রোজার নিয়ত এবং দোয়া বাংলা ও আরবি অর্থসহ

রোজার নিয়ত। রোজার দোয়া এবং নিয়ত বাংলা এবং আরবি অর্থসহ নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান-

রোজার নিয়ত

রমজানের রোজা রাখা যেমন ফরজ তেমনি রোজার জন্য নিয়ত করাও ফরজ। রোজা বা সিয়াম মুসলমানদের জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রত্যেক সবল মুসলিম নর-নারীর জন্য রমজানের রোজা পালন করা ফরজ মানে বাধতামূলক। রমজানের রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত না করলে রোজা শুদ্ধ হবে না। নীচে রোজার নিয়ত আরবি এবং বাংলা দুই ভাবেই দেয়া হয়েছে।

রোজার নিয়ত বাংলা

রোজা রাখার নিয়ত আরবিতে বা বাংলা উচ্চারণ আপনি যেভাবেই করেন না কেন রোজা রাখার পূর্বে রোজা রাখার নিয়ত করা জরুরি। তবে এটা জরুরী নয় যে আপনাকে আরবীতে নিয়ত করতে হবে।  আপনি নিজের ভাষায় ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন তাতে কোন সমস্যা নেই। রোজা রাখার নিয়ত সম্পূর্ণ বাংলা অর্থ সরকারের নিচে বর্ণনা করা হলো-

বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ

বাংলা উচ্চারন: নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

রোজার নিয়ত আরবি

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

রোজার নিয়ত ছবিসহ আরবি ও বাংলা উচ্চারন রোজার নিয়ত ছবি

রোজার কাফফারা

কাফফারা তিনভাবে আদায় করা যায়। একটি গোলাম আজাদ করা বা দাস মুক্ত করা, ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে তৃপ্তিসহকারে আহার করানো এবং ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা পালন করা। কাজা রোজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা, আর কাফফারা হলো ৬০টি।

রোজার ফজিলত

রমজান সম্পর্কে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সাহাবাদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করে দিতেন যে, তোমাদের দরজা বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এরপর রাসুল সাঃ কুরআনে ঘোষণা করে দিয়েছেন এ মাসের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে। আর সেটি  ফজিলত হচ্ছে- হে ঈমানদারগণ। তোমাদের উপর রোজা রাখা ফরজ হয়েছে যেভাবে তোমাদের পূর্বপুরুষরা রোজা রেখে এসেছে এবং তাদের উপরে রোজা ফরজ হয়েছিল। আর এভাবে তোমরা মুত্তাকী হতে পারবে।

রমজান মাসের অন্যান্য ফজিলত সমুহ হচ্ছে-

  1. রোজা পালন করা তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ
  2. পবিত্র আল কোরআন পাঠ করলে বেশি সওয়াব ( কারণ এই রমজান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছিল)
  3. রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়
  4. রমজান মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়
  5. শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়
  6. লাইলাতুল কদর অর্থাৎ শবে কদর পালন করা হয়
  7. দোয়া কবুল হওয়ার মাস
  8. জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস
  9. মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট হতে ক্ষমা পাওয়ার মাস
  10. সৎকাজের প্রতিদান বহুগুণে বেড়ে যায়
  11. রোজাদারদের সম্মান দেয়া হয়
  12. হজের সওয়াব পাওয়া যায় ইত্যাদি

নফল রোজার নিয়ত

নিয়ত মানে হচ্ছে আপনার মনের ইচ্ছাটা। ফরয, নফল কোন রোযার জন্যই মুখে মুখে নিয়ত করতে হয় না। নিয়ত মনে মনে করতে হয়। আর এটা মানুষের মনে তখনই হয়ে যায় যখন মানুষ কোন কাজের ইচ্ছা পোষণ করেন। যেমন : ধরুন আপনি আগামীকাল দশটার বাসে ঢাকায় যাবেন। এটা বাস্তবায়ন করার জন্য কি আপনাকে সেটা বিশেষ বাক্যের মাধ্যমে নিজের মনকে জানাতে হয়? কখনই না।

অনুরূপভাবে রোযার জন্য ” নাওয়াইতু আন আসুমা গাদান ” ইত্যাদি কোন আনুষ্ঠানিক নিয়তের প্রয়োজন নেই । সচেতনভাবে সজ্ঞানে কাজ করলে নিয়ত আপনা আপনিই হয়ে যায়।

আপনি বিরিয়ানি খেতে চাইলে কিন্তু কখনো বলেন না, “আপনি এখন প্লেটে নিয়ে আরাম করে বসে গরম গরম কাচ্চি বিরিয়ানি খাব, এই আমি শুরু করলাম! গপ গপ গপ…”, বরং আপনি কিনে আনেন কিংবা রান্না করে খান। ওইযে শুরুতে আপনার বিরিয়ানি খাবার ইচ্ছা মনের মধ্যে জেগেছিল, এই জিনিসটার নামই হল নিয়ত বা ইচ্ছা।

এখন চলুন দেখি ইবাদতের জন্য নিয়ত কেন গুরুত্বপুর্ণ?

আপনি কেন রোজা রাখছেন সেটাই আপনার নিয়ত বা উদ্দেশ্য। আমরা, মুসলিমরা রোজা রাখি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আবার অনেকে রাখতে পারে লোক দেখাতে কিংবা ওজন কমাতে। আপনি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেই (আপনার হৃদয়ে) আপনার রোজার নিয়ত(বিশুদ্ধ) হয়ে গেল। আল্লাহ তায়ালা এটাই চান যেন আমরা আমাদের সকল ইবাদত শুধুমাত্র তার জন্যই করি। মনের মধ্যে যেকোন ইবাদতের জন্য এই ইচ্ছা রাখাটা ফরজ যে “আমার সব ইবাদত হচ্ছে একান্তই আল্লাহর জন্য”।

রাতে যদি “আমি তাকওয়া অর্জন করার জন্য/রাসুল সা. এর সুন্নাহ পালনের জন্য কালকে রোজা রাখব ইনশা আল্লাহ” এমন চিন্তা করে ঘুমান তারপর উঠে সাহরি খান তবে এই জিনিসটাই হল আপনার বিশুদ্ধ নিয়ত (যেটা আল্লাহ চান, যা সকল ইবাদতের জন্য ফরজ)। রাতের ঐ চিন্তা আর সাহরি খাবার মাধ্যমেই আপনি ‘নিয়ত করা ফরজ’- অংশটি পূরন করে ফেললেন। একি ভাবে সালাত আদায়ের জন্য যদি মসজিদে যান, ওজু করেন, শুধুমাত্র আল্লাহর ফরজ বিধান পালনের জন্য সালাত শুরু করেন তাহলে আপনার নিয়ত হয়ে গেল। এর জন্য মুখে কোন আরবি বাক্য আলাদাভাবে উচ্চারণ করতে হয় না।

আর মনে মনে এই সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা পোষণ করার জন্যও কোন আরবি বাক্য শেখার দরকার নেই। আপনি আপনার সব চিন্তা যেমন বাংলা ভাষায়ই করেন মনের ভেতর, ঠিক একইভাবে এই রোজা কিংবা সালাতের চিন্তাও বাংলা ভাষায় করবেন!

আবার আপনি যদি ওজন কমানো কিংবা লোকে ভালো বলবে এইরকম চিন্তা নিয়ে রোজা রাখেন, তবে আপনার নিয়ত কিন্তু করা হয়ে যাবে। তবে সেটি বিশুদ্ধ নিয়ত নয়। আর এমন নিয়ত করলে কোন ইবাদতই কবুল হবে না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ইসলামে নিয়ত আসলে কি।

মুখে উচ্চারন করে আরবি নিয়ত না বললে ছাড়া রোজা/নামাজ হবে না এমনটি ভাবলে তা বিদয়াত হিসেবে গণ্য হবে।

কুরআন হাদিস দ্বারা রোজার কোনো নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না। সমাজে প্রচলিত নিয়তটি কোনো ব্যক্তির বানানো নিয়ত।

নফল রোজার নিয়ত বাংলায়

নিয়ত মানে হচ্ছে আপনার মনের ইচ্ছাটা। আপনি বিরিয়ানি খেতে চাইলে কিন্তু কখনো বলেন না, “আপনি এখন প্লেটে নিয়ে আরাম করে বসে গরম গরম কাচ্চি বিরিয়ানি খাব, এই আমি শুরু করলাম! গপ গপ গপ…”, বরং আপনি কিনে আনেন কিংবা রান্না করে খান। ওইযে শুরুতে আপনার বিরিয়ানি খাবার ইচ্ছা মনের মধ্যে জেগেছিল, এই জিনিসটার নামই হল নিয়ত বা ইচ্ছা।

এখন চলুন দেখি ইবাদতের জন্য নিয়ত কেন গুরুত্বপুর্ণ?

