উপগ্রহ কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহ ও ভূ-স্থির উপগ্রহ কি ?
স্বাভাবিক উপগ্রহ
Natural satellite
যে সব বস্তু বা জ্যোতিষ্ক গ্রহের চারদিকে ঘুরে , তাদেরকে উপগ্রহ বলে। যেসব উপগ্রহ প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট তাদেরকে স্বাভাবিক উপগ্রহ বলে। যেমন- চন্দ্র প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
এটি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। অতএব চন্দ্র বা চাঁদ পৃথিবীর একটি স্বাভাবিক উপগ্রহ। তেমনি অন্যান্য গ্রহেরও স্বাভাবিক উপগ্রহ রয়েছে।
যে ভূ-উপগ্রহের পর্যায়কাল 24 ঘণ্টা তার কক্ষপথকে পার্কিং কক্ষপথ বলে।
কৃত্রিম উপগ্রহ
Artificial satellite
আমরা জানি, সৌরজগৎ নামে একটি জগৎ রয়েছে যার কেন্দ্রে থাকে সূর্য। সূর্য হতে ছিটকে আসা কতকগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের নাম গ্রহ (planet)। পৃথিবী সূর্যের একটি গ্রহ ।
পুনঃ, গ্রহ থেকে আলাদা হয়ে কতকগুলো জ্যোতিষ্ক গ্রহগুলোকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের নাম উপগ্রহ। চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ।
যা প্রায় 30 দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে।
চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে কেন ?
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষের মনে কৌতূহল জাগছে কী করে চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।
এ প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন অভিকর্ষের দরুন চাঁদের উপর পৃথিবীর কেন্দ্রমুখী বল এর কারণ। এ কেন্দ্রমুখী বল যদি না থাকত , তাহলে চাঁদ মহাশূন্যে মিলিয়ে যেত।
পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের প্রদক্ষিণ করে। ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রবিমুখী বল পৃথিবী কর্তৃক প্রযুক্ত কেন্দ্রমুখী বলের সমান ও বিপরীত হওয়ায়।
চাঁদ সোজা না গিয়ে পৃথিবীর চারদিকে বৃত্তাকার পথে ঘুরছে।
এ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে মানুষ মহাশূন্যে পাড়ি দেয়ার জন্যে যে উপগ্রহ তৈরি করেছে ,তার নাম কৃত্রিম উপগ্রহ। যে সকল মহাশূন্যযান পৃথিবী থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় তাদের নিজ নিজ কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে তাদের কৃত্রিম উপগ্রহ বলে।
তিন স্তরবিশিষ্ট রকেটের সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় তুলে পরে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে নির্দিষ্ট বেগ দেওয়া হয়। এতে উপগ্রহটি পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের মতো ঘুরতে থাকে।
কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ
Communication through satellite
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগেরও অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। গত কয়েক দশকে এর অগ্রগতি বিস্ময়কর প্রভাব ফেলেছে মানুষের বুদ্ধিদীপ্ত কাজ-কর্মে ।
মানুষ দূর-দূরান্তে মুহূর্তের মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে ।
কৃত্রিম উপগ্রহ হলো এমনই আশ্চর্যের জিনিস যার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ স্থাপনসহ মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য , বিভিন্ন স্থানের চিত্র ধারণ, আবহাওয়ার পূর্বাভাষসহ বিভিন্ন বিষয় জানতে পারি।
ভূ-স্থির উপগ্রহ
Geo-stationary satelite
যদি একটি কৃত্রিম উপগ্রহকে নিরক্ষীয় তলে অবস্থিত একটি কক্ষপথে এমনভাবে স্থাপন করা হয়।
পৃথিবী যে অভিমূখে নিজ অক্ষের চারদিকে আবর্তন করে, উপগ্রহটিও সেই অভিমুখে অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে এবং ওই কক্ষপথের উচ্চতা যদি এমন হয় যে, উপগ্রহটির আবর্তনকাল পৃথিবীর নিজ অক্ষের চারদিকে আবর্তনকালের সমান অর্থাৎ 24 ঘণ্টা হয়।
তাহলে পৃথিবী থেকে দেখলে ওই উপগ্রহটি নিরক্ষরেখার উপরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থির আছে বলে মনে হয়।
এরূপ কৃত্রিম উপগ্রহকে ভূ-স্থির উপগ্রহ বলে। এবং এর কক্ষপথকে পার্কিং কক্ষপথ বলে। অর্থাৎ যে ভূ-স্থির উপগ্রহের পর্যায়কাল 24 ঘণ্টা তার কক্ষপথকে পার্কিং কক্ষপথ বলে।
সংজ্ঞা : যে সকল উপগ্রহ পৃথিবী সাপেক্ষে স্থির। অর্থাৎ, নিজ অক্ষের উপর যে সকল উপগ্রহের আবর্তন কাল পৃথিবীর আবর্তন কালের সমান, তাদেরকে ভূ-স্থির উপগ্রহ বলে।
ব্যবহারঃ
১। টেলিফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্ত মহাদেশীয় যোগাযোগ স্থাপনে ব্যবহৃত হয়।
২। আবহাওয়ার পূর্বাভাষ পাওয়া যায়।
৩। পৃথিবীর আকার সম্পর্কিত ভূ-জরিপ কাজে ব্যবহৃত হয়।
৪। সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করতে ব্যবহূত হয়।
৫। ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চল বেতার ও টেলিভিশনের রিলে স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৬। উর্ধ্বাকাশের বিভিন্ন বিকিরণ ও তার প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানে ব্যবহৃত হয়।
৭। প্রতিরক্ষামূলক বিভিন্ন সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
৮। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ধারণ ও প্রেরণে ব্যবহৃত হয়।
৯। গ্রহ নক্ষত্রের গঠন সম্পর্কে গবেষণার কাজে ব্যবহূত হয়।
১০। মহাজাগতিক রশ্মিসহ বিভিন্ন রশ্মির উৎসসহ নানাবিধ গবেষণা করতে ব্যবহূত হয়।