মানব জীবনের আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো সাওম / রোজা। এটি একজন মানুষকে তার ব্যক্তিগত দোষত্রুটি দমনের মাধ্যমে তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে যেমন সর্বজন শ্রদ্ধেয় করে তোলে, তেমনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়ে তাকে চিরকালীন সফলতা দান করে। আল্লাহ বলেন –
” হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের তোমাদের উপর সাওম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছিল পূর্ববর্তীগণের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীরুতা অর্জন করতে পার।”
রোজা বলতে কি বুঝ?
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূলভিত্তির মধ্যে তৃতীয় হচ্ছে সাওম বা রোজা। সাওম আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা, কঠোর সাধনা করা, আত্মসংযম ইত্যাদি।
বিরত থাকাঃ সাওম পালনের মাধ্যমে পানাহার সহ নানা রকম বৈধ-অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকা হয, এজন্য একে রোজা বলা হয়।
কঠোর সাধনা করাঃ সাওম পালনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির অনেক সাধনা তথা ধৈর্যের পরিচয় মিলে অর্থাৎ রোজা পালন করতে গিয়ে ব্যক্তিকে অনেক সাধনা করতে হয় বিধায় রোজাকে রোজা বলা হয়।
আত্মসংযমঃ সাওমের আরেকটি দিক হলো ব্যক্তি এর মাধ্যমে আত্মসংযমতা অর্জন করতে পারে, তাই একে সিয়াম বা রোজা বলে।
মোটকথা, সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার,কমাচার এবং একই সাথে যাবতীয় ভোগ বিলাস থেকেও বিরত থাকাকে রোযা বলে। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক সকাল মুসেমানদের জন্য রোযা রাখা ফরজ। অর্থাৎ, অবশ্যই পালনীয়।
রোজার প্রকারভেদ
রোজা ৫ প্রকার। যথাঃ-
- ফরজ রোজা
- ওয়াজিব রোজা
- সুন্নত রোজা
- মোস্তাহাব রোজা
রোজার ফরজ ও শর্ত
সাওমের কিছু মৌলিক শর্ত আছে। যা ফরজ। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মুসলিমকে অবশ্যই রোযা রাখতে হবে। নিম্নে রোজার ফরজ ও শর্তগুলো দেওয়া হলো –
রোজার ফরজ ৩ টি। এগুলো হলো –
- নিয়ত করা
- সব রকমের পানাহার থেকে বিরত থাকা
- যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা
রোজা রাখার শর্ত ৪ টি। যথা-
- মুসলিম হওয়া
- বালেগ হওয়া
- অক্ষম না হওয়া
- ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী
- মুসলিম হওয়া
- বালেগ হওয়া
- অক্ষম না হওয়া
- ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।
রোজা ভঙ্গের কারণ
- ইচ্ছাকৃত কোনকিছু পানাহার করলে বা কেউ জোরপূর্বক কোন কিছু খাওয়ালে।
- ধোঁয়া, ধূপ ইত্যাদি কোন কিছু নাক বা মুখ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে ।
- ধূমপান বা হুক্কা পান করলে।
- ছোলা পরিমাণ কোন কিছু দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে গিলে ফেললে।
- ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে।
- কোন অখাদ্যবস্তু গিলে ফেললে। যেমন – পাথর, লোহার টুকরা ইত্যাদি।
- ইচ্ছাকৃতভাবে ঔষধ সেবন করলে।
- রাত বাকি আছে ভেবে নির্দিষ্ট সময়ের পর সাহরি খেলে।
- কুলি করার সময় হঠাৎ করে পেটের ভিতর পানি প্রবেশ করলে।
- নিদ্রিত অবস্থায় কোন বস্তু খেয়ে ফেললে।
- বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর পান করলে।
- ভুলক্রমে পানাহার করে সাওম নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে আবার পানাহার করলে।
- স্ত্রী সহবাস করলে।
- রোজার নিয়ত না করলে।
- মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হলে ইত্যাদি।
রোজার উপকারিতা
রমজান মাসের একটি বিশেষ ফজিলত হচ্ছে, এই পবিত্র মাসে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এ মাসের রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়, মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয় এবং আত্মাকে দহন করে ঈমানের শাখা সঞ্জিবীত করে। এককথায় আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ” রোজাদারদের জন্য দুটি খুশি। একটি হলো তার ইফতারের সময় আর অন্যটি হলো আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়।” – (বুখারী ও মুসলিম)