জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স শেষ পর্বের চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনো হয়নি। এতে করে একবছরের মাস্টার্স কোর্সের বয়স হলো ৩ বছর। ঠিক কবে পরীক্ষা নেয়া হবে সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘদিন পরীক্ষা না হওয়াতে হতাশায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
২০১৯ সালে অক্টোবরে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের। ১ বছর পর ২০২০ সালে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে তা সম্ভব হয়নি। ক্লাস শুরুর কয়েক মাস পর ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে ক্লাস-পরীক্ষা। পরবর্তীতে অনলাইনে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট চালু হলেও পরীক্ষা শুরু হয় ২০২১ সালে। গত বছর কয়েক দফা বিরতি দিয়ে শেষ হয় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষা।
তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফরম ফিলাপ সম্পন্ন হলেও এখনো ঝুলে আছে ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা। এতে করে তারা পড়ালেখার আগ্রহ হারিয়ে পেলেছে, হতাশায় ভুগছে অনেকেই। অপেক্ষা করতে করতে মাস্টার্স শেষ না হওয়ায় অনেকই আবার বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন, চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থী এনামুর রহমান বলেন, অনার্স শেষ করেছি ২০১৯ সালে এখন চলে ২০২২ সাল কিন্তু এখনো মাস্টার্স শেষ করতে পারিনি। সরকারি চাকরির জন্য চেস্ট সবাই করে কিন্তু সবাইতো আর পাবেনা। পছন্দের কিছু বেসরকারি চাকরি থাকে যেগুলাতে জয়েন করলে আর পড়ালেখার সুযোগ থাকেনা। মাস্টার্সটা শেষ করার জন্য পছন্দের চাকরিতে যোগ দিতে পারছিনা।
ফেনী সরকারি কলেজের মাস্টার্স শেষ পর্বের তয়ন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, একটা পরীক্ষার জন্য নিজেকে কেমন শিকলবন্ধী মনে হয়। যেখানে যাই মাথায় থাকে এখনো মাস্টার্স পরীক্ষা দেয়া হয়নি। এটা এখন একটা মানসিক যন্ত্রনাতে রূপ নিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুরোধ এ যন্ত্রনা থেকে যেন দ্রুত মুক্তি দেয়।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাবেয়া বলেন, আসলে মাস্টার্সটাকে এখন বোঝার মত মনে হচ্ছে। একব বছরের কোর্স তিন বছর হয়ে যাচ্ছে। আমরা এ বোঝা থেকে মুক্ত হতে চাই। অতিদ্রুত চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে আমাদেরকে মুক্ত করার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহেযোগী অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন পরীক্ষা না হওয়াতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে পেলেছে, পিছিয়ে পড়েছে। আবার এটাতো একধরনের মানসিক চাপ। পরীক্ষাটা হয়ে গেলে তারা চাপমুক্ত থেকে চাকরির জন্য বা তাদের জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে। আবার অনেকেই আছে চাকরি করার জন্য বা প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নিজ জেলার বাইরে যেতে চায় কিন্তু তাদের মাস্টার্স শেষ না হওয়াতে একটা পিছুটান রয়ে গেছে। চূড়ান্ত পরীক্ষাটা হয়ে গেলে তাদরে এ পিছুটান থাকতোনা। আমরা চাই অতিদ্রুত তাদের পরীক্ষা নেয়া হোক।
পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বলেন, ২০১৮-১৯ সেশনের মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। আমরা চেস্টা করছি খুব দ্রুত পরীক্ষাটি নেয়ার জন্য। করোনা মহামারী না হলে যথা সময়ে কোর্স হয়ে যেতো।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এক লাখ ৩০ হাজার ৩৫৬ জন পরীক্ষার্থী ২৯টি বিষয়ে মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮৮ হাজার ৪২৯ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।