তৈলাক্ত ত্বক বুঝবার উপসর্গ
তৈলাক্ত ত্বক বুঝবার উপসর্গ
১. চকচকে এবং পিচ্ছিল একটা ভাব থাকে কপালে, নাকে এবং থুতনিতে। এই এলাকাকে টি জোন বলে।
২. ত্বকটি নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকের চেয়ে ঘন, মোটা থাকে।
৩.মুখের পোর-গুলো বড় থাকে এবং খালি চোখেই দেখা যায়।
৪. ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস এবং গুটিগুটি উঠে মুখে।
৫. মুখ ধোয়ার কিছু সময় পরেই মুখ তৈলাক্ত হয়ে যায়।
৬. ঘুম থেকে ওঠার পর মুখ অতিরিক্ত তৈলাক্ত থাকে।
৭. নাকের চারপাশে সাদা সাদা চামড়া থাকে।
৮. চুল তৈলাক্ত থাকে।
তৈলাক্ত ত্বকের কারণ
তেল গ্রন্থিগুলো মানে সিবেসিয়াস গ্রন্থি সক্রিয় হলে সেবাম উৎপন্ন হয়। সেবাম একটি তৈলাক্ত উপাদান, যা এই গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এর কাজ মূলত আমাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং করা এবং আমাদের ত্বককে বাইরের শুষ্ক আবহাওয়া থেকে বাঁচানো। কিন্তু অতিরিক্ত সেবাম ত্বককে তৈলাক্ত করে এবং ব্রণ বা ব্রণ জাতীয় সমস্যা তৈরী করে। এই অতিরিক্ত সেবাম তৈরীর কারণ হল :
১. বংশগতঃ তৈলাক্ত ত্বকের কারণ যদি জানতে চান তবে একটি কারণ বংশগত। যাদের পরিবারে কারো তৈলাক্ত ত্বক থাকে সাধারণত তাদেরও ত্বক তৈলাক্ত হয়। তবে সুসংবাদ এই যে, বয়সের সাথে এই তেল গ্রন্থিগুলোর তেল উৎপাদন কমে যায়।
২. হরমোন অথবা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলেঃ বয়ঃসন্ধিকালে এন্ড্রোজেন নামক হরমোন নিঃসরণ হয় যা সিবেসিয়াস গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে ফলে অতিরিক্ত সেবাম উৎপন্ন হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থা, মেনোপোজ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির জন্য সেবাম তৈরী বেশি হয় যেগুলোকে তৈলাক্ত ত্বকের কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
৩. কসমেটিক: তেলযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের কারণেও ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে।
৪. সাবান এবং অতিরিক্ত মুখ ধোয়ার কারণেঃ বেশী ক্ষারযুক্ত সাবান ত্বকের স্বাভাবিক মেকানিজম-কে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং সিবেসিয়াস গ্রন্থিকে বেশি কার্যক্ষম করে, ফলে তেল উৎপন্ন হয়। যারা অতিরিক্ত বা বারবার মুখ ধোয় তাদের মুখের প্রয়োজনীয় তেল চলে যায় ফলে তেল গ্রন্থিগুলো ত্বককে বাঁচাতে আরো বেশী তেল তৈরি করে।
৫. খাবারঃ বলা হয়ে থাকে যে, চকলেট, সফট ড্রিংকস এবং তেলে ভাজা খাবারের কারণে ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে। এছাড়া ভিটামিন বি ২ এবং ভিটামিন বি ৫ ও ভিটামিন এ-এর অভাব হলেও ত্বক তৈলাক্ত হয়।
অন্যান্য কারণ
- কিছু ওষুধ ব্যবহারের ফলে
- অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া
- কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ গরম থাকলে
- ধুমপান করলে
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কিছু টিপস
বেশ কিছু উপায়ে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। একটা হলো বেসিক বা প্রাথমিক যত্ন। অন্যটি হলো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে যত্ন। প্রথমেই আসা যাক বেসিক কী কী যত্ন করবেন। ৩টি প্রধান কাজ করতে হয় এই অংশে। কাজগুলো হলো-
১. মুখ ভালভাবে পরিষ্কার করা
মুখ ভালভাবে ধোয়া হলো তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের মূল চাবিকাঠি। এমনভাবে মুখ ধুতে হবে যাতে মুখের অতিরিক্ত তেল উঠে যায় কিন্তু লিপিড অথবা গ্রন্থির ভিতরের পুরা তেল উঠে না যায়। কারণ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল ও লিপিড আমাদের দরকার। তাই যেই ক্লিনজার ব্যবহার করবেন তা যেন মৃদু সিনথেটিক ডিটারজেন্ট হয় (মুখের জন্য তৈরী) এবং সেটা তেল, মোম এবং লিপিডমুক্ত যেন থাকে। এটি মুখকে শুষ্ক না করেই অতিরিক্ত তেল ধুয়ে ফেলে। মৃদু সাবান এবং আইভরি অথবা প্রাকৃতিক সাবান ব্যবহার করা ভাল। দিনে ২/৩ বার মুখ ধোবেন, এর বেশী মোটেও না। মুখ ধোয়ার জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। মুখ অনেক ঘষবেন না ধোয়ার সময়। শুধুমাত্র হালকা ম্যাসাজ করে নিবেন। কিছু ক্লিনজারে মৃদু আলফা হাইড্রোক্সি এসিড থাকে। যেমন-স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত থাকে যা মরা কোষকে দূর করে পোর বন্ধ করে সেবাম তৈরি কমায়। এছাড়াও যে ক্লিনজার-গুলোতে বেনসোল পারঅক্সাইডেজ থাকে সেগুলোতে মূলত এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। এক্সফোলিয়েটিং প্যাড যেমন গ্লাইকোলিক প্যাড মরা কোষ দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন সপ্তাহে ২/৩ বার ।
২. টোনার
এটি মুখ ধোয়ার পর দিবেন। এটি ত্বকের কোষকে সংকুচিত করে, টাইট করে ফলে পোর থেকে তেল কম বের হয়। এটি ত্বকের পি.এইচ(ph) কমায়। অ্যালকোহল যুক্ত টোনার ব্যবহার করবেন। এছাড়া যে টোনার-এ এসিটোন থাকে তা কেনার চেষ্ট করবেন। অ্যালকোহল মুখকে শুষ্ক করে।
৩. মশ্চারাইজার
মৃদু, তেল মোম ও লিপিডমুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যাদের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক তাদের এটি ব্যবহারের দরকার নেই।
এখন বাজারে প্রচুর ভেজাল প্রডাক্টস বিক্রয় হয়। তাই এই যে টোনার ও ময়েশ্চারাইজার কিনবেন আপনার তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কিভাবে নিশ্চিত করবেন যে আপনি অথেনটিক প্রডাক্টস কিনছেন? চিন্তার কিছু নেই; চলুন দেখে নেওয়া যাক তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এর কিছু টিপস –
অন্যান্য টিপস
১. অয়েল ফ্রি কসমেটিক ব্যবহার করুন।
২. ঘুমানোর আগে মেকআপ তুলুন।
৩. মুখ না ধুয়ে মুখ হাত দিয়ে ছোঁবেন না বা ঘষবেন না। এতে পোর বন্ধ হয়ে ব্রণ হতে পারে।
৪. দরকার হলে ভিটামিন-এ ক্রীম, রেটিনয়েডস, সালফার ক্রীম দিতে বলে ডার্মাটোলজিস্ট-রা।
৫. সুষম খাবার খান। প্রচুর ফলমুল, শাক সবজি, শিম, বাদাম যাতে ভিটামিন বি ২ ও বি ৫ ঘাটতি না হয়।