আমরা যারা মুসলমান তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল করার পর আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটি বেশি বেশি ব্যবহার করে থাকি। তার কারণ হলো আমরা বিশ্বাস করি আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পাক পরম দয়ালু, করুণাময়, ক্ষমাশীল তাই আমরা তার কাছে বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ বলে ক্ষমাপ্রার্থনা করি।কোরআন হাদিস ঘাটাঘাটি করলে আমরা জানতে পারি যে শয়তান মুসলমানদেরকে বিভিন্নভাবে ওসওয়াসা দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে নেয়। এবং আল্লাহ তা’আলা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে আমরা মানুষরা যদি ভুল করি এবং তারপর যদি আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাই তাহলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে দেন। অর্থাৎ যদি আমরা শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে ভুল করেও ফেলি তারপর যদি আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাই তাহলে তিনি ক্ষমা করে দেন। সেই অর্থে ক্ষমা চাওয়া জন্য আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটি আমরা অনেক বেশি ব্যবহার করি।
যেহেতু ইসলাম ধর্মে ক্ষমা চাওয়া টি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদত তাই আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটি মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিকির।
আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ কি?
আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটির অর্থ জানার সম্পর্কে আমাদের অনেকের মধ্যে কৌতুহল রয়েছে। যারা আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ জানেন তারা নিশ্চয় এখানে আসেননি। আমার মনে হয় যিনি আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ জানেন না তিনি মূলত এই পোস্টে এসেছেন। যাইহোক আস্তাগফিরুল্লাহ এখানে দুইটি শব্দ রয়েছে? প্রথমটি হচ্ছে আস্তাগফির যার অর্থ হচ্ছে ক্ষমা চাওয়া এবং দ্বিতীয় শব্দটি হচ্ছে আল্লাহ যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ । অর্থাৎ আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটির পরিপূর্ণ অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। আরেকটু সহজ ভাবে বলি أَسْتَغْفِرُ الله তথা ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। এর অর্থ হবে- ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই’ (অতএব আমাকে ক্ষমা করুন)। প্রিয় পাঠক নিশ্চয়ই আপনি এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটির অর্থ কি?
তওবার দোয়া বা আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া বাংলা উচ্চারণ
দোয়া ১: আস্তাগফিরুল্লাহ
বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি
দোয়া ২: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু ইলাইহি ৷
বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি ৷
দোয়া ৩: রব্বিগফিরলি ওয়াতুবু ইলাইহি ইন্নাকা আন্তাত তাওয়াবুর রাহিম ৷
বাংলা অর্থ: হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা করুন ৷ আমার তওবা কবুল করুন ৷ নিশ্চয় আপনি তওবা কবুলকারী রহমশীল৷
দোয়া ৪: আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই।
‘আস্তাকফিরুল্লাহ’ নাকি ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ কোনটি সঠিক?
এটি একটি আরবি শব্দ যেটি আরবীতে লিখতে হয় এভাবে أَسْتَغْفِرُالله কিন্তু আমরা বাংলা উচ্চারণ করতে গিয়ে অনেকেই ভুল করে ফেলি কেউ কেউ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ এর স্থলে ‘আস্তাকফিরুল্লাহ’ বলি যেটা ভুল। অর্থাৎ আমরা আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটি উস্তাগণ করার ক্ষেত্রে “গ ”এর জায়গায় ”ক” উচ্চারণ করি যেটি সম্পূর্ণ ভুল।
মনে রাখতে হবে একটি অক্ষরের সামান্য এদিক সেদিক হলে অর্থের ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপরীত অর্থও হতে পারে। যেমন আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটির “গ ”এর জায়গায় ”ক” উচ্চারণ করলে অর্থের ব্যাপক পরিবর্তন হয়।
আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটির অর্থ হচ্ছে হে আল্লাহ আপনার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি । أَسْتَغْفِرُ الله তথা ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। এর অর্থ হবে- ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই’ (অতএব আমাকে ক্ষমা করুন)।
পক্ষান্তরে
أَسْتَكْفِرُ الله তথা ‘আস্তাকফিরুল্লাহ’। এর অর্থ মারাত্মক ভুল। তাহলো- ‘হে আল্লাহ! আমি কাফের তথা অস্বীকারকারী হতে চাই।’ (অতএব আমাকে কাফের বা অস্বীকারকারী বানিয়ে দিন)। (নাউজুবিল্লাহ)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটি সঠিক উচ্চারণ জেনে আমল করার তৌফিক দান করুন।
কেন আমরা বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ বা তওবার দোয়া পড়ি? আস্তাগফিরুল্লাহ এর উপকারিতা কি
আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন আমরা যারা মুসলমান রয়েছে তারা প্রত্যেক নামাজের পর বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করি। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তেন। এটার অর্থ হচ্ছে ফরজ নামাজের পর আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার সুন্নত। আর যদি আমাদের নামাজের মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ পাক তার বরকতের মাধ্যমে অথবা তার রহমতের উসিলায় আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার মাধ্যমে তা অর্থাৎ নামাজে যা ভুল হয়েছে সেটা মাফ করে দিতে পারেন। যেহেতু আমরা মানুষ আর মানুষের ভুল হওয়া খুবই স্বাভাবিক তাই নামাজের পর আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ে আল্লাহপাক কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়াই উত্তম।
কেন আমরা আস্তাগফিরুল্লাহ বা তওবার দোয়া বেশি বেশি পড়বো?
দেখুন আমরা কোরআন হাদিস থেকে জানতে পারি যে মানবজাতিকে সৃষ্টির পর থেকেই তাদেরকে শয়তান বিভিন্নভাবে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। শয়তান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে যেটা মাধ্যমে সে মানুষকে বিভিন্নভাবে কুমন্ত্রণা দিয়ে খারাপ কাজ করাতে পারে। শয়তান মানুষকে খারাপ কাজ করানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে যেভাবেই হোক মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করাবেই। কিন্তু আল্লাহ পাক মানুষকে এই খারাপ কাজ করানোর কুমন্ত্রনাকারীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটা সহজ উপায় বলে দিয়েছেন। আর সেটা হচ্ছে মানুষ যখন কোন ভুল করে ফেলবে আর ভুল করার পর যখন সে আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাইবে আল্লাহপাক তাকে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে দিবে।
এটার মানে হচ্ছে যে আমরা যদি কোন ভুল করে ফেলি এবং পরক্ষণে যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ পাক আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন এবং সে ক্ষেত্রে শয়তান হেরে যাবে মানুষ জিতে যাবে । তাই আমরা যদি কোন ভুল করেই ফেলি তাহলে বেশি বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেব।
কখন আস্তাগফিরুল্লাহ বা তওবার দোয়া পাঠ করব?
যেহেতু আমরা মানব জাতি আমরা ভুল করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। আর আল্লাহ পাক আমাদেরকে তার রহমতের উসিলায় আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তাই আমরা যে কোন অবস্থায় আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতে পারি। মুসলমান ধর্মে এটাকে এক ধরনের জিকির হিসেবেও ধরা যায়। তাই আপনি জিকে এর মত করে সব সময় বেশি বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতে পারেন। প্রত্যেক ফরয নামাজের পর যেহেতু আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া সুন্নত তাই সেই আমলটি ও করতে পারেন। এছাড়া যে কোন সময় যে কোন ভুল করে ফেললে ভুল করার পর অনুতপ্ত হওয়ার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে বেশি বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া উত্তম।