কলয়েড কি? প্রকৃত দ্রবণ ও কলয়েড দ্রবণের পার্থক্য

কলয়েড হলো কঠিন পদার্থের একপ্রকার অসমসত্ত্বীয় মিশ্রণ যেখানে কঠিন পদার্থের কণাসমূহ তরলের সর্বত্র সমভাবে বিরাজ করে।

কলয়েড দ্রবন

যখন কোনো দ্রাবকের মধ্যে কোনো দ্রবের কণাগুলো 1 ন্যানোমিটার – 1 মাইক্রোমিটার এর ব্যাসের ক্ষুদ্র কণায় বিভাজিত হয়ে একটি অস্বচ্ছ, অসমসত্ত্ব কিন্তু স্থায়ী মিশ্রণ উৎপন্ন করে তখন সেই মিশ্রণকে কলয়েড দ্রবণ বলে।

কলয়েড দ্রবণের মিশ্রণ থেকে ঘরের কণাগুলো ফিল্টার কাগজের মধ্যদিয়ে যেতে পারে কিন্তু পার্চমেন্ট কাগজ বা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ ঝিল্লি ইত্যাদি অর্ধভেদ্য পর্দার মধ্যদিয়ে যেতে পারে না।

কলয়েড এর উদাহরণ

দুধ, মায়োনিজ, কুয়াশা, শেভিং ক্রিম ইত্যাদি ।

কলয়েড দ্রবণের বৈশিষ্ট্য

১. কলয়েড দ্রবণে দ্রবের কণাগুলোর ব্যাস 1nano meter – 1micro meter এর মধ্যে হয়।

২. কলয়েড দ্রবণে দ্রবের কণাগুলোকে খালি চোখে বা সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায় না কিন্তু অতি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়।

৩. কলয়েড দ্রবণের দ্রবের কণাগুলো সাধারণ ফিল্টার কাগজের মধ্য দিয়ে যেতে পারে কিন্তু পার্চমেন্ট কাগজের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না।

৪. কলয়েড হচ্ছে অস্বচ্ছ, অসমস্ত্ব মিশ্রণ। কলয়েড অবস্থায় অদ্রবণীয় পদার্থের কণাসমূহ তরল পদার্থের মাধ্যমে সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করে।

৫. কলয়েড দ্রবণের বর্ণ কলয়েড কণার আকারের ওপর নির্ভর করে।

৬. কলয়েড দ্রবণের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মি পাঠালে আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটে। এই ঘটনাকে টিন্ডাল প্রভাব বলে।

৭. কলয়েড দ্রবণ ব্রাউনীয় গতি প্রদর্শন করে।

কলয়েড কত প্রকার

ডিসপার্সড মাধ্যম (যে মাধ্যমে কণা গুলো ছড়িয়ে যাবে) এবং ডিসপার্সড ফেজ (যে দ্রবের কণা গুলো ছড়াবে) এর উপর নির্ভর করে কলয়েড কে নিম্নরুপে শ্রেনী বিন্যাস করা হয় (প্রথমে মিডিয়াম বা মাধ্যম, দ্বিতীয় অংশে দ্রব)-

১. গ্যাস-তরল কলয়েড। যেমন- কুয়াশা এবং মেঘ। কুয়াশা মূলত পানি, বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়ার ফলে তৈরি হয়। এখানে মাধ্যম হচ্ছে বাতাস এবং ফেজ হচ্ছে পানি।

২. গ্যাস-কঠিন কলয়েড। যেমন- ধোঁয়া।

৩. তরল-গ্যাস কলয়েড। যেমন- শেভিং ফোম।

৪. তরল-তরল কলয়েড বা ইমালশন। যেমন- দুধ।

৫. তরল-কঠিন কলয়েড। যেমন- সল।

৬. কঠিন-গ্যাস কলয়েড। যেমন- স্টাইরো ফোম।

৭. কঠিন-তরল কলয়েড। যেমন- জেল, জিলাটিন।

৮. কঠিন-কঠিন কলয়েড। যেমন- ক্র্যানবেরি কাঁচ।

প্রকৃত দ্রবণ ও কলয়েড দ্রবণের পার্থক্য

প্রকৃত দ্রবণ ও কলয়েড দ্রবণের পার্থক্য নিচের টেবিলে দেয়া হল-

ধর্ম প্রকৃত দ্রবণ কলয়েড
কণার আকার প্রকৃত দ্রবণের কণার আকার <1 nm কলয়েড দ্রবণের কণার আকার 1-1000 nm
দৃশ্যমানতা প্রকৃত দ্রবন স্বচ্ছ হয়। কলয়েড দ্রবণ ঘোলাটে হয়।
স্থিতিশীলতা দ্রাবক এবং দ্রব পৃথক হয় না। নির্দিষ্ট কিছু অবস্থায় দ্রাবক এবং দ্রব পৃথক হতে পারে।
ছাকনী ফিল্টার বা ছাকনীর ভেতর দিয়ে চলে যেতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু ফিল্টার বা ছাকনীর মধ্যে দিয়ে গেলে পৃথক হয়ে যায়।
টিন্ডাল প্রভাব টিন্ডাল প্রভাব প্রদর্শন করে না। টিন্ডাল প্রভাব প্রদর্শন করে।

কলয়েড ও সাসপেনশন এর পার্থক্যঃ

কলয়েড সাসপেনশন
১। কলয়েড হচ্ছে এক ধরনের অসমত্ত্ব মিশ্রণ যেখানে কঠিন উপাদানের আনুবীক্ষণিক কণা গুলো অন্য একটি উপদানের (দশার) মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। ১। সাসপেনশন হচ্ছে এক ধরনের অসমত্ত্ব মিশ্রণ যেখানে কঠিন উপাদানের কণা গুলো তরল উপদানের (দশার) মধ্যে ছড়িয়ে থাকে।
২। কলয়েডের কণার ব্যাসার্ধ ১ ন্যানো মিটার থেকে ১ মাইক্রো মিটারের মধ্যে হয়। ফলে কণা গুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না। ২। সাসপেনশনের কণার ব্যাসার্ধ অবশ্যই ১ মাইক্রো মিটারের বেশি হতে হবে।
৩। কলয়েডেরকণা গুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না। ৩। সাসপেনশনের কণা গুলোকে খালি চোখে দেখা যায়।
৪। দীর্ঘ সময় স্থিরভাবে রেখে দিলে কলয়েডের কণা গুলো অধঃক্ষিপ্ত হয় না। ৪। দীর্ঘ সময় স্থিরভাবে রেখে দিলে সাসপেনশনের কণা গুলো অধঃক্ষিপ্ত হয়।
৫। কলয়েডের কণা গুলো কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় দশায় ছড়িয়ে থাকতে পারে। ৫। সাসপেনশনের কণা শুধুমাত্র তরল দশায় ছড়িয়ে থাকে।
৬। উদাহরন- মেঘ, কুয়াশা, সেভিং ফোম। ৬। উদাহরন- বালি ও পানির মিশ্রণ, কাদা পানির মিশ্রণ, আটা ও পানির মিশ্রণ।

সাসপেনশন কি?

যদি দুই ফেজ এর কোন সিস্টেমে একটি বিস্তৃত ফেজ বা বিস্তার মাধ্যম এর মধ্যে বণ্টিত বা ডিসপার্স ফেজ এর কণার ব্যাস তথা আকার 10-4 বা তার চেয়ে বড় (10-4 – 10-1 cm) হয় তখন মিশ্রণটির কণাগুলোকে খালি চোখেই দেখা যায়। এ সিস্টেমের নাম সাসপেনশন বা প্রলম্বন।

যেমন, ঘোলা কাদাময় পানি হলো পানিতে মাটির কণার একটি সাসপেনশন মাটির কণার আকার 10-4 cm বা এর চেয়ে বড় বলে এটিকে খালি চোখে পানিতে ভাসতে দেখা যায়। কণাগুলো ফিল্টার পেপার বা ঝিল্লীর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে পারে না।

 

শেষ কথা:

 

আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “কলয়েড কি? প্রকৃত দ্রবণ ও কলয়েড দ্রবণের পার্থক্য” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

Similar Posts