দাউদ কিমের মুসলমান হওয়ার গল্প
হ্যালো, আমি জে কিম,দাউদ কিম,দাউদ কিম। প্রথমত আমি অনেক অনেক অভিনন্দন পেয়েছি।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি অনেকগুলো প্রশ্নও পেয়েছি এবং এই প্রশ্নগুলোর আশি শতাংশই হলো,
আমি কেন মুসলিম হলাম?
আজকে আমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চাই। আমার ধর্মান্তিকরণের নয় আমার প্রত্যাবর্তনের গল্প বলতে চাই। ঠিক আছে, এখন তাহলে আমরা শুরু করছি।
আমি কীভাবে মুসলিম হলাম?
-দাউদ কিম
দূর্ভাগ্যবশত ইসলাম সম্পর্কে আমার প্রথম স্মৃতিটিই হচ্ছে নাইন/ইলাভেন। ঐ সময়ে আমি অনেক কম বয়স্ক ছিলাম, এই তো আট বছর। আমি টিভিতে দেখলাম একটি অনেক বড় বিল্ডিং ধসে পড়লো। আর তখনই প্রথমবারের মতো ইসলাম নামক শব্দটি আমি শুনেছিলাম। আমি ততোটা জানতাম না কিন্তু ভেবে নিয়েছিলাম ইসলাম ভয়ংকর।
কারণ মিডিয়া সর্বদাই ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ছবিগুলো দেখাচ্ছিলো, যুদ্ধ, অত্যাচার, সন্ত্রাস ইত্যাদি। তাই আমিও ভেবেছিলাম মুসলিমরা ভয়ংকর এবং কঠোর।
অনেক সময় কেটে গেছে। মূলত আমি একজন ক্যাথলিক ছিলাম কিন্তু আমার কোন ধর্ম সম্পর্কেই আগ্রহ ছিলো না।
আমি শুধু আমার জীবণ কাটাতেই ব্যাস্ত ছিলাম। কিন্তু একদিন ইসলাম সম্পর্কে আমার সমস্ত খারাপ ধারণা ভেঙে যায়, ইন্দোনেশিয়ায়।
আমি কোরিয়াতে একজন গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলাম। আমি ততোটা জনপ্রিয় ছিলামনা কিন্তু তাও ভাগ্যবশত জাকার্তায় আমি একটি প্রমোশনে সুযোগ পাই।
কিন্তু ঐ সময়ও আমি ইসলাম সম্পর্কে জানতামনা।
তাই আমি এটাও জানতাম না যে ইন্দোনেশিয়াতে মুসলিমরা বসবাস করে।
আসলেই আমি এটা জানতাম না।
মূলত দুটো জিনিস আমাকে অনেক অবাক করেছে। প্রথমটি হলো, আমি যতটুকু আশা করেছিলাম এর চেয়েও তারা অনেক বেশি দয়ালু, দ্বিতীয়টি হলো কিছুসংখ্যক মেয়ে তাদের চেহারা পর্দাবৃত করে রেখেছিলো। আমি তখন হিজাব শব্দটার সাথে পরিচিত না। ইন্দোনেশিয়া সত্যিই বিশাল উত্তপ্ত একটি
দেশ। তাই আমি এ বিষয়ে অনেক কৌতুহলি ছিলাম এবং হিজাব পড়া ঐ মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম,
-তুমি কেন তোমার চেহারায় ওড়না পরিধান করে রেখেছো? কেউ কি তোমাকে জোর করেছে?
উত্তরে মেয়েটি বললো,
– আমি হলাম হীরা, অবিশ্বাস্যভাবে অনেক মূল্যবান। তাই আমি চাই না আমার চেহারা কেউ দেখুক। আমাকে কেউ জবরদস্তি করে নি, এটি আমার পছন্দ এবং আমি এটি নিয়ে অনেক গর্বিত।
এই উত্তর শুনে আমি আসলেই বিস্মিত হয়ে যাই। আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো জুলুম কিন্তু তারা এটা নিয়ে সত্যিই গর্বিত।
আসলেই এই বিষয়টা অনেক আকর্ষণীয় ছিল। কোন জিনিসটা তাকে গর্বিত করেছিলো?
ঐ সময়ে আমি জানতাম না যে এটা ছিলো বিশ্বাস। আমার মনে হয় ঐ সময়ে আল্লাহ (সুবহানওয়াতাআলা) একটি ইশারা পাঠিয়েছিলো কিন্তু আমি খেয়াল করিনি।
কোরিয়াতে ফিরে আসা
আমি কোরিয়াতে ফিরে আসলাম।
হঠাৎ করেই আমার বাবা উনার চাকরিটি হারিয়ে ফেলেন। তাই আমি গান ছেড়ে দিয়ে কাজ করা শুরু করলাম।
আমি আমার কাজকে পছন্দ করতাম কিন্তু এটা এতো সহজ ছিলো না। কারণ আমি সৃজনশীল কোন কিছু করতে চাইছিলাম।
এবং এই কারণেই আমি ইউটিউবিং শুরু করি এবং ইন্দোনেশিয়ায় মুসলিমদের সম্পর্কে থাকা আমার স্মৃতি থেকে যথেচ্ছভাবে কথা বলতে থাকি।
আচমকাই অনেক মানুষ আমার ভিডিওগুলো দেখা শুরু করলো। এবং এটা ইসলামের সাথে আমার দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষাৎ ছিলো।
আমি প্রথমবারের ইশারাটি লক্ষ করেনি কিন্তু এবারের টা ভিন্ন ছিল। এটা আমার অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
আচ্ছা আমি আপনাদের বলছি। আমার অবস্থাটা কারো কাছেই বলতে পারছিলাম না কিন্তু সত্যিই আমি একটি কঠিন সময় পার করছিলাম। কারণ আমার জীবণের লক্ষই ছিলো সঙ্গিত কিন্তু আমার সেটাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তাই আমি আমার জীবণের মন্ত্র বা প্রেরণা হারিয়ে ফেলেছিলাম।
আমি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইছিলাম কিন্তু আমার জানা ছিল না কীভাবে? আমি পুরোপুরিভাবে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমার মনে কোন শান্তি ছিল না।
আশ্চর্যজনকভাবে ইউটিউব আমাকে ইসলামের সাথে আবার সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে আমি কিছু মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ করি সত্যিকারের মুসলিম, মিডিয়ার বানানো মুসলিম নয়। তাই আমি তাদের কাছে পেয়েছিলাম এবং খোঁজতে লাগলাম ইসলাম সম্পর্কে আমার কোন বিষয়টি অজানা।
কেন তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে?
কেন তারা প্রার্থনা করে?
হালাল কি আর হারাম কি?
কেন তারা শুকর খায় না, মদ্যপান করে না?
আর মুহাম্মাদ (সাঃ) কে? উনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
জীবণাদর্শন
অনেক কিছুই আমি এক এক করে শিখছিলাম। এবং আমি বিশেষ কিছু একটা সত্যিই পেয়েছিলাম যা আমি আগে অনুভব করিনি। এটা বর্ণনা করা অনেক কঠিন। কিন্তু আমি অনুভব করতে পারছিলাম যে তাদের এমন কিছু একটা আছে যা আমি এখনো খোঁজে পাইনি।
কারণ তারা যেভাবে তাদের জীবণকে পরিচালিত করে তা স্পষ্টভাবেই আমার জীবণাচরণ থেকে ভিন্ন ছিল। আমি ভাবতাম জীবণ একটা প্রতিযোগিতা এবং এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকায় সফলতা। আমি ভাবতাম আমাকে লড়তে হবে এবং জিততে হবে কিন্তৃু তারা ভিন্ন ছিলো।
তারা সর্বদাই অন্যকে সাহায্য করতো। তারা সর্বদাই কৃতজ্ঞ থাকতো যা তাদেরকে দেয়া হতো তার জন্য। তাদের জীবণাদর্শন যা আমাকে অনেক মুগ্ধ করে।
আমার এক মুসলিম বন্ধু বলছে,
জীবণ প্রতিযোগিতা নয় বরং এটি একটি ভ্রমণ।
এই ভ্রমণের লক্ষ হলো সিরাতাল মুস্তাকিমের পথে চলা, রবের অনুসারে, আল্লাহ সুবহানওয়াতাআলা, সর্বাধিক মহিমান্বিত, সর্বোচ্চ।
যদি তুমি আল্লাহকে অনুসরণ করে সরল পথে চলো তাহলে এই ভ্রমণের শেষে তোমার জন্য বিশাল কিছু একটা অপেক্ষা করছে। হ্যা, এটাই জান্নাত, স্বর্গ।
যখন আমি এটা শুনলাম তখন আমার মনে হলো কেউ জোরেশোরে আমার চেহারায় একটি কিল দিলো।
এই বিশ্বাস এটাই যে, তুমি সত্য পথের উপর চলছো। এই বিষয়টা আমাকে স্পর্শ করে এবং আমার হৃৎপিন্ডকে ধাক্কা দেয়।
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস
জীবণের শুরুতে এবং শেষে সবকিছুতেই আছে আল্লাহ। এটাই সেই জিনিস যেটাকে আমি খোঁজছিলাম।
এই বিষয়ে জানার জন্য আমি তাদের রিতী মানে ইসলাম প্র্যাকটিস করা শুরু করলাম।
আমি কুরআন পড়া শুরু করলাম, মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবনী পাঠ করলাম। আমি রমাদানের এক মাস রোজা রাখলাম, মাসজিদে গেলাম এবং প্রার্থনা করলাম।
আর এসব কিছুই ঘটেছে মাত্র কয়েক মাসে। অল্প অল্প করে যতই আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছিলো তাদের রিতীনীতি সম্পর্কে ততই আমার বিশ্বাস বাড়ছিলো।
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং পরিচালিত করছেন, চিরস্থায়ী, পরম করুণাময় দয়ালু।
আর এটা কখনোই একবারে ঘটেনি, আমি এটা পেয়েছি অল্প অল্প করে। কেউ আমাকে জোর করেনি।
যখন আমি রোজা রেখেছিলাম, আমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুধাবন করতে পেরেছি এবং আমি এই প্রার্থনা পেয়েছি যে আল্লাহই আমার মনে শান্তি দিতে পারেন।
অবশেষে আমি আমার বিশ্বাস সম্পর্কে নিশ্চিত হই। তাই আমি একজন মুসলিম হওয়ার চিন্তা করতে থাকি।
কিন্তু তবুও আমি দীর্ঘসময় দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছিলাম। এখানে কিছু কারণ ছিলো।
কয়েকজন আমাকে শুকর এবং অ্যালকোহল সম্পর্কে বললো কিন্তু আমার মতে এগুলো ছেড়ে দেয়া কোন বিশাল কঠিন কিছু নয় যদি কারো বিশ্বাস থাকে।
এখানে আর-ও কিছু কারণ ছিল।
প্রথমত,একজন মুসলিম হিসেবে আমি কি অন্যদের কুসংস্কারগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
দ্বিতীয়ত আমি কি মুসলিম হওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত এবং আমার পরিবারের বিরোধিতা সত্ত্বেও।
আমার জন্য এটি অনেক বড় সমস্যা এবং চাপ ছিল। আমি আমার নিজেকে অনেক বেশি চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলাম।
চিন্তার পূর্ণতা
কিন্তু এগুলোর পর আমি এভাবে চিন্তা করতে লাগলাম, আমি কেন নিজেকে চাপের মধ্যে ফেলছি। ইসলাম একটি ধর্ম যা আল্লাহ এবং আমার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, অন্য কারো সাথে নয়। যদি আল্লাহ আমার জন্য কোন পরিকল্পনা করে রাখেন তাহলে আল্লাহই আমাকে সমাধান দিতে পারবেন।
তাই আমি জীবণের শুরুতে এবং শেষে সবকিছুতেই আছে আল্লাহ। এটাই সেই জিনিস যেটাকে আমি খোঁজছিলাম।এই বিষয়ে জানার জন্য আমি ইসলাম প্র্যাকটিস করা শুরু করলাম।তাই আমি দাউদ মাসজিদে গেলাম এবং আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলাম,
আমার এখন কি করা উচিত ?
এবং আশ্চর্যজনক ভাবে আমার চিন্তাগুলো পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেলো। আমি উপসংহার পেয়ে গেলাম।
আমার বিশ্বাস এবং ইচ্ছা উভয়ই আছে ইসলাম প্র্যাকটিস করার জন্য। তাই আমার আর দ্বিধায় ভোগা উচিত নয়।
আমার আর দরকার নেই অন্য কারো মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। কারণ আমার জীবণ শুধু আমারই অন্য কারো নয়, আল্লাহর সাথে সম্পর্কটাও শুধু আমারই।
তারা আমার জীবণের কোন দায়িত্ব নিবেনা, এমনকি আমার বাবা মা ও। কিন্তু আমি আমার বাবা মা কে ভালোবাসি।
এবং আরেকটি জিনিস তাদের পরিপূর্ণতার বিষয়ে, এখানে কোন পরিপূর্ণ মানুষ বা কোন কিছুই নেই আল্লাহ ব্যাতীত।
আমি মনে করেছিলাম আমি মুসলিম হতে পারবোনা কারণ আমি ভীত ছিলাম আমার ভবিষ্যৎ পাপ বা ভুলগুলোর জন্য। কিন্তু পরে আমার মনে হলো এটি শুধু মাত্র আমার নিজের জন্য একটি অযুহাত। হ্যা আমার ভুল হতেও পারে, আমি তো আর পরিপূর্ণ নই।
এখনও আমার অনেক ভুল আছে কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনিই আমাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবেন, যেভাবে তিনি আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। আমি উনার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছি এবং আমি জানি যে তিনিই আমাকে সাহায্য করবেন।
তাই আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম এবং প্রত্যাবর্তন করলাম, এটাই আমার গল্প।
আলোর সন্ধান
এখন আমি দাউদ এবং এর জন্য আমি খুবই গর্বিত। আমি একা একটি ছোট নৌকায় অন্ধকার এবং বিশাল সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। আমি ভাবছিলাম কিন্তু জানতাম না কোথায় আমাকে যেতে হবে। কিন্তু পরম করুণাময় আল্লাহ আমায় শনাক্ত করলেন এবং ইশারা করলেন। সৌভাগ্যক্রমে আমি লক্ষ করলাম এবং বিষয়টি ধরে ফেললাম। এবং অবশেষে আমি জানি আল্লাহকে অনুসরণ করাই এই ভ্রমণের আসল লক্ষ্য।
এখন আমি জানি আমাকে কোথায় যেতে হবে। তিনি আমাকে আলোর সন্ধান দিয়েছেন
আমি বিশ্বাস করি যে এটাই আমার জীবণের সবচেয়ে পবিত্র উপহার।
আমি এখন সবেমাত্র শিশু মুসলিমের মতো। আমি কোন কিছুই ভালোভাবে জানি না। কিন্তু আমি দাউদ জীবণের শুরুতে এবং শেষে সবকিছুতেই আছে আল্লাহ। এটাই সেই জিনিস যেটাকে আমি খোঁজছিলাম।এই বিষয়ে জানার জন্য আমি ইসলাম প্র্যাকটিস করা শুরু করলাম। চেষ্টা করবো একজন ভালো মুসলিম হওয়ার জন্য, অল্প অল্প করে।
ভাইয়েরা এবং বোনেরা আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ করে ভালো লাগলো। আমি অনেক খুশি আপনাদের সাথে একজন মুসলিম হিসেবে সাক্ষাৎ করতে পেরে।
আমি একটি কথা বারবার বলেছি কিন্তু অবশেষে আবারো আমি আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে বলছি,
আস্সালামু আলাইকুম।
আল্লাহ ব্যাতীত কোন ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ তাআ’লার প্রেরিত বান্দা ও রাসূল।
দাউদ কিম
অনুবাদঃ ইয়াসিন বিন সারোয়ার