রোজা ভঙ্গের কারণ. রোজা ভাঙার কারণ সমূহ

রোজা ভঙ্গের কারণ. রোজা ভাঙার কারণ সমূহ. Roja vonger karon

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ।

রোজা ভঙ্গের কারণ

রোজা ভঙ্গের কারণ ৭টি। যথাঃ

১. সহবাস করা

সাওম পালনকারীর সহবাসের ফলে সাওম ভঙ্গ হয়; সে যদি সাওম ওয়াজিব অবস্থায় রমজানের দিনে সহবাস করে, তাহলে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে, তার কঠিন অপরাধের কারণে। কাফফারা হচ্ছে গোলাম আযাদ করা, যদি তা না পাওয়া যায় তাহলে লাগাতার দু’মাস সাওম পালন করা, যদি সামর্থ্য না থাকে তাহলে ষাটজন মিসকিনকে খাদ্য দান করা। আর যদি সহবাস কারীর উপর সাওম ওয়াজিব না থাকে, যেমন মুসাফির, তাহলে তার ওপর কাযা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা নয়। উল্লেখ্য যে, রমজান মাসে রাতে সহবাস করা যাবে, তাতে কোন সমস্যা নেই।

২. সহবাস ছাড়া অন্য যেকোন উপায়ে বীর্যপাত

সাওম অবস্থায় স্পর্শ বা চুম্বন ইত্যাদি দ্বারা বীর্যপাত ঘটানো, যদি চুম্বনের ফলে বীর্য বের না হয়, তাহলে তার ওপর কিছু ওয়াজিব হবে না। উল্লেখ্য যে, স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙ্গে না কারন সেটা ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত নয়।

৩. পানাহার করা

অর্থাৎ মুখ অথবা নাক দ্বারা পানীয় অথবা খাদ্য জাতীয় কিছু পেটে স্থানান্তর করা; সাওম পালনকারীর জন্য ঘ্রাণ জাতীয় ধোঁয়া পেটে নেওয়া বা গলাধঃকরণ করা (ধূমপান) বৈধ নয়; কারণ, ধোঁয়ার শরীর আছে, তবে সুঘ্রাণ জাতীয় দ্রব্য শুকলে (গলধঃকরণ করলে) সমস্যা নেই। উল্লেখ্য যে, নিজের মুখের থুথু গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না।

৪. খাদ্যানুরূপ কিছু গ্রহণ করা

যেমন, খাদ্য জাতীয় ইনজেকশন নেওয়া। যদি ইনজেকশন খাদ্য জাতীয় না হয়, তবে সাওম ভাঙ্গবে না, রগে বা গোশতে যেখানেই তা প্রয়োগ করা হোক।

৫. শিঙ্গা লাগানো

শিঙ্গা লাগানো বা অন্য কোন পদ্ধতিতে শিঙ্গার পরিমাণ রক্ত বের করা, যে কারণে শরীর দুর্বল হয়। হ্যাঁ যদি পরীক্ষার জন্য সামান্য রক্ত নেয়া হয়, তাহলে সাওম ভঙ্গ হবে না। কারণ, এ জন্য শরীর দুর্বল হয় না, যেমন দুর্বল হয় শিঙ্গা লাগানোর ফলে। উল্লেখ্য যে, শরীরের কোন জায়গায় কেটে গেলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

৬. ইচ্ছাকৃত বমি করা

অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে পেট থেকে খানা অথবা পানীয় জাতীয় কিছু বের করা।

৭. নারীদের হায়েয ও নেফাস

নারীদের মাসিক ঋতু ও সন্তান প্রসব জনিত কারণে রক্তস্রাব।

তিনটি শর্তে উল্লেখিত সাতটি কারণে সাওম ভঙ্গ হবে:

ক. সাওম ভঙ্গের হুকুম ও সাওমের সময় সম্পর্কে জানা থাকা।

খ. সাওম স্মরণ থাকা।

গ. স্বেচ্ছায় এসব কর্ম সম্পাদন করা।

যেমন, শিঙ্গার কারণে সাওম ভাঙ্গবে না ভেবে কেউ শিঙ্গা লাগাল, তাহলে তার সাওম বিশুদ্ধ। কারণ, সে শিঙ্গার হুকুম সম্পর্কে জানে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)।

[সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫]।

হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।

[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬]।

আল্লাহ তাআলা এর উত্তরে বলেছেন: “আমি কবুল করলাম”। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, আদি ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু সাদা-কালো দুটি দাগা বালিশের নিচে রেখে তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খেতে ছিলেন, যখন একটি অপরটি থেকে পৃথক ও স্পষ্ট দেখা গেল, তিনি পানাহার থেকে বিরত থাকলেন। কারণ, তিনি মনে করেছেন এটাই আল্লাহর নিম্নের বাণীর অর্থ:

আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়।

[সূরা আল বাকারা আয়াত: ১৮৭]

অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: “এর অর্থ হচ্ছে দিনের সাদা আভা ও রাতের কালো অন্ধকার”। তিনি তাকে সে দিনের সাওমের কাযা করতে বলেন নি।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯০।

যদি ফজর উদিত হয় নি অথবা সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে ভেবে পানাহার করে অতঃপর তার বিপরীত প্রকাশ পায়, তাহলে তার সাওম বিশুদ্ধ। কারণ, সময় সম্পর্কে তার জানা ছিল না। সহীহ বুখারীতে আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে একদা মেঘলা দিনে আমরা ইফতার করি, অতঃপর সূর্য উদিত হয়।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৯।

এমতাবস্থায় যদি কাযা ওয়াজিব হত, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বর্ণনা করতেন। কারণ, আল্লাহ তা’আলা তার মাধ্যমে দীনের পূর্ণতা দান করেছেন। আর তিনি যদি বর্ণনা করতেন, তাহলে অবশ্যই সাহাবায়ে কেরাম তা পৌঁছাতেন। কারণ, আল্লাহ তাআলা দীন সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। যেহেতু সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করেন নি, তাই আমরা জানলাম এটা ওয়াজিব নয়। কারণ, এমন কিছু ঘটলে তা বর্ণনা করতে সাহাবায়ে কেরামের প্রচেষ্টার অভাব হতাে না। সুতরাং এ ধরনের একটি জরুরি বিষয় সবার পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আর যদি কেউ ভুলে পানাহার করে, তাহলে তার সাওম ভঙ্গ হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

সাওম অবস্থায় যে ভুলে পানাহার করল, সে যেন তার সাওম পূর্ণ করে। কারণ, আল্লাহ তাকে পানাহার করিয়েছেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৫।

যদি কাউকে জোরপূর্বক পানাহার করানো হয় অথবা কুলি করার সময় তা পেটে চলে গেল অথবা চোখে ওষুধ দেওয়ার পর তা পেটে চলে যায় অথবা স্বপ্নদোষের ফলে বীর্য বের হয়ে যায়, তাহলে সাওম বিশুদ্ধ। কারণ, এখানে তার ইচ্ছার কোনো দখল নেই।

মিসওয়াক করলে সাওম ভঙ্গ হবে না, বরং দিনের শুরুতে অথবা দিনের শেষে সাওম পালনকারী ও সাওমহীন সবার জন্য মিসওয়াক করা সুন্নাত। সাওম পালনকারী গরম অথবা পিপাসা লাঘবের জন্য পানি ব্যবহার করতে পারবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম অবস্থায় গরমের কারণে মাথায় পানি দিতেন।

আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৬৫।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সাওম অবস্থায় কাপড় ভিজিয়ে শরীরে রেখেছিলেন। এভাবে আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করেন।

ইমাম বুখারী সাওম অধ্যায়ের হাদীসের পূর্বে অধ্যায়ের ভূমিকায় সনদবিহীন এটাকে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলি সঠিকভাবে বুঝার ও মেনে চলার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *