ফেসবুকের কারণে পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ মাকে ফিরে পেলেন মেয়ে

পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে ফিরে পেলেন মেয়ে ফারজানা আক্তার মিম ফেসবুকের কল্যাণে। ওই নারীর নাম রিনা আক্তার খতে (৪৬)। খতে নামেই তাকে ডাকা হতো। রিনা আক্তার খুলনার ফুলতলা উপজেলার নাড়ীপাড়া গ্রামের মোহসীন আখনের স্ত্রী।

ওই নারীর মেয়ে ফারজানা আক্তার মিম বলেন, ‘আমার মায়ের ২০১৫ সাল থেকে মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। আমি তখন ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। তখন মা যেমন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত, তেমনি ফিরে আসত। ২০১৭ সালে তখন অষ্টম শ্রেণি পাস করি তখন মা বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান মেলেনি।

এদিকে, মাকে খুঁজে না পাওয়ায় পরিবারের সম্মতিতে বাবাকে আবার বিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের সহযোগিতায় আমি এখন ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং কলেজে ১ম বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমরা তো মনে করেছিলাম, মা মারা গেছে। কিন্তু গত রবিবার (৬ মার্চ) মোবাইল ফোনে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে ফোন আসলে পরিচয় দিয়ে বলে আপনার মায়ের নাম রিনা কিনা?’ ‘এ কথা শোনামাত্রই আমি তাকে ছবি পাঠাতে বললে তিনি ছবি পাঠান। ছবি দেখে আমি চিনতে পারি তিনি আমার মা।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের জিরোপয়েন্ট এলাকায় ব্রিজের ওপর ভবঘুরে হিসেবে থাকতেন। তার এ অবস্থা দেখে স্থানীয় যুবক আব্দুর রাজ্জাক নয়ন, তারেক ও ওষুধের দোকানদার হারুন অর রশিদ ওই নারীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নঈমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। প্রাথমিকভাবে ওই নারী তার নাম রিনা বলে জানায়।

এরপর স্থানীয় যুবক তারেক ফেসবুকে হারানো বিজ্ঞপ্তি খুঁজতে খুঁজতে তার পরিবারের নাম্বার পেলে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তার মেয়ে ফারজানা, বোনের মেয়ে শাহানাজ নিয়ামতপুরে আসেন রিনা আক্তারকে নিতে। রিনা আক্তারের বোনের মেয়ে শাহানাজ পারভীন বলেন, ‘আমার খালারা ৫ বোন ও ২ ভাই। খালা ভাইবোনদের মধ্যে ৫ নম্বর। ২০১৭ সালে হারিয়ে যাবার পর অনেক খুঁজে না পেলে আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃতজ্ঞতা খালাকে খুঁজে পেয়েছি। এখানকার নয়ন, তারেক, রশিদ এবং ইউপি চেয়ারম্যান যেভাবে সহযোগিতা করেছে তা সারাজীবন ভুলবো না। খালু পেশায় ট্রাকচালক। ট্রাক নিয়ে বান্দরবান থাকায় তিনি আসতে পারেননি।’

ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নঈম বলেন, ‘গত ৫ মার্চ স্থানীয় যুবকেরা আমাকে যখন জানালো, ব্রিজের ওপর মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ শুয়ে আছে, তখন গিয়ে দেখে এসেছি। বৃদ্ধার মুখমণ্ডলে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয়রা। পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলে নিয়ামতপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।’ তাছাড়া তাদের আসা ও যাওয়ার জন্য সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টায় সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করে এবং পরিবারের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা লিখে মেয়ের জিম্মায় তাকে তুলে দেয়া হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *