তুতি ১৫: বেশি বেশি দোয়া করা

রমজানের আগে আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করা। হে আল্লাহ! আমি যতই চেষ্টা করি, তোমার তাওফিক বা ইচ্ছা না থাকলে আমি যেমন রমজান পাবো না। আবার রমজান পেলেও রবকত লাভে সক্ষম হবো না। সুতরাং রমজান ও রমজানের নেক আমল করার তোমার কাছে চাই।

হে আল্লাহ! রমজানে যত মানুষ সৌভাগ্যবানদের কাতারে নাম লেখাবে, তাদের কাতারে আমাকেও শামিল করো; হে রাব্বুল আলামিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের আগে উল্লেখিত ১৫টি প্রস্তুতি যথাযথভাবে আগাম নিজেদের জীবনে বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x