এমআরআই কি? রােগ নির্ণয়ে MRI এর ব্যবহার

মানবদেহে অস্থি বাদ দিলে যে বাকী অংশ থাকে তা বিভিন্ন ধরনের কলা বা টিস্যুর সমস্বয়ে তৈরি।
এ টিস্যুতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। প্রত্যেক পানির অণুতে যে দুটি ‘H’ পরমাণু থাকে, তাদের নিউক্লিয়াসে একটি করে প্রোটন বিদ্যমান।
ধনাত্মক চার্জধারী এই প্রোটন নিজ অক্ষকে ঘিরে স্পিন গতিতে সর্বদা ঘূর্ণায়মান থাকায় প্রত্যেক নিউক্লিয়াস তথা প্রত্যেক ‘H’ পরমাণু এক একটি সক্রিয় চুম্বকের মতো আচরণ করে।
কোনো ব্যক্তির যখন স্ট্রোক বা মস্তিস্কের টিউমার হয়, তা নিরূপণ ও আক্রমণ স্থান সনাক্ত করার জন্য রোগীকে এমআরআই (MRI) যন্ত্রে শায়িত অবস্থায় স্থাপন করা হয়। যার সাথে একটি স্ক্যানার (Scanner) সংযুক্ত থাকে।

এমআরআই এ স্ক্যানিং

স্ক্যানার (Scanner) এর চারপাশ ঘিরে থাকে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক চুম্বক ক্ষেত্র। সুইচের বোতাম টিপে সেই চুম্বক কে সক্রিয় করা হয়।
স্ক্যানারের চুম্বকক্ষেত্র সক্রিয় করা হলে তার প্রবল চৌম্বক আকর্ষণে টিস্যুর সাথে থাকা পানির (অণুর) প্রোটনগুলো আবিষ্ট হয় এবং স্ক্যানারের চুম্বকের প্রযুক্ত ক্ষেত্রের আকর্ষণের দিক (বল রেখা) অনুসারে বিন্যস্ত হয়ে প্রোটনগুলো মুমূর্য লাটিমের মতো ঘুরতে থাকে।
এরূপ গতিকে লেমর গতি (Lamor Procession) বলে।

এ অবস্থায় রোগীর দেহে রেডিও রশ্মি (অত্যন্ত দুর্বল রশ্মি) প্রক্ষেপণ করা হয়।
ফলে এ বিকিরণ রশ্মি থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি শোষণ করে।
প্রোটনগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং প্রযুক্ত চুম্বক ক্ষেত্রের আকর্ষণ আবেশ থেকে নিজেদের মুক্ত করে ফেলে।
এতে একই সাথে তাদের স্পিনের দিক পরিবর্তন হয়ে যায়। ‘H’ নিউক্লিয়াসগুলো তাদের শোষিত শক্তি ধরে রাখতে পারেনা।
আশপাশের পানির অণুকে এবং টিস্যু কণাকে তা বিতরণ করে নিচের শক্তি স্তরে (পূর্ব অবস্থায়) ফিরে আসে এবং তাদের পূর্বের স্পিন দিক বিন্যাস ধারণ করে ঘুরতে থাকে।
‘H’ নিউক্লিয়াস রেডিও রশ্মি থেকে শক্তি শোষণ এবং শোষিত শক্তি বিকিরিত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার সময়-কালকে জীবন কাল (life-time) T বলে।

সনাক্ত

এরপর দেহের পানির অণুগুলোর প্রোটন কর্তৃক বিকিরিত রশ্মি স্কেনারে একটি ছবি (image) তৈরি করে।
রোগাক্রান্ত কোষের জন্য এক ধরনের বিকিরণ এবং স্বাভাবিক কোষের জন্য ভিন্ন ধরনের বিকিরণ স্ক্যানার সংগ্রহ করে।
রোগাক্রান্ত কোষ বা টিস্যুতে পানির অণুগুলোর ‘H’ নিউক্লিয়াসের জীবনকাল (TQ) স্বাভাবিক টিস্যুর তুলনায় ভিন্ন হয়।
স্ক্যানার থেকে প্রাপ্ত ছবিতে তা ধরা পড়ে। এভাবে ছবি থেকে আক্রান্ত টিস্যুর স্থান এবং ধরন সহজেই সনাক্ত করা যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *