কঠিন বর্জ্য কাকে বলে? বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন দরকার? বর্জ্য পদার্থের উৎসগুলি কি কি? কঠিন বর্জ্যবস্তু কীভাবে পরিবেশকে প্রভাবিত করে? কঠিন বর্জের ব্যবস্থাপনার উপায় কী?

বর্জ্যবস্তু বা বর্জ্য কাকে বলে?

যা বর্জনযোগ্য যাকে পরিত্যাগ করা যায়, তাকে বর্জ্যবস্তু বা বর্জ্য পদার্থ বলে। বর্জ্যবস্তুর আপাতভাবে অবাঞ্ছিত, অব্যবহারের অযোগ্য বস্তু। যেমন – রাবিশ, ভাঙা শিশি, বোতল, পুরোনো বাসন, মূলমূত্র, মৃতদেহ ইত্যাদি।

কঠিন বর্জ্য বা সলিড ওয়েস্ট কী?

কঠিন বর্জ্য বা সলিড ওয়েস্ট (Solid waste) বলতে কঠিন ও প্রায় কঠিন বর্জ্যবস্তুকে বোঝায়। যেমন- রাবিশ বা জঞ্জাল, ভাঙা নষ্ট পাত্র, আবর্জনা, ধাতুর খাদ, ছাই, ব্যবহৃত ডাক্তারি সরঞ্জাম জৈব দ্রাব্য বর্জ্যকে কঠিন বর্জ্য হিসেবে ধরা হয়। যেমন- নষ্ট খাবার, প্রাণীজাত মল।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন দরকার?

বর্জ্যবস্তু মানুষ ও প্রকৃতির ক্ষতি করে। তাই বর্জ্যবস্তুর ব্যবস্থাপনা দরকার। মানুষের পরিবেশ সচেতনতা এবং উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া বর্জ্যবস্তুর প্রকৃত ব্যবস্থাপনা একটি দূরূহ কাজ।

বর্জ্য পদার্থের উৎসগুলি কি কি?

বর্জ্য পদার্থের মূল উৎসগুলি হলো –

১) কলকারখানার বর্জ্য

২) কৃষিজাত কঠিন বর্জ্যবস্তু

৩) ঘর-গৃহস্থালির বর্জ্য

৪) গ্রাম ও নগর জনবসতি বা পৌর বসতির বর্জ্য

৫) বায়ো-মেডিকেল প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য অর্থাৎ হাসপাতালের বর্জ্য (যেমন- মল, মূত্র, মৃতদেহ, ল্যাবরেটরিজাত বর্জ্য অর্থাৎ ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, তুলো, টেস্ট টিউব, কাচের শিশি)

৬) খনিজাত কঠিন বর্জ্য

৭) মানুষ ও প্রাণীজাত বর্জ্য ইত্যাদি।

কঠিন বর্জ্যবস্তু কীভাবে পরিবেশকে প্রভাবিত করে?

কঠিন বর্জ্যবস্তু যেমন জঞ্জাল, রাবিশ, স্ল্যাগ, ছাই ইত্যাদি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের হানি ঘটায়। যেমন-

১) কঠিন বর্জ্যপদার্থ মাটির ওপর অনেক দিন ফেলে রাখলে সেখানকার বায়ু, জল ও মাটি দূষিত হয়।

২) কঠিন বর্জ্য পদার্থ থেকে টাইফয়েড, জন্ডিস, আন্ত্রিক, কলেরা, ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনারস, চর্মরোগ, কৃমি, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি হতে পারে।

৩) পচা আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ, পোকামাকড়, রোগজীবাণু ছড়ায়।

৪) কঠিন আবর্জনা দৃশ্যদূষণ করে। সৌন্দর্যহানি ঘটায়।

কঠিন বর্জের ব্যবস্থাপনার উপায় কী?

কঠিন আবর্জনা বা বর্জ্যবস্তু ব্যবস্থাপনার কয়েকটি উপায় আছে। যেমন-

১) বর্জ্যবস্তুকে রিসাইকেল করে আবার কাজে লাগানোর বন্দোবস্ত করা যায়। যেমন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বর্জ্য হিসেবে যে ফ্লাই অ্যাশ পাওয়া যায় তা দিয়ে ইট তৈরি করা যায়। নীচু জমি ভরাট করা যায়। কাগজ কলের ছেঁড়া কাগজ এবং চিনি কলের আখের ছিবড়ে দিয়ে কাগজ তৈরি করা যায় ইত্যাদি।

২) কঠিন বর্জ্য নীচু জমি ভরাট করার কাজে ব্যবহার করা যায়।

৩) জৈব বর্জ্য পদার্থ থেকে কম্পোস্ট সার তৈরি করা যায়।

৪) বর্জ্য পদার্থকে উচ্চ তাপে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা যায়। একে নিয়ন্ত্রিত দহন বা ইনসিনারেসন বলে। এতে অদাহ্য বর্জ্য, যেমন- কাচ ও অন্যান্য ধাতুর ভাঙ্গা টুকরোগুলোকে পরে আলাদা করে ফেলা সম্ভব হয় ও তাদের প্রয়োজনমত কাজে লাগানো যায়। তবে প্লাস্টিক, পলিথিন জাতীয় পদার্থকে কিছুতেই পোড়ানো উচিত নয়। এতে বায়ুদূষণ ঘটে। বর্জ্য প্লাস্টিক, পলিথিনকে পুনরায় ব্যবহার করে, অর্থাৎ রিসাইকেল করে, এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যায়।

৫) জৈব আবর্জনা থেকে দাহ্য গ্যাস তৈরি করা যায় ও জ্বালানি উৎপাদন করা যায়।

 

Similar Posts