বুৎপত্তিগতভাবে / উৎস / উৎপত্তি অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
এক বা একাধিক বর্ণ মিলে যখন একটি পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে তাকে শব্দ বলে। ভাষার মূল উপাদান হচ্ছে শব্দ। নিম্নে বুৎপত্তিগতভাবে / উৎস / উৎপত্তি অনুসারে শব্দের প্রকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
বুৎপত্তিগতভাবে / উৎস / উৎপত্তি অনুসারে শব্দ
বুৎপত্তিগতভাবে / উৎস / উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দ ৫ প্রকার। নিম্নে শব্দের প্রকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। যথাঃ
- তৎসম শব্দ
- অর্ধ-তৎসম বা ভগ্ন তৎসম শব্দ
- তদ্ভব বা প্রাকৃত শব্দ
- দেশি শব্দ
- বিদেশী শব্দ
তৎসম শব্দ: তৎ অর্থ “তার” আর সম অর্থ “সমান”। অর্থাৎ তৎসম শব্দের অর্থ তার সমান বা সংস্কৃতের সমান। যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোন রূপ পরিবর্তন ছাড়াই সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে তাদেরকে তৎসম শব্দ বলা হয়। যেমন – সিংহ, পুত্র, রাজা, শিশু, মাতা, আকাশ, শিক্ষা ইত্যাদি। ড. মোঃ এনামুল হকের মতে বাংলা ভাষার 25% শব্দ তৎসম।
অর্ধ-তৎসম বা ভগ্ন তৎসম শব্দ:তৎসম মানে সংস্কৃত আর অর্ধ তৎসম মানে আধা সংস্কৃত। বাংলা ভাষায় কিছু কিছু সংস্কৃত শব্দ কিঞ্চিৎ বা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে ব্যবহৃত হয় এগুলোকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে। অর্থাৎ যেসব তৎসম শব্দ বাঙালির মুখে উচ্চারণে বিকৃতির ফলে তৈরি হয়েছে তাদেরকে অর্ধ-তৎসম বলা হয়। যেমন – কেষ্ট, গিন্নি, গেরাম,ছেদ্ধা, কিচ্ছু ইত্যাদি। ড. মোঃ এনামুল হকের মতে বাংলা ভাষার 5% শব্দ অর্ধ-তৎসম।
তদ্ভব বা প্রাকৃত শব্দ: তদ অর্থ (তা) সংস্কৃত, ভব অর্থ জাত অর্থাৎ, তদ্ভব অর্থ সংস্কৃত থেকে জাত। এটি একটি পারিভাষিক শব্দ। যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় এসেছে সে সব শব্দ তদ্ভব শব্দ বলা হয়। একে খাঁটি বাংলা শব্দও বলা হয়। যেমন – হাত, ভাত,বলয়, গাত্র ইত্যাদি।
সংস্কৃত | প্রাকৃত | বাংলা |
হস্ত | হুথ | হাত |
ভর্ত | ভত্ত | ভাত |
গাত্র | গাঅ | গা |
দেশি শব্দ: আমাদের দেশের (বাংলাদেশের) আদিম অধিবাসীদের ব্যবহৃত শব্দসমূহকে দেশি শব্দ বলা হয়। অর্থাৎ, আমাদের দেশে আর্য জাতি আসার আগে যেসব জাতি বাস করত তাদের কিছু কিছু শব্দ এখনো বাংলা ভাষায় রয়েছে এগুলোকে দেশি শব্দ বলে। যেমন – ডাব, কুলা, ছড়ি, খাঁচা, পেট, চাল, লাঠি, তেঁতুল ইত্যাদি।
বিদেশী শব্দ: বিশ্বের অন্যান্য দেশের ভাষা থেকে যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে সে সব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে। যেমন –
আরবিঃ জান্নাত, জাহান্নাম, কলম, জিন, জামিন, জামা, নবী, রাসূল ইত্যাদি।
ফারসিঃ সুদ, খরচ, চাকরি, পোশাক, চাদর, খুব ইত্যাদি।
ইংরেজিঃ ব্যাংক, চেয়ারম্যান, স্যার, প্যান্ট, কোর্ট, টিকিট, শার্ট, অফিসার, ভিসা ইত্যাদি।
পর্তুগিজঃ জানালা,আনারস, বালতি, পাউরুটি, সাবান ইত্যাদি।
তুর্কিঃ বাবা, বন্দুক,বিবি, বেগম, দরগা,চাকু,খানম ইত্যাদি।
চীনাঃ চা, চিনি, এলাচি,তুফান ইত্যাদি।
বরমিঃ লুঙ্গি,ফুঙ্গি,কিয়াং ইত্যাদি।
হিন্দিঃ ঠান্ডা, পানি,বাচ্চা, খানাপিনা, ভরসা ইত্যাদি।
মালয়ীঃ গুদাম, সাগু ইত্যাদি।
ইন্দোনেশীয়ঃ বাতাবি বর্তমান ইত্যাদি।
গুজরাটিঃ খদ্দর, হরতাল ইত্যাদি।
রুশঃ সোভিয়েত, মেনশেভিক ইত্যাদি।
পাঞ্জাবিঃ চাহিদা, শিখ ইত্যাদি।
এছাড়া আরও বিভিন্ন ভাষার কিছু শব্দ বাংলায় রয়েছে।