আপনি কেন রোজা রাখছেন সেটাই আপনার নিয়ত বা উদ্দেশ্য। আমরা, মুসলিমরা রোজা রাখি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আবার অনেকে রাখতে পারে লোক দেখাতে কিংবা ওজন কমাতে। আপনি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেই (আপনার হৃদয়ে) আপনার রোজার নিয়ত(বিশুদ্ধ) হয়ে গেল। আল্লাহ তায়ালা এটাই চান যেন আমরা আমাদের সকল ইবাদত শুধুমাত্র তার জন্যই করি। মনের মধ্যে যেকোন ইবাদতের জন্য এই ইচ্ছা রাখাটা ফরজ যে “আমার সব ইবাদত হচ্ছে একান্তই আল্লাহর জন্য”।

রাতে যদি “আমি তাকওয়া অর্জন করার জন্য/রাসুল সা. এর সুন্নাহ পালনের জন্য কালকে রোজা রাখব ইনশা আল্লাহ” এমন চিন্তা করে ঘুমান তারপর উঠে সাহরি খান তবে এই জিনিসটাই হল আপনার বিশুদ্ধ নিয়ত (যেটা আল্লাহ চান, যা সকল ইবাদতের জন্য ফরজ)। রাতের ঐ চিন্তা আর সাহরি খাবার মাধ্যমেই আপনি ‘নিয়ত করা ফরজ’- অংশটি পূরন করে ফেললেন। একি ভাবে সালাত আদায়ের জন্য যদি মসজিদে যান, ওজু করেন, শুধুমাত্র আল্লাহর ফরজ বিধান পালনের জন্য সালাত শুরু করেন তাহলে আপনার নিয়ত হয়ে গেল। এর জন্য মুখে কোন আরবি বাক্য আলাদাভাবে উচ্চারণ করতে হয় না।

আর মনে মনে এই সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা পোষণ করার জন্যও কোন আরবি বাক্য শেখার দরকার নেই। আপনি আপনার সব চিন্তা যেমন বাংলা ভাষায়ই করেন মনের ভেতর, ঠিক একইভাবে এই রোজা কিংবা সালাতের চিন্তাও বাংলা ভাষায় করবেন!

আবার আপনি যদি ওজন কমানো কিংবা লোকে ভালো বলবে এইরকম চিন্তা নিয়ে রোজা রাখেন, তবে আপনার নিয়ত কিন্তু করা হয়ে যাবে। তবে সেটি বিশুদ্ধ নিয়ত নয়। আর এমন নিয়ত করলে কোন ইবাদতই কবুল হবে না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ইসলামে নিয়ত আসলে কি।

মুখে উচ্চারন করে আরবি নিয়ত না বললে ছাড়া রোজা/নামাজ হবে না এমনটি ভাবলে তা বিদয়াত হিসেবে গণ্য হবে।

নফল রোজার নিয়ত আরবি

নিয়ত মনে মনে করতে হয়। আর এটা মানুষের মনে তখনই হয়ে যায় যখন মানুষ কোন কাজের ইচ্ছা পোষণ করেন। যেমন : ধরুন আপনি আগামীকাল দশটার বাসে ঢাকায় যাবেন। এটা বাস্তবায়ন করার জন্য কি আপনাকে সেটা বিশেষ বাক্যের মাধ্যমে নিজের মনকে জানাতে হয়? কখনই না।

অনুরূপভাবে রোযার জন্য ” নাওয়াইতু আন আসুমা গাদান ” ইত্যাদি কোন আনুষ্ঠানিক নিয়তের প্রয়োজন নেই । সচেতনভাবে সজ্ঞানে কাজ করলে নিয়ত আপনা আপনিই হয়ে যায়।

নফল রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

ফরয, নফল কোন রোযার জন্যই মুখে মুখে নিয়ত করতে হয় না।

শবে মেরাজ, শবে বরাত ইত্যাদি নফল রোজার নিয়ত

প্রথমত শবে মেরাজ বা শবে বরাতের আলাদা নির্দিষ্ট কোনো নফল রোজা নেই।

আর দ্বিতীয়ত যেকোনো কাজের পূর্বে কোন কাজটি করছেন তা সঠিকভাবে মন থেকে নির্ধারণ করে নিলেই নিয়তের কাজ হয়ে যায়। স্পেসিফিক ভাবে কিছু পড়া বা বলার প্রয়োজনীয়তা নেই। আপনি নফল রোজা রাখবেন এটা যেহেতু আপনার কাছে নির্দিষ্ট তাই আপনার রোজার নিয়ত এখানেই হয়ে গেছে নিয়তের জন্য আলাদাভাবে আর কিছু করতে হবে না।

রোজার নিয়ত করা কি ফরজ?

হ্যাঁ, রোজার নিয়ত করা ফরজ!

রোজার নিয়ত কখন করতে হয়?

ফরজ রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম। (সুনানে আবি দাউদ : ১/৩৩৩, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।
রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। (সহিহ বোখারি : ২০০৭, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।

পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ, প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। (সহিহ বোখারি : ১/২, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯৫)।

রাতে রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। (সুরা বাকারা : ১৮৭)।

 

রোজার পরিকল্পনা – মিজানুর রহমান আজহারী

এ বছর রমাদানের শুরুতেই, আপনার যাকাত আদায়ের পরিকল্পনা করে ফেলুন। আপনার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হতে কয়েক মাস বাকী থাকলেও, সম্ভব হলে এ রমাদানেই যাকাত আদায় করে দিন। যাকাত অগ্রিম আদায় করা যায়। তাই, করোনা পরিস্থিতিতে অভুক্ত ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে, আপনার যাকাতের অর্থ পৌঁছে দিন তাদের হাতে। কাজকর্ম সব বন্ধ থাকায়, খাদ্যাভাবে কঠিন সময় পার করছে শ্রমজীবি স্বল্প আয়ের এই মানুষগুলো।

এমন সংকটাপন্ন মূহুর্তে এর চেয়ে ভালো কোন সৎকর্ম আর হতে পারে না। পাশাপাশি, বিগত বছরের অপরিশোধিত যাকাত থাকলে সেটাও এই রমাদানে আদায়ের পরিকল্পনা করুন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন- “এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, পবিত্র অন্তরে যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাকো, তা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়”। (আল-রুম: ৩৯).

কুরআনুল কারীম কেন্দ্রীক রমাদানে বিশেষ প্ল্যান করুন। খতম উঠানোর জন্য উঠেপড়ে না লেগে, বিশুদ্ধ তিলাওয়াত নিশ্চিত করুন এবং তাদাব্বুর তথা বুঝে বুঝে এবং অনুধাবন করে, কুরানিক ম্যাসেজ গুলো হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করুন। তাড়াহুড়ো করে অনেকগুলো খতমের চেয়ে বুঝে পড়া ও তিলাওয়াতের গুণগত মান নিশ্চিত করা বেশী জরুরী।

রমাদান আসার আগেই কুরআনের বিশেষ কিছু অংশ বা কয়েকটি সুরা মুখস্ত করার পরিকল্পনা করুন। পরিবারের সবাই মিলে মুখস্তকৃত অংশগুলো একে অপরকে শুনাতে পারেন। কোয়ারেনটাইনকে কুরআন টাইম বানান। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন- “এরপরও কি ওরা কোরআন নিয়ে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে তা অন্তরে ধারণ করবে না? নাকি ওদের মনের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে?” (মুহাম্মাদ: ২৪).

যেহেতু লকডাউন চলছে, সবাইকে বাসায় থাকতে হচ্ছে, হাতে এখন প্রচুর সময়। সময়গুলো প্রোডাক্টিভ কাজে বিনিয়োগ করুন। বাসায় ইসলামি হালাক্বার আয়োজন করতে পারেন, যেখানে পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে কুরআনের সরল বংঙ্গানুবাদ, মর্মার্থ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির কিংবা রিয়াদুস সলিহিন এর মত যে কোন হাদীস গন্থের উপর বিষয় ভিত্তিক সামস্টিক পাঠের ব্যবস্থা থাকবে।

বিভিন্ন ইসলামিক স্কলারদের লেকচারগুলো ইউটিউব থেকে শুনুন, তাদের লাইভ প্রোগ্রামগুলোতে জয়েন করুন এবং এগুলো স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। নলেজ শেয়ারিং অনেক বড় সাদাকাহ। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “আমার পক্ষ হতে একটি বাণীও যদি তোমার জানা থাকে, তবে তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও”। (বুখারী).

তারাবির সালাতের ক্ষেত্রে, রাকাত বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। ধীরেসুস্থে, একাগ্রচিত্তে এবং তা’দিলুল আরকান মেনটেইন করে সালাত আদায় করুন। বিশ রাকাত পড়তে পারাটাই উত্তম। আবার, রাসূল (সা:) এর আট রাকাতের হাদিসের বর্ননাও স্বত:সিদ্ধ। তাই, কোয়ান্টিটি নিয়ে বিতর্ক না করে, কোয়ালিটি সালাতের দিকে মনযোগী হোন।

ইসলামি শারি’য়ায় যে ব্যাপারগুলোতে প্রশস্ততা রয়েছে সেগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। তাছাড়া, কুরআনে সুন্দর আমলের কথা বলা হয়েছে, বেশী আমলের কথা নয়। তাই, সত:স্ফূর্ত ও প্রানবন্তভাবে রাতের সালাত দুই রাকাত দুই রাকাত করে যত বেশী আদায় করা যায় ততোই সাওয়াব। নিষ্প্রাণ সালাত আল্লাহ তায়ালার কাছে মূল্যহীন, যদিও তা সংখ্যায় বেশী।

রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “তোমাদের সাধ্যে যতটুকু কুলায় ততটুকুই ইবাদত কর। আল্লাহর শপথ, নিশ্চই আল্লাহ কখনো ক্লান্ত হবেন না বরং তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে”। (মুসলিম).

সারা বছর হয়তো অনেকেরই তাহাজ্জুদ পড়ার সুযোগ হয়ে উঠেনা। এ মাসে এই বিশেষ সুযোগটি কাজে লাগানো যেতে পারে। সাহুর খাওয়ার জন্য তো আমাদেরকে উঠতেই হবে। তাই, প্রতিরাতে সাহুর খাওয়ার আগে অথবা পরে, দু্ চার রাকাত তাহাজ্জুদ আদায় করার পরিকল্পনা করুন।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “আর রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদে কুরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। অচিরেই আপনার পালনকর্তা আপনাকে এক প্রশংসনীয় মাকামে অধিষ্ঠিত করবেন”। (বনি ইসরাইল: ৭৯).

পরিমিত ইফতার ও সাহুর গ্রহনের পরিকল্পনা করুন। মাত্রাতিরিক্ত ইফতার ও সাহুর গ্রহনের ফলে অলসতা তৈরি হবে এবং সারাদিন কুরআন তিলাওয়াতে ও রাতে কিয়ামুল্লাইলে আপনি মজা পাবেন না। তাই, রমাদানে হেলথি ডায়েট মেনটেইন করার চেষ্টা করুন।

এতে আপনার প্রোডাক্টিভিটি অনেক গুণে বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “ পাকস্থলীর এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ থাকবে শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য” (তিরমিযি).

ক্বদর বা ভাগ্যরজনী তালাশের জন্য, রমাদানের শুরু থেকেই সিরিয়াসলি পরিকল্পনা নিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে ক্যালেন্ডারে তারিখগুলো মার্ক করে রাখুন যাতে করে, কোন ভাবেই এ রাতের বারাকাহ মিস না হয়ে যায়। রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর যে কোন একটি রাত হল- সেই বহু প্রতিক্ষীত ক্বদরের রাত।

যে রাতে পবিত্র কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছে, যে রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যে বরকতময় রাতে আরশের মালিকের রাজকীয় ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিজ্ঞোচিত ফায়সালা দেয়া হয়, আর সে রাতে ফজর উদিত হওয়া অবদি গোটা দুনিয়ায় শান্তির সমীরণ বহে। সকল ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে, ইবাদতে মশগুল থাকুন এ মহিমান্বিত রজনীতে। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ক্বদরের রাতের মাহাত্ম অর্জন থেকে বঞ্চিত হল, সে আসলেই দুর্ভাগা”। (নাসাঈ)

Written By: Mizanur Rahman Azhari

ইফতার গ্রহণের সময় এ দুআ পড়বে-

اَللهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلىٰ رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ.

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই রোযা রেখেছিলাম এবং তোমার রিযিক দ্বারাই ইফতার করলাম। -সুনানে আবু দাউদ হাদীস: ২৩৫৮

ইফতারের পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ পড়তেন,

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ.

অর্থ: পিপাসা দূর হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল আর আল্লাহ তাআলা চান তো রোযার সওয়াব লিপিবদ্ধ হল। -সুনানে আবু দাউদ ১/৩২১, হাদীস: ২৩৫৭

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